কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

পহেলা বৈশাখের আড়ালে যত কথা

post title will place here

পহেলা বৈশাখ, দুটি শব্দ আলাদা ভাষা থেকে উদ্গত হয়ে একটি উৎসবের নাম ধারণ করেছে। পহেলা শব্দটি উৎপত্তিগতভাবে উর্দূ শব্দ পেহেলী থেকে এসেছে, যার অর্থ প্রথম। উল্লেখ্য, এ শব্দটি ভারতে পয়লা বলেও উচ্চারণ করা হয়। বৈশাখ শব্দটি এসেছে বিশাখা নামক নক্ষত্রের নাম থেকে। এই মাসে এই নক্ষত্রটি সূর্যের কাছে দেখা যায়।[1] পহেলা বৈশাখ দিনটি বাংলা পঞ্জিকার প্রথম দিন। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত তিন ধরনের ক্যালেন্ডার রয়েছে— (১) হিজরী সন, (২) বাংলা বা ফসলি সন এবং (৩) খৃস্টাব্দ বা গ্রেগোরিয়ান সন। তিনটি ক্যালেন্ডার থাকলেও বাংলা সনের নববর্ষ পালন করে নিজেকে বাঙালি পরিচয় দিতে সকলে গর্ববোধ করে। বিশেষ করে এটা বলতে হয় যে, কেউ বাংলা মাসের খোঁজ রাখে কি-না তা নিয়ে বিশাল সন্দেহ! কিন্তু পহেলা বৈশাখ আসলেই পান্তা-ইলিশ, বৈশাখি মেলা, নাচ, গান, যাত্রা, সার্কাস, তিতারি শাক, চাল-বুট ইত্যাদি রান্নায় সকলে মেতে উঠে। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে পহেলা বৈশাখ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইনশা-আল্লাহ!

ইতিহাস:

খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন সম্রাট আকবর। মোদ্দাকথা হচ্ছে, হিজরী সন অনুযায়ী খাজনা দিলে তা চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। তাই সম্রাটের নির্দেশ অনুযায়ী জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌর সন এবং হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। এই গণনা শুরু হয় আকবরের সিংহাসনের সময় থেকে। প্রথমে এই গণনা ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।

তখনকার সময়ে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। তার পরদিন ভূমির মালিকেরা নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদের মিষ্টি দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করত, তারা এই দিনে হালখাতা খুলত। হালখাতা বলতে পুরো বছরের হিসাবনিকাশ চুকিয়ে নতুন বছরের হিসাবের জন্য খাতা খোলাকে বুঝায়। হালখাতার দিনে ব্যবসায়ী কিংবা দোকানদারেরা ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে থাকেন। অনেক অঞ্চলে এই হালখাতার প্রচলন এখনও চলমান আছে।

১৯১৭ সালে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থার মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সনের আগে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।[2]

তথাকথিত অনেক সুশীল বক্তব্যের মধ্যে বলে থাকে, পহেলা বৈশাখ হাজার বছরের ইতিহাস। প্রিয় পাঠক! মাত্র ৪৪১ বছরকে (১৫৮৪-২০২৫ খ্রি.) হাজার বছরের ইতিহাস বলা কতটা হাস্যকর!

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে একটা কথা সংযোজন করছি, পহেলা বৈশাখের জনক বলা হয় সম্রাট আকবরকে। কিন্তু ইতিহাস বলছে সম্রাট আকবর ছিলেন মঙ্গোলীয় এবং ফারসী ভাষী। পহেলা বৈশাখ বাঙালিদের উৎসব এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে সম্রাট আকবর বাঙালি হলে এসব তথাকথিত সুশীলদের কথার সাথে একমত হওয়া যেত!

বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ:

বাংলাদেশে ১৯৬৪ সনে পহেলা বৈশাখের পরিচিতি ঘটে। তার তিন দশক পূর্বে কামরুল হাসান গ্রামীণ মেলার নামে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প তথা বৈশাখি মেলা শুরু করেন বাংলা অ্যাকাডেমির সবুজ চত্বরে। তখন থেকে শুরু হয় ‘পহেলা বৈশাখ’।[3]

বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ এর প্রচলন শুরু হলেও তেমন একটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। জনপ্রিয় হয়ে উঠে ১৯৮৯ সালে। ছায়ানটের শিল্পীরা বটমূল খ্যাত অশ্বত্থ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সূর্য উঠার পরপর সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহ্বান জানান। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট-এর উদ্যোগে ঢাকার বিভিন্ন শহর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইন্সটিটিউটে ফিরে আসে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে তারা বার্তা দিয়ে বলে থাকে যে, এটা বাংলার আবহমান গ্রামীণ জীবন এর রূপ ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস। এ যেন ইতিহাসের ব্যাপারে শাহবাগীদের ডাহা মিথ্যাচার!

ইতঃপূর্বে পহেলা বৈশাখ সংশ্লিষ্ট ইতিহাসে দেখা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের ইতিহাস নয়। ইতিহাসের ক্ষেত্রে আরেকটু সংযোজন করা আবশ্যক। ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে হালখাতা করে থাকে, সাথে থাকে মিষ্টান্ন আপ্যায়ন। কলকাতার অলিগলিতে দোকানদারেরা সকল পণ্যে বিশেষ ছাড় দেয়, যার কথ্য নাম ‘চৈত্র সেল’। আপনার বিশ্বাস না হলে পহেলা বৈশাখের দিনে কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে কেমন ভিড় হয় একটু জানুন।[4]

পহেলা বৈশাখ কি বাঙালি সংস্কৃতি?

মোটা দাগে একটা প্রশ্ন সকলের মনে আসে, পহেলা বৈশাখ কি বাঙালি সংস্কৃতি? উত্তরটি জানতে হলে আবারও ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে।

বাংলার প্রাচীন মানুষেরা ছিলেন দ্রাবিড় বা নূহ আলাইহিস সালাম-এর বড় ছেলে সামের বংশধর। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে ইয়াফিসের সন্তানদের একটি দল আর্য নামে ভারতে আগমন করে। এক পর্যায়ে তারা ভারত দখল করে আর্য ধর্ম ও হিন্দু ধর্ম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে আর্যরা বাঙালি সংস্কৃতিকে ঘৃণা করতেন। বেদে ও পুরাণে বাংলা ভাষাকে পক্ষীর ভাষা ও বাঙালিদেরকে দস্যু, দাসের ভাষা ইত্যাদি বলা হয়েছে।

সত্যিকারার্থে বাঙালি সংস্কৃতি বলতে বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ও মুসলিম সংস্কৃতির সংমিশ্রণ বুঝানো হতো। ক্রমান্বয়ে আর্যরা বাঙালিত্ব বলতে ভারতের হিন্দুত্ব বলে দাবি করেন। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা ভারতীয়ত্ব বা হিন্দুত্ব বলে দাবি করেন এবং ভারতের সকল ধর্মকে হিন্দু ধর্মের কৃষ্টি ও সভ্যতা গ্রহণে বাধ্য করেন।[5]

পাঠকের জ্ঞাতার্থে বলছি, বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে পহেলা বৈশাখের ইতিহাসের সাথে উপরের কথার অমিল না খুঁজে চলুন প্রমাণ খুঁজি। এখানে বলা হয়েছে, আর্যরা হিন্দুত্বকে প্রাধান্য দিয়েছে।

আমরা পহেলা বৈশাখ বলতে বুঝি প্যাঁচার মুখোশ, হাতির প্রতিকৃতি, রাজহাঁস, ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো প্রতিকৃতি, ময়ূরসহ নানা জীবজন্তুর চিত্র। মোটা দাগে বলতে হয়, পহেলা বৈশাখ পালন করা সকলে বলছে, বাঙালির সংস্কৃতি! ইতঃপূর্বে আমরা পহেলা বৈশাখের ইতিহাসে দেখেছি উপরে উল্লিখিত প্রতীকের কোনো নাম নেই।

তাহলে প্রশ্ন উঠে, উপরে উল্লিখিত প্রতীকগুলো তাহলে কী? প্যাঁচা হলো হিন্দু ধর্মের দেবী লক্ষ্মীর বাহন। হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে লক্ষ্মী হলো ধন, সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী।[6] হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, গণেশের পূজা করলে সব বাধা ও অশুভ প্রভাব কেটে যায়। এজন্য গণেশ মূর্তিকে (হাতির মুখাবয়ব) সাফল্য ও সমৃদ্ধির বাহক মঙ্গল মূর্তি বলা হয়।[7] হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, রাজহাঁস হলো দেবী সরস্বতীর বাহন।[8] বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের যে প্রতিকৃতি নিয়ে পহেলা বৈশাখে যাত্রা করা হয়, এই ষাঁড় হলো হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী শিবের বাহন।[9]

ঠিক এভাবেই পহেলা বৈশাখ এর প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সাথে হিন্দু সংস্কৃতি ও সভ্যতার মিল রয়েছে। তা বিশদ আকারে আলোচনা করলে প্রবন্ধ বড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আচ্ছা পহেলা বৈশাখ এর পোশাক কী সেটা তো আপনারাই জানেন। পুরুষেরা ধুতি ও কোনাকাটা পাঞ্জাবি পরে, যা হিন্দুদের জাতীয় পোশাক। মেয়েরা লাল পেড়ে সাদা শাড়িসহ হাতে রাখি বাঁধে, শাঁখা পরে, কপালে লাল টিপ ও চন্দন এবং সিঁথিতে সিঁদুর দেয়। তারপরও কেউ এসে বলবে, নাহ এটা বাঙালি উৎসব। ভারতীয় দাদাবাবুদের পত্রিকা আনন্দবাজার শিরোনাম দিয়েছে, ঢাকার পয়লা যেন অষ্টমীর একডালিয়া। দেখুন! দাদাবাবুরা পহেলা বৈশাখকে তুলনা করছে অষ্টমীর সাথে।[10]

তারপরও কিছু বাঙ্গু সুশীল ‘তালগাছ আমার’-এর মতো চিৎকার করে বলবে, পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসব।

পহেলা বৈশাখ যেন ব্ল্যাক নাজারিন:

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে পহেলা বৈশাখ সংশ্লিষ্ট তেমন কোনো বই নেই বললেই চলে। তারপরও এ বিষয়ে বেশ কিছু নথি পাওয়া যায়। একদল গবেষক মনে করেন, পহেলা বৈশাখ এসেছে ব্ল্যাক নাজারিন থেকে। প্রশ্ন হলো, ব্ল্যাক নাজারিন কী?

ব্ল্যাক নাজারিন হলো যিশু খ্রিষ্টের একটা কালো মূর্তি। ফিলিপাইনের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা প্রতি বছর ৯ জানুয়ারি যিশুর কালো মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা করে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সকলে খালি পায়ে যায় এবং তারা বিশ্বাস করে, যে এই মূর্তিটি ছুঁতে পারবে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। কাঠের মূর্তি ছুঁতে পারলে মানুষ কখনো অসুস্থ হবে না— এ যেন পৃথিবীর চরম হাস্যকর বিশ্বাস৷ এই ব্ল্যাক নাজারিনে কমপক্ষে ৮ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করে।

যেকোনো ঘটনা নিয়ে গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। ঠিক তেমনি ব্ল্যাক নাজারিনের সাথে পহেলা বৈশাখের মিল থাকা, এটাও গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। সর্বোপরি এই ব্ল্যাক নাজারিনের সাথে প্রায় মিলে যায় পহেলা বৈশাখ।[11]

পহেলা বৈশাখে চাপা পড়া বোনের আর্তনাদ:

প্রিয় পাঠক! পহেলা বৈশাখের অন্তরালে কী ঘটছে তা যদি আপনারা জানেন, তাহলে কখনো এই উৎসব পালন করতে উৎসাহী হবেন না। এই দিনে যে শুধু হোলি খেলা আর রং মাখামাখি হয়, বিষয়টা এমন না। এই দিনে আমার আপনার বোনকে গণধর্ষণ করা হয়। একদল কুচক্রী মহল আমার আপনার বোনকে ধর্ষণ করে নববর্ষের সূচনা করে। আর আমরা পালন করি পহেলা বৈশাখ। নিচে কিছু মিডিয়ার শিরোনাম ও তার প্রমাণস্বরূপ তথ্যসূত্র দেওয়া হলো।

পহেলা বৈশাখে ঘুরতে বেরিয়ে গণধর্ষণের শিকার তরুণী,[12] পহেলা বৈশাখের যৌন নির্যাতনে আবার তদন্তের আদেশ,[13] মাদক খাইয়ে নাবালিকাকে গণধর্ষণ! নববর্ষের রাতে হাঁসখালির ছায়া তেহট্টে,[14] পহেলা বৈশাখের মেলায় ঘুরতে যাবে বলে এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার।[15]

এর বাইরে কত ঘটনা যে মিডিয়ার শিরোনামের অন্তরালে পড়ে আছে, সেটা আমি আপনি জানি না। আমার কাছে এমন ভূরি ভূরি প্রমাণ থাকলেও আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় প্রকাশ করলাম না।

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ:

মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হতো ২৫ মার্চ তারিখে। নববর্ষ পালনের কারণ ছিল খ্রিষ্টীয় মতবাদ অনুযায়ী, ঐ দিন মাতা মেরীর নিকট ঐশী বাণী প্রেরিত হয়। পরবর্তীতে ১৮৫২ সালে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপন করে। ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালন হতো। ইয়াহূদীদের ‘রোশ হাসানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইয়াহূদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন সাবাত হিসেবে পালিত হয়। ঠিক এভাবেই প্রতিটি জাতির সকল উৎসব এর মধ্যে ধর্মীয় চিন্তাধারা খুঁজে পাওয়া যাবে।

বিভিন্ন ধর্ম নববর্ষ উদযাপনে উৎসাহ প্রদান করলেও ইসলাম ঠিক তার বিপরীত। কেননা ইসলাম হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে উৎসব বলতে শুধু বছরে দুটি ঈদ।[16]

বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আমরা অনুভব করেছি, পহেলা বৈশাখ হিন্দু সংস্কৃতির একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা মুসলিম হিসেবে বিজাতীয় উৎসব পালন করতে পারি না। কেননা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি বিজাতীয়দের সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত’।[17]

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কোথাও এমন কোনো দলীল নেই যে, পহেলা বৈশাখকে হালাল করবেন; বরং অনেক প্রমাণ আছে পহেলা বৈশাখ হারাম হওয়ার বিষয়ে। সর্বোপরি ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ পালন করা হারাম। কেননা এখানে আক্বীদাগত ও কর্মগত বহু অনাচার সংঘটিত হয়ে থাকে।

পরিশেষে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার শিরোনামে তথাকথিত সুশীলরা পহেলা বৈশাখকে বাংলাদেশী মুসলিম সমাজের উপর চাপিয়ে দিতে চায়, যা আমি আপনি ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছি না। শেষে এই কথাটি বলতে হয়, ইতিহাসের পহেলা বৈশাখকে তথাকথিত সুশীলরা আধুনিক করে বলে বাংলা নববর্ষ।

একজন মুসলিম হিসেবে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কিংবা আপনার পরিবারের কেউ কি কোনোদিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে যায়নি? আপনি না গেলেও আপনার আদরের বোনটা গেছে। আর কত এই ফাঁদে পা দিবেন? চলুন! পহেলা বৈশাখকে না বলি! আর সাথে সাথে এই পহেলা বৈশাখের সঠিক ইতিহাস চর্চা করি। মহান আল্লাহর কাছে তাওফীক্ব চাই।

ইবনু মাসউদ

অর্গানাইজার, রেনেসাঁ লিটারেচার অ্যান্ড কালচারাল ডিপার্টমেন্ট, রেনেসাঁ ফাউন্ডেশন।

[1]. বৈশাখ উইকিপিডিয়া দ্রষ্টব্য।

[2]. যুবায়ের আহমেদ, বাংলা নববর্ষ অজানা বৈশাখ (হিলফুল ফুযূল প্রকাশনী, তৃতীয় সংস্করণ: এপ্রিল ২০১৪), পৃ. ১০।

[3]. দৈনিক সংগ্রাম, ৭ এপ্রিল, ২০১৮।

[4]. প্রাগুক্ত।

[5]. আ স ম শোয়াইব আহমাদ, পহেলা বৈশাখ ইতিহাস ও বিধিবিধান (সম্পাদনায়: ড. আবু বকর মোহাম্মদ জাকারিয়া)।

[6]. আনন্দবাজার পত্রিকা, লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন জানেন? লিংক: http://bit.do/eNyfW

[7]. এই সময়, সাফল্য ও সমৃদ্ধির বাহক মঙ্গল মূর্তি শ্রী গণেশ। লিংক: http://bit.do/eNyg5

[8]. বাংলা ট্রিবিউন, দেবী সরস্বতীর বাহিনি। লিংক: http://bit.do/eNyhp

[9]. এই বেলা, শিবকে চিনেন, কিন্তু তার বাহন নন্দীর মাহাত্ম্য কি জানেন? লিংক: http://bit.do/eNyhB

[10]. দৈনিক ইনকিলাব, ২১ এপ্রিল, ২০১৯।

[11]. ALJAZEERA, Hundreds of thousands join annual catholic procession in Manila. link: http://bit.do/eNyfo

[12]. দৈনিক যুগান্তর, ১৮ এপ্রিল, ২৪। লিংক: https://www.jugantor.com/country-news/796014

[13]. বিবিসি, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬। লিংক: https://www.bbc.com/bengali/news/2016/02/160223_dhaka_univ_new_year_abuse_investigate_again

[14]. ইটিভি ভারত বাংলা টিম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪। লিংক: https://www.google.com/amp/s/www.etvbharat.com/amp/bn/!state/minor-girl-allegedly-gangraped-after-giving-drugs-on-nababarsha-night-in-nadia-wbs24041505297

[15]. চ্যানেল 24, ১৫ এপ্রিল, ২০১৯। লিংক: https://youtu.be/7gzvCBy2l-s?si=3Ptgne5AITjdxSxH

[16]. আবূ দাঊদ, হা/১১৩৪, হাদীছ ছহীহ।

[17]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১, হাসান।

Magazine