দাড়ি বিহীন বড়দের দিকে তাকানো যাবে কিনা?
আমরা আগেই দেখে এসেছি যে, কামভাবের সাথে বা ফেতনার ঝুঁকি থাকলে অথবা কামভাব সৃষ্টি হতে পারে এমন সন্দেহ থাকলে দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকদের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। এমনকি কেউ কেউ এসব অবস্থা থেকে মুক্ত থাকলেও না তাকানোর পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকদের দিকে সব ধরনের তাকানোর ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন এভাবে—
وَكُلُّ قِسْمٍ مِنْ هَذِهِ الْأَقْسَامِ مَتَى كَانَ مَعَهُ شَهْوَةٌ كَانَ حَرَامًا بِلَا رَيْبٍ سَوَاءٌ كَانَتْ شَهْوَةُ تَمَتُّعٍ بِالنَّظَرِ أَوْ كَانَ نَظَرًا بِشَهْوَةِ الْوَطْءِ.
‘তাকানোর এই সবগুলো প্রকারের সাথে যখনই কামভাব বিদ্যমান থাকবে, তখনই তা সন্দেহাতীতভাবে হারাম হয়ে যাবে— সেটা চোখের মজা নেওয়ার কামভাব হোক বা যৌন কামভাব হোক কোনো পার্থক্য নেই’।[1]
তারপর তিনি দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকদের দিকে তাকানোকে ৩ ভাগে ভাগ করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের হুকুম বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
فَصَارَ النَّظَرُ إلَى المردان ثَلَاثَةَ أَقْسَامٍ: أَحَدُهَا مَا تَقْتَرِنُ بِهِ الشَّهْوَةُ. فَهُوَ مُحَرَّمٌ بِالِاتِّفَاقِ. والثَّانِي مَا يُجْزَمُ أَنَّهُ لَا شَهْوَةَ مَعَهُ. كَنَظَرِ الرَّجُلِ الْوَرِعِ إلَى ابْنِهِ الْحَسَنِ وَابْنَتِهِ الْحَسَنَةِ وَأُمِّهِ الْحَسَنَةِ فَهَذَا لَا يَقْتَرِنُ بِهِ شَهْوَةٌ إلَّا أَنْ يَكُونَ الرَّجُلُ مِنْ أَفْجَرِ النَّاسِ وَمَتَى اقْتَرَنَتْ بِهِ الشَّهْوَةُ حَرُمَ... وَإِنَّمَا وَقَعَ النِّزَاعُ بَيْنَ الْعُلَمَاءِ فِي الْقِسْمِ الثَّالِثِ مِنْ النَّظَرِ وَهُوَ النَّظَرُ إلَيْهِ بِغَيْرِ شَهْوَةٍ؛ لَكِنْ مَعَ خَوْفِ ثَوَرَانِهَا فَفِيهِ وَجْهَانِ فِي مَذْهَبِ أَحْمَد أَصَحُّهُمَا وَهُوَ الْمَحْكِيُّ عَنْ نَصِّ الشَّافِعِيِّ وَغَيْرِهِ أَنَّهُ لَا يَجُوزُ. والثَّانِي يَجُوزُ.
‘দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকদের দিকে তাকানো ৩ ভাগে বিভক্ত— (১) তাকানোর সাথে কামভাব যুক্ত থাকা। এ প্রকার তাকানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। (২) দ্বিতীয় প্রকার এমন তাকানো, যার সাথে কামভাব যুক্ত নেই মর্মে নিশ্চয়তা আছে। এই প্রকারের তাকানো জায়েয। যেমন- কোনো পরহেযগার ব্যক্তি কর্তৃক তার সুদর্শন ছেলে এবং সুদর্শনা মেয়ে ও মায়ের দিকে তাকানো। এই তাকানোতে সাধারণত কোনো প্রকার কামভাব যুক্ত হয় না। অবশ্য, ব্যক্তি নিকৃষ্টতম হলে এখানেও কামভাব যুক্ত হতে পারে। যাহোক, যখনই কামভাব যুক্ত হবে, তখনই এই প্রকার তাকানোও হারাম হয়ে যাবে। (৩) কামভাব ছাড়াই তাকানো, তবে এর সাথে কামভাব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এই তৃতীয় প্রকার নিয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য ঘটে গেছে। ইমাম আহমাদের মাযহাবে এ ব্যাপারে দু’টি মত পাওয়া যায়। বিশুদ্ধতম মত হচ্ছে, এই প্রকার তাকানোও নাজায়েয। ইমাম শাফেঈ ও অন্যদের থেকেও এই মতই পাওয়া যায়’।[2]
কাতারভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার ওয়েবসাইট ইসলাম ওয়েব-এর একটি ফতওয়ায় এসেছে, ‘দাড়ি মুণ্ডনকারী ব্যক্তির দিকে তাকালে যদি ফেতনার দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে তাকানো হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে দাড়ি মুণ্ডনকারী ব্যক্তি দাড়িবিহীন কিশোর-যুবক ও বেগানা নারীর মতোই বিবেচিত হবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি দাড়ি মুণ্ডনকারী নাও হয়, কিন্তু তার দিকে তাকালে ফেতনা হয়, তাহলে ফেতনার রাস্তা বন্ধ করার জন্য তার দিকেও তাকানা জায়েয নেই। তার মানে এই নয় যে, যে কেউ সুন্দর হলেই তার দিকে তাকানো যাবে না। বরং তাকানো তখনই হারাম হবে, যখন তাকালে চোখের স্বাদ নেওয়া হবে বা ফেতনায় পড়ার আশঙ্কা থাকবে। আর এটা আসলে দৃষ্টিদানকারীর বিবেচনায় বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- পিতা-মাতা তার দাড়িবিহীন সুন্দর ছেলে বা মেয়ের দিকে তাকালে সাধারণত তিনি ফেতনার আশঙ্কা করেন না’।[3]
সুতরাং এখানকার মূল বিষয়টা হচ্ছে, কামভাব তৈরি হওয়া বা কামভাব তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকা অথবা ফেতনায় নিপতিত হওয়া। কার দিকে বা কীসের দিকে তাকানো হচ্ছে, সেটা সব সময় মূল বিষয় নয়। যার দিকে তাকালে উল্লিখিত ঝুঁকিগুলো বিদ্যমান থাকতে পারে, তার দিকেই তাকানো যাবে না। সেজন্য, দাড়িযুক্ত বা দাড়িমুক্ত যেকোনো শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক বা অন্য যে কারও দিকে তাকালে যদি এসব আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাদের দিকে তাকানো যাবে না।
দাড়ি বিহীন কিশোর-যুবকদেরসাথে মুছাফাহা করার বিধান:
ইতঃপূর্বে আমরা জেনে এসেছি যে, কামভাবসহ বা কামভাব জাগ্রত হওয়ার ও ফেতনা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কাসহ দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকের দিকে তাকানো হারাম। এমনকি কামভাব জাগ্রত হতে পারে এমন সন্দেহ থাকলেও তাকানো হারাম।
আর এটা খুব স্বাভাবিক কথা যে, যার দিকে তাকানো হারাম, তার সাথে মুছাফাহা ও কোলাকুলি করা আরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হারাম। কেননা দৃষ্টি দেওয়ার চেয়ে মুছাফাহা ও কোলাকুলি করা আরও বেশি মারাত্মক। অতএব, উল্লিখিত অবস্থাসমূহে দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকের সাথে মুছাফাহা ও ওঠাবসা করা যাবে না। এ সম্পর্কে কয়েকটি মারফূ‘ বর্ণনা পাওয়া যায়, যেগুলোর বিশুদ্ধতা নিয়ে কথা থাকলেও এর পক্ষে বেশ কিছু শাহেদ বা সমর্থক বর্ণনা ও আছার আছে; তাছাড়া ইসলামী শরী‘আতের সামগ্রিক মূলনীতিও সেগুলোকে সমর্থন করে। একজন তাবেঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,مَا أَنَا بِأَخْوَفَ عَلَى الشَّابِّ النَّاسِكِ مِنْ سَبُعٍ ضَارٍّ مِنَ الْغُلَامِ الْأَمْرَدِ يَقْعُدُ إِلَيْهِ ‘একজন ধার্মিক যুবকের জন্য কিশোর-তরুণকে আমি ক্ষতিকর হিংস্র প্রাণীর চেয়েও বেশি ভয়ংকর মনে করি, যে কিশোর-তরুণের সাথে সে ওঠাবসা করে’।[4] একজন তাবে‘-তাবেঈ হাসান ইবনু যাকওয়ান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, لَا تُجَالِسُوا أَوْلَادَ الْأَغْنِيَاءِ، فَإِنَّ لَهُمْ صُوَرًا كَصُوَرِ النِّسَاءِ، وَهُمْ أَشَدُّ فِتْنَةً مِنَ الْعَذَارَى ‘আপনারা বড়লোকের সন্তানদের সাথে ওঠাবসা করবেন না। কারণ তাদের চেহারা মেয়েদের চেহারার মতো। তারা কুমারী মেয়ের চেয়েও বেশি ফেতনাময়’।[5] মারদাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,وَالْمَنْقُولُ عَنْ الْإِمَامِ أَحْمَدَ - رَحِمَهُ اللَّهُ -: كَرَاهَةُ مُجَالَسَةِ الْغُلَامِ الْحَسَنِ الْوَجْهِ ‘ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে, সুন্দর চেহারার কিশোরের সাথে ওঠাবসা করা মাকরূহ’।[6] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,وَيَنْبَغيْ أَنْ يَحْذَرَ مِنْ مُصَافَحَةِ الْأَمْرَدِ الحَسَنِ ‘দাড়িবিহীন সুশ্রী কিশোর-যুবকের সাথে মুছাফাহা করা থেকে সতর্ক থাকা উচিত’।[7] শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,النَّظَرُ إِلَى الْأَمْرَدِ لِشَهْوَةٍ حَرَامٌ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِيْنَ وَكَذَلِكَ إِلَى ذَوَاتِ الْمَحَارِمِ وَمُصَافَحَتُهُمْ وَالتَّلَذُّذُ بِهِمْ ‘মুসলিমদের ইজমার ভিত্তিতে দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকের দিকে কামভাবসহ তাকানো হারাম। অনুরূপভাবে মাহরাম নারীর দিকে কামভাবসহ তাকানোও হারাম। তাদের সাথে মুছাফাহা করা ও তাদের মাধ্যমে স্বাদ নেওয়াও হারাম’।[8] তিনি আরও বলেন,وَالتَّلَذُّذُ بِمَسِّ الْأَمْرَدِ كَمُصَافَحَتِهِ وَنَحْوِ ذَلِكَ: حَرَامٌ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِينَ كَمَا يَحْرُمُ التَّلَذُّذُ بِمَسِّ ذَوَاتِ مَحَارِمِهِ وَالْمَرْأَةِ الْأَجْنَبِيَّةِ بَلْ الَّذِي عَلَيْهِ أَكْثَرُ الْعُلَمَاءِ أَنَّ ذَلِكَ أَعْظَمُ إثْمًا مِنْ التَّلَذُّذِ بِالْمَرْأَةِ الْأَجْنَبِيَّةِ ‘মাহরাম নারী ও বেগানা নারীকে স্পর্শ করার মাধ্যমে স্বাদ গ্রহণ করা যেমন হারাম, তেমনিভাবে মুছাফাহা বা অন্য কোনোভাবে দাড়িবিহীন কিশোর-যুবককে স্পর্শ করার মাধ্যমে স্বাদ গ্রহণ করাও মুসলিমদের ইজমার ভিত্তিতে হারাম। বরং অধিকাংশ আলেমের দৃষ্টিতে, এটা বেগানা নারীর মাধ্যমে স্বাদ নেওয়ার চেয়েও বড় পাপ’।[9]
সম্মানিত পাঠক! আপনি প্রথম শুনে থাকলে নিশ্চয় আশ্চর্য হবেন যে, দাড়িবিহীন কিশোর-যুবককে কামভাবসহ স্পর্শ করলে ওযূ ভেঙে যাবে মর্মে উলামায়ে কেরামের জোরালো মত রয়েছে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ এ সম্পর্কিত দু’টি মত উল্লেখ করার পর ওযূ ভেঙে যাওয়ার মতটিকে প্রাধান্য দেন এবং এভাবে মন্তব্য করেন,وَالْقَوْلُ الْأَوَّلُ أَظْهَرُ ‘প্রথম মতটিই বেশি অগ্রাধিকারযোগ্য’।[10]
চিন্তা করতে পেরেছেন, আমাদের কতটা সাবধান থাকতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন।
কিশোর-যুবকদের সাথে নির্জনে যাওয়ার বা থাকারবিধান:
প্রিয় পাঠক! আপনি যদি এই লেখাটি প্রথম থেকে পড়ে থাকেন, তাহলে কিশোর-যুবকদের সাথে নির্জনে যাওয়ার বা থাকার বিধান অনুমান করতে পারার কথা। জি, আপনার অনুমানই ঠিক। কিশোর-যুবকদের সাথে নির্জনে যাওয়া বা থাকা যাবে না। বরং শাফেঈ ও হাম্বালী মাযহাবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাক বা না থাক শর্তহীনভাবে তাদের সাথে নির্জনে যাওয়া যাবে না মর্মে বক্তব্য এসেছে।[11] হাম্বালী মাযহাবে ইলম ও আদব শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যেও তাদের সাথে নির্জনে থাকা যাবে না মর্মে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। অতএব, যার ব্যাপারে জানা যাবে যে, এসব কিশোর-তরুণকে ভালোবাসে বা তাদের সাথে বিশেষভাবে ওঠাবসা করে, তাকে পাঠদান থেকে সরিয়ে দিতে হবে।[12]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,وَأمَّا الخَلْوَةُ بِالأَمْرَدِ، فَأَشَدُّ مِنَ النَّظَرِ إِلَيْهِ، لِأَنَّهَا أَفْحَشُ وَأَقْرَبُ إِلَى الشَّرِّ، وَسَوَاءٌ مَنْ خَلَا بِهِ مَنْسُوبٌ إِلَى الصَّلاحِ أَوْ غَيْرِهِ ‘দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকের দিকে তাকানোর চেয়ে তার সাথে নির্জনে যাওয়া বা থাকা বেশি মারাত্মক। কারণ এটা বেশি জঘন্য ও অকল্যাণের বেশি নিকটবর্তী। নির্জনে যাওয়া সেই লোকটি সৎ হোক বা অন্য কিছু হোক’।[13] তিনি আরও বলেন,وَالْمُخْتَارُ أَنَّ الْخَلْوَةَ بِالْأَمْرَدِ الْأَجْنَبِيِّ الْحَسَنِ كَالْمَرْأَةِ فَتَحْرُمُ الْخَلْوَةُ بِهِ حَيْثُ حَرُمَتْ بِالْمَرْأَةِ إِلَّا إِذَا كَانَ فِي جَمْعٍ مِنَ الرِّجَالِ الْمَصُونَيْنَ ‘অগ্রাধিকারযোগ্য মত হচ্ছে, বাইরের[14] সুশ্রী কোনো দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকের সাথে নির্জনে যাওয়া মেয়েদের সাথে নির্জনে যাওয়ার মতোই। অতএব, কোনো নারীর সাথে নির্জনে যাওয়া যেমন হারাম, দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকের সাথে নির্জনে যাওয়াও তেমনি হারাম। তবে রক্ষণশীল একদল পুরুষের উপস্থিতিতে তার সাথে থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়’।[15]
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, أَمَّا صُحْبَةُ المردان عَلَى وَجْهِ الِاخْتِصَاصِ بِأَحَدِهِمْ -كَمَا يَفْعَلُونَهُ- مَعَ مَا يَنْضَمُّ إلَى ذَلِكَ مِنْ الْخَلْوَةِ بِالْأَمْرَدِ الْحَسَنِ وَمَبِيتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَنَحْوِ ذَلِكَ. فَهَذَا مِنْ أَفْحَشِ الْمُنْكَرَاتِ عِنْدَ الْمُسْلِمِينَ وَعِنْدَ الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى وَغَيْرِهِمْ ‘দাড়িবিহীন কিশোর-যুবককে সঙ্গ দেওয়া— যেমনটা অনেকেই করে থাকে; বিশেষভাবে তার সাথে নির্জনে যাওয়া, কোনো পুরুষের সাথে কিশোর-যুবকের রাত্রিযাপন করা ইত্যাদি মুসলিমদের নিকট, ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানদের নিকট এবং অন্যদের নিকট অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ’।[16]
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,لَا تَجُوْزُ الْخَلْوَةُ بِالْأَمْرَدِ، وَلَوْ بِقَصْدِ التَّعْلِيْمِ؛ لِأَنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِيْ مِنِ ابْنِ آدَمَ مَجْرَى الدَّمِ، وَكَمْ مِنْ أُناسٍ كَانُوْا قَتْلَى لِهَذَا الْأَمْرَدِ، فَأَصْبَحُوْا فَرِيْسَةً لِلشَّيْطَانِ وَالْأَهْوَاءِ، وَهَذِهِ الْمَسْأَلَةُ يَجِبُ الْحَذَرُ مِنْهَا ‘পাঠদানের উদ্দেশ্যে হলেও দাড়িবিহীন কিশোর-যুবকদের সাথে নির্জনে থাকা জায়েয নেই। কেননা শয়তান আদমসন্তানের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হয়। কত মানুষ যে এই কিশোর-যুবকদের পেছনে পড়ে মরেছে, তার ইয়ত্তা নেই। এভাবে তারা শয়তান ও প্রবৃত্তির শিকারে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই ব্যাপারটিতে সতর্ক হওয়া আবশ্যক’।[17]
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
(ইনশা-আল্লাহ চলবে)
* বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ, ১৫/৪১৭।
[2]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ, ১৫/৪১৭-৪১৯।
[3]. দ্রষ্টব্য: https://www.islamweb.net/ar/fatwa/111329
[4]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, আছার নং ৫০১৩।
[5]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, আছার নং ৫০১৪।
[6]. আল-মারদাবী, আল-ইনছাফ ফী মা‘রিফাতির রজিহ মিনাল খিলাফ (দারু এহইয়াইত তুরাছিল আরাবী, ২য় মুদ্রণ, তা. বি.), ৮/২৯।
[7]. নববী, আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব (দারুল ফিকর, তা. বি.), ৪/৬৩৫।
[8]. ইবনু তাইমিয়াহ, মুখতাছারুল ফাতাওয়া আল-মিছরিয়্যাহ (মাতবা‘আতুস সুন্নাহ আল-মুহাম্মাদিয়্যাহ), পৃ. ২৯।
[9]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ, ২১/২৪৫।
[10]. ইবনু তাইমিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১ম মুদ্রণ: ১৪০৮ হি./১৯৮৭ খ্রি.), ১/২৮২।
[11]. দ্রষ্টব্য: ইবনু মুফলেহ, আল-ফুরূ‘ (মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ১ম মুদ্রণ: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি.), ৮/১৯০।
[12]. প্রাগুক্ত।
[13]. ফাতাওয়ান নাবাবী, পৃ. ৯৯-১০০।
[14]. এখানে বাইরের বলতে যাদের দিকে তাকালে সাধারণত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না, তাদের বাইরের মানুষ উদ্দেশ্য। যেমন- ঔরসজাত সন্তান, মা, সহোদর বোন প্রমুখের দিকে তাকালে বা নির্জনে থাকলে সাধারণত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। সুতরাং এধরনের মানুষের বাইরের মানুষই এখানে উদ্দেশ্য।
[15]. আল-মিনহাজ শারহু ছহীহি মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ, ৯/১০৯।
[16]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ, ১১/৫৪২।
[17]. উছাইমীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ আলা যাদিল মুস্তাক্বনে‘ (দারুবনিল জাওযী, ১ম মুদ্রণ: ১৪২২-১৪২৮ হি.), ১/২৯৪-২৯৫।