মাসিক আল-ইতিছাম
জুলাই-২০২৫
আক্বীদা
প্রশ্ন (১): জান্নাতে আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে আমাদের আক্বীদা বা বিশ্বাস কী?
-আনোয়ার
বগুড়া।
উত্তর: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত বিশ্বাস করে যে, মুমিনগণ জান্নাতে আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে পাবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল, তারা তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে’ (আল-কিয়ামাহ, ৭৫/২২-২৩)। আর আল্লাহর দর্শনই হচ্ছে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। ছুহায়ব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতবাসীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, তোমরা কি আরও কিছু চাও, যা আমি তোমাদেরকে অতিরিক্ত প্রদান করব? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের মুখমগুলিকে উজ্জ্বল করেননি? আপনি কি আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাননি এবং আপনি কি আমাদেরকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেননি? আপনার এত বড় বড় নেয়ামতের পর আর কী অবশিষ্ট আছে, যা আমরা চাইব?’ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অতঃপর আল্লাহ তাআলার ও জান্নাতীদের মধ্যে হতে হিজাব বা পর্দা তুলে ফেলা হবে, ফলে তারা আল্লাহ তাআলার দীদার বা দর্শন লাভ করবে। তখন তারা বুঝতে পারবে যে, বস্তুত আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ ও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় কোনো বস্তুই এ যাবৎ তাদেরকে প্রদান করা হয়নি’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮১)।
প্রশ্ন (২): আমরা কীভাবে তাক্বওয়া অর্জন করতে পারি?
-শাহাবুদ্দীন
সদর, যশোর।
উত্তর: তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি হলো অন্তরের জিনিস। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তাক্বওয়া এখানে আছে’- এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার তাঁর বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৬৪৩৫)। তাক্বওয়া বৃদ্ধি করার মাধ্যম হলো- ১. আল্লাহর আদেশকৃত কাজগুলো করা, নিষেধকৃত কাজগুলো ছেড়ে দেওয়া এবং তাঁর দেখানো পথের উপর চলা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা সৎপথ অবলম্বন করে, তাদেরকে আল্লাহ সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে ধর্মভীরু হওয়ার শক্তি দান করেন’ (মুহাম্মাদ, ৪৭/১৭)। ২. বেশি বেশি ছিয়াম পালন করা তাক্বওয়া বৃদ্ধির একটি অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য ছিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাক্বওয়ার অধিকারী হতে পার’ (আল-বাকারা, ২/১৮৩)। ৩. উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া তাক্বওয়া অর্জনের একটি মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও যমিনের সমান, যা মুত্তাক্বীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৩-১৩৪)। ৪. আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হেদায়াতকে আঁকড়ে ধরা ও বিদআত থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ৫. নিয়মিত ছালাত আদায় করা। ছালাত তাক্বওয়ার অন্যতম বড় চর্চা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় ছালাত অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’ (আল-আনকাবূত, ২৯/৪৫)। ৬. সৎ ও পরহেজগার বন্ধু বানানো। কারণ ভালো বন্ধু ও পরিবেশ একজন ব্যক্তিকে সৎ পথে পরিচালিত করে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধুদের দ্বীনের উপর থাকে। সুতরাং তোমরা দেখো কার সঙ্গে মেলামেশা করছো’ (মিশকাত, হা/৫০১৯)। ৭. কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রতিদিন কুরআন পাঠ করা, তার অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝা এবং জীবনে তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, ‘এই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, এটা মুত্তাক্বীদের জন্য পথনির্দেশ’ (আল-বাকারা, ২/২)। ৮. দুনিয়াকে নয়, আখেরাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া। দুনিয়ার ফিতনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং আখেরাতের জবাবদিহির ভয় রাখা। ৯. নিয়মিত আত্মসমালোচনা ও তওবা করা। প্রতিদিন নিজের কাজের হিসাব রাখা, ভুল হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন ৭০-১০০ বার তওবা করতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০২)। ১০. এ দু‘আ পড়া, اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى، وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২১)। আল্লাহ বলেন, ‘এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার’ (আল-আনআম, ৬/১৫৩)।
প্রশ্ন (৩): আমীর (রাষ্ট্রপ্রধান) যদি মুশরিক (তাগূতের অনুসারী) হয়, সেক্ষেত্রে একজন মুসলিম নাগরিকের করণীয় কী? মুশরিক (তাগূতের অনুসারী) আমীর (রাষ্ট্রপ্রধান)-কে ট্যাক্স দেওয়া যাবে কি? মুশরিক আমীরের মানব রচিত আইন মানা যাবে কি? এসকল ক্ষেত্রে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকনির্দেশনা কী?
-অনিক ইবনে হাসান।
উত্তর: সরকার যদি অমুসলিম হয়, তাহলে একজন মুসলিম তার দেশে বসবাস করলে সম্ভবপর সরকারি নিয়ম মেনেই তাকে চলতে হবে। তাতে যদি কোনো জায়গায় ইসলামকে অস্বীকার করতে হয়, তাহলে সেখানে থাকা যাবে না। আর সরকার যদি মুসলিম হয় এবং ছালাতকে অস্বীকার না করে, তাহলে সম্ভবপর সে সরকারের নিয়মকানুন মেনেই চলতে হবে। উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের উপর এরূপ কতিপয় আমীর নিযুক্ত করা হবে (যারা ভালো-মন্দ উভয় কাজই করবে), তোমরা তা বুঝতে পারবে এবং অপছন্দও করবে। যে তাদের অপছন্দ করল, সে মুক্তি পেল এবং যে প্রত্যাখ্যান করল, সে নিরাপদ হলো। কিন্তু যে (তাদের প্রতি) সন্তুষ্ট থাকল এবং অনুসরণ করল, সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো’। লোকেরা জানতে চাইল, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? তিনি বললেন, ‘না, যতক্ষণ তারা ছালাত আদায়কারী থাকবে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৪)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন, ‘আমার পরে তোমরা অবশ্যই এমন স্বার্থপর শাসক ও শরীআহ বিরোধী কাজ দেখতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না’। তারা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাহলে আমাদের জন্য কী হুকুম করছেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তাদের হক্ব পূর্ণরূপে আদায় করবে আর তোমাদের হক্ব আল্লাহর কাছে চাইবে (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫২)।
প্রশ্ন (৪): মুসলিমরা বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবে কি?
-শহীদ আলম
রাজশাহী।
উত্তর: মুসলিমরা বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনগণ ছাড়া কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না’ (আন-নিসা, ৪/১৪৪)। তিনি আরও বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও নাছারাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু’ (আল-মায়েদা, ৫/৫১)। তবে তাদের সাথে সদাচরণ করা যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে সেইসব লোকের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায়বিচারে নিষেধ করেন না, যারা তোমাদের সাথে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করে না এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দেয় না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। তবে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে, যারা তোমাদের সাথে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে এবং তোমাদেরকে বের করতে সহায়তা করেছে’ (আল-মুমতাহিনা, ৬০/৮-৯)।
প্রশ্ন (৫): মৃত বাচ্চা জন্ম নিলে তার কি আকীকা দিতে হবে? নিষ্পাপ হিসেবে সে বাচ্চা কি তার পিতামাতার জন্য কিয়ামতের মাঠে সুপারিশ করতে পারবে? উল্লেখ্য, বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ২/৩ দিন আগে নড়াচড়া করেছিল।
-হাকীম নাহিদ পারভেজ
সাতক্ষীরা।
উত্তর: জন্মের পর সন্তান যদি সপ্তম দিনের আগে মারা যায় তাহলে তার আকীকা করা লাগবে না। কেননা রাসূল সা. বলেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা করতে হয়’ (আবূ দাঊদ, হা/২৮৩৮)। বিস্তারিত দেখুন- তুহফাতুল আহওয়াজী, ৫/৯৮। আর মায়ের পেটে বাচ্চার বয়স যদি ৪ (চার) মাস হয়ে যায়, তাহলে সেই বাচ্চা বাবা-মায়ের জন্য সুপারিশ করবে। চার মাস বা ১২০ দিনের আগে বাচ্চা হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা চার মাস পর তাতে রূহ দেওয়া হয় এবং তার আমল, রিযিক, আয়ু ও ভালো-মন্দ লিপিবদ্ধ করা হয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাটবাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩২০৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৪৩)।
প্রশ্ন (৬): কুরআনের আয়াত অর্থসহ বুঝে পড়া কি ফরয? অর্থ না বুঝলে কি পাপ হবে?
উত্তর: মানুষকে কুরআন বুঝে ও সুন্দর উচ্চারণে পড়তে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর কুরআন তিলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে তারতীল সহকারে’ (আল-মুযযাম্মিল, ৭৩/৪)। তবে না বুঝলেও কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। মাখরাজ সুন্দর করে উচ্চারণ করতে না পারলেও তেলাওয়াত করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য যা সহজ, তা পাঠ করো’ (আল-মুযযাম্মিল, ৭৩/২০)। এসময় চেষ্টার কারণে সে দ্বিগুণ নেকী পাবে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৮)।
প্রশ্ন (৭): আমি প্রায়ই স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখি- মৃত্যু বা বিপদ। ঘুম থেকে উঠে দেখি, বাস্তবেও এমন ঘটনা ঘটে গেছে। ফজরের ছালাতের পর ঘুমালে এমন স্বপ্ন বেশি দেখি। স্বপ্নে কিছু দেখলে আমি বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলি, শয়তান থেকে আশ্রয় চাই এবং দুই রাকআত ছালাত পড়ি; তবুও অনেক সময় বিপদ এড়াতে পারি না। কেন এমন হয়? আমি এসব স্বপ্ন দেখি কেন? খারাপ স্বপ্ন ও এর ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় কী?
-জামান
ঢাকা।
উত্তর: খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। খারাপ স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করে শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে ঘুমাবে, তা কারো কাছে বলবে না। তাহলে এতে কোনো ক্ষতি হবে না। আবূ ক্বাতাদা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সৎ ও ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অতএব, তোমাদের কেউ যখন ভীতিকর মন্দ স্বপ্ন দেখে, তখন সে যেন তার বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করে আর শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। কেননা এরূপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩২৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৬১৭)। আরেক বর্ণনায় আছে, ‘সে যেন পার্শ্ব পরিবর্তন করে ঘুমায়’ (সুনানে আবী দাঊদ, হা/৫০২২)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সে যেন দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৭৯৮)।
প্রশ্ন (৮): আমার মা কিছুদিন আগে একটা হাদীছের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, যদি প্রতি ১০০০ মানুষের মধ্যে ১ জন মানুষ জান্নাতে যায়; তাহলে আল্লাহ কাদের তওবা কবুল করল? আমি এ্র প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই।
-বাপ্পি হোসেন
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
উত্তর: ১০০০ জনের মাঝে ৯৯৯ জন হবে ইয়াজুজ মা‘জুজ থেকে আর একজন হবে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতের মাঝ থেকে। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ ডাকবেন, হে আদম! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমার সৌভাগ্য, আমি হাযির এবং সকল কল্যাণ আপনার হতেই। তখন আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদেরকে বের করে দাও। আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, জাহান্নামী কারা? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন। আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন তুমি দেখবে প্রতিটি দুগ্ধদায়িনী ভুলে যাবে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে আর প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে, আর মানুষকে দেখবে মাতাল, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে মাতাল নয়; কিন্তু আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন (যার কারণে তাদের ঐ অবস্থা ঘটবে) (আল-হজ্জ, ২২/২)। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের মধ্যে সেই একজন কে? তিনি বললেন, ‘তোমরা সুসংবাদ গ্রহন করো। কেননা তোমাদের মধ্যে হতে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ-মা‘জুজ হবে’। অতঃপর তিনি বললেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! আমি আশা করি, তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর এক-তৃতীয়াংশ হবে’। (আবূ সাঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন) আমরা এ সংবাদ শুনে আবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বললেন, ‘আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতীদের অর্ধেক হবে’। এ কথা শুনে আমরা আবারও আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বললেন, ‘তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কাল পশম অথবা কালো ষাঁড়ের শরীরে কয়েকটি সাদা পশম’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৪৮)।
ছালাত
প্রশ্ন (৯): পুরুষ ইমামের যদি ভুল হয়, তাহলে পেছন থেকে মুছল্লীগণ ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে এবং মহিলাদের জামাআতে যদি ইমামের ভুল হয়, তাহলে পেছন থেকে মুছল্লীগণ হাতের উপর তালু রেখে শব্দ করবে। এমনি হাদীছ শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের এখানে ইমামের ভুল হলে পেছন থেকে মুছল্লীগণ ইমাম যেই যায়গায় ভুল করে তারা সেই আয়াত বলে দেয়। এটা কি সঠিক?
-আব্দুর রাকিব
ময়মনসিংহ।
উত্তর: ছালাত আদায়ে ইমামের কোনো ভুল হলে মুছল্লীগণ তা সংশোধন করে দিবেন। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(ইমাম যখন ছালাতে ভুল করে তাকে সতর্ক করার জন্য) পুরুষ মুক্তাদীগণ ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে এবং স্ত্রীলোকেরা ‘হাততালি’ দিবে’ (তিরমিযী, হা/৩৬৯)। ইমামের কিরাআতে কোনো ভুল হলে বা ভুলে গেলে মুক্তাদীগণ তা স্মরণ করিয়ে দিবে। মিসওয়ার ইবনে ইয়াযীদ আল-মালিকী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে ছালাত আদায় করি। ছালাতের মধ্যে তাঁর পঠিত আয়াতের কিছু অংশ ভুলবশত ছুটে যায়। তখন ছালাত শেষে এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি অমুক অমুক আয়াত ছেড়ে দিয়েছেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘তুমি তখন আমাকে স্মরণ করিয়ে দাওনি কেন?’ (আবূ দাঊদ, হা/৯০৭)। সুতরাং ইমামের কিরাআতে ভুল হলে বা কোনো আয়াত ছুটে গেলে বা ভুলে গেলে মুক্তাদীদের দায়িত্ব হলো সেই আয়াত পড়ে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
প্রশ্ন (১০): মহিলাদের ফরয ছালাতে ইক্বামত দেওয়া কি জরুরী?
–ফিরোজ কবীর
তংকাশিবপুর, মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর: মহিলাদের ইক্বামত দিয়ে ছালাত পড়াই সুন্নাত। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি আযান ও ইক্বামত দিয়ে মহিলাদের ইমামতি করাতেন। তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন (সুনানে কুবরা, বায়হাক্বী, হা/১৯৪৩)।
প্রশ্ন (১১): ছালাতে রুকূ থেকে সিজদায় যেতে হাত আগে মাটিতে দিব না হাঁটু আগে মাটিতে দিব?
-কফিল উদ্দীন
মালেয়শিয়া।
উত্তর: সিজদায় যাওয়ার সময় আগে মাটিতে হাত রাখাই সুন্নাত। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করবে, তখন যেন উটের শয়নের মতো না করে। সে যেন দুই হাঁটুর আগে দুই হাত রাখে’ (আবূ দাঊদ, হা/৮৪০)। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি যখন সিজদা করতেন, তখন দুই হাঁটু রাখার আগে দুই হাত রাখতেন এবং তিনি বলতেন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করতেন (হাকেম, হা/৮২১; শারহু মাআনীল আছার, হা/১৫১৩; ইবনু খুযায়মা, হা/৬২৭)। আগে হাঁটু রাখার পক্ষে যে কয়টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ (আবূ দাঊদ, হা/৮৩৮ ও ৮৩৯)।
প্রশ্ন (১২): ছালাতের মাঝে হাই আসলে করণীয় কী?
-মাজিদুল ইসলাম
নোয়াখালী।
উত্তর: ছালাতে হাই আসলে যথাসাধ্য তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। হাই আসার কারণে ছালাতের কোনো ক্ষতি হবে না। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হাই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং তোমাদের কারও যখন হাই আসে, তখন যেন সে তা প্রতিরোধ করে। কারণ কেউ যখন ‘হা’ বলে, তখন শয়তান হাসে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩১১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৯৪)। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হাঁচি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তোমাদের মাঝে কেউ হাই তুললে সে যেন মুখের উপর হাত রাখে’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯৪)। সুতরাং ছালাতে হাই আসলে যথাসাধ্য তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। সক্ষম না হলে, হাই উঠার সময় মুখে হাত দিবে (আল-আযকার, ‘নববী’)।
প্রশ্ন (১৩): মসজিদের দেওয়ালে ‘সামনের কাতার পূরণ করুন এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখুন’ এভাবে লেখা যাবে কি?
-আকিমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর: এগুলো মসজিদের সামনে লিখে রাখা যাবে না। কারণ এতে মুছল্লীদের দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ হয় এবং তাদের ছালাতের মাঝে বিঘ্ন ঘটে (ছহীহ বুখারী, হা/৩৭৩)। তবে মসজিদে মুছল্লীদেরকে ‘কাতার সোজা করুন ও সামনের কাতার পূরণ করুন’ বলা শরীআতসম্মত ও সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং কাতার সোজা করার ব্যাপারে জোর দিতেন এবং বলেন, سووا صفوفكم، فإن تسوية الصف من تمام الصلاة. ‘তোমরা কাতার সোজা করো, কেননা কাতার সোজা করা ছালাতের পরিপূর্ণতার অন্তর্ভুক্ত’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭২২)। ইমাম ছাহেব এই বাক্যগুলো বলবেন। কিন্তু মসজিদের দেওয়ালে ‘সামনের কাতার পূরণ করুন এবং মোবাইল ফোন বন্ধ করুন’ লিখে রাখা যাবে না।
প্রশ্ন (১৪): বাচ্চারা মসজিদে আসলে তাদের ধমক দেওয়া বা নিষেধ করা যাবে কি?
-হাসান আলী
নাটোর।
উত্তর: কোমলমতি শিশুদের সর্বদা ভালোবাসা আর আদর-যত্ন দিয়ে মানুষ করতে হবে। তাদের সাথে কখনো রূঢ় আচরণ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করল না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৭৩৩; মিশকাত, হা/৪৯৭০)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদায় যেতেন, তখন হাসান ও হুসাইন তাঁর পিঠে চড়তেন। তারা যখন তাদের বাধা দিতে চাইত, তখন তিনি ইঙ্গিত করতেন, তোমরা তাদের ছেড়ে দাও। যখন তিনি ছালাত শেষ করতেন, তখন তাদের কোলে রাখতেন আর বলতেন, ‘যে আমাকে ভালোবাসে সে যেন এদের ভালোবাসে’ (মুসনাদে ইবনু আবী শায়বা, হা/৩৯৮; সিলসিলা ছহীহা, হা/৩১২)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে বড় পরহেজগার আর কে আছে? তিনি যদি ছালাতরত অবস্থায় বাচ্চা কোলে নিয়ে ছালাত আদায় করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন আমাদের বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে গেলে ধমক দিব, তাদের নিয়ে ছালাত আদায় করতে পারব না? তবে এমনিতেই দুষ্টুমি লাফালাফি করে পরিবেশ নষ্ট করলে, পরিবেশ ঠিক করার জন্য সতর্ক করতে পারে।
প্রশ্ন (১৫): পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের মধ্যে কেউ যদি এক ওয়াক্ত ছালাত ইচ্ছাকৃত ত্যাগ করে, তাহলে কি সে পুরোপুরি কাফের হয়ে যাবে? স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি এরকম হয়, তাহলে কি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে? স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন এরকম করলে করণীয় কী?
-নজরুল ইসলাম।
উত্তর: ইচ্ছা করে ছালাত ত্যাগ করা দুই ধরনের- ১. ছালাতকে অস্বীকার করা। এসময় মানুষ মুরতাদ হয়ে যাবে এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ২. শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে ছালাত আদায় করে না। ছালাতের কথা বললে বলে, পড়ব। এমতাবস্থায় সে বড় পাপী হবে এবং আল্লাহর যিম্মা তার উপর থেকে উঠে যাবে। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইচ্ছা করে ছালাত পরিত্যাগ করবে না। তা করলে আল্লাহর যিম্মাদারী উঠে যাবে’ (ইবনু মাজাহ, হা/৪০৩৪)।
প্রশ্ন (১৬): জনৈক আলেম বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা মসজিদে বিলম্বে জামাআতে ছালাত আদায় করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো মসজিদে বিলম্বে ছালাত আদায় করলে বাড়িতে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করতে হবে। এ বক্তব্য কি ছহীহ?
-আকিমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর: প্রথমত, সব ওয়াক্তের ক্ষেত্রে এমন হয় না। শুধুমাত্র ফজর ও আছরের ছালাতের ক্ষেত্রে সাধারণত এমন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে যে ওয়াক্তে সময়মতো আদায় করা হবে না সেই ওয়াক্ত ব্যতীত বাকি ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে পড়াই উচিত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা’ (তিরমিযী, হা/১৭০)। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে বলেছিলেন, ‘হে আবূ যার! আমার পরে অচিরেই এমন আমীর বা শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে যারা একেবারে শেষ ওয়াক্তে ছালাত আদায় করবে। এরূপ হলে তুমি কিন্তু সময়মতো (ছালাতের উত্তম সময়ে) ছালাত আদায় করে নিবে। পরে যদি তুমি তাদের সাথে ছালাত আদায় কর, তাহলে তা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি তা না হয়, তাহলে তুমি অন্তত তোমার ছালাত রক্ষা করতে সক্ষম হলে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৫২)।
প্রশ্ন (১৭): বিদআতীদের সাথে একত্রে হাত তুলে মুনাজাত না করে একা মুনাজাত করা যাবে কি?
–মো. আব্দুর রহিম
শিবগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : শরীআত সিদ্ধ জায়গা ব্যতীত অন্য স্থানে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করা বিদআত। সুতরাং এমন স্থানে যে কারো সাথে সম্মিলিত মুনাজাতে অংশগ্রহণ করা যাবে না। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু নতুন চালু করল, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহলে তা পরিত্যাজ্য’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৫৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮)। একাকী সময়ের গতিতে প্রয়োজন সাপেক্ষে দু‘আ করবে; নিয়মিত নয়।
কবর
প্রশ্ন (১৮): মহিলাদের লাশ কি মাহরামকেই কবরে নামাতে হবে নাকি অন্য কেউ নামাতে পারে?
-আহনাফ
রাজশাহী।
উত্তর: দাফনে পারদর্শী ব্যক্তিই লাশ কবরস্থ করার দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে মাহরাম আর গায়রে মাহরাম বিবেচ্য নয়। আনাস ইবনু মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যার জানাযায় উপস্থিত হলাম। এমতাবস্থায় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের নিকট বসা ছিলেন। আমি দেখলাম তাঁর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু ঝরছে। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি কেউ এমন আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়নি?’ আবূ তালহা রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হ্যাঁ, আছি, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি। তিনি বললেন, ‘(মাইয়্যেতকে কবরে রাখার জন্য) তুমিই কবরে নামো’। তখন তিনি কবরে নামলেন (ছহীহ বুখারী, হা/১৬৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৭৫)। এই হাদীছে আবূ তালহা রাযিয়াল্লাহু আনহু নবী কন্যার মাহরাম ছিলেন না। তবে মাহরামের মধ্যে এমন ব্যক্তি পাওয়া গেলে তা উত্তম। কাসেম ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর যে স্ত্রী মারা যান, তিনি হলেন যায়নাব বিনতু জাহশ রাযিয়াল্লাহু আনহা। …তার মৃত্যুর পর উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য স্ত্রীদের নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, কে তাকে গোসল দিবে, তাকে কর্পূর লাগাবে এবং কাফন দিবে? তারা বললেন, আমরা। তারা সে দায়িত্ব বাস্তবায়ন করলেন। আবার সংবাদ পাঠালেন কে তাকে কবরস্থ করবে? তারা বললেন, তার জীবদ্দশায় তার সাথে যাদের সাক্ষাৎ করা বৈধ ছিল। উপস্থিত ব্যক্তিরা বললেন, হে লোক সকল! তোমরা সরে যাও। সকলকে কবরের পাশ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হলো। অতঃপর দুইজন তার পরিবারের (মাহরামের) দুইজন পুরুষ তাকে কবরস্থ করলেন (জামেউল আহাদীছ, হা/৩১২৬৬; কানযুল উম্মাল, হা/৩৭৭৯৭)।
জায়েয-নাজায়েয
প্রশ্ন (১৯):প্রত্যেক পুরুষের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় পড়া ফরয হয়, তাহলে ইদানীং শহরে কিছু কিছু মুছল্লী পাওয়া যায় যাদের জুব্বার কারণে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে আছে। শরীআতের ভিত্তিতে এটা কতটুকু জায়েয?
উত্তর: টাখনুর নিচে কাপড় পড়া হারাম। টাখনুর নিচে কাপড় পরার পরিণতি জাহান্নাম। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইযারের যে পরিমাণ টাখনুর নিচে যাবে, সে পরিমাণ জাহান্নামে যাবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৭১)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি গর্বের সঙ্গে পরনের কাপড় টাখনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফেরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৬৫)। শরীরের উপর থেকে যে কাপড় পরিধান করা হয়, যেমন- জামা, পায়জামা, লুঙ্গি সেগুলো অত্র হাদীছের অন্তর্ভুক্ত। আর যেগুলো পায়ের নিচ দিক থেকে পরিধান করা হয়, যেমন- জুতা, মোজা এগুলো অত্র হাদীছের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং জুব্বা এত লম্বা হওয়া যাবে না, যা টাখনুর নিচে চলে যায়। এমন জুব্বা পরিধান করা যাবে না।
প্রশ্ন (২০):হিন্দু বা বিধর্মীদেরকে সালাম দেওয়া জায়েয হবে কি? অনেক সময় তারাই আগে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলে, তখন কি তাদের ‘আদাব’ বলা যাবে? বা কী বলে উত্তর দিব?
উত্তর: হিন্দু বা কোনো বিধর্মীকে আগে সালাম দেওয়া যাবে না। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ইয়াহূদী ও নাছারাদেরকে প্রথমে সালাম দিও না। তাদের সাথে পথে দেখা হলে সংকীর্ণ পাশ দিয়ে যেতে বাধ্য করো’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬৭)। তবে তারা সালাম দিলে শুধু ‘ওয়ালাইকুম’ বলে উত্তর দিতে হবে। আদাব বা তাদের ধর্মীয় কোনো কথা বলা যাবে না। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো আহলে কিতাব তোমাদেরকে সালাম দিবে, তখন তোমরা বলো ওয়ালাইকুম’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯০৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬৩)।
প্রশ্ন (২১): আমার চাচার এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলেটা প্রচণ্ড নেশাগ্রস্ত এবং ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তিনি আশঙ্কা করছেন যে, তার মৃত্যুর পরে মেয়েদেরকে সম্পত্তি দেওয়া হবে না। তাই তিনি জীবিত অবস্থায় কি তার মেয়েদেরকে সম্পত্তি বণ্টন করে যেতে পারবেন? দয়া করে উত্তরটি জানাবেন।
-মো. রাইহান
ঢাকা।
উত্তর: শরীআতের বিধান অনুযায়ী মৃত্যুর পর বণ্টন হওয়াই কল্যাণকর। তবে মৃত্যুর আগে বণ্টন করতে চাইলে অংশ হারেই করতে হবে। নু‘মান বিন বাশীরকে কিছু দেওয়া হলে তার বাবাকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম করেছ?’ তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তবে আল্লাহকে ভয় করো এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো’। অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তার দান ফিরিয়ে নিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/২৫৮৭)।
প্রশ্ন (২২): গর্ভবতী মহিলাদেরকে সরকার থেকে গর্ভবতী ভাতা হিসেবে বেশ কিছু টাকা দিয়ে থাকে। এই টাকা নেওয়া এবং ভাতার জন্য আবেদন করার কাগজপত্রের সাথে একটি মুখমণ্ডল খোলা রেখে পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দেওয়া কি বৈধ হবে?
-মাসূদ বিন আইয়ুব
মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।
উত্তর: প্রথমত, উক্ত ভাতা গ্রহণের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাবলির যথাযথভাবে পূরণ করতে সক্ষম হলে এবং শরীআতের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো শর্ত না থাকলে ভাতা গ্রহণে কোনো সমস্যা নেই। কোনো দুর্নীতির আশ্রয় না নিয়ে যথাযথ হক্বদার হলে সে তা গ্রহণ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, জরুরী প্রয়োজন না হলে মেয়েদের মুখমণ্ডল খোলা রেখে ছবি তোলা বা তা কোথাও ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে জরুরী প্রয়োজন হলে ব্যবহার করা যায় (মুগনী, ৭/৪৫৯; আশ-শারহুল কাবীর, ৭/৩৪৮)।
প্রশ্ন (২৩): আমি মার্কেটিং চাকরিতে গার্মেন্টসে স্যাম্পল নিয়ে যাই। মাঝে মাঝে হেঁটে গিয়ে ১০-২০ টাকা ভাড়া বাঁচাই। ওই ভাড়া বিল হিসেবে দাবি করা কি বৈধ হবে?
–সিয়াম শিকদার
চিতলমারী, বাগেরহাট।
উত্তর: না, বৈধ হবে না। আপনি যতটুকু খরচ করেছেন, ততটুকুই ভাউচার দেখাতে হবে। আর যা খরচ করেননি তা যদি ভাউচার দেখান, তাহলে তা ধোঁকা হবে। আর ইসলামে ধোঁকা দেওয়া নিষিদ্ধ। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১)। তবে কোম্পানি যদি দৈনিক নাস্তা বা ভাড়া বাবদ একটা এমাউন্ট ফিক্সড করে যার ভাউচার দেখাতে হয় না, তাহলে আপনি নাস্তা না খেয়ে, পায়ে হেঁটে টাকা বাঁচিয়ে নিজের জন্য জমাতে পারেন। কেননা কোম্পানি এটা আপনার জন্য ভাতা হিসেবে নির্ধারণ করেছে। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু মাল দিলেন। আমি বললাম, আমার চেয়ে অভাবী লোককে দিন। তিনি বললেন, ‘তুমি নাও, না চেয়ে এ ধরনের কোনো মাল যদি তোমার কাছে আসে, তাহলে সেটা গ্রহণ করো। আর যে মাল এভাবে আসবে না সেটা গ্রহণ করো না’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৪০৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৪৫)।
প্রশ্ন (২৪): বর্তমানে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা দেখা যাবে কি? যেমন- আইপিএল, বিপিএল, ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ইত্যাদি।
-মনসুর
পঞ্চগড়।
উত্তর: ক্রিকেট ও ফুটবলসহ বর্তমানে প্রচলিত প্রায় সকল খেলাই জুয়ার অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। তাছাড়া এতে যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা চলছে তা যেনার শামিল। সুতরাং তা পরিত্যাগ করা আবশ্যক (আল-মায়েদা, ৫/৯০)।
প্রশ্ন (২৫): স্বামী অন্য শহরে চাকরি করেন। মাঝে মাঝে আমি ২ বছরের ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় পার্কে যাই। মাহরাম ছাড়া এভাবে বের হওয়া কি জায়েয?
–আয়েশা
সুনামগঞ্জ।
উত্তর: সাময়িক সময়ের জন্য স্থানীয় কোথাও যাওয়া বৈধ হবে, নিম্নোক্ত শর্তগুলো বিদ্যমান থাকলে- ১. ফেতনামুক্ত পরিবেশ হতে হবে। ২. কোনো প্রকার নিরাপত্তার সমস্যা থাকা যাবে না। ৩. নিকটে হতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ১৭/৩৩৬)।
প্রশ্ন (২৬): কোনো অনুষ্ঠানে হাততালি দেওয়া যাবে কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর: হাততালি দেওয়া একটি জাহেলী প্রথা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কা‘বাগৃহে তাদের ছালাত বলতে ছিল শুধু শিস দেওয়া ও হাততালি দেওয়া’ (আল-আনফাল, ৮/৩৫)। সুতরাং শুধু ইবাদতের ক্ষেত্রেই নয়; বরং ইবাদতের বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খেলাধুলা কিংবা আনন্দদায়ক কোনোকিছু দেখে হাততালি দেওয়া জায়েয নয়। কারণ এতে জাহেলী যুগের মুশরিক ও বর্তমান যুগের অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়, যা বর্জন করা আবশ্যক। কেননা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৫১১৫; আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৭)।
হালাল-হারাম
প্রশ্ন (২৭): আমি অনলাইনে ইসলামী বই বিক্রি করতে চাই। কিন্তু কিছু লেখক বা অনুবাদক সম্পর্কে আলেমরা বিভ্রান্তিমূলক বলে মন্তব্য করেন। অনেক সময় পাঠক চাহিদার ভিত্তিতে এমন বই বিক্রি করতে হয়, যেগুলোর লেখক বা অনুবাদকের মানহাজ সঠিক নাও হতে পারে এবং সব লেখক সম্পর্কে জানা সম্ভবও নয়। তাহলে এমন বই জেনে বা না জেনে বিক্রি করলে কি আমি গুনাহগার হব? এ ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
-কবির হোসাইন
উত্তরা।
উত্তর: যে সমস্ত লেখকের আক্বীদায় ত্রুটি আছে, তাদের লিখিত বই, শিরক-বিদআতের প্রচার রয়েছে এমন বই, অশালীন প্রেমকাহিনী বা গান-বাজনাসহ ইসলামে হারাম করা হয়েছে এমন বিষয়ে লিখিত বই ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। কেননা এতে অন্যায়ের সহযোগিতা করা হয়। আর আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না’ (আল-মায়েদা, ৫/২)। সুতরাং জেনেশুনে এমন বই বিক্রি করলে বিক্রেতা গুনাহগার হবে। এক্ষেত্রে পাঠকের চাহিদা থাকলেও তাদেরকে এ সমস্ত বইয়ের পরিবর্তে ছহীহ আক্বীদার লেখকদের বই পাঠে পরামর্শ বা উৎসাহ দিতে হবে।
প্রশ্ন (২৮): আমি ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করি। ডাক্তারের কাছে গিফট, টাকা, ভ্রমণের বিনিময়ে ওষুধ লেখার অনুরোধ করি।এটি কি ঘুষ? এইভাবে উপার্জন কি হালাল?
–আহমাদ
ঢাকা।
উত্তর: কোনো কোম্পানির ওষুধ লেখার শর্তে কোম্পানি যদি ডাক্তারকে উপহার কিংবা টাকা দেয়, তাহলে তা সুস্পষ্ট ঘুষ ও প্রতারণা বলে বিবেচিত হবে। সেটা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। তা গ্রহণ করলে তিনি প্রতারক। কেননা ডাক্তার যদি সেই কোম্পানির ওষুধ না লিখে, তাহলে তো কোম্পানি তাকে এক পয়সাও দিবে না। এমনকি কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াও যদি উপহার দিতে আসে, তাহলে সেটাও গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তখন বিবেকে না চাইলেও মনের দিক থেকে ডাক্তার উক্ত কোম্পানির প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন। অথচ ডাক্তারের কর্তব্য হলো কোম্পানির ওষুধের গুণগত মান, কার্যকারিতা ও রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে প্রেসক্রাইব করা। আবূ উমামাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের জন্য কোনো বিষয়ে সুপারিশ করার কারণে যদি সে তাকে কিছু উপহার দেয় এবং সে তা গ্রহণ করে, তাহলে সে সূদের একটি বড় দরজা দিয়ে প্রবেশ করল’ (আবূ দাঊদ, হা/৩৫৪১)।
জিহাদ
প্রশ্ন (২৯): ইসরাঈলের জুলমের পেছনে আমেরিকার সহায়তা স্পষ্ট। এই জুলমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে মুসলিমদের করণীয় কী? কবে এই জুলমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরয হবে?
–মিনহাজ আহম্মেদ সুজন
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর: ইসরাঈল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তীনীদের উপর জমি দখল, ঘরবাড়ি ধ্বংস, শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষ হত্যা, পবিত্র মসজিদ আল-আক্বছা অবমাননা ইত্যাদি জুলম করে আসছে। আর বর্তমানে ফিলিস্তীনে আক্রমণ করে ফিলিস্তীনের নাম নিশানা নিশ্চিহ্ন করার পায়তারা করছে। আর বিশ্বমোড়ল আমেরিকা ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে এই জুলমকে উৎসাহিত করছে। এমন পরিস্থিতিতে মুসলিমদের করণীয় হলো তাদের সাধ্যানুযায়ী বিভিন্নভাবে এ জুলমের প্রতিরোধ করা। নিচে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হলো- ১. মুসলিম দেশগুলো একত্রিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করা (আন-নিসা, ৪/৭৫)। ২. আর্থিক সাহায্য করা (আত-তওবা, ৯/৬০)। ৩. দু‘আ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব’ (আল-মুমিন, ৪০/৬০)। বিশেষ করে রাতের শেষ ভাগে দু‘আ করা (ছহীহ বুখারী, হা/১০৯৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮)। ৩. প্রতিবাদ করা (আবূ দাঊদ, হা/৪৩৪৪)। ৪. তাদের পণ্য বর্জন করা (আল-মায়েদা, ৫/২)।
প্রশ্ন (৩০): গাযওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে জানতে চাই। এটি কখন সংঘটিত হবে?
–মেহেদী
হবিগঞ্জ।
উত্তর: গাযওয়াতুল হিন্দ হবে এ কথায় ঠিক। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোলাম ছাওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের দুটি দল আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পবিত্রাণ দান করবেন, একদল যারা হিন্দুস্তানে জিহাদ করবে আর একদল যারা ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম-এর সঙ্গে থাকবে (সুনান নাসাঈ, হা/৩১৭৫)। তবে কখন যুদ্ধ সংঘটিত হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। কেউ কেউ বলেছেন, উক্ত যুদ্ধ সংঘঠিত হয়ে গেছে।
সূদ-ঘুষ
প্রশ্ন (৩১): আমার আপনজন বা বন্ধু যদি সূদ বা ঘুষের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে আমি কি তাদের দেওয়া কিছু খেতে বা নিতে পারব?
-মুহাম্মাদ ফিরোজ উদ্দীন
মহেশপুর, ঝিনাইদহ।
উত্তর: না, এখান থেকে বিরত থাকাই উত্তম। لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদখোর, সূদদাতা, লেখক এবং সাক্ষীদের উপর লা‘নত করেছেন এবং বলেছেন, ‘এরা সবাই গুনাহে সমান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৮)। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَعَنَ اللهُ الرَّاشِيَ وَالمُرْتَشِيَ ‘আল্লাহ তাআলা ঘুষদাতা ও গ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন’ (আবূ দাঊদ, হা/৩৫৮০)। অপরদিকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫)। তিনি আরো বলেন, ‘ঐ দেহ জান্নাতে যাবে না, যা হারাম দ্বারা লালিতপালিত হয়’ (ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/১৭৩০)।
প্রশ্ন (৩২): কোনো ব্যক্তি যদি সূদের মাধ্যমে গাড়ি কিনে এবং অন্য একজন ব্যক্তি তার সঙ্গে গিয়ে সহযোগিতা করে বা ব্যাংকের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে, তাহলে সেই ব্যক্তি কি গুনাহগার হবে?
-আরিফ।
উত্তর: এমন কাজ করা জায়েয নয়। কেননা তাতে অন্যায় কাজে সহযোগিতা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ভালো কাজে একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করো, মন্দ কাজে করবে না’ (আল-মায়েদা, ৫/২)। لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদখোর, সূদদাতা, লেখক এবং সাক্ষীদের উপর লা‘নত করেছেন এবং বলেছেন, ‘এরা সবাই গুনাহে সমান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৮)। এই হাদীছ স্পষ্ট করে দেয় যে, যে ব্যক্তি সূদের চুক্তিতে সাক্ষী হয় বা লেখক হিসেবে কাজ করে বা সহযোগিতা করে, সেও মহান আল্লাহর কাছে গুনাহগার। যদি সে ব্যক্তি জেনেবুঝে ব্যাংকের সূদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, তাহলে সে উল্লিখিত হাদীছ অনুযায়ী সরাসরি গুনাহের অংশীদার।
পারিবারিক জীবন
প্রশ্ন (৩৩): আমি একজন প্রবাসী, সঊদী আরব থাকি। আমি আমার স্ত্রীকে মেসেজে তালাক দিয়েছি। তারপর আমার স্ত্রী দেখার আগেই মেসেজ ডিলেট করে দিয়েছি। এখন আমার দেওয়া এই তালাক কি গণ্য হবে?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর: ইসলামী শরীআহ অনুযায়ী, তালাক দেওয়ার জন্য স্ত্রীর দেখা, শোনা বা লিখিতভাবে হলে পড়া জরুরী নয়; বরং তালাক প্রদানকারী (স্বামী) উচ্চারণ বা লিখিত ঘোষণা করলেই তালাক সংঘটিত হয়ে যায়, যদি তা সুস্থ অবস্থায় এবং চাপে না পড়ে দেওয়া হয়। সুতরাং এই তালাক কার্যকর হয়ে গেছে, যদিও স্ত্রী মেসেজ না দেখে থাকেন। এমনকি মজার ছলেও কেউ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহলে তালাক হয়ে যাবে। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْع ‘তিনটি বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে বললেও এবং ঠাট্টাচ্ছলে বললেও যথার্থ বলে বিবেচিত হবে। বিয়ে, তালাক ও রাজআত (তালাক প্রত্যাহার)’ (তিরমিযী, হা/১১৮৪)। উল্লেখ্য, একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক হিসেবে গণ্য হবে। এ বিধানই নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ছিল (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭২)।
প্রশ্ন (৩৪): কেউ যদি তার স্ত্রীকে রাগের মাথায় বলে, তুই বাপের বাড়ি গেলে তালাক। আর স্ত্রী যদি তার বাপের বাড়ি চলে যায়। তাহলে তালাক পতিত হবে কি?
-হাকিল আহমেদ
ঢাকা।
উত্তর: স্বামী যদি স্ত্রীকে এভাবে বলে এবং স্ত্রী যদি বাবার বাড়ি চলে যায়, তাহলে এক তালাক পতিত হয়েছে। কেননা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, , ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْع
‘তিনটি বিষয় এমন আছে যেগুলোর ঠাট্টাকেও বাস্তব বলে গণ্য করা হয়- ১. বিয়ে, ২. তালাক ও রুজূ’ (সুনানে আবী দাঊদ, হা/২১৯৪)।
প্রশ্ন (৩৫): রাগে স্ত্রীকে বলেছি, ‘যাহ তুই তালাক’, ১ সেকেন্ডের মধ্যে বলি, ‘তোরে আমি তালাক দিব’— এতে কি তালাক পতিত হয়েছে?
–নাঈমুর রহমান
পটিয়া, চট্টগ্রাম।
উত্তর: ‘তুই তালাক’ বলার সাথে সাথে এক তালাক হয়ে গেছে। কারণ এখানে তালাক শব্দটি স্পষ্ট অর্থবোধক শব্দ। তাই নিয়্যত কী করল আর করল না সেটা ধর্তব্য নয়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিনটি বিষয় এমন আছে যেগুলোর মজাকেও বাস্তব বলে গণ্য করা হয়- ১. বিয়ে, ২. তালাক ও রুজূ’ (সুনানে আবী দাঊদ, হা/২১৯৪)। পরে বলা, ‘আমি তোমাকে তালাক দিব’ এ বাক্যের কোনো প্রভাব এখানে নেই। তাই ব্যক্তি যদি আগে কোনোদিন তালাক না দিয়ে থাকে, তাহলে এটাই হবে তার প্রথম তালাক এবং এক তালাকে রেজঈ। অর্থাৎ সে ইচ্ছা করলে তিন মাস অতিক্রম করার পূর্বেই তাকে নতুন করে বিবাহ ছাড়াই ফেরত নিতে পারবে। আর তিন মাস অতিক্রম হলে নতুন করে বিবাহ করে নিতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের স্বামীরা তাদের ইদ্দতের মধ্যে ফেরত নেওয়ার অধিকার রাখে, যদি তারা মীমাংসা করতে চায়’ (আল-বাকারা, ২২/২৮)। তাবেঈ হাসান বাছরী বলেন, فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ এ আয়াত নাযিলের ব্যাপারে মা‘কাল ইবনু ইয়াসার বলেন, এটা এ ঘটনার ভিত্তিতে নাযিল হয়, আমার বোনকে কোনো এক লোকের সাথে বিবাহ দেই। সে তাকে তালাক প্রদান করে। তার ইদ্দত শেষ হলে সে তার বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে। আমি তাকে বলি, আমি আমার বোনকে তোমার সাথে বিবাহ দিয়ে তোমার বিছানাসঙ্গী করি, তোমাকে সম্মানিত করি আর তুমি তাকে তালাক দিলে! আবার বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এসেছ! না, সে তোমার কাছে যাবে না। আর লোকটি দেখতে শুনতে ভালো ছিল আর মেয়েটিও তার কাছে যেতে চাচ্ছিল। তখন আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করেন, ‘তোমরা যদি স্ত্রীদের তালাক দাও, অতঃপর তারা তাদের নির্ধারিত সময় পৌঁছে যায়, তখন তাদেরকে স্বামীদের বিবাহ করতে বাধা প্রদান করো না, যদি তারা ন্যায়সঙ্গতভাবে পরস্পর সম্মত থাকে’ (আল-বাকারা, ২/২৩২)।
প্রশ্ন (৩৬): আমাদের বিবাহ হয়েছে ২০০৬ সালে। বিবাহের পরে দুই-তিন বছর আমাদের অনেক ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে সংসারে। তখন তালাকের মাসআলাটা আমার জানা ছিল না। তো তখন ভুলে স্ত্রীকে তালাক বলে ফেলছি কি-না এটা আমার মনে পড়ছে না। যদি বলে থাকি সেক্ষেত্রে এখন করণীয় কী?
-মো. রাইহান
ঢাকা।
উত্তর: সন্দেহের উপর ভিত্তি করে শরীআত প্রযোজ্য হয় না। তাই কোনো ব্যক্তি যদি সন্দেহের মাঝে থাকে যে, সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে কি-না, তাহলে এর মাধ্যমে তালাক পতিত হবে না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক ব্যক্তি সম্পর্কে অভিযোগ করা হলো যে, ছালাত আদায়কালে তার ওযূ ভঙ্গের কিছু হয়েছে বলে মনে হয়, এতে কি সে ছালাত ছেড়ে দেবে? তিনি বলেন, ‘না, যতক্ষণ না সে আওয়াজ শুনবে বা দুর্গন্ধ টের পায় অর্থাৎ নিশ্চিত হয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৭)।
প্রশ্ন (৩৭): তালাকের সময় ‘বায়েন তালাক’ না বললে কি তালাক হবে না?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর: ‘তালাক’ শব্দের সাথে ‘বায়েন’ শব্দ বলা বা না বলার সাথে তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং তালাকে বায়েন বলতে বুঝায় যে, কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর ৯০দিন অতিক্রম হওয়ার পর স্ত্রী বায়েন হয়ে যায়। এর পূর্বে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে তা বায়েন হিসেবে গণ্য হয় না। অতএব, কেউ যদি স্ত্রীকে সম্বোধন করে শুধু তালাক শব্দ উচ্চারণ করে তাতেই তালাক হয়ে যাবে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিনটি বিষয়ের চূড়ান্তও চূড়ান্ত আর হাসিতামাশাও চূড়ান্ত- (১) বিবাহ, (২) তালাক ও (৩) প্রত্যাহার’ (ইবনু মাজাহ, হা/২০৩৯)। অত্র হাদীছেও প্রমাণিত হয় যে, বায়েন বলা জরুরী নয়। শুধু তালাক বললেই হয়ে যাবে।
আয়াতওহাদীছেরব্যাখ্যা
প্রশ্ন (৩৮):আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না’। হাদীছটি কী ছহীহ?
উত্তর: উক্ত হাদীছটির সনদ যঈফ। কেননা উক্ত সনদে ইবরাহীম হাজারী নামক এক ব্যক্তি রয়েছে। তিনি যঈফ রাবী (মুসনাদে আহমাদ, হা/৪২৬৯; রিসালা টীকা দ্রষ্টব্য, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হা/২৭৩০৪)। তবে পরিমিত ব্যয়ে কল্যাণ ও পরিত্রাণ রয়েছে। তিনটি জিনিসে মুক্তি রয়েছে, একটি হলো জীবনযাপনে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা (ছহীহুল জামে, হা/৩০৪৫)।
প্রশ্ন (৩৯): কোনো এক মজলিসে যদি কারো নাম উচ্চারণ করা হয় এবং ঠিক তখনই সে ব্যক্তি উপস্থিত হয়, তখন অনেকে বলেন, ‘আপনি অনেক দিন বাঁচবেন’— এ কথা কতটুকু যুক্তিসম্মত ও শরীআতসম্মত?
উত্তর: শরীআতে এই ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই। এমনিভাবে এটা যুক্তিসম্মত কথাও নয়। বরং এটি কুসংস্কার ও হিন্দুয়ানী নীতি।
দু‘আ
প্রশ্ন (৪০): বাচ্চা অনেক কান্না করে। শিশু বাচ্চাকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচানোর জন্য কোনো দু‘আ থাকলে জানাবেন।
উত্তর: বদনজর সত্য, বাচ্চাকে মানুষের বদনজর লাগে। সাজগোজ করে বাচ্চাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া বা সন্ধ্যার সময় বাড়ির বাইরে, উঠানে বা ছাদে নিয়ে যাওয়া পছন্দনীয় নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বদনজর সত্য’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৪০৮)। কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত দু‘আটি বলতে হবে। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর জন্য নিম্নোক্ত দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন, ‘তোমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহিমাস সালাম-এর জন্য দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন, أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ ‘আঊযুবি বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিও ওয়া হাম্মাহ ওয়া মিন কুল্লি আইনিল লাম্মাহ। অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৭১)। আর সন্ধ্যার সময় বাচ্চাকে বাড়ির বাইরে, উঠানে বা ছাদে নিয়ে গেলেও শয়তানের প্রতিক্রিয়া হয়।
প্রশ্ন (৪১): রোগ-বালাই থেকে রক্ষার জন্য কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আরবী কোন কোন দু‘আ পড়া উত্তম?
–ফিরোজ কবীর
নওগাঁ সদর।
উত্তর: ১. সূরা নাস ও ফালাক পড়ে ফুঁক দিবে। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাস ও ফালাক পড়ে হাতে ফুঁক দিয়ে সারা শরীরে মাসাহ করতেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৩৫)। ২. এ দু‘আ পড়বে, بِسم اللَّهِ الذِّي لَا يَضُر مَع اسمِهِ شَيءٌ فِي الأرضِ وَلَا فِي السَمَاءِ وهُو السَمِيعُ العَليمُ، (ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৯)। ৩. এই দু‘আটি পড়া যায় সকাল ও সন্ধ্যায় ৩ বার-
اَللَّهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ- اَللَّهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ- اَللَّهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার শরীরে সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ! আমার শ্রবণশক্তিতে সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তিতে সুস্থতা দান করুন’ (মুসনাদে আবূ দাঊদ, হা/৯০৯)।
প্রশ্ন (৪২): সূরা ইখলাছ দশবার পড়ার ফযীলত কী?
-সাঈদ
নড়াইল।
উত্তর: রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দশবার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন’ (আহমাদ, সিলসিলা ছহীহা, হা/৫৮৯; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৪৭২)। এছাড়াও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা ইখলাছকে পছন্দ করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’ (তিরমিযী, হা/১৯০১; মিশকাত, হা/২১৩০)। উল্লেখ্য, সূরা ইখলাছ ৫০, ১০০, কিংবা ২০০ বার পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে যে সকল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোই যঈফ’ (তিরমিযী, হা/২৮৯৮; সিলসিলা যঈফা, হা/৩০০; মিশকাত, হা/২১৫৮-৫৯)।
আশূরায়ে মুহাররম
প্রশ্ন (৪৩): আশূরায়ে মুহাররম গুরুত্বপূর্ণ কেন?
-আব্দুল গনী
কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
উত্তর: আশূরায়ে মুহাররমের গুরুত্বের মৌলিক কারণ হলো, এদিনে মহান আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালাম ও তার কওমকে অত্যাচারী বাদশাহ ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং তাকে ও তার লোকদেরকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আসেন, তখন দেখতে পেলেন ইয়াহূদীরা আশূরা দিবসে ছিয়াম পালন করে। তাদেরকে ছিয়াম পালনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এদিনই আল্লাহ তাআলা মূসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাঈলকে ফেরাউনের উপর বিজয় দিয়েছিলেন। তাই আমরা ঐ দিনের সম্মানে ছিয়াম পালন করি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমরা মূসা আলাইহিস সালাম-এর বেশি হক্বদার’। এরপর তিনি ছিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৩৯৪৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৩০)। দ্বিতীয়ত, নাজাতে মূসার শুকরিয়াস্বরূপ এদিন ও তার পূর্বে একদিন ছিয়াম পালন করলে তা আল্লাহর নিকটে বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গুনাহের কাফফারা হিসেবে গণ্য হয় (ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬২; মিশকাত, হা/২০৪৪)।
প্রশ্ন (৪৪): মুহাররমের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ছিয়াম পালন করলে ৫০ বছরের নফল ছিয়ামের নেকী লেখা হয়। একথা কি ঠিক?
-আব্দুর রহমান
পুঠিয়া, রাজশাহী।
উত্তর: উক্ত বক্তব্য মিথ্যাচার ও বানোয়াট। তবে শুধু ৯ ও ১০ তারিখে ছিয়াম পালন করার ফযীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ ‘আশূরার দিনের ছিয়ামের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমার প্রত্যাশা, আল্লাহ এর দ্বারা পূর্বের বছরের সব (ছগীরা) গুনাহ মাফ করে দেবেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬২; মিশকাত, হা/২০৪৪)। উল্লেখ্য, ৫০ বছরের ছওয়াবের হাদীছ জাল (আল-মাওযূআত লি ইবনিল জাওযী, ২/১৯৯)।
প্রশ্ন (৪৫): আশূরা উপলক্ষ্যে মুসলিম উম্মাহর করণীয় কী? মুহাররমের ছিয়াম কোন তারিখে রাখতে হবে?
-মাহমুদ
শিবগঞ্জ, বগুড়া।
উত্তর: আশূরা উপলক্ষে করণীয় হলো ১০ মুহাররম ও তার পূর্বে এক দিনসহ মোট দুই দিন ছিয়াম পালন করা। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইয়াহূদী-নাছরারা ১০ মুহাররম আশূরার দিনটিকে সম্মান করে। তখন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আগামী বছর বেঁচে থাকলে ইনশা-আল্লাহ আমরা ৯ মুহাররমসহ ছিয়াম রাখব’। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররম আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়ে যায় (ছহীহ মুসলিম, হা/১১৩৪; মিশকাত, হা/২০৪১)।
প্রশ্ন (৪৬): হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর হত্যার ব্যাপারে দায়ী কে? ইয়াযীদ নাকি সীমার? সঠিক উত্তরদানে বাধিত করবেন।
-ইবরাহীম
সরিষাবাড়ী, জামালপুর।
উত্তর: অনেকেই হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর হত্যার ব্যাপারে খলীফা ইয়াযীদকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু খলীফা ইয়াযীদের শাসনামলে ৬১ হিজরীর ১০ মুহাররম ইরাকের কারবালা নামক স্থানে হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে হত্যা করা হলেও তার হত্যার ব্যাপারে ইয়াযীদ দায়ী ছিলেন না। এ মর্মে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ঐতিহাসিকগণ এ বিষয়ে একমত যে, নিশ্চয় ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়া হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে হত্যার নির্দেশ দেননি। তিনি উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে কেবল ইরাক দখল করা হতে বাধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন (মাজমূউ ফাতাওয়া, ৩/৪১১ পৃ.)। তিনি আরো বলেন, হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী-পুত্রগণ যখন ইয়াযীদের নিকট পৌঁছলেন, তখন তিনি তাদের অনেক সম্মান করেছেন এবং নিরাপত্তার সাথে তাদেরকে পুনরায় মদীনায় পৌঁছে দিয়েছেন (প্রাগুক্ত)। ইতিহাসগ্রন্থ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর হত্যার ব্যাপারে প্রকৃত দোষী দুইজন- উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ ও সীমার। কারণ কূফাবাসীর বায়আত গ্রহণের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে যখন তিনি সেখানে আগমন করেন এবং তার সাথে বেঈমানী করে তারা তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ কূফার গভর্নর ছিল, সে সরাসরি যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল এবং তার আদেশেই এটা ঘটেছে। আর সীমার সরাসরি হত্যাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮/২১৪ পৃ.)। উল্লেখ্য, হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর শাহাদাত বরণের সাথে আশূরায়ে মুহাররমের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই (ইবনু হাজার আসক্বালানী, দারুল ইছাবা, ১/৩৩১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৪৭): ১০ মুহাররম শীআরা যে তাযিয়া মিছিলের আয়োজন করে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে কি? এতে যোগ দেওয়ার পরিণাম কী?
-হারুনুর রশীদ
কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
উত্তর: না, তাতে যোগ দেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। কেননা তাযিয়া অর্থ বিপদে সান্ত্বনা দেওয়া। অথচ সেটা বর্তমানে শাহাদাতে হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর শোকমিছিল হিসেবে রূপ নিয়েছে। তাছাড়া ইসলামে কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক পালন করা নিষেধ। আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা‘ফরের সন্তানদেরকে (জা‘ফর রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর শাহাদাতের জন্য) শোক প্রকাশের তিনদিন সময় দিলেন। অতঃপর তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, ‘আজকের পর হতে তোমরা আর আমার ভাইয়ের জন্য কান্নাকাটি করবে না’ (আবূ দাঊদ, হা/৪১৯২; নাসাঈ, হা/৫২২৭; মিশকাত, হা/৪৪৬৩)। কিন্তু বাগদাদের গোঁড়া শীআ আমীর ‘মুইযযুদ্দৌলা’ ৩৫২ হিজরীর ১০ মুহাররমকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন এবং শহর ও গ্রামের সকলকে তাযিয়া মিছিলে যোগদানের নির্দেশ দেন। সেদিন থেকেই এই বিদআতী প্রথা চালু হয়েছে। প্রত্যেক আল্লাহভীরু মুসলিমের এসব বিদআত হতে দূরে থাকা আবশ্যক। কেননা বিদআতীর আমল কবুল হয় না এবং তার পরিণাম জাহান্নাম। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যার ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করা হতে বিরত থাকো। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী’ (আহমাদ, হা/১৬৬৯৪; আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; তিরমিযী, হা/২৬৭৬, ইবনু মাজাহ, হা/৪২, মিশকাত, হা/১৬৫)। নাসাঈর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম’ (নাসাঈ, হা/১৫৭৮)।
বিবিধ
প্রশ্ন (৪৮): অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে অনেক ফযীলতের কথা হাদীছে বলা হয়েছে। আমরা দেখি যে, ডাক্তারের কাছে রোগী আসে চিকিৎসার জন্য। এক্ষেত্রে ডাক্তার যদি সৎ নিয়্যত রাখে, তাহলে হাদীছে বর্ণিত ফযীলত পাওয়া যাবে কি?
-আব্দুল মালেক বিন ইদ্রিস
চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর।
উত্তর: ডাক্তার যদি সে নিয়্যত রাখে ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতি অনুসরণ করে, তাহলে সে নেকী পাবে। নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করবে- ১. রোগী এসে বসলে বলবে, لا بأس طهور إن شاء الله। ২. প্রেসক্রিপশন লেখার সময় দু‘আ করবে, أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ، وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لَا شَافِيَ إِلَّا أَنْتَ ৩. সৎ নিয়্যত রাখবে (ছহীহ বুখারী, হা/১)।
প্রশ্ন (৪৯): আমাদের কোম্পানির মালিক অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে কর্মচারীদের বেতন দিতে গড়িমসি করে বা দেরি করে। এতে কি তিনি গুনাহগার হবেন না?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর: অবশ্যই তারা গুনাহগার ও যালেম। প্রথমত, সে মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশের খেলাফ করেছে। তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মজুরকে তার ঘাম শুকাবার পূর্বেই তোমরা তার মজুরি দিয়ে দাও’ (ছহীহুল জামে‘, হা/১০৫৫)। দ্বিতীয়ত, সে সেই ব্যক্তির খাদ্য আটকে রাখে, যার খাবারের দায়িত্ব তার ঘাড়ে আছে এবং সেই বেতনে আরো অনেক মানুষের খোরপোশ আছে। আর আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যার আহারের দায়িত্বশীল, তাকে তা না দিয়ে আটকে রাখে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৯৬)। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলম’ (ছহীহ বুখারী, হা/২২৭০; ইবনু মাজাহ, হা/২৪০৪)। তৃতীয়ত, বেতন না পেয়ে মনের কষ্টে কর্মচারী বদ-দু‘আ করতে পারে। আর সে যদি অত্যাচারিত হয়, তাহলে সে বদ-দু‘আ সাথে সাথে মালিককে লেগে যাবে। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিনটি দু‘আ এমন আছে, যার কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই- ১. অত্যাচারিতের দু‘আ, ২. মুসাফির ব্যক্তির দু‘আ এবং ৩. সন্তানের জন্য তার পিতা-মাতার দু‘আ বা বদ-দু‘আ’ (তিরমিযী, হা/৩৪৪৮; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬২; সিলসিলা ছহীহা, হা/১৭৯৭)।
প্রশ্ন (৫০): দত্তক নেওয়া সন্তানকে নিজের সন্তান পরিচয় দেওয়া যাবে কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর: পালক সন্তানের ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশনা হলো, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাকো; আল্লাহর কাছে এটাই অধিক ইনছাফপূর্ণ। অতঃপর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই এবং তোমাদের বন্ধু’ (আল-আহযাব, ৩৩/৫)। অতএব, যে সন্তানকে লালনপালন করা হবে তাকে তার প্রকৃত বাবা মায়ের দিকেই সম্পৃক্ত করতে হবে, পালনকারীকে বাবা-মা বানানো কোনোভাবেই শরীআতসম্মত নয়।