কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (২০) : আমি রামাযান মাসে জামা’আতের সাথে এশার ছালাত আদায় করে রাত ১টার পর একাকী নফল ছালাত আদায় করি। এভাবে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : হ্যাঁ, রামাযান মাসে জামা‘আতের সাথে এশার ছালাত আদায় করে শেষ রাতে বা রাত ১টার পর একাকী নফল বা তারাবীহর ছালাত পড়তে পারে। যায়েদ ইবনু ছাবেত রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কারো আপন ঘরে নফল ছালাত আদায় করা আমার এই মসজিদে ছালাত আদায় করার অপেক্ষাও উত্তম। অবশ্য ফরয ছালাত ব্যতীত’ (আবুদাঊদ, হা/১০৪৪; মিশকাত, হা/১৩০০)। অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা (নফল) ছালাত তোমাদের ঘরেই পড়। কেননা কারো উত্তম ছালাত হচ্ছে তার ঘরের ছালাত, ফরয ছালাত ব্যতীত’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭২৯০; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৮; মিশকাত, হা/১২৯৫)। তবে রামাযান মাসের প্রত্যেক রাতেও তারাবীহর ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা জায়েয। তাবেঈ বিদ্বান আব্দুর রহমান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রামাযান মাসে এক রাতে আমি খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে মসজিদে নববীতে পৌঁছে দেখলাম, লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কেউ একাকী ছালাত পড়ছে, আবার কারো পেছনে ক্ষুদ্র একদল লোক ছালাত আদায় করছে। এ দৃশ্য দেখে ওমর ফারূক রাযিয়াল্লাহু আনহুলোকদেরকে একজন ইমামের পেছনে একত্রিত করে দেওয়াটাকে ভাল মনে করলেন এবং তিনি তাদেরকে উবাই ইবনে কা‘ব রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পিছনে একত্রিত করে দিলেন। অতঃপর তিনি একদিন লোকদেরকে জামা‘আতের সাথে (তারাবীহর) ছালাত আদায় করতে দেখে বললেন, ‘কতইনা সুন্দর বিদ‘আত এটি’! (نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ) অর্থাৎ পূর্বের নিয়মের চেয়ে বর্তমানে জামা‘আতে ছালাত আদায় করার নিয়মটা কতই না উত্তম (ছহীহ বুখারী, মিশকাত, হা/১৩০)। মুওয়াত্ত্বার বর্ণনায় এসেছে, ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুউবাই বিন কা‘ব ও তামীম দারী রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-কে ১১ রাক‘আত জামা‘আত সহকারে আদায় করার হুকুম দিয়েছিলেন (মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৩৭৯; মিশকাত, হা/১৩০২)। তাছাড়া তারাবীহর ছালাত জামা‘আতে পড়ার ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই উৎসাহ প্রদান করেছেন। আবু যার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিয়াম পালন করলাম কিন্তু তিনি আমাদের সাথে ছালাত (তারাবীহ) পড়লেন না। অবশেষে যখন মাসের সাত দিন অবশিষ্ট থাকল তখন তিনি আমাদের সাথে ছালাত পড়লেন এমনকি রাতের তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। তারপর ষষ্ঠ রাত্রে তিনি আমাদের সাথে ছালাত পড়লেন না। অতঃপর পঞ্চম রাতে আমাদের সাথে ছালাত পড়লেন এমনকি অর্ধরাত পর্যন্ত। তারপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! বাকী রাতগুলো যদি আমাদের জন্য নফল করে দিতেন! (কতই না ভাল হত)। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি ইমাম ছালাত শেষ করা পর্যন্ত তার সাথে ছালাত আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত্রি ছালাত আদায় করার ছওয়াব লিখে দেয়া হবে’। অতঃপর তিনি মাসের তিন রাত অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত আমাদের সাথে ছালাত পড়লেন না। তারপর তিনি তৃতীয় রাত্রে তাঁর পরিবার ও স্ত্রীদেরসহ আমাদের সাথে ছালাত পড়লেন। এমনকি আমরা ‘ফালাহ’ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ফালাহ’ কী? তিনি বললেন, সাহারী (তিরমিযী, হা/৮০৬; আবুদাঊদ, হা/১৩৭৫; ইবনু আবী শায়বাহ, ২য় খ-, পৃঃ ২৮৬; ছালাতুত তারাবীহ, পৃঃ ১৪)। 

প্রশ্নকারী : রহমতুল্লাহ

পবা, রাজশাহী।


Magazine