জুয়ার সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু অনলাইন জুয়ার সাথে আমাদের অভিভাবকরা তেমন পরিচিত নয়। কেননা অনলাইন কনসেপ্টটা বর্তমান জেনারেশনের জন্য প্রযোজ্য। আধুনিক জীবনে প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণে বহুল ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে দেশের ছাত্র যুবসমাজ ধ্বংসের পেছনে এই প্রযুক্তি মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ। দেশের যুবশক্তির ক্ষয়ের পেছনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে অনলাইন জুয়ার নানান অ্যাপ। তাই আমাদের জানা জরুরী অনলাইন জুয়া কী এবং কীভাবে অনলাইনে সবাই সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
জুয়ার রূপ বদল:
একসময় জুয়া ছিল শুধু তাস খেলায়। যার আসর জমাতো ঝোপঝাড়ে পরিত্যক্ত দালাল কোঠায়। সেই সময় পার হয়ে আধুনিক জীবনে হাতে হাতে চলে এসেছে জুয়ার সবকিছু। আগে ছিল জুয়া নিজে খেলার বিষয়। আর এখন জুয়া ধরার বিষয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা এখন শুধু তাস খেলা নয়, বরং যাবতীয় খেলা নিয়েই জুয়া খেলা যায়।
বর্তমান সময়ে ছোট-বড় সবার হাতে থাকা স্মার্টফোনে অনায়াসেই জুয়া খেলা যাচ্ছে। যার খবর আমাদের অভিভাবকদের অনেকেই জানে না। তাই এই গোপন পাপের কথা আমাদের অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। যা ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের সোনালি ছাত্র যুবসমাজকে। জুয়ার ধ্বংসলীলা শুধু তারাই দেখছে, যাদের পরিবারে জুয়ার ঝড় বইছে।
অনলাইন জুয়ার পদ্ধতি:
অনলাইন জুয়া খেলার বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো সাধারণত ক্যাসিনো গেম, স্পোর্টস বেটিং এবং অন্যান্য অনলাইন গেমের মধ্যে বিভক্ত।
ক্যাসিনো গেম: ক্যাসিনো গেম অনলাইনে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এগুলো সাধারণত ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। যেমন:
স্লট মেশিন: এটি একটি সহজ কিন্তু আকর্ষণীয় গেম। একটি লিভার টানলে বা বাটন চাপলেই বিভিন্ন ছবি ঘুরতে থাকে। নির্দিষ্ট ধরনের ছবি মিললে টাকা পাওয়া যায়।
রুলেট: একটি চাকার মধ্যে নম্বর ও রঙের ঘর থাকে। একটি বল ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এবং বলটি কোন ঘরে থামে তা নিয়ে বাজি ধরা হয়।
ব্ল্যাকজ্যাক: একটি কার্ড গেম যেখানে ডিলারের কার্ডের যোগফল ২১ বা তার কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করা হয়।
পোকার: বিভিন্ন ধরনের পোকার গেম রয়েছে। এগুলোতে হাতের কার্ডের ভিত্তিতে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়।
স্পোর্টস বেটিং: এই ধরনের জুয়ায় খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ধরনের খেলা (ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল ইত্যাদি) এর ফলাফল নিয়ে বাজি ধরে। সারাবিশ্বে প্রতিদিন ক্রিকেট ফুটবল টেনিসসহ হাজারো খেলা চলছে। এইসব খেলার জয়-পরাজয়সহ পুরো খেলার ধারা বিবরণ অনলাইনে প্রতি সেকেন্ডে আপডেট হচ্ছে। আর এই আপডেট দেখে দেখে প্রতিনিয়ত খেলার বাজি ধরে জুয়াড়িরা। অর্থাৎ কোন খেলায় কে জিতবে, কে হারবে, কে কত ব্যবধানে জিতবে কিংবা হারবে। কত বলে কত রান করবে, ইত্যাদি ইত্যাদি নানান সমীকরণ নিয়ে বাজি ধরা হয়। মোটকথা যাবতীয় খেলার প্রতি সেকেন্ড আপডেটে যতগুলো ঘটনা ঘটতে পারে, প্রতিটি ঘটনার উপরই বাজি ধরে জুয়া খেলা চলে।
এই বাজি কিংবা জুয়ার জন্যই ক্রিকেটে নানান লীগ (আইপিএল, বিপিএল ইত্যাদি) ফুটবলে অসংখ্য লীগ প্রতিনিয়ত চলে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো খেলার উপর জুয়া ধরা হয়। এইসব খেলার হারজিত দিয়েই জুয়ার ভাগ্য নির্ধারিত হয়। এটা হচ্ছে ব্যক্তিপর্যায়ে জুয়া। এই জুয়া যে কেউ চাইলে অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমেও খেলতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যাপসের সাথে জয়-পরাজয় নিয়ে বাজি ধরা হয়। বিগত সময়ে এই জাতীয় অ্যাপসগুলো জনপ্রিয় ছিল, এখনো আছে। তবে এইসব খেলাধুলা নিয়ে জুয়া খেলে তারা, যারা নিয়মিত বিভিন্ন খেলাধুলা দেখে কিংবা খেলার খবরাখবর রাখে।
অন্যান্য অনলাইন গেম: বর্তমান সময়ে খুব দ্রুত যে জুয়ার প্রচলন বেড়ে গেছে সেটা হচ্ছে অনলাইনে জুয়ার নানান অ্যাপ। যেমন- লটারি, বিনগো ইত্যাদি। এইসব অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজে নগদ, বিকাশ কিংবা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ঢুকানো যায়। আর সহজেই ৫/১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫/১০ হাজার কিংবা লাখেরও বেশি টাকার জুয়া ধরা যায়। এইসব অ্যাপ দেখতে সাধারণ গেমিং অ্যাপসের মতোই। যা যেকোনো অভিভাবক দেখলে সাধারণ গেমসের অ্যাপের মতোই মনে হবে। আর এরা মানুষকে প্রলুব্ধ করার জন্যই সাধারণ গেমসের মতোই জুয়ার অ্যাপগুলো সাজায়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তারা মূল জুয়ার সাথে ব্যবহারকারীদের পরিচয় করিয়ে দেয়।
এইসব অ্যাপের মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী শুরুতে বিনা পুঁজিতে জুয়া খেলা ট্রায়াল দিতে পারে। ফলে উঠতি বয়সের ছেলেরা এইসব অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ গেমসের মতোই খেলতে থাকে। পরবর্তীতে জিতার উত্তেজনায় খেলার রোমাঞ্চের কারণে তারা সরাসরি টাকা বিনিয়োগ করে খেলতে থাকে। এছাড়াও কিছু কিছু অ্যাপে অ্যাকাউন্ট করলেই বোনাস ডিপোজিট দেয়, যা দিয়ে খুব সহজে জুয়া শুরু করা যায়। আর এভাবেই শিশু-কিশোররা সহজে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে।
অনলাইন জুয়ার নিয়ন্ত্রণ:
এইসব জুয়ার অ্যাপগুলোর মূল ওয়েবসাইট হচ্ছে দেশের বাইরে। যা মূলত ভারত, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে পরিচালিত হয়। এছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশেও নানান জুয়ার অ্যাপ রয়েছে। তবে আমাদের দেশে ভারতীয় জুয়াড়ির আধিপত্য বেশি।
দেশে জুয়ার নিয়ন্ত্রণ:
জুয়ার অ্যাপগুলো দেশের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত হলেও, আমাদের দেশে তাদের অসংখ্য এজেন্ট রয়েছে। তারা একটা নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে টাকা আদানপ্রদান করে। এদের কমিশন হয় হাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। দেশীয় এজেন্টরা দেশের মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে জুয়ার টাকা অ্যাপ ব্যবহারকারীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না?
সরকার থেকে নানান সময় অনলাইনে জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করতে চাইলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়ে উঠে না। যেমন—
১. প্রযুক্তিগত কারণ: অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট বা অ্যাপগুলো খুব দ্রুত তৈরি করা এবং বন্ধ করা যায়। একটি বন্ধ হলেই নতুন আরেকটি ওপেন হয়। অর্থাৎ এইসব ওয়েবসাইটের একটি লিংক সরকার বন্ধ করলেও সাথে সাথে তারা নতুন ওয়েবসাইট খুলে তাদের কার্যক্রম চালু রাখে। যেহেতু এইসব অ্যাপে সরাসরি দেশীয় এজেন্ট যুক্ত থাকে, সেহেতু তারা দ্রুত নতুন লিংক সবাইকে জানিয়ে দেয়। ফলে সহজে তাদের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করা যায় না।
এছাড়াও আমাদের দেশে জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করা হলেও প্রযুক্তির নানান উন্নতির কারণে বিভিন্ন অ্যাপ রয়েছে, যা দিয়ে সহজে বন্ধ করা ওয়েবসাইটেও প্রবেশ করা যায়। আর এইসব কারণে সহজে জুয়ার সাইটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
২. আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক: বেশিরভাগ অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট বিদেশ থেকে পরিচালিত হয়। ফলে বাংলাদেশের আইন সেসব ওয়েবসাইটের উপর সরাসরি প্রযোজ্য হয় না। যে কারণে হাজার চেষ্টা করলেও সেইসব ওয়েবসাইট সরাসরি বন্ধ করা সম্ভব হয় না।
৩. প্রচুর মুনাফা: অনলাইন জুয়া ব্যবসায় মুনাফা সবচেয়ে বেশি। কেননা এখানে বিনিয়োগ করতে হয় একবার। কিন্তু লাভ হয় বিনিয়োগের কয়েকশ গুণ বেশি। যে কারণে অধিক মুনাফার ফলে এই ব্যবসা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বন্ধ করার কারোরই শক্তি নেই।
৪. বিশাল আর্থিক বিনিয়োগ: অনলাইন জুয়ার পেছনে বিশাল এক অর্থনৈতিক শক্তি কাজ করে। যারা এই ব্যবসা পরিচালনা করে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুষের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে। যাতে করে ব্যবসা বন্ধ না হয়। ফলে নিয়মনীতির মাধ্যমে সরকার যতই এই ব্যবসা বন্ধ করতে চায় না কেন, কোনোভাবেই সফল হতে পারে না।
৫. প্রলোভন: যারা অনলাইনে জুয়া পরিচালনা করে, তারা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সাহায্যে টার্গেট গ্রাহকদের লোভনীয় টাকার অফার দেয়। তারা মেসেজ দেয় যে, আপনার অ্যাকাউন্টে ১৭০০ টাকা জমা হয়েছে, টাকাগুলো তুলতে চাইলে রেজিস্ট্রেশন করুন। এই বলে তারা একটা জুয়ার লিংক দেয়। এখন এই ফাও টাকার লোভে অধিকাংশ মানুষ ঐ সাইটে অ্যাকাউন্ট করে এবং একসময় জুয়া খেলা শুরু করে দেয়। ফলে যে জুয়া খেলতে চায় না কিংবা জুয়া সম্পর্কে যার ধারণাই নেই, সেও না চাইতে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
৬. রাজনৈতিক কারণ: জুয়া ব্যবসা বন্ধ না হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। জুয়ার ব্যবসার সাথে সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জড়িত থাকে। ফলে সরকার যতই চাপ সৃষ্টি করুক না কেন, জুয়ার মূল হোতাদের কখনোই চিহ্নিত করা যায় না। এছাড়া সরকার বদল হলেও জুয়ার ভাগ সবাই সমানভাবে পেতে থাকে।
৭. অসৎ কর্মকর্তা: যাদের উপর জুয়া বন্ধের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তারা নিজেরাই এইসব জুয়ার সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকে। ফলে মুখে কিংবা লোক দেখানো জুয়া বন্ধের ঘোষণা দিলেও প্রকৃতপক্ষে তারা জুয়া বন্ধের জন্য আন্তরিক নয়।
৮. মোবাইল অপারেটরের অসহযোগিতা: দেশের মোবাইল অপারেটরগণ চাইলে জুয়া বন্ধে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এতে তাদের লাভ হবে না। কেননা অধিকাংশ মানুষ জুয়া খেলার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাই মোবাইল অপারেটররা ব্যবসা হারানোর ভয়ে জুয়ার সাইট বন্ধ করে না।
৯. সচেতনতার অভাব: আমাদের দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম হলেও তাদের অধিকাংশ মানুষ সঠিক ইসলাম সম্পর্কে জানে না এবং জানার চেষ্টাও করে না। তাই জুয়া খেলাকে ইসলাম হারাম ঘোষণা দিলেও অধিকাংশ মানুষ জেনে না জেনে জুয়া খেলছে। এছাড়াও অধিকাংশ নব্য জুয়াড়ি জুয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানে না। ফলে তারা না জানার কারণে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
তাহলে সমাধান কী?
যেভাবে অনলাইনে জুয়া ছড়িয়ে পড়ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে দেশের জনগণের একটি কর্মক্ষম অংশ জুয়ায় জর্জরিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমাদের অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
ক. ধর্মীয় অনুশাসন: পৃথিবীর যেকোনো পাপ বন্ধের একমাত্র উপায় হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন। যেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া হারাম এবং এই দেশ ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশ, সেহেতু আমরা যদি ব্যক্তি পর্যায়ে ধর্মীয় অনুশাসন শুরু করতে পারি, তাহলে জুয়ার ক্ষতিকর দিক থেকে আমরা রেহাই পেতে পারি।
খ. সচেতনতা সৃষ্টি: অনলাইন জুয়া বন্ধের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে, ব্যাপকভাবে জুয়ার ক্ষতিকর দিক নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। বিশেষ করে ছাত্র-যুবকদের এই বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কেননা এই শ্রেণির ছেলেরাই সবচেয়ে বেশি জুয়ায় জড়িত।
গ. জাতীয় কর্মশালা: জুয়ার বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মশালা পরিচালনা করতে হবে। যাতে সারা দেশের মানুষ জুয়া সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে পারে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে জুয়ার ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে হবে।
ঘ. আইন শক্তিশালী করা: অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করে জুয়া বন্ধের চেষ্টা জোরেশোরে চালিয়ে যেতে হবে।
ঙ. অনলাইন ব্যাংকিং-এর নজরদারি: অনলাইন জুয়ার টাকা আদানপ্রদান হয় অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে। তাই অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমে কঠোর নজরদারি বাড়াতে পারলে এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা পেলে অনলাইন জুয়া বন্ধ করা সম্ভব।
চ. রাজনৈতিক সদিচ্ছা: জুয়া বন্ধ না হওয়া এবং জুয়ার প্রচার-প্রসার বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব। শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়া কোনো দেশেই জুয়া প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই সত্যিকারভাবে জুয়া বন্ধ করতে চাইলে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সদিচ্ছা থাকতে হবে।
ছ. প্রযুক্তি ব্যবহার: আধুনিক শক্তিশালী ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইটগুলোকে শনাক্ত করে বন্ধ করতে হবে। শক্তিশালী প্রযুক্তি ছাড়া অনলাইন জুয়া বন্ধ করা যাবে না।
জ. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: কোনো দেশই এককভাবে অনলাইন জুয়া বন্ধ করতে পারবে না, যতক্ষণ না অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত দেশগুলো একে অপরকে সহযোগিতা না করে। তাই অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সকলে একসাথে লড়াই করতে হবে।
ঝ. মোবাইল অপারেটরের সহযোগিতা: দেশের যে কয়টি মোবাইল অপারেটর রয়েছে, তারা যদি সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে, তাহলে দেশ থেকে অনলাইন জুয়া বন্ধ করা সম্ভব। কোন কোন সাইট থেকে জুয়া খেলা হয়, তা প্রতিটি মোবাইল অপারেটরের কাছে তথ্য থাকে। একইসাথে কোন কোন নাম্বারে জুয়ার অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তারও তথ্য থাকে মোবাইল কোম্পানির কাছে। তাই তারা যদি আন্তরিক হয়, তাহলে দেশ অনলাইন জুয়া থেকে মুক্তি পেতে পারে।
ঞ. খেলাবান্ধব যুবসমাজ গড়ে তোলা: কিশোর ও যুবকদের অনলাইন জুয়া থেকে মুক্তি দিতে হলে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে মাঠে আনতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ মাঠ না থাকার কারণে আমাদের দেশের যুবসমাজ মোবাইলবন্দী হয়ে গেছে। ফলে তারা মোবাইল থেকে ভালো কিছুর বদলে খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই কিশোর-যুবকদের জুয়ার নেশা থেকে বের করে আনতে হলে তাদেরকে মাঠে ফিরিয়ে নিতে হবে।
অনলাইন জুয়া থেকে মুক্তির উপায়:
অনলাইন জুয়ার ভয়াল থাবায় বাংলাদেশের যুবসমাজ জর্জরিত। এইসব জুয়াড়িদের শনাক্ত করতে এবং তাদেরকে জুয়া থেকে দূরে রাখতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
ক. ইসলামের অনুশাসন: অনলাইন জুয়া থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই পরিবারে সর্বপ্রথম দ্বীনের সঠিক অনুশীলন করতে হবে। কেননা একমাত্র ইসলামী অনুশাসন ছাড়া কোনো কিছুই পাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে না।
খ. অসৎসঙ্গ ত্যাগ করা: অনলাইন জুয়াসহ যাবতীয় পাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই অসৎসঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। কেননা অধিকাংশ মানুষ খারাপ হয় তার অসৎ বন্ধুর কারণে।
গ. পরিবারের নজরদারি: পরিবারের অভিভাবকদের অবশ্যই তার সন্তানের খোঁজখবর নিতে হবে। সে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, তার সঠিক তথ্য অভিভাবকের থাকতে হবে। এজন্য সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
ঘ. জবাবদিহিতা: অভিভাবকদের কাছে অধীনদের টাকা-পয়সাসহ সবকিছুর বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি স্ত্রীর কাছে স্বামীরও জবাবদিহি করতে হবে অন্যায় কিছু হলে। পরিবারগুলোতে সঠিক জবাবদিহিতা না থাকার কারণে সংসারগুলোতে জুয়া নেশার মতো গ্রাস করে ফেলে।
ঙ. পারিবারিক সুসম্পর্ক: পরিবারে একে অপরের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক থাকলে সেখানে খারাপ কোনো কিছুই স্থান পেতে পারে না। তাই যত দুঃখ-বেদনা হতাশা থাকুক না কেন, পারিবারিক বন্ধন শক্ত হলে সেখানে জুয়া স্থান নিতে পারে না।
বর্তমান বিশ্বে অনলাইন জুয়া একটি গুরুতর সমস্যা এবং এটির সমাধান খুব সহজ নয়। যেভাবে অনলাইন জুয়া দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে ধর্মীয় অনুশাসন ছাড়া কোনোভাবেই একে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই আসুন! ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে ইসলামের চর্চা করে জুয়াসহ যাবতীয় পাপাচার বন্ধে সচেষ্ট হই।
-সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী*
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।