কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

দ্বীনী জ্ঞানার্জন থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ

post title will place here

দ্বীনী জ্ঞান অর্জন এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া রহমত। এই রহমত সবার ভাগ্যে হয় না। এই জ্ঞান অর্জন করতে হলে যেমন রহমত প্রয়োজন, তেমনি করতে হয় কঠোর পরিশ্রম। তবেই অর্জিত হয় দ্বীনী জ্ঞান। যেমন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয’।[1]

এখানে জ্ঞান বলতে বুঝানো হচ্ছে দ্বীনী জ্ঞান। ফরয বলা হয় যা আল্লাহ কর্তৃক এসেছে। অর্থাৎ একজন মুসলিমকে দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর এই জ্ঞান বেশি অর্জিত হয় আমাদের দেশের ক্বওমী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এই জ্ঞান অর্জনের জন্য পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করান। কিন্তু দেখা যায়, খুবই কম শিক্ষার্থী এই জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এর কারণ কী? এর বেশ কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

(১) সময়কে মূল্যায়ন না করা : শিক্ষার্থীরা সময়কে মূল্যায়ন করবে। কিছু ছাত্র সময়কে মূল্যায়ন না করে উল্টো সময়কে নষ্ট করে। যেমন— গল্প করা, খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকা ইত্যাদি। সময় এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার দরুন আল্লাহ এই সময়ের কসম করে বলছেন, وَالْعَصْرِ ‘সময়ের কসম’ (আল-আছর, ১০৩/১)

অতএব বুঝা যাচ্ছে সময় হচ্ছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করতে হলে প্রত্যেক ছাত্রকে সময়ের মূল্যায়ন করা আবশ্যক। সময়কে কুরআন-হাদীছের পিছনে ব্যয় করতে হবে। তবেই অর্জন হবে দ্বীনী জ্ঞান। আর এই সময়কে রুটিন অনুযায়ী ভাগ করে নিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে তুমি সময়মতো সব পড়া শিখতে পারবে। তাই ছাত্র জীবনে সময়কে মূল্যায়ন করতে হবে, অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না।

(২) স্মার্টফোন ব্যবহার : স্মার্টফোন শিক্ষার্থীদের মেধা নষ্টের একটি অন্যতম কারণ। শিক্ষার্থীদের কাছে এই ফোন থাকলে জ্ঞান অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই ফোন কাছে থাকলেই একটু ইচ্ছা করবে যে, একটু গেম খেলি বা ফেসবুক চালাই।

চালাতে চালাতে দেখা যায় যে, তুমি কয়েক ঘণ্টা পার করে ফেলেছ। এর ফলে তোমার বহুসময় নষ্ট হয়ে যাবে, যা তোমার জীবনকে নষ্ট করে দিবে। শুধু তাই নয়, এই ফোন হচ্ছে যেনার নিকটবর্তী হওয়ার মূল কারণ। শিক্ষার্থীকে এই ফোন কতটা নিচে নিয়ে যেতে পারে! অথচ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মাজীদে বলেছেন,وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‘তোমরা যেনার নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ’ (বনীইসরাঈল, ১৭/৩২)

তাহলে উক্ত আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা এই যেনার পথ থেকে নিষেধ করেছেন। অথচ যেনার নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যম হচ্ছে স্মার্টফোন। এটি মস্তিষ্ককে নষ্ট করে দেয়, যার ফলে বিদ্যা হারিয়ে যায়। এর আরেকটি মন্দ দিক হলো গান-বাজনা, যা শুনলে মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় চলে যায় এবং মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে। গান-বাজনা এটি দ্বীনী জ্ঞান অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই গান-বাজনা থেকে নিষেধ করেছেন। কাজেই ছাত্রজীবনে স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

(৩) অসৎ বন্ধু : এটিও জ্ঞান অর্জনে বাধা প্রদান করে। যেমন কথায় আছে সঙ্গদোষে লোহা ভাসে। লোহাকে যদি কাঠের সাথে বেঁধে ভাসানো হয়, হলে তা ভাসবে। তেমনি কোনো ভালো ছাত্র বা ছাত্রী অসৎ ছেলে-মেয়ের সাথে চললে সেই ভালো শিক্ষার্থীও খারাপ শিক্ষার্থীতে পরিণত হবে।

তোমার বন্ধু তোমাকে বলবে, চলো সিনেমা চলছে দেখে আসি। তুমি যেতে না চাইলেও তোমাকে জোর করে নিয়ে যাবে। আবার কখনো পার্কে নিয়ে যাবে। এভাবে দেখবে যে, তুমি ক্লাস থেকে ছুটি নিচ্ছ মিথ্যা কথা বলে। আর বন্ধুর সাথে ঘুরতে যাচ্ছ। এর ফলে দেখবে যে, তোমার রোল ছিল সবার আগে, এখন তোমার রোল আগে থাকা তো দূরের কথা ফেল করে বসে আছো। বন্ধু থাকবে, কিন্তু সেই বন্ধু হবে জ্ঞানী, যে তোমাকে তোমার পড়ায় সাহায্য করবে। কথায় আছে, একটি বই ১০০টি বন্ধুর সমান আবার একটি বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান। কাজেই এমন কাউকে বন্ধু বানাবে, যার কাছ থেকে কোনো খারাপ কিছু নয়, বরং জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। তাই অসৎ বন্ধু থেকে বিরত থাকতে হবে।

(৪) অলসতা : শিক্ষাজীবনে পড়ালেখা থেকে বিরত থাকার একটি প্রধান কারণ হলো অলসতা। যেমন দেখা যায় যে, সপ্তাহে যখন বৃহস্পতিবার আসে, তখন মনে হয় যে, আজ না পড়ে কাল পড়ব। এরপর যখন শুক্রবার আসে, তখন দেখা যায় ফজর ছালাত পড়ে এসে ঘুমাই। উঠতে উঠতে ১০টা বাজে। এরপর খেয়ে গোসল করে আসতে আসতে সাড়ে ১১টা বাজে। এরপর এসে আবার একটু গল্প করে। তারপর দেখে যে, ১২টা বেজে গেছে। তখন তাড়াতাড়ি ওযূ করে মসজিদে যায়। এভাবেই শুক্রবার শেষ। এরপর শনিবারে আসলে দেখা যায় যে, আটটি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটিই মুখস্থ হয়নি। এই অলসতা কাটিয়ে উঠতে পারলে সফলতা অর্জন করতে পারবে। যেমন আরবী প্রবাদে আছে, مَنْ جَدَّ وَجَدَ ‘যে চেষ্টা করে সে ফল পায়’। কাজেই যারা অলসতা ত্যাগ করতে পারবে, তারাই সফলতা অর্জন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং অলসতা ত্যাগ করো।

(৫) অবৈধ সম্পর্ক : অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করা মানেই জীবনকে ধ্বংস করা। শিক্ষাজীবনে অবৈধ সম্পর্কে গড়লে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংসের পেছনে কারণ এটাই। কোনো শিক্ষার্থী যখন অবৈধ সম্পর্ক করবে, তখন তোমার চিন্তা হবে যে তার সাথে কখন কথা বলবে, কখন দেখা করবে। এটা নিয়ে চিন্তায় বিভোর থাকবে। আর তুমি যার সাথে সম্পর্ক গড়েছো সে কিন্তু ঠিকই পড়ালেখা করছে। আর যদি দুই জনের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে তাহলে তো তোমার জীবন শেষ। এখন হয় তুমি পড়ালেখা বাদ দিবে, না হয় নেশা করবে। অথচ আল্লাহ তাআলা নিষেধ করে বলছেন, وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‘তোমরা যেনার নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ’ (বনীইসরাঈল, ১৭/৩২)

উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা যেনা থেকে নিষেধ করেছেন। কাজেই অবৈধ সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এটা তোমার জীবনকে ধংস করে ছাড়বে।

আল্লাহ আমাদের উক্ত সকল বিষয় থেকে বেঁচে দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করা তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

আহমাদুল্লাহ

মা‘হাদ ২য় বর্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।

[1]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৪।

Magazine