আল্লাহ তাআলা বলেন, يس وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ ‘ইয়াসিন। (শপথ) বিজ্ঞানময় কুরআনের’ (ইয়াসিন, ৩৬/১-২)। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَمَا مِنْ غَائِبَةٍ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ ‘আকাশ ও যমীনের মাঝে এমন কোনো গোপন বিষয় নেই, যা এই সুষ্পষ্ট কিতাবে নেই’ (আল-নামল, ২৭/৭৫)। আল্লাহ আরও বলেন,قُلْ أَنْزَلَهُ الَّذِي يَعْلَمُ السِّرَّ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ‘বলুন, এটা তিনি অবতীর্ণ করেছেন, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সকল রহস্য সম্পর্কে অবগত’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/৬)।
উক্ত আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় যে, পৃথিবীতে যতই গোপন রহস্য থাকুক সকল বিষয় এই কুরআনে উল্লেখ আছে। শুধু কুরআন গবেষণা করে বুঝতে হবে। আর গবেষণা করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে গবেষণার মূলনীতি না মানার কারণে আমরা নাস্তিক না হয়ে যাই।
সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবীইত্যাদির অবস্থা :
আমরা অনেকে একটা কথা জানি, সেটা হলো, শুধু পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে ঘোরে। আর বাকি সব কিছু তার নিজের অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। যদিও এটা বিজ্ঞানীদের গবেষণা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখেন যে, তাদের আগের ধারণা ভুল। কারণ শুধু পৃথিবীটা ঘোরে না; বরং তার সাথে সাথে সৌরজগতের সমস্ত কিছু নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে। অথচ আল্লাহ তাআলা এই বিষয়ে ১৪৫০ বছর আগেই কুরআনে বলেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ ‘তিনিই আল্লাহ যিনি রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন। এগুলোর প্রত্যেকটিই নিজ নিজ কক্ষপথে ভাসছে’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৩৩)। তিনি আরও বলেন,وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ ‘সূর্য তার নিজস্ব গন্তব্যে বিচরণ করে। আর এটা সর্বজ্ঞানী, পরাক্রমশালী (আল্লাহ) নিয়ন্ত্রণ করেন’ (ইয়াসিন, ৩৬/৩৮)। এ বিষয়ে আরও অনেক স্থানে আল্লাহ বলেছেন,وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى ‘তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে করেছেন নিয়মের মধ্যে। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে’ (লুক্বমান, ৩১/২৯; আর-রা‘দ, ১৩/২)।
উক্ত আয়াতগুলো থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, পৃথিবীর সাথে সাথে সবকিছু ঘোরে।
রাত, দিন সূর্য ও চন্দ্রের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ ‘সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় যে, চাঁদের নাগাল পাবে আর রাতের পক্ষে সম্ভব নয় যে, দিনের আগে আগে চলবে; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে ভাসছে’ (ইয়াসিন, ৩৬/৪০)। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ - وَلَكُمْ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسْرَحُونَ-وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ إِلَى بَلَدٍ لَمْ تَكُونُوا بَالِغِيهِ إِلَّا بِشِقِّ الْأَنْفُسِ إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَحِيمٌ - وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
‘তিনিই তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্য শীত নিবারণসহ বহু উপকরণ রয়েছে এবং এতে তোমরা তোমাদের খাবার পেয়ে থাকো। আর সন্ধ্যায় যখন তোমরা তোমাদের পশুকে চারণভূমি থেকে নিয়ে আসো এবং সকালে আবার চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ করো। আর পশুগুলো তোমাদের ভার বহন করে এমন এক দেশে নিয়ে যায়, যেখানে তোমরা ক্লান্তের পর ক্লান্ত না হয়ে পৌঁছতে পারতে না। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক স্নেহশীল, পরম দয়ালু। তোমাদের আরোহণের জন্য তিনি খচ্চর, ঘোড়া, ও গাধা সৃষ্টি করেছেন আর এমন কিছু সৃষ্টি করেছেন, যার ব্যপারে তোমরা ধারণা করোনি’ (আন-নাহল, ১৬/৫-৮)। এই আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে ‘এমন কিছু সৃষ্টি করবেন, যার ব্যাপারে তোমরা ধারণা করোনি’ এখানে আল্লাহ তাআলা বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি অনেক ধরনের পশু সৃষ্টি করেছেন, যা আমরা গবেষণা করলে খুঁজে পাব বা আল্লাহ এমন সবকিছু সৃষ্টি করছেন বা করবেন, যার ধারণা মানুষের নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে উৎকর্ষ সাধণ হয়েছে বা ভবিষ্যতে আরও যে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা মানুষ দেখতে পাবে তার ইঙ্গিত আল্লাহ এই আয়াতে প্রদান করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُمْ مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ثُمَّ إِلَى رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ ‘যমীনে বিচরণশীল এমন কোনো জীব নেই অথবা ডানার সাহায্যে উড়ে এমন কোনো পাখি নেই, যা তোমাদের মতো এক একটি জাতি বা শ্রেণি নয়। কিতাবে আমি কোনো কিছু লিখতে বাকি রাখিনি। অতঃপর তারা সকলে তাদের পতিপালকের নিকটে একত্রিত হবে’ (আল-আনআম, ৬/৩৮)।
উক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, আমাদের মতো পশুরও এক একটি জাতি বা শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। যার কারণে তারা মিলেমিশে চলাচল করতে পারে। আর আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে যে, সকলকেই তাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তিত হতে হবে। আয়াতটি থেকে বোঝা যায় যে, সকল পশুকে ক্বিয়ামতের দিন একত্রিত করা হবে হিসাব-নিকাশের জন্য।
পাখি বিষয়ক :
আল্লাহ তাআলা বলেন,أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافَّاتٍ وَيَقْبِضْنَ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمَنُ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ بَصِيرٌ ‘তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের উপরের পাখিসমূহের প্রতি, যারা তাদের ডানা প্রসারিত করে আবার গুটিয়ে নেয়? দয়াময় আল্লাহই তাদের স্থির রাখেন। তিনি সবকিছুই দেখেন’ (আল-মুলক, ৬৭/১৯)।
আল্লাহ তাআলা বলেন,أَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِي جَوِّ السَّمَاءِ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ‘তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যভাগে যে পাখিগুলো উড়ছে তাদের দিকে? আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। নিশ্চয়ই মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে’ (আন-নাহল, ১৬/৭৯)। এখানে যে অনুবাদ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় যে, আল্লাহ নিজ শক্তিতে পাখিকে ধরে রাখেন। কেননা এখানে আরবীর যে ক্রিয়াটি (فعل) আনা হয়েছে, তা হচ্ছে আমসাকা (اَمْسَكَ), যার মূল অর্থ হচ্ছে- স্থাপন করা বা কাউকে ধরে রাখা। আমরা যদি আকাশে পাখির দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখব যে, কখনোও কোনো পাখি অন্য কোনো পাখির সাথে ধাক্কা খায় না। এই বিষয়টি গবেষণা করে দেখা যায় যে, প্রত্যেকটা পাখি একটা নির্দিষ্ট ধারা অনুসরণ করে চলে। ছোট পাখিগুলোও অনেক সহজে দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে পারে। অধ্যাপক হ্যামবার্জার তার ‘পাওয়ার অ্যান্ড ফ্রেজাইলটি’ নামক গ্রন্থে এক ধরনের পাখির কথা উল্লেখ করেছেন। এই পাখি ছয় মাসে ১৫,৫০০ শত মাইলের বেশি পথ সফর করতে পারে। আর সর্বাধিক এক সপ্তাহের মাঝে তার যাত্রাস্থলে ফিরে আসে।
আব্দুর রাযযাক
অষ্টম শ্রেণি, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।