একদিন যায়, দুইদিন যায়, এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছু দিন। গত কয়েকদিনের ন্যায় জ্ঞানপিপাসুদের জ্ঞানের খোরাক মেটাতে আজও উপস্থিত নেই নিত্যপ্রিয় মুখাবয়ব। এক অজানা অভাব যেন প্রতিনিয়ত বিচরণ করছে মানসজগতে। চেহারায় আনন্দের ছাপ ভেসে উঠলেও, কেন জানি চিত্তপট তার আনন্দের রেখা প্রকাশ করতে ভীষণ নারাজ।
কেন এই বিরহব্যথা? হয়তো আবেগী এ মন হাতড়ে বেড়াচ্ছে অনির্বচনীয় কিছু স্মৃতি। হাতড়াচ্ছে অতীতের কিছু গল্প। যেই স্মৃতির মাঝে লুক্কায়িত এক চিলতে প্রশান্তি। যেই গল্পের প্রধান চরিত্র এমন এক সূর্য, যে মেঘে ঢাকা অন্তরের পাশে দাঁড়িয়ে আশার আলো দেখিয়ে বলেছিল, ‘কী হয়েছে, ভাই! কোনো সমস্যা?’
ইনি তো সেই ভাই, যার কাছেই আমরা শেয়ার করতাম কিছু অভাবের কথা, কিছু সুখ আর ব্যথা। আর তিনি তাঁর সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দিয়ে ভুলিয়ে দিতেন সকল অভাব। যখন বুঝতাম না কোনো নিয়ম, সবকিছু ছিল এলোমেলো, অগোছালো ছিল শিখন পদ্ধতি, তখন তিনি কাঁধের উপর হাত রেখে বলেছিলেন, ‘নিজের লক্ষ্যকে ফোকাস করো, যেই বিষয়ে পারদর্শী তা আঁকড়ে ধরো। একাডেমিক শিক্ষার মাঝে সীমাবদ্ধ থেকো না, নিজ আগ্রহে অগ্রসর হও’।
সৃজনশীলতার শিক্ষা তো তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া। কাঙ্ক্ষিত এবং অযাচিত সময়ে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার ঝুলি। মুখাবয়বের মৌনাবলম্বন এবং সুখানুভূতির ছাপ দেখে বুঝে নিতেন একবুক সমুদ্রের না বলা ভাষা। বৃষ্টিভেজা ফুলের পাপড়ির মতো নরম-কোমল অন্তরের মানুষটি যেন পরের সামান্য ব্যথাতেই ভেঙে পড়তেন।
ভাইটা তো এমন নৌকার মাঝি, জ্ঞান অর্জনের জন্য অবিরাম যেই নৌকার দ্বার আমাদের জন্য উন্মুক্ত।
মন খারাপের দিনে তিনি এমন, যেন মেঘের কোলে এক খণ্ড রোদ।
অসুস্থ ছাত্রের পাশে তিনিই স্নেহ ও মায়ার একরাশ বৃষ্টি।
ছাত্রদের দুঃখকষ্টে সমান ভাগীদার হওয়া যেন তার রক্তে মাংসে মিশে আছে।
মসজিদে যেন ছাত্রদের পড়ার সঙ্গী, গল্পে যেন খুব কাছের বন্ধু, দারসে যেন গুরুগম্ভীর আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এক আদর্শ শিক্ষক।
কে এই তিনি? মনটা ব্যাকুল হয়ে জানতে চাচ্ছে, তাই না? আরে তিনিই তো আমাদের প্রিয়, সবার প্রিয় এক নাম আব্দুর রহমান ভাই।
কঠিন পরিস্থিতি হয়তো তাঁর আর আমাদের গল্পের মোড়টাকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু হৃদয়ের বাঁধনটা ঠিকই আছে। অবিরাম চলন্ত তার সাথে থাকার অদম্য অভিলাষ। প্রিয়তম ভাইটা আজকে চোখের অগোচরে থাকা সত্ত্বেও কেন জানি তাঁর হাসিমাখা মুখটা বারবার ভেসে উঠছে চিত্তপটে। যেন তিনি দূরে থেকেও কাছে। তাই তো তাঁর জন্য প্রতিনিয়ত, ‘তুলি দুই হাত করি মুনাজাত’।
পরিশেষে দুঃখভারাক্রান্ত মনে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই— ‘জীবনের কঠিন ও দুর্বিষহ সময়গুলোকে ভালোবাসতে শিখুন; ভরসা রাখুন শুধু রবের উপর’।
মাযহারুল ইসলাম আবির
নবম শ্রেণি, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী।