কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

অহংকার : কারণ ও প্রতিকার

post title will place here

অহংকারকে আরবীতে বলা হয় الْكِبَر যার অর্থ বড়ত্ব প্রদর্শন করা, অন্যের চাইতে নিজেকে বড় মনে করা। পারিভাষিক অর্থে সত্যকে দম্ভের সাথে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হীন মনে করাকে অহংকার বলা হয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ ‘প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা’।[1]

অহংকার মানব স্বভাবের এক নিম্ন, নিকৃষ্ট চিহ্ন বা নিদর্শন। এটা শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গেঁয়ো-শহুরে, বর্ণ-ধর্ম বিচার করে না, বরং এর প্রভাব সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে চিরাচরিতভাবে বিরাজমান। অহংকার মানব আত্মার এক কঠিন ব্যাধি, যা ব্যক্তিকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি ধ্বংসকারী বস্তু হতে মানুষকে সাবধান করেছেন। তার তৃতীয়টি হলো আত্ম-অহংকারী হওয়া। তিনি বলেন, وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ ‘আর এ স্বভাবটিই সবচেয়ে খারাপ’।[2]

অহংকার মানব জীবনের জন্য বিধ্বংসী এজন্য যে, অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্বের বিরুদ্ধে অহংকার করে। এজন্যই শায়খুল ইসলাম আহমাদ ইবনু তায়মিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, অহংকার শিরকের চেয়েও নিকৃষ্ট। কেননা অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্বের বিরুদ্ধে অহংকার করে আর মুশরিক ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্যেরও করে’।[3]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ‏ قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً قَالَ إِنَّ اللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এ-ও কি অহংকার? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা’।[4]

আসলে যে ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়, সে নিজেকে নিজেই ধ্বংস করে ফেলে। এমনকি ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ধ্বংস করার ব্যাপারে এক নিদারুণ ভূমিকা পালন করে।

অহংকারের কারণ :

অহংকারের বেশ কতগুলো কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নে আলোচনা করা হলো—

ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততির আধিক্যতা : ধনসম্পদ এবং সন্তানসন্ততি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক নেয়ামত ও পরীক্ষাও বটে। অনেক সময় দেখা যায় মানুষ এর দ্বারা ফেতনায় পতিত হয়, হয়ে পড়ে অহংকারী, বেড়ে যায় উদাসীনতা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ﴾ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত’ (আল-মুনাফিকূন, ৬৩/৯)

অত্যধিক সম্পদের মালিক ছিল কারূন। যার কারণে সে অহংকারী হয়ে পড়েছিল৷ ভুলে গিয়েছিল নিজের আসল পরিচয়। সত্য থেকে বিমুখ হয়ে জিদ করে বসেছিল মিথ্যার উপর। যার কারণে আল্লাহ তাকে সহ তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দিয়েছিলেন। তার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿إِنَّ قَارُونَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوسَى فَبَغَى عَلَيْهِمْ وَآتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوزِ مَا إِنَّ مَفَاتِحَهُ لَتَنُوءُ بِالْعُصْبَةِ أُولِي الْقُوَّةِ إِذْ قَالَ لَهُ قَوْمُهُ لَا تَفْرَحْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِينَ﴾ ‘কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত। বস্তুত সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভাণ্ডার যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করুন, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৭৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿قَالَ إِنَّمَا أُوتِيتُهُ عَلَى عِلْمٍ عِنْدِي أَوَلَمْ يَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَهْلَكَ مِنْ قَبْلِهِ مِنَ الْقُرُونِ مَنْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَأَكْثَرُ جَمْعًا وَلَا يُسْأَلُ عَنْ ذُنُوبِهِمُ الْمُجْرِمُونَ﴾ ‘সে বলল, এই সম্পদ আমি আমার জ্ঞান বলে প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানত না যে, আল্লাহ তার পূর্বে ধ্বংস করেছেন বহু মানবগোষ্ঠীকে, যারা তার চেয়ে শক্তিতে ছিল প্রবল এবং ছিল অধিক প্রাচুর্যশালী? কিন্তু অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করা হয় না’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৭৮)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,﴿فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِنْ فِئَةٍ يَنْصُرُونَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِينَ﴾ ‘অতঃপর আমি কারূনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোনো দল ছিল না যে আল্লাহর শাস্তি হতে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৮১)

ইলম বা বিদ্যা : অহংকারের যত কারণ রয়েছে, তন্মধ্যে ইলমের অহংকার একধাপ এগিয়ে। হাফেয যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘অহংকারের সবচেয়ে নিম্ন, নিকৃষ্ট প্রকার হলো ইলমের অহংকার। কেননা তার ইলম তার কোনো কাজে আসে না। যে ব্যক্তি আখেরাতের জন্য জ্ঞান অর্জন করে, জ্ঞান তার অহংকারকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং তার অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে। সে নিজেকে হীন মনে করে এবং সর্বদা নিজের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একটু উদাসীন হলে ভাবে, এই বুঝি সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলাম ও ধ্বংস হয়ে গেলাম। আর যে ব্যক্তি ইলম শিখে গর্ব করার জন্য ও নেতৃত্ব লাভের জন্য, সে অন্যের উপর অহংকার করে ও তাদেরকে হীন মনে করে। আর এটিই হলো সবচেয়ে বড় অহংকার। আর ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে।[5]

ইলম সঠিক উদ্দেশ্যে অর্জিত হলে এর রয়েছে অনেক মর্যাদা। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ ‘যে লোক জ্ঞানার্জনের জন্য রাস্তায় বের হয়, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন’।[6] রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘আর জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য আসমান ও যমীনবাসী আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানির মধ্যের মাছও’।[7]

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে দুনিয়া হাছিলের লক্ষ্যে ইলম অর্জন করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللَّهُ النَّارَ ‘যে লোক আলেমদের সাথে তর্ক-বাহাছ করা অথবা নিরোধদের সাথে বাকবিতণ্ডা করার জন্য এবং মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করেছে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’।[8] রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللَّهِ لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلَّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ইলম বা জ্ঞান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, কেউ সে জ্ঞান পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের অভিপ্রায়ে অর্জন করলে ক্বিয়ামতের দিন সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না’।[9]

বংশমর্যাদা : ব্যক্তিকে সম্মানিত করার ক্ষেত্রে বংশমর্যাদা যে এক দারুণ ভূমিকা পালন করে, তা অনস্বীকার্য। তবে এই মর্যাদা অটুট থাকে ততক্ষণ, যতক্ষণ বংশের লোকেরা বিনয়ী ও তাক্বওয়ার অধিকারী হন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ﴾ ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাক্বওয়াশীল’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১৩)

যদি এটা ব্যতিরেকে কথা ও কর্মে দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়, তাহলে ব্যক্তি স্বীয় সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়। ব্যক্তির বংশীয় মর্যাদা তাকে সম্মুখপানে এগিয়ে ততক্ষণ নিয়ে যেতে পারে, যতক্ষণ তার আমল উল্লেখযোগ্য হয়৷ আর যদি আমলে পশ্চাতে থাকে, তাহলে বংশমর্যাদা এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ ‘যে লোককে তার আমল পিছনে সরিয়ে দিবে, তার বংশ (মর্যাদা) তাকে অগ্রসর করে দিবে না’।[10]

ইসলামে বংশমর্যাদা প্রশংসিত হলেও তাক্বওয়া না থাকলে তা নিন্দনীয়। মানুষ স্রেফ বংশীয় মর্যাদা দ্বারা সম্মান লাভ করতে পারে না। যদি না তার মধ্যে তাক্বওয়া যুক্ত হয়। সুতরাং ব্যক্তি যদি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে চায় কিংবা সফলতা অর্জন করতে করতে চায়, তাহলে উচ্চ বংশের অহংকার নয়; বরং তাক্বওয়া অর্জনের মাধ্যমে প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে হবে।

পদমর্যাদা : উচ্চ পদবি অনেক সময় মানুষকে অহংকারী করে তোলে। পদমর্যাদার বিষয়টি দুনিয়াবী জীবনের জন্য যেমন কঠিন, ঠিক তেমনি এটি পরকালীন জীবনের জন্যও কঠিন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَنْ وَلِيَ الْقَضَاءَ فَقَدْ ذُبِحَ بِغَيْرِ سِكِّينٍ ‘যে ব্যক্তিকে বিচারকের পদে নিযুক্ত করা হলো, সে যেন বিনা ছুরিতে যবেহ হলো’।[11]

ব্যক্তি যদি হক্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে দুনিয়া হারাতে হবে। আর যদি হক্বের সাথে দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে পরকাল হারাতে হবে। মানুষ যে যত বড় দায়িত্বের অধিকারী, তাকে ততো জটিল জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ‘জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধস্তন সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম (খলীফা/সরকার), যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধস্তনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধস্তনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তানসন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোনো ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখো, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[12]

পদমর্যাদার অহংকার এমন একটি বিষয়, যা থেকে সৃষ্টি হয় যুলুম, নির্যাতন আর খেয়ানত। সুতরাং এ বিষয়ে সোচ্চার থাকাই ঈমানের দাবি। খেয়াল রাখতে হবে, পদমর্যাদা যেন আমাদেরকে অহংকারের দিকে ধাবিত করতে না পারে। তারই সাথে সর্বদা মনের গহীনে লালন করতে হবে জবাবদিহিতার ভয়। আদায় করার চেষ্টা করতে হবে ﴿الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾ এর পূর্ণ হক্ব।

আল্লাহর দাসত্ব বা ইবাদত করা : আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾ ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে’ (আয-যারিয়াত, ৫১/৫৬)। ইবাদতই ইসলামের প্রধান উদ্দেশ্য। ইসলামের মূলেই ইবাদত। ইবাদত ছাড়া ইসলাম অচল, পঙ্গুপ্রায়। কিন্তু এই ইবাদত বা দাসত্ব অনেক সময় মুমিনের অন্তরে অহংকার সৃষ্টি করে। ব্যক্তি ভুলে যায় তার সৃষ্টির সূচনা। আল্লাহর দাসত্বের মাঝেই খুঁজে ফিরে নিজের বড়ত্ব। হেয় প্রতিপন্ন করে অন্যকে। যার দরুন অন্তরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করার ক্ষেত্রে যারপরনাই ভূমিকা পালন করে। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ একবার খোরাসানের এক বিখ্যাত দরবেশের দরবারে গেলেন। কিন্তু দরবেশ তাকে গুরুত্ব দিলেন না। তখন তাকে বলা হলো, আপনি কি জানেন ইনি কে? ইনি হলেন আমীরুল মুমিনীন ফীল হাদীছ আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ। একথা শুনে দরবেশ দ্রুত বেরিয়ে এসে তার নিকট ওযর পেশ করলেন এবং তাকে উপদেশ দিতে বললেন। তখন তিনি দরবেশকে বললেন, যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন তুমি যাকেই দেখবে তাকেই তোমার চাইতে উত্তম বলে ধারণা করবে।[13] বকর ইবনু আব্দুল্লাহ মুযানী বলেন,نَظَرْتُ إِلَى أَهْلِ عَرَفَاتٍ ظَنَنْتُ أَنَّهُ قَدْ غُفِرَ لَهُمْ لَوْلَا أَنِّي كُنْتُ فِيهِمْ بِهِ ‘আমি আরাফাতের ময়দানে অবস্থানরত সবার দিকে তাকালাম এবং ভাবলাম যে এদের সকলকে ক্ষমা করা হয়েছে, যদি না আমি এদের মধ্যে থাকতাম। অর্থাৎ শুধু আমাকেই ক্ষমা করা হয়নি।[14]

যুগে যুগে যারা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন, তারা ছিলেন নিরহঙ্কারী, সহজ সরল। সর্বদা অন্যের চাইতে নিজেকে হীন মনে করাই ছিল তাদের আদর্শ বা নীতি। হীন বেশে চলার মধ্যেই তারা লাভ করত আত্মতৃপ্তি, খুঁজে ফিরত সফলতা আর সম্মান।

অহংকার প্রতিকারের উপায় :

অহংকার প্রতিকারের অনেকগুলো উপায় রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নে আলোচনা করা হলো—

ছোটো কাজ করার মানসিকতা রাখা : ব্যক্তি তখনি সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারে, যখন তার কথা ও কর্মে নমনীয়তা প্রকাশ পায়। হৃদয়কে অহংকারমুক্ত রাখার উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো স্বেচ্ছায় ছোটো কাজে অংশগ্রহণ করা। মনে করুন, আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল। সহকারী শিক্ষকদের কিংবা ছাত্রদের কোনো একটা কাজে লাগালেন। এমতাবস্থায় আপনি দাঁড়িয়ে শুধু অবলোকন না করে তাদের সাথে শরীক হলেন, অফিস ঝাড়ু দিলেন কিংবা টয়লেট পরিষ্কার করলেন। এগুলো বাহ্যিক দৃষ্টিতে ছোটো মনে হলেও অহংকার দূরীকরণের ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুসরণ করা হয়। যার দরুন ব্যক্তি ছওয়াবের অধিকারী ও জনগণের নিকট সম্মানের পাত্র হন।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْصِفُ نَعْلَهُ وَيَخِيطُ ثَوْبَهُ وَيَعْمَلُ فِي بَيْتِهِ كَمَا يَعْمَلُ أَحَدُكُمْ فِي بَيْتِهِ وَقَالَتْ: كَانَ بَشَرًا مِنَ الْبَشَرِ يَفْلِي ثَوْبَهُ وَيَحْلُبُ شَاتَهُ وَيَخْدُمُ نَفْسَهُ.

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জুতা নিজেই ঠিক করে নিতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং গৃহের কাজকর্ম করতেন, যেমন তোমাদের কেউ স্বীয় গৃহের কাজকর্ম করে থাকে। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা এটাও বলেছেন যে, তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মানুষের মতো একজন মানুষই ছিলেন। নিজের কাপড়চোপড় পরিষ্কার করতেন, নিজ বকরির দুধ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই সম্পাদন করতেন।[15]

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব এমন ছোটো কাজ করেছেন তার বাস্তব জীবনে, এতে তার সম্মানের একটুও ঘাটতি হয়নি। বরং তিনিই পৃথিবীবাসীর জন্য সর্বোত্তম মডেল। তাকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ছাহাবায়ে কেরামও রাযিয়াল্লাহু আনহুম পশ্চাতে ছিলেন না। আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম রাযিয়াল্লাহু আনহু একদা কাঠের বোঝা মাথায় নিয়ে বাজার অতিক্রম করছিলেন। এমন দৃশ্য দেখে একজন ব্যক্তি বললেন, হে আব্দুল্লাহ! আল্লাহ কি আপনাকে এমন কাজ করা থেকে অমুখাপেক্ষী করেননি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। কিন্তু আমি এ কাজের মাধ্যমে আমার অহংকার দূরীভূত করতে চাই। কেননা আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[16]

মৃত্যুর কথা স্মরণ করা : নশ্বর এই প্রথিবীতে যার জন্ম হয়েছে, তাকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতেই হবে। মরণ থেকে কেউ রক্ষা পায়নি, পাচ্ছে না আর পাবেও না। মৃত্যু আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্টিকুলের জন্য অবধারিত সত্য, যার যখন মৃত্যুর ঘণ্টা বেজে উঠবে, তাকে তখন যেতে হবে। যেতে হবে সেই সত্তার নিকট, যিনি সৃষ্টি করেছেন।

মানুষ যদি মরণ থেকে পলায়ন করে অতি মযবূত প্রাসাদে অবস্থান করে, তবুও মরণ তাকে পাকড়াও করবেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ﴾ ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদেরকে পেয়ে যাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দূর্গে অবস্থান করো’ (আন-নিসা, ৪/৭৮)। ব্যক্তি যদি অহংকার থেকে নিরাপদ থাকতে চায়, তাহলে তাকে সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে। যার দরুন হৃদয়ের লালিত অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ الْمَوْتِ ‘তোমরা দুনিয়ার ভোগবিলাস বিনষ্টকারী জিনিস মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো’।[17]

গোপন আমল করা : ব্যক্তিকে অহংকার মুক্ত রাখতে জোরালোভাবে ভূমিকা পালন করে গোপন আমল। এর মাধ্যমেই ব্যক্তির অন্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যে অন্তরে ইখলাছ নিহিত, সে অন্তরকে অহংকার তেমনভাবে আক্রমণ করতে পারে না। ইয়াকূব আল-মাকফূফ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘মুখলেছ হলো সেই ব্যক্তি, যে তার নেকীর কাজগুলো সেভাবে গোপন করে, যেভাবে পাপের কাজগুলো গোপন করে’।[18] পাপকর্মের ন্যায় ব্যক্তি যখন স্বীয় সৎকর্ম গোপন করে, তখন তার অন্তরে কোনো রকম অহংকার অবশিষ্ট থাকে না। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সাত শ্রেণির মানুষ আল্লাহর বিশেষ ছায়াতলে থাকবেন। তাদের একজন হলেন ঐ ব্যক্তি, যে গোপনে দান করে এমনভাবে যে, তার বাম হাত জানতে পারে না ডান হাত যা ব্যয় করে এবং ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়’।[19]

কোনোক্রমে অহংকার প্রকাশ পেলে তৎক্ষণাৎ পরিহার করা : মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। আল্লাহ তাআলা মানুষকে এমন বৈশিষ্ট্যেই সৃষ্টি করেছেন৷ তবে এই ভুল ততক্ষণ নিন্দনীয়, যতক্ষণ মানুষ তা অবগত হওয়ার পরেও তাতে অবিচল থাকে। অন্যতম জ্যেষ্ঠ তাবেঈ মুতার্রিফ ইবনু আব্দুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পক্ষ হতে নিযুক্ত খোরাসানের গভর্নর মুহাল্লাব ইবনু আবূ ছফরাকে একদিন দেখলেন রাস্তা দিয়ে খুব জাঁকজমকের সাথে যেতে, তিনি তার সামনে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কীভাবে রাস্তায় চলছ যা আল্লাহকে রাগান্বিত করে? একথা শুনে মুহাল্লাব বললেন, আপনি কি আমাকে চিনেন? তাবেঈ বিদ্বান বললেন, হ্যাঁ, চিনি। তোমার শুরু হলো একটি নিকৃষ্ট শুক্রাণু থেকে এবং শেষ হলো একটি মরা লাশ হিসাবে, আর তুমি এর মধ্যবর্তী সময়ে পায়খানার ময়লা বহন করে চলেছ। একথা শুনে মুহাল্লাব জাঁকজমকতা ছেড়ে সাধারণভাবে চলে গেলেন।[20]

সুতরাং অহংকার দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথেই তা পরিহার করা জ্ঞানীদের বৈশিষ্ট্য।

দু‘আ করা : হৃদয়কে অহংকারমুক্ত রাখার জন্য আল্লাহর নিকট অবশ্যই দু‘আ করতে হবে। কেননা দু‘আই মুমিনের মূল হাতিয়ার।

পরিশেষে বলতে চাই, আসুন! আমরা যাবতীয় অহংকার ছেড়ে আল্লাহর প্রেরিত মহাসত্যের পানে ফিরে আসি। আল্লাহ বলেন,﴿إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا وَسَبَّحُوا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ﴾ ‘আমাদের আয়াতসমূহে কেবল তারাই ঈমান আনে, যখন তারা উক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা জ্ঞাপন করে এমন অবস্থায় যে, তারা কোনো প্রকার অহংকার প্রদর্শন করে না’ (আস-সাজদাহ, ৩২/১৫)। আল্লাহ আমাদের সকলকে অহংকার থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

শিক্ষার্থী, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ (বালিকা শাখা), ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।


[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯১।

[2]. সিলসিলা ছহীহা, হা/১৮০২; মিশকাত, হা/৫১২২।

[3]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, ৩য় প্রকাশ, ১৯৯৬ খ্রি.), ২/৩১৬।

[4]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯১।

[5]. যাহাবী, আল-কাবায়ের (বৈরূত : দারুন নাদওয়াতিল জাদীদা), পৃ. ৭৮।

[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯।

[7]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৩, হাদীছ ছহীহ।

[8]. তিরমিযী, হা/২৬৫৪, হাদীছ হাসান।

[9]. ইবনু মাজাহ, হা/২৫২, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/২২৭।

[10]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯।

[11]. আবূ দাঊদ, হা/৩৫৭১, হাদীছ ছহীহ।

[12]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮।

[13]. খাত্ত্বাবী, আল-উযলাহ (মাতবাআ সালাফিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৩৯৯ হি.), পৃ. ৮৯।

[14]. বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান, হা/৮২৫২।

[15]. আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৪১; আহমাদ, হা/২৫৩৮০; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬৪৪০; মিশকাত, হা/৫৮২২।

[16]. সিলসিলা ছহীহা, হা/৩২৫৭, ১৩/৬০।

[17]. ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫৮, হাদীছ হাসান; মিশকাত, হা/১৬০৭।

[18]. ইহইয়ায়ু উলূমিদ্দীন, ৩/৩৭৮।

[19]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪২৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৩১।

[20]. তাফসীরে কুরতূবী, আল-মাআরিজ, ৭০/৩৯।



Magazine