কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

পোশাক পরিধানের নিয়মপদ্ধতি

post title will place here

এই বসুন্ধরার প্রতিটি জিনিসই নিয়মতান্ত্রিক চলে। যেমন- সকালে সূর্য উঠে, সন্ধ্যায় আবার অস্ত যায়। দিনরাতও নিয়মতান্ত্রিক চলে। আমরা মুসলিম, আল-হামদুলিল্লাহ! আমাদেরও প্রত্যেকটি কাজ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়মপদ্ধতি অনুযায়ী হওয়া জরুরী। কারণ তিনি হচ্ছেন আমাদের আইডল বা আদর্শ (আল-আহযাব, ৩৩/২১)। খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা ইত্যাদি বিষয়েও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতে হবে। কারণ ‘তাঁর চরিত্র কুরআনের অনুরূপ’।[1] ঠিক নারী-পুরুষের পোশাক পরিধানেও কিছু নিয়মপদ্ধতি আছে। আজকে আমরা এ বিষয়ে আলোকপাত করব ইনশা-আল্লাহ। কবির ভাষায়—

‘নিয়মের পথ ধরে গড়লে জীবন

সফলতা নিয়ে আসে সুখের স্বপন’।

পুরুষের পোশাক পরিধানের নিয়ম:

মহান আল্লাহ বলেন,يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার এবং সাজসজ্জার জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি। আর তাক্বওয়ার পোশাক, সেটাই হচ্ছে উত্তম’ (আল-রাফ, ৭/২৬)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُمْ بَأْسَكُمْ ‘তোমাদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন জামা, যা তোমাদেরকে তাপ থেকে বাঁচাবে। আর তোমাদের জন্য তিনি ব্যবস্থা করেছেন বর্মের, যা তোমাদেরকে যুদ্ধের সময় হেফাযত করবে’ (আন-নাহল, ১৬/৮১)

পোশাক পরিধান সম্পর্কিত কতিপয় বিধিবিধান:

(১) শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ও ডান দিক থেকে পোশাক পরিধান করা। এ প্রসঙ্গে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমরা পোশাক পরিধান করবে ও ওযূ করবে, তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে’।[2]

(২) ঢিলেঢালা, সাদা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ভদ্র ও মার্জিত পোশাক পরিধান করা। সাদা পোশাক পরিধান প্রসঙ্গে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাদা পোশাক পরিধান করো, কারণ এটাই পবিত্র ও সর্বোত্তম’।[3]

(৩) টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান না করা। টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান সম্পর্কে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘টাখনুর নিচে কাপড়ের যে অংশ যায়, তা জাহান্নামে যাবে’।[4] অন্যত্র রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশত কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না’।[5]

(৪) রেশমের পোশাক ও স্বর্ণালংকার ব্যবহার না করা। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের জন্য রেশমের কাপড় ও স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম করেছেন।[6]

(৫) কুসুম ও জাফরান দ্বারা রঞ্জিত পোশাক পরিধান না করা।[7]

(৬) অমুসলিম বা মেয়েদের সাদৃশ্য পোশাক পরিধান না করা।[8]

(৭) নতুন পোশাক পরিধানের দু‘আ পড়া। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোশাক পরিধানের সময় দু‘আ পড়তে বলেছেন, ‘আল-হাম-দুলিল্লাহিল্লাযী কাসানী হাযা ওয়া রযাক্বানীহি মিন গয়রি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়্যাহ’।[9]

(৮) বাম দিক থেকে পোশাক খোলা।[10]

সুপ্রিয় বন্ধুরা! যখন তোমরা পোশাক পরিধান করবে, তখন ডান দিক থেকে পরিধান করবে। কিন্তু মনে রাখবে, খোলার সময় অবশ্যই বাম দিক দিয়ে খুলতে হবে। আর হ্যাঁ ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে কখনোই ভুলবে না।

নারীদের পোশাক পরিধানের নিয়মপদ্ধতি:

পুরুষের চেয়ে নারীদের পোশাক পরিধানের কিছুটা ভিন্নতা আছে। নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো-

(১) নারীরা রেশমের তৈরি পোশাক ও স্বর্ণালংকারাদি ব্যবহার করতে পারবে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে রেশম ও স্বর্ণ ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৯০; মিশকাত, হা/৪৪০১)

(২) টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করবে (আবূ দাঊদ, হা/৪১১৭, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/৪৩৩৪)

(৩) অমুসলিম ও পুরুষের সাদৃশ্য পোশাক পরিধান করবে না (আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৭, হাসান)

(৪) চুল ও ভ্রু উপড়ে না ফেলা এবং দাঁত চিকন ও ফাঁকা করা থেকে দূরে থাকবে (আন-নিসা, ৪/১১৯)

(৫) অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ট্যাটু, স্টিকার ও উলকি না করা (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৪; মিশকাত, হা/৪৪৩০)

(৬) আতর, সেন্ট ও সুগন্ধি জাতীয় স্নো, পাওডার, তেল ইত্যাদি মেখে বাহিরে না যাওয়া (আবূ দাঊদ, হা/৪১৭৩; তিরমিযী, হা/২৭৮৬; নাসাঈ, হা/৫১২৫; দারেমী, হা/২৬৮৪, হাসান)

(৭) চুল বখতী উটের মতো (উঁচু করে) না রাখা (ছহীহ মুসলিম, হা/২১২৮; মিশকাত, হা/৩৫২৪)

(৮) কপালে টিপ, হাতে-পায়ে নেইলপলিশ ব্যবহার না করা (আবূ দা, হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭, হাসান)

(১১) নতুন পোশাক পরিধানের দু‘আ পড়া (আবূ দাঊদ, হা/৪০২০; মিশকাত, হা/৪৪২০, হাদীছ ছহীহ)

পরিশেষে কথা হচ্ছে আমরা যেহেতু মুসলিম, সেহেতু আমাদের উচিত, পোশাক পরিধানের নিয়মপদ্ধতিগুলো মেনে চলা। তাহলে ইহকালেও যেমন শারীরিক ও মানসিকভাবে শান্তি ও আত্মতৃপ্তি পাব; পরকালেও রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতকে মুহাব্বাতের জন্য জান্নাতুল ফেরদাউস অর্জন করতে পারব ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের জান্নাত দান করুন- আমীন!

শফিক নোমানী

অধ্যয়নরত, মাথিয়া ই.ইউ. ফাজিল (স্নাতক) মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।


[1]. আহমাদ, হা/২৫৮১৩, হাদীছ ছহীহ।

[2]. আহমাদ, হা/৮৬৩৭; আবূ দাঊদ, হা/৪১৪১; মিশকাত হা/৪০১, ছহীহ।

[3]. আবূ দাঊদ, হা/৩৮৭৮; রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/৭৮৪।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৭; মিশকাত, হা/৪৩১৪।

[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬; মিশকাত, হা/৪৩১২।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৯০; মিশকাত, হা/৪৩২১।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৪৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২০৭৮; মিশকাত, হা/৪৩২৭।

[8]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৭, হাসান।

[9]. তিরমিযী, হা/৩৪৫৮; মিশকাত, হা/৪৩৪৩, হাসান।

[10]. শারহে মুসলিম, হা/২৬৮।

Magazine