কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আল্লাহর দিকে দাওয়াত : দলীয় মোড়কে নাকি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে? (পর্ব-১০)

post title will place here

সপ্তম পরিচ্ছেদ : দলাদলির বর্জ্য ও কুফল

আগের পূর্ণ বিবরণের পর এখানে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বর্ণনা করবো, যা উজ্জ্বলরূপে হক্ব স্পষ্ট করে দেবে এবং চমৎকারভাবে সত্য প্রকাশ করে দেবে। ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘কোনো গবেষক বা পথ অবলম্বনকারীর কাছে যখন কোনো বিষয়ের হুকুম সন্দেহপূর্ণ মনে হবে যে, তা কি মুবাহ না হারাম? তখন তার কর্তব্য হচ্ছে, এর ক্ষতি, ফলাফল ও শেষ সীমা পর্যবেক্ষণ করা। যদি তাতে সম্ভাব্য ও স্পষ্ট ক্ষতি থাকে, তাহলে শরী‘আতপ্রণেতা সে বিষয়ের আদেশ দেবেন বা সেটাকে বৈধ করবেন— এটা অসম্ভব। বরং শরী‘আতের পক্ষ থেকে এমন বিষয় হারাম হওয়াই নিশ্চিত। বিশেষ করে যদি তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্রোধান্বিত হওয়ার পথের দিকে ঠেলে দেয়, সেদিকে পৌঁছে দেয় এবং তার রাগান্বিত করার মন্ত্র ও অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে, তাহলে তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে জ্ঞানীগণ কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ করেন না’।[1]

‘প্রকৃতপক্ষে দূরদর্শী জ্ঞানী তিনিই, যিনি কারণ ও ফলাফল পর্যবেক্ষণ করেন এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করেন’।[2]

সুতরাং আমাদের উচিত, দলাদলিকে এই সূক্ষ্ম দুরবিন দিয়ে মাপা।

আমরা এবং আপনারা কী পাচ্ছি?

‘আপনাদের মাযহাবী দ্বন্দ্ব এবং আপনাদের দলীয় বিশেষ প্রীতি, যা কিনা বিশুদ্ধ দ্বীনী সম্প্রীতির স্থান দখল করেছে, তার বীভৎস পরিণামের দিকে একটু লক্ষ করুন। এগুলো মানুষের বিরাট ক্ষতি করেছে, মানুষের মধ্যে ঘৃণার শেকড় গভীরে পুঁতে ফেলেছে এবং তাদের বুকের মাঝে শত্রুতার আগুন প্রজ্জ্বলিত করেছে। ফলে তারা বুঝতে পারছে না যে, কোন্‌ দিকে যাবে?! কোন্‌ মাযহাবের উপর নির্ভর করবে?! কোন্‌ আলেমের ফতওয়ার অনুসরণ করবে?! তাদের মধ্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা বিরাজ করছে, যার শেষ পরিণতি হিসেবে ব্যক্তিকে পুরোপুরি ইসলাম থেকে বের করে ছাড়ছে। আপনারা ঐ ব্যক্তির ক্ষতি না করলে তার ক্ষতি আসলে কে করেছে?!

এসব দ্বন্দ্বের কারণে আলেম ও দাঈগণ আজ বিদ্রুপকারীদের বিদ্রুপের পাত্রে পরিণত হয়েছে, ঠাট্টাকারীদের ঠাট্টার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবং সন্দেহপোষণকারীদের সন্দেহের আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

আপনাদের মুখের উপর আপনাদের প্রতি কিছু মানুষের প্রশংসা যেন আপনাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে দেয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এটা এক ধরনের মুনাফিক্বী, যা ব্যবহার করে বর্তমান ও অতীতে মানুষ ছদ্মবেশ ধারণ করেছে।

আপনাদের সংখ্যাধিক্যতা যেন আপনাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে না পারে, যা দিয়ে আপনারা গর্বের প্রতিযোগিতা করে থাকেন। মনে রাখবেন, আপনার অধীর আকাঙ্ক্ষা থাকলেও অধিকাংশ মানুষ কিন্তু মুমিন নয় এবং অধিকাংশ মানুষ কিন্তু শোকরগুযারও নয়— যেমনটি মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন।

অতএব, সংখ্যাধিক্যতা কখনই হকের মাপকাঠি ছিল না। বরং সংখ্যাধিক্যতা হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

দ্বীনের সঠিক বুঝই হচ্ছে সামগ্রিক মূলনীতি, যেখান থেকে জনগণ সামনে অগ্রসর হবে। আক্বীদার সূক্ষ্ম ও স্বচ্ছ বুঝ ধারণ করবে এবং এর উপর ভিত্তি করে মহান রবের জন্য সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করবে।

সম্মানিত দাঈ ও আলেমগণ! আপনারা বুঝতেই পারছেন না যে, এসব দ্বন্দ্ব দ্বারা আপনারাই আপনাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন এবং জনগণ আপনাদের ইলমকে ঘৃণা করছে। এর মাধ্যমে আপনারা পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন, যারা তাদের কিতাবসমূহ ও নবীগণের ব্যাপারে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছিল। আপনারা জীবনের এমন একটা সময় অতিবাহিত করছেন, যেখানে আপনারা কেবল আপনাদের প্রিয়দেরই বন্ধু হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। যদি তা না হবে, তাহলে আপনারা মনের কালিমা দূর করে পরিচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছেন না কেন, আপনাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাদের জন্য যাতে সন্তুষ্ট হয়েছেন, তাতে আপনার সন্তুষ্ট হচ্ছেন না কেন; যিনি আপনাদেরকে শুভ্র দ্বীনের উপর রেখে গেছেন, যার রাত দিনের মতোই, যেখান থেকে নিজেকে ধ্বংসকারী ছাড়া আর কেউ পদস্খলিত হতে পারে না।

আমি আপনাদেরকে কেবল এমনই মনে করছি যে, প্রত্যেকটা দল তার কাছে যা আছে, তা নিয়েই খুশি এবং প্রত্যেকটা দল বলছে, কেবল আমিই সঠিক দ্বীনের উপর আছি, আমি ছাড়া আর কেউ নয়…’।[3]

বর্তমান দলবাজরা যে সঠিক ও সর্বব্যাপী গভীর চিন্তা করতে পারে না, তার একটি নিশ্চিত প্রমাণ এই যে, ‘আমরা যদি তাদেরকে প্রশ্ন করি, কোনো দল কি একই দেশে অনেক দল তৈরি হওয়ার এবং দেশবাসীর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অনুমোদন করবে? টুকরো-টুকরো হয়ে, ভাঙন সৃষ্টি হয়ে আর বিরোধ তৈরি হয়ে দেশের পরিস্থিতি কোন্‌ পর্যায়ে যাবে?

এর জবাবে কেউ যদি বলে, হ্যাঁ, এগুলো করা যাবে, তাহলে তা এমন ব্যক্তির জবাব হবে, যার বিবেক নেই এবং যে ব্যক্তি জাতির কোনো কল্যাণ চায় না। আর যদি জবাবে বলে, না, এগুলো করা যাবে না, তাহলে সে অন্য দল বাদ দিয়ে নিজের জন্য দল তৈরির অনুমতি দিতে পারে কীভাবে, অথচ প্রত্যেকেই ইসলাম মানার দাবি করছে?!’[4]

‘অতএব, যাদের নিকট ইলম ও সজাগ দৃষ্টি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের উচিত, ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার নামে যেসব জামা‘আত ও দল ময়দানে আত্মপ্রকাশ করেছে, তাদের ভয়াবহতা তুলে ধরা। এসব দলের বেশিরভাগ সদস্য, বরং অনেক নেতাও না ইসলামের রূপরেখা বোঝে, না ইসলাম পরিপন্থী বিষয় সম্পর্কে জানে এবং তারা ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার যোগ্যতাও রাখে না’।[5]

লক্ষ্য করুন, দেখতে পাবেন। চিন্তা করুন, পেয়ে যাবেন।

  • দলাদলির আরো কুফল হচ্ছে, ‘দলাদলি ব্যাপকার্থে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ধ্বংসের কোম্পানি খুলেছে। কারণ প্রত্যেকটা দল অন্যদের মাঝে পুরু পর্দা টেনে দিয়েছে। সেজন্যইতো দুই দলের দুইজন মুসলিম, যাদের প্রত্যেকের হৃদয় বিশেষ পরিকল্পনা ও মানহাজ দ্বারা ভরপুর, তাদের মধ্যে যখন সাক্ষাৎ হয়, তখন অবশ্যই তাদের মনের মধ্যে কিছুটা উপেক্ষা ও অবসন্নের ছোঁয়া থাকে। ফলে তাদের সাক্ষাৎটা হয় সৌজন্য প্রদর্শন বা দৃষ্টি আকর্ষণের ভান মাত্র।

পক্ষান্তরে ইসলামের প্রতীক, ঈমানী ভ্রাতৃত্ব ও দয়ার্দ্রের ভালোবাসার অধীনে সাক্ষাৎ হলে এবং কুরআন-সুন্নাহ তার ফয়সালাকারী হলে সেটাই হয় পরিপূর্ণ ভ্রাতৃত্ব ও মিল।

  • দলাদলির কারণে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন হারিয়ে যায়। ঈমানের যে ব্যাপকভিত্তিক ভ্রাতৃত্ব শাহাদাইনে বিশ্বাসী সকল কেবলাপন্থীকে তাদের অবস্থান অনুযায়ী সুসংগঠিত করে, দলাদলি সেই ভ্রাতৃত্বের জাল ছিড়ে দেয়।

দলের মূলনীতি ও প্রতীকের উপর ভিত্তি করে দলাদলি ব্যতিক্রম একটি ভ্রাতৃত্ব তৈরি করে। সেটি বিশেষ ভ্রাতৃত্ব, অথচ (ইসলামে) এই ভ্রাতৃত্ব ছিল ব্যাপকভিত্তিক।

এগুলো ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন নয় কি?! শত্রুতা ও দ্বন্দ্ব লেলিয়ে দেওয়া নয় কি?! এগুলোই তো এক সময় রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কেবল দলীয় লোকদের জন্য ভ্রাতৃত্ব জিইয়ে রাখে।

নতুন সদস্য সংগ্রহে বিভিন্ন দলের মধ্যে টানাটানির ব্যাপারটা খেয়াল করুন, দেখবেন, এটা করতে গিয়ে যদি কোনো দলকে প্রশংসার বানে ভাসাতে হয় আর অপর দলের নিন্দায় ডুবাতে হয়, তাও করা হচ্ছে’।[6] তাদের ধারণা মতে, দাওয়াতী কাজের স্বার্থেই নাকি এটা করতে হয়!!

কিন্তু নিষিদ্ধ বিষয় সম্পাদন করা ও পাপাচারে নিমজ্জিত হওয়ার মধ্যে দাওয়াতীকর্মের কী কল্যাণ থাকতে পারে?!

‘দাওয়াতী কর্মের সাথে সংশ্লিষ্টদের অভিধান থেকে ‘দাওয়াতী স্বার্থ’ কথাটি উঠে যাওয়া উচিত। কারণ এটাই পদস্খলের জায়গা এবং শয়তানের প্রবেশদ্বার। যখন ব্যক্তি সম্পর্কিত স্বার্থের পথ দিয়ে শয়তানের প্রবেশ করা কঠিন হয়, তখন দাওয়াতী স্বার্থ নামক এই প্রবেশপথ দিয়েই শয়তান তাদের কাছে আগমন করে।

কখনও কখনও ‘দাওয়াতী স্বার্থ’ কথাটি প্রতিমায় রূপ নেয়, দাওয়াতী কর্মের সাথে সংশ্লিষ্টরা যার পূজা করে এবং এর সাথে সাথে দাওয়াতের আসল মানহাজ ভুলে যায়।

দাওয়াতী কর্মের সাথে সংশ্লিষ্টদের দাওয়াতের মানহাজের উপর অবিচল থাকা উচিত এবং এই মানহাজের প্রতিই মনোযোগ দেওয়া উচিত। এই মানহাজের প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে এর ফলাফলের দিকে ভ্রুক্ষেপ করা ঠিক হবে না। কারণ কখনও কখনও তাদের মনে হতে পারে যে, এতে দাওয়াত ও দাওয়াতের কর্মীদের ঝুঁকি আছে।

তাদের কেবল একটি ঝুঁকিকেই ভয় করা উচিত, তা হচ্ছে মানহাজ থেকে বিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি; সেই ঝুঁকি যে কোনো কারণেই হোক না কেন এবং ছোট বা বড় যেমনই হোক না কেন। মহান আল্লাহ স্বার্থ সম্পর্কে তাদের চেয়েও ভালো জানেন। তাদেরকে এই স্বার্থ দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, বরং তাদের দায়িত্ব শুধু একটিই, তা হচ্ছে, তারা যেন মানহাজ থেকে বিচ্যুত না হয়ে যায় এবং সঠিক পথ থেকে না সরে যায়’।[7]

  • বিভিন্ন দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের আরেকটি দিক হচ্ছে, একে অপরকে খারাপ উপাধিতে ডাকা। অথচ এটা জাহেলী বৈশিষ্ট্য, যা ইসলাম মুছে ফেলেছে। এরপর প্রবৃত্তিপূজারিরা এর প্রচলনকে পুনর্জীবিত করেছে, যেমনটি বিভিন্ন ফেরকা ও কালামশাস্ত্র সম্পর্কিত বই-পুস্তকে এসেছে।

যেমন কিছু দল নিজ দলের লোকদের বলে, ‘ভাই’, ‘তিনি বোঝেন’, ‘নিবেদিতপ্রাণ’। যারা কোনো দলের সাথে যুক্ত হয় না, তাদেরকে বলে, ‘অন্যরা’। যারা তাদেরকে ভালোবাসে কিন্তু তাদের দলে যোগ দেয় না, তাদেরকে ‘সমর্থক’, ‘সহানুভূতিশীল’, ‘সহযোগী’, ‘সাধারণ’, ‘ভালো’ ইত্যাদি নামে ডাকে। আর যে আলেম তাদের দলে যোগ দেয় না, তাকে বলে— ‘তিনি সচেতন নন’, ‘তিনি পরিস্থিতি বুঝেন না’ ইত্যাদি। এভাবে মন্দ নাম ও খেতাবের লম্বা সেতু তৈরি করে তারা আলেম-উলামার মান ক্ষুণ্ণ করে।

বরং ব্যাপারটা মানুষকে কাফের ফতওয়া দেওয়া পর্যন্ত গড়ায়, যা তারা তাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির অভিধান থেকে বের করে আনে। অথচ বিগত কিছু ফেরকা এভাবে কাউকে কাফের ফতওয়া দিতো না, বরং জামা‘আতুল মুসলিমীনের মানহাজ থেকে তারা ছিল দূরে। কারণ তারা কোনো বিভ্রাট বা সংশয়ের কারণে দলীলের বিরুদ্ধাচরণকারীকে ভুল বললেও কাফের বলত না। কিন্তু প্রবৃত্তিপূজারিরা এর উল্টো’।[8]

  • দলাদলির আরেকটি মন্দ ফল হচ্ছে, ‘এখানে দলের নেতৃবৃন্দকে প্রশংসাবানে ভাসানো হয়, যদিও তারা মূর্খ হন বা গভীর জ্ঞানের অধিকারী না হন’।[9] এক্ষেত্রে তারা একটি বিশাল ভয়ানক দরজা উন্মুক্ত করে। সেই দরজাটি হচ্ছে, ‘অনুসারীদের বুঝ ও জ্ঞান এমনভাবে বন্দী হয়ে যায় যে, তারা শায়খের চোখ দিয়ে ছাড়া দেখে না, শায়খের মস্তিষ্ক দিয়ে ছাড়া চিন্তা করতে পারে না। শায়খ যা বলছেন, সে ব্যাপারে চিন্তা করার সুযোগও তারা পান না।

কোনো মাযহাবী ও দলবাজ যখন সক্রিয় কর্মী হয়, তখন শায়খের বক্তব্যকেই সে মূল বানায় এবং পুরোনো ও নতুন সকল বই-পুস্তক থেকে সে সেই বক্তব্যকে সমর্থনের উদ্দেশ্যে তার মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি খাটায়। অথচ যে হক্ব কথাটা সামনে রাখা দরকার, তা হচ্ছে— কুরআন ও সুন্নাহকেই মূল বানাতে হবে এবং এ দু’টির আলোকেই শায়খ-মাশায়েখের বক্তব্যকে মাপতে হবে’।[10]

কবি বলেন (কবিতার গদ্যানুবাদ), ‘নেতৃবৃন্দের প্রতি অজ্ঞ হয়ে আল্লাহর অনুগ্রহকে খাটো করা ছেড়ে দিন। আর তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবেন না। অবশ্যই দলাদলি পরিত্যাগ করুন। আপনি যদি নিজের জন্য কোনো মাযহাব আবিষ্কার না করেন, তাহলে তাতে আপনার জন্য কোনো ভর্ৎসনা নেই। মনোনীত বান্দা হওয়ার জন্য সেদিকেই ঘুরুন, যেদিকে দলীল ঘোরে। কোনো দলের আশ্রয়ে যাবেন না এবং হক্ব ছাড়া কোনো কেন্দ্রেও আশ্রয় নিবেন না। যে এমনটা ঘোষণা করবে, তাকে বলুন, স্বাগতম’।[11]

সারকথা হচ্ছে, দলাদলির এই অন্ধকার রূপ দলবাজদের যে পুঁজি এনে দিয়েছে, তা হচ্ছে— ‘সাংস্কৃতিক ও সাংগঠনিক শ্রেষ্ঠত্বের বন্ধন। সেজন্য, আপনি (তাদেরকে) অন্যদের সম্পর্কে অগভীর, সংকীর্ণ, দাওয়াতী কর্মে গভীর জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি অপবাদ দিতে দেখবেন ও শুনবেন। এসবগুলোই হচ্ছে, দলীয় গোঁড়ামির নির্মম কুফল। দলীয় গোঁড়ামি যে মতাদর্শের জন্ম দেয়, তা উম্মতকে ভেতর থেকে আঘাত হানে।

  • দলাদলির আরেকটি কুফল হচ্ছে, তাদের বক্তব্যগুলো আলেম-উলামার নিকট পেশ করতে ভয় পাওয়া এবং তাদের ব্যাপারে আলেম-উলামার আলোচনা-সমালোচনা থেকে পলায়ন করা’।[12]

এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে এবং এর অন্ধকার ফলাফল বর্ণনায় আমরা যদি আরো লম্বা আলোচনা করতে চাইতাম, তাহলে কথা লম্বা হয়ে যেতো এবং পৃষ্ঠা সংকীর্ণ হয়ে যেত।

(চলবে)

মূল : আলী ইবনে হাসান আল-হালাবী আল-আছারী

অনুবাদ : আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী

বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব;
অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. মাদারিজুস সালেকীন, ১/৪৯৬।

[2]. আল-মুনতাক্বা আন-নাফীস মিন তালবীসি ইবলীস, পৃ. ২৮৯।

[3]. মুহাম্মাদ ছবের আমীন, রিসালাহ নাছেহাহ ইলাল উলামা ওয়াদ-দু‘আত, পৃ. ৫।

[4]. হুকমুল ইনতিমা, পৃ. ১৪০।

[5]. সুহাইমী প্রণীত ‘তানবীহু উলিল আবছার’ কিতাবে শায়খ ছলেহ ইবনে ফাওযানের ভূমিকা থেকে, পৃ. ج।

[6]. হুকমুল ইনতিমা, পৃ. ১৪৭-১৪৮।

[7]. সাইয়্যেদ কুতুব, ফী যিলালিল কুরআন, ৫/৬১৭।

[8]. হুকমুল ইনতিমা, পৃ. ১৪৮-১৪৯।

[9]. সুহাইমী, তানবীহু উলিল আবছার, পৃ. ২৫৩।

[10]. আব্দুল আযীয আল-উতাইবী, আত-তলী‘আহ ফী বারাআতি আহলিস সুন্নাহ, পৃ. ১১।

[11]. শায়খ ছলেহ আল-মাকবালী, আল-আলামুশ শামেখ ফী ঈছারিল হাক্কি আলাল আবা ওয়াল মাশায়েশ, পৃ. ২৩৫।

[12]. হুকমুল ইনতিমা, পৃ. ১৫০।

Magazine