কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

1111

সাইন্স ওয়ার্ল্ড

ঈমান-আক্বীদা–রিযিক্ব

প্রশ্ন (১) : আমরা জানি আমাদের রিযিক্ব পূর্ব নির্ধারিত। এখন ধরে নিই একজন ব্যক্তি দুনিয়াতে সূদী ব্যাংকে চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এর অর্থ এ রকম নয় কি যে, আল্লাহ তাআলা তার ভাগ্যে ঐ রুযী লিখে রেখেছেন বলে সে তা উপার্জন করছে?

প্রশ্নকারী : নিবির হাসান

শাজাহানপুর, বগুড়া। 

উত্তর : প্রত্যেক প্রাণীর রিযিক্ব পূর্ব নির্ধারিত একথাই ঠিক। তবে আল্লাহ রিযিক্ব অন্বেষণের বৈধ ও অবৈধ পথ ও পন্থা কুরআন ও হাদীছের মাধ্যমে সুষ্পষ্ট করে দিয়েছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫২)। সুতরাং বান্দা তার নির্ধারিত রিযিক্ব বৈধ পন্থায় অন্বেষণ করবে না অবৈধ পন্থায় অন্বেষণ করবে তা তার ইচ্ছাধীন রয়েছে। যদি সে বৈধ পন্থায় অন্বেষণ করে, তাহলে তা তার জন্য হালাল রিযিক্ব হিসাবে বিবেচিত হবে। আর যদি অবৈধ পন্থায় অন্বেষণ করে, তাহলে তা হারাম রিযিক্ব হিসাবে বিবেচিত হবে। এই মর্মে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো দেহ তার (নির্ধারিত) রিযিক্ব পরিপূর্ণভাবে ভোগ না করা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ধন-সম্পদ উপার্জনে উত্তম (বৈধ) নীতি অবলম্বন করো। কাঙ্ক্ষিত রিযিক্ব পৌঁছার বিলম্বতা যেন তোমাদের আল্লাহর অবাধ্যতার পথে তা অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ না করে (মিশকাত, হা/৫৩০০)। অপর বর্ণনায় রয়েছে- يَا أَيُّهَا النَّاسُ وَأَجْمِلُوا فِى الطَّلَبِ خُذُوا مَا حَلَّ وَدَعُوا مَا حَرُمَ ‘হে মানুষ সকল! তোমরা ধন-সম্পদ উপার্জনে উত্তম নীতি অবলম্বন করো। যা হালাল তা গ্রহণ করো আর যা হারাম তা বর্জন করো (সুনানূল কুবরা বায়হাক্বী, হা/১০৭০৮)। অতএব হারাম পথে উপার্জন করে, বিষয়টি আল্লাহর উপর চাপিয়ে দেওয়া জায়েয নয়। বরং ব্যক্তি হারাম পথ ছেড়ে দিয়ে বৈধ পথে রিযিক্ব অন্বেষণ করবে।

প্রশ্ন (২) : আল্লাহ তাআলা যে আমাদের রিযিক্ব লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, সেটা কি আমাদের চেষ্টা বা কৃতকর্মের উপরে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, নাকি আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন?

প্রশ্নকারী : মোহাইমিনুল ইসলাম শুভ

আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।

উত্তর : রিযিক্ব বণ্টন বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছানুযায়ী হয়ে থাকে কর্মে উপর নয়। এই মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, আর পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই যে, তার রিযিক্বের দায়িত্ব আল্লাহ নেননি’ (হুদ, ৬)। আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব লিখে রেখেছেন, এমনকি রিযিক্বও। একদা উবাদা ইবনু ছামেত রাযিয়াল্লাহু আনহু তার ছেলেকে বললেন, হে আমার প্রিয়পুত্র! তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পাবে না; যতক্ষণ না তুমি বিশ্বাস করবে যে, ‘যা তোমার উপর ঘটেছে তা ভুলেও এড়িয়ে যাওয়ার ছিলো না। পক্ষান্তরে, যা এড়িয়ে গেছে তা তোমার উপর ভুলেও ঘটবার ছিলো না’। আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে কলম। অতঃপর তিনি তাকে বললেন, লিখো! কলম বলল, হে রব! কী লিখব? তিনি বললেন, ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক বস্তুর তাক্বদীর লিখো। হে আমার প্রিয়পুত্র! আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস ছাড়া মারা যায় সে আমার (উম্মাতের) দলভুক্ত নয় (আবূ দাউদ, হা/৪৭০০; তিরমিযী, হা/২১৫৫)। অতঃপর আবার সন্তান মাতৃগর্ভে আসার চার মাস পর নতুনভাবে আল্লাহ তাআলা তার নির্ধারিত রিযিক্ব লিপিবদ্ধ করে দেন। যায়েদ ইবনু ওহাব রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে হাদীছ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চই তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপকরণ নিজ নিজ মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, এরপর তা জমাটবাঁধা রক্তে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। এরপর তা গোশতপিণ্ডে পরিণত হয়ে (আগের ন্যায় চল্লিশ দিন) থাকে। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁকে (ফেরেশতাকে) লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার আমল, তার রিযিক্ব, তার জীবনকাল এবং সে পাপী হবে না কি পূণ্যবান হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩২০৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৮৯৩)। উল্লেখিত আয়াত এবং হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বান্দার রিযিক্ব আল্লাহর উচ্ছানুযায়ী পূর্ব হতে নির্ধারিত।

ঈমান-আক্বীদা–মৃত্যু

প্রশ্ন (৩) : যারা নবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুকে অস্বীকার করে এবং তাঁকে আল্লাহর আসনে বসায় তাদের মুসলিম বলা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : আক্বীমুল ইসলাম

জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।

উত্তর : নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুকে অস্বীকার করা এবং তাঁকে আল্লাহর আসনে বসানো কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং ছাহাবীসহ সকল আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের আক্বীদা পরিপন্থি বিশ্বাস। সুতরাং তাদের মুসলিম বলা যাবে না; তারা কাফের। কারণ এক. নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে’। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আর মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন রাসূল বৈ কিছু নয়, তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়ে গেছেন। সুতরাং তিনি যদি মারা যান অথবা নিহত হন, তাহলে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে’? (আলে-ইমরান, ১৪৪)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু হলে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু সকল ছাহাবীর সামনে বললেন, মুনাফিকদের নিঃশেষ না করা পর্যন্ত আল্লাহর নবীর মৃত্যু হতে পারে না। একথা আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু শুনতে পেয়ে বললেন, ‘যারা আল্লাহর দাসত্ব করে, তারা জেনে রাখো! আল্লাহ চিরঞ্জীব তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। আর যারা মুহাম্মাদের দাসত্ব করো তারা জেনে রাখো! নিশ্চয় মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/১২৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৫৯২)। উল্লিখিত আয়াত এবং হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর মৃত্যু হয়েছে এবং ছাহাবীগণেরও আক্বীদা তাই ছিল। দুই. নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আল্লাহর আসনে বসানোর অর্থ যদি এই হয় যে, আল্লাহর গুণাবলি এবং জাতি-সত্তায় অংশীদারত্ব স্থাপন করা। যেমন. আল্লাহ যা করতে পারেন মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই করতে পারেন। আল্লাহও গায়েব জানেন মুহাম্মাদও জানেন, আল্লাহ জীবন-মৃত্যুর মালিক মুহাম্মাদও জীবন-মৃত্যুর মালিক ইত্যাদি, তাহলে এটা শিরক হবে এবং এমন বিশ্বাস লালনকারী ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে। খ্রিস্টানরা যেমন ঈসা আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহর আসনে বসানোর কারণে কাফের হয়েছে ঠিক তদ্রূপ যারা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে আল্লাহর আসনে বসাবে তারাও একই কারণে কাফের হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কাফের যারা বলে যে, মরিয়ম পুত্র মসীহ-ই আল্লাহ। অথচ মসীহ বলেন, ‘হে বণী ইসরাঈল! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান জাহান্নাম’ (আল-মায়েদা, ৭২)। সুতরাং মুসলিম হতে হলে এমন আক্বীদা-বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকা একান্ত জরুরি।

প্রশ্ন : () বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের কোনো মানুষ নিজে কেন বীরবংশধরদাবী করতে পারে কি?

প্রশ্নকারী : নাহাল গালীব

পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।

উত্তর : শুধু বাংলোদেশ নয় বরং বিশ্বের কেউ নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছাড়া নিজেকে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বংশধর দাবী করতে পারবে না। ভারত, বাংলাদেশের অনেক মানুষ নিজ স্বার্থ ও উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে নিজেকে أَوْلَادُ الرَّسُوْلْ বা নবীর বংশধর দাবী করতে দেখা যায়। এটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবী মাত্র। এমন দাবী করা ইসলামে হারাম। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সত্য আঁকড়ে ধরা তোমাদের একান্ত কর্তব্য। কেননা সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে, আর নেকী জান্নাতের দিকে পরিচালিত করে। কোনো ব্যক্তি সর্বদা সত্য বলার অভ্যাস করলে ও সত্যের উপর সংকল্পবদ্ধ হলে, আল্লাহর কাছে সে সত্যবাদীরূপে লিপিবদ্ধ হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে সাবধান থাকো! কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পরিচালিত করে। আর পাপ (নিশ্চিত জাহান্নামের) অগ্নির দিকে পরিচালিত করে। কোনো ব্যক্তি মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে এবং মিথ্যার উপর সংকল্পবদ্ধ হলে তার নাম আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীরূপে লিপিবদ্ধ হয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬০৭; মিশকাত, হা/৪৮২৪)। তবে সত্যিকার অর্থে প্রকৃত বংশনামা প্রমাণিত থাকলে এবং স্বীকৃত থাকলে দাবী করতে পারে। যেমন বর্তমানে জর্দানের শাসকগণ সকলের নিকট বানু হাশিম গোত্রের হিসেবে স্বীকৃত। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর রাসূলের বংশনামা শুধু আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু এর বংশধরদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার সুযোগ নাই; বরং আলে আব্বাস, আলে জাফর, আলে হারিস, আলে আক্বীল সকলেই আলে রাসূলের অর্ন্তভুক্ত। আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রকৃত বংশধরদের জন্য যাকাত হারাম।

পবিত্রতা-ওযূ-গোসল

প্রশ্ন (৫) : মোজা মাসাহ করে একদিনের বেশি ছালাত আদায় করা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, একদিনের সময়সীমা কখন হতে শুরু হবে?

প্রশ্নকারী : আহম্মেদ বিন মনির

ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

উত্তর : শারয়ী বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি ওযূ করে মোজা পরিধান করে, তাহলে সে মোজার উপর মাসাহ করতে পারে। মোজার উপর মাসাহ করার সময়সীমা শরীয়তে নির্ধারিত। ব্যক্তি যদি মুক্বীম হয়, তাহলে একদিন একরাত অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা। আর ব্যক্তি যদি মুসাফির হয় তাহলে তিনদিন তিনরাত তথা ৭২ ঘণ্টা মোজার উপর মাসাহ করতে পারে। আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, جَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ لِلْمُسَافِرِ وَيَوْمًا وَلَيْلَةً لِلْمُقِيمِ ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত এবং মুক্বীমের জন্য একদিন একরাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন’ (নাসাঈ, হা/১২৮; মিশকাত, হা/৫১৭ ‘হাদীছ ছহীহ’)। তবে মোজার উপর মাসাহ করার সময় আরম্ভ হবে ওযূ করে মোজা পরিধান করার পর প্রথম যখন ওযূ ভঙ্গ হবে তখন থেকে। মোজা পরিধান করার সময় থেকে নয় (শরহুন নববী, ১৩৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (৬) : টয়লেটের মশা-মাছি কাপড়ে বা শরীরে বসলে তা নাপাক হয়ে যাবে কি?

প্রশ্নকারী : আক্বীমুল ইসলাম

জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।

উত্তর : প্রথমত, টয়লেটের মশা-মাছির শরীরে যে নাপাকি লেগে থাকে তা নিতান্তই সামান্য। যা চোখে দেখা বা বোঝা যায় না। আর সকল মশা-মাছির শরীরে নাপাকি লেগে থাকে বিষয়টিও অনিশ্চিত। সুতরাং পেশাব-পায়খানা বা টয়লেটের মশা-মাছি কাপড়ে বা শরীরে বসলে, শরীর বা কাপড় নাপাক হবে না। দ্বিতীয়ত, মশা-মাছি সাধারণত মানুষের শরীরে বসেই থাকে। সুতরাং মশা-মাছির শরীরে লেগে থাকা নাপাকী হতে বেঁচে থাকা মানুষের জন্য সাধ্যাতীত বিষয়। আর আল্লাহ তাআলা মানুষের সাধ্যের বাহিরে কোনো কিছু অর্পণ করেননি (আল-বাক্বারা, ২৮৬)। উল্লেখ্য যে, খাবারে মাছি পড়লে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই মাছিকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিয়ে তা খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৮২; মিশকাত, হা/৪১৪৩)। এখানে মাছি কোথা হতে আসল তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। যদি মাছি বসার কারণে কোনো কিছু নাপাক হয়ে যেতো, তাহলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন খাবার খাওয়ার অনুমতি দিতেন না। এ থেকে বোঝা যায়, শুধু মাছি বসার কারণে কোনো কিছু নাপাক হয় না।

প্রশ্ন (৭) : মনের সন্দেহজনিত কারণে পুনরায় মাথা মাসাহ করলে ওযূ হবে কি?

-রফিকুল ইসলাম

মহব্বত বাজিতপাড়া, থানা ও জেলা নীলফামারী।

উত্তর : ১. ওযূ সম্পন্ন হওয়ার পর যদি মনে এমন সন্দেহের সৃষ্টি হয়, তাহলে এমন সন্দেহ শরীয়তে ধর্তব্য নয় এবং এর জন্য কোনো করণীয় নেই। ওযূ হয়ে যাবে। ২. ওযূ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই যদি মনে এমন সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং তা প্রবল হয়, তাহলে মাথা মাসাহ করে নিবে।

উল্লেখ্য যে, কোনো ব্যক্তি যদি مشكوك তথা ‘অধিক সন্দেহগ্রস্ত’ হয় তাহলে এমন ব্যক্তি সন্দেহের তোয়াক্কা করবে না। (ফতওয়া সয়াল ওয়া জাওয়াব, ১/৩৩৭)।

প্রশ্ন (৮) : ওযূ শেষে কালিমা শাহাদাত পড়তে ভুলে গেলে ওযূ হবে কি?

প্রশ্নকারী : রফিকুল ইসলাম

মহব্বত বাজিতপাড়া, থানা ও জেলা নীলফামারী।

উত্তর : ওযূর শেষে দু‘আ পাঠের ফযিলত অনেক। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য এ বিষয়ে মনযোগী হওয়া জরুরি। ওযূর শেষের দু‘আ সম্পর্কে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওযূ করে বলবে, أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৪; মিশকাত, হা/২৮৯)। তবে কেউ যদি ওযূর শেষে উক্ত দু‘আ না পড়ে, তাহলে তার ওযূ হয়ে যাবে। তবে ওযূর দু’আর ফযিলত থেকে বঞ্চিত হবে।

হালাল-হারাম

প্রশ্ন : (৯) আমরা ছয় ভাই-বোন। আমারবাবাপাঁচভাই-বোনেরঅনুমতিনিয়েইআমারজন্যকিছুজমিদিয়েছেন।এটাকিআমারজন্যহালালহবে?

প্রশ্নকারী : দেলোযার

পাবনা।

উত্তর: বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় সন্তানরা সম্পদের মালিক হয় না। যেহেতু বাবার জীবদ্দশায় ছেলে-মেয়েরা সম্পদের অংশের মালিক হয়নি, তাই ভাই-বোনদের এই সম্পদ ছেড়ে দেওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে বাবার মৃত্যুর পর সন্তানরা চাইলে নিজের প্রাপ্য অংশ বোন বা অন্য কাউকে দিলে সে তা গ্রহণ করতে পারে। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যাকাতের সম্পদ হতে কিছু সম্পদ দিলেন। আমি বললাম, আমার চেয়ে দরিদ্র ব্যক্তিকে দিন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি নিজের সম্পদ বানিয়ে নাও অতঃপর চাইলে অন্যকে দান করে দাও (ছহীহ বুখারী, হা/৭১৬৩)।

প্রশ্ন (১০) : হস্তমৈথুন কি সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ? নাকি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সেটা বৈধ? যদি স্ত্রীর মাসিক অবস্থার কথা ধরা হয়।

প্রশ্নকারী : মিম

রংপুর।

উত্তর : হস্তমৈথুন অত্যন্ত জঘন্য ও গর্হিত কাজ। স্ত্রী ও দাসীর সাথে বৈধ পন্থায় যৌনসঙ্গম ব্যতীত অন্য সকল পথ ও পদ্ধতি হারাম। যারা একাজে অভ্যস্থ তারা সফলতা লাভ করবে না এবং বড় গুণাহগার হিসেবে বিবেচিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, অবশ্যই সফলকাম হয়েছে ঐ সকল মুমিন যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। বিবাহিত স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত কোথাও ব্যবহার করে না। আর অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী (আল-মুমিনূন, ৫-৭; আল-মা‘আরিজ, ২৯)।

ব্যবসা-বাণিজ্য- সূদী কারবার

প্রশ্ন (১১) : কোনো (বিবাহিত/অবিবাহিত) নারীর পিতা যদি সূদভিত্তিক লোন নিয়ে বাড়ি তৈরী করেন, তাহলে সেই বাড়িতে বসবাস করা কি তার জন্য জায়েয? যদি জায়েয না হয়, তাহলে এর জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করা কি যাবে?

প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

কবিরহাট, নোয়াখালী।

উত্তর : ব্যাংক হতে সূদভিত্তিক লোন নিয়ে গাড়ি-বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি করা যাবে না। কেননা সূদ সুস্পষ্ট হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সূদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও’ (আল-বাক্বারা, ২৭৮-৭৯)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহ সূদকে হারাম করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন’ (আল-বাক্বারা, ২৭৫)। জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদগ্রহণকারী ও সূদপ্রদানকারী এবং সূদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়ের উপর লা’নত করেছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৮)। এমতাবস্থায় সূদমুক্ত হয়ে বিগত সূদের পাপের জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যেহেতু তৈরিকৃত বাড়ি ভেঙ্গে ফেললে অর্থ নষ্ট হবে, তাই সম্ভব হলে নেকীর আশা ছাড়াই বাড়িটি দান করে দিতে হবে। নিরুপায় হলে বসবাস করতে পারে। আর উপায় থাকলে স্বামীসহ অন্য কোথাও বসবাস করবে। তবে এর জন্য পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না।

প্রশ্ন (১২) : বাংলাদেশে শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত ইসলামী ব্যাংকগুলোতে টাকা রেখে ল্যভাংশ নিলে তা সূদ হবে কি?

প্রশ্নকারী : মোস্তাফিজুর রহমান

শিরোইল, মাষ্টার পাড়া, রাজশাহী।

উত্তর : ইসলামী ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতে হয়। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি সূদের সাথে জড়িত। অতএব ইসলামী ব্যাংক হতে প্রদত্ত লভ্যাংশও সূদের অন্তর্ভুক্ত। তাই তা গ্রহণ করা যাবে না। কেননা ইসলামী শরীয়াতে সূদ হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসা হালল করেছেন এবং সূদ হারাম করেছেন’ (আল-বাক্বারা, ২৭৫)। জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদগ্রহণকারী ও সূদপ্রদানকারী এবং সূদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়ের উপর লা’নত করেছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৮)। আর সন্দেহযুক্ত বিষয় হতে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেন, مَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِى الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِى الْحَرَامِ ‘যে সন্দেহযুক্ত বিষয় হতে নিজেকে মুক্ত করল সে তার সম্মান ও দ্বীনকে রক্ষা করল। আর যে সন্দেহযুক্ত বিষয়ে জড়াল সে হারামে পতিত হলো’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৯)। অপর বর্ণনায় এসেছে, তোমার কাছে যা সন্দেহ মনে হয় তা পরিত্যাগ করো এবং সন্দেহ মুক্ত জিনিস গ্রহণ করো (নাসাঈ, হা/৫৭১১; মিশকাত, হা/২৭৭৩)।

প্রশ্ন (১৩) : ফরেক্স ট্রেডিং (Fরাহিমাহুমুল্লাহrআলাইহিস সালামx Trছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামdinরাযিয়াল্লাহু আনহা) কি হালাল?
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ ওমর
সাঁথিয়া, পাবনা।
-সৈয়দা নাজনীন আক্তার
৭১৪ পূর্ব মানিকদী, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা ১২০৬।
-হিলালুদ্দীন
উখিয়া, কক্সবাজার।

-জালাল উদ্দিন

ভদ্রখণ্ড, তানোর, রাজশাহী।

উত্তর : ফরেক্স ট্রেডিং মূলত একদেশের মুদ্রার সাথে অন্য দেশের মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করার মাধ্যমে আয় করা। এখানে ব্রোকারের মাধ্যমে অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করা যায়। এই অ্যাকউন্ট সূদমুক্ত করার সুযোগ আছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা থাকে, বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকে, মুদ্রার মূল্য নির্ধারিত থাকে, একই দেশের মুদ্রা বিনিময় হয় না, বরং ভিন্ন দেশের মুদ্রার সাথে বিনিময় হয়, পাশাপাশি উভয়পক্ষ অ্যাকাউন্ট থেকে সাথে সাথে মুদ্রা আদান-প্রদানের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে, যা শরীআতের মূলনীতি ‘হাতে হাতে লেনদেন হতে হবে’ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উবাদা ইবনু ছামেত রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর এবং লবণের বিনিময়ে লবণ- সমপরিমাণ ও হাতে হাতে (নগদে) হতে হবে। তবে এই দ্রব্যগুলো যদি একটি অন্যটির সাথে বিনিময় হয় (অর্থাৎ পণ্য এক জাতীয় না হয়) তাহলে তোমরা যেরূপ ইচ্ছা (কম-বেশিতে বিক্রি) করতে পার, তা হাতে হাতে (নগদে) হলে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৮৭)। ‘উভয়পক্ষ অ্যাকাউন্ট থেকে সাথে সাথে মুদ্রা আদান-প্রদানের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করাটা ‘মজলিসে লেনদেন সম্পন্ন হওয়া’র স্থলাভিষিক্ত। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, ফরেক্স ট্রেডিংয়ে হালালভাবে উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন (১৪) : আমি একজন ফুল বিক্রেতা। বিভিন্ন দিবস ও উৎসব পালনের দিন মানুষ আমার থেকে ফুল ক্রয় করে। তাদের কাছে আমার ফুল বিক্রয় করা ঠিক হবে কি?

প্রশ্নকারী : আশরাফুল ইসলাম

শ্রীপুর, মাগুরা।

উত্তর : প্রত্যেক হালাল ও বৈধ পণ্যের ব্যবসা করাতে শারয়ী কোনো বাধা নেই। ফুলও একটি বৈধ পণ্য। সুতরাং ফুল বিক্রয় করা যায়। কেউ যদি কামারের নিকট থেকে কোনো ধারালো অস্ত্র ক্রয় করে তা দ্বারা কোনো হত্যাযজ্ঞ ঘটায়, তাহলে এই হত্যার জন্য যেমন কামার দায়ী নয়। ঠিক তদ্রূপ ফুল বিক্রেতার নিকট হতে ফুল ক্রয় করে যদি কেউ তা অবৈধ কাজে ব্যবহার করে, তাহলে তার জন্য ফুল বিক্রেতা দায়বদ্ধ থাকবে না। বরং অবৈধ কাজে ব্যবহারকারী এর জন্য আল্লাহর নিকট পাপী হবে। কেননা, মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى ‘কোনো বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না’ (ফাতির, ১৮)। তবে স্পষ্ট জানতে পারলে তার নিকট বিক্রয় করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরস্পর ভালো এবং তাক্বওয়ার কাজে সহযোগিতা করো; পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যকে সহযোগিতা করো না’ (আল-মায়েদা, ২)।

প্রশ্ন (১৫) : হিন্দুধর্মের লোকদের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : মুসলিম আহমেদ ইমন

লাউহাটী, দেলদুয়ার, টাংগাইল।

উত্তর : হিন্দুধর্মসহ যেকোনো ধর্মের মানুষের সাথে হালাল ও বৈধ জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় করাতে শারয়ী কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, اشْتَرَى طَعَامًا مِنْ يَهُودِىٍّ إِلَى أَجَلٍ ، وَرَهَنَهُ دِرْعًا مِنْ حَدِيدٍ ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদী থেকে বাকীতে খাদ্য ক্রয় করেন এবং নিজের লৌহবর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০৬৮; মিশকাত, হা/২৮৮৪)।

ইবাদত- ছালাত- পঠিতব্য দু’আ

প্রশ্ন (১৬) : স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করতে পারবে কি?

প্রশ্নকারী : জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম

পত্নীতলা, নওগাঁ।

উত্তর : স্বামী-স্ত্রী ও যেকোনো নারী-পুরুষ এক কাতারে পাশা-পাশি দাঁড়িয়ে জামা’আতে ছালাত আদায় করতে পারবে না। বরং নারীকে পিছনেই দাঁড়াতে হবে। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু ইবুন মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং ইয়াতীম রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করেছিলাম। আর আমার মা আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করছিলেন। (ছহীহ বুখারী, হা/৭২৭; মিশকাত, হা/১১০৮)।

প্রশ্ন (১৭) : আমার ভোলা জেলার অধিকাংশ মানুষ মাযহাবী তরীকায় ছালাত আদায় করে। আমি ছহীহ তরীকায় ছালাত আদায় করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার বাবা ও অন্যান্যরা আমাকে নিষেধ করে। এমতাবস্থায় আমি বাবার কথা না মানলে তার অবাধ্য সন্তান হিসাবে গণ্য হব কি?

প্রশ্নকারী : শাহীন

চরফ্যাশন, ভোলা।

উত্তর : সঠিক ও বিদ‘আতমুক্ত আমল বৈ কোনো আমলই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। যারা আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর শেখানো পদ্ধতির অনুসরণ করে না; তাদের আমল আল্লাহর নিকট বাতিল। এই মর্মে মহান আাল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করো। তোমরা তোমাদের আমলসমূহকে নষ্ট করো না’ (মুহাম্মাদ, ৩৩)। ছালাত রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর দেখানো পদ্ধতিতেই আদায় করতে হবে। মালেক ইবনু হুওয়াইরিস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন, صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي অর্থাৎ ‘তোমরা ছালাত আদায় করো; যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩১; মিশকাত, হা/৬৮৩)। অতএব এমন পরিস্থিতিতে সুন্নাহ পদ্ধতিতেই ছালাত আদায় করতে হবে। মা-বাবাকে বিষয়টি আদবের সহিত বোঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের সাথে অসাদাচরণ করা যাবে না। তবে কারো কথায় রাসূলের সুন্নাহকে ত্যাগ করা যাবে না। নাওয়াস ইবনু সাম‘আন রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির আনুগত্য নেই (মিশকাত, হা/৩৬৯৬)। এমতাবস্থায় পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান হিসাবে বিবেচিত হবে না।

প্রশ্ন (১৮) : বিতরের কুনূত রুকুর পূর্বে না পরে পড়তে হবে?

প্রশ্নকারী : হারুনুর রশীদ

বদরগঞ্জ, রংপুর।

উত্তর : বিতরের কুনূত পড়ার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে- এক. ক্বিরাআত শেষ করে রুকুর পূর্বে হাত বাঁধা অবস্থায় দু’আয়ে কুনূত পড়া। (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী হা/২৫৩; আলোচনা দ্র. ২/৭১ পৃ. ২/১৮১ পৃ.)। দুই. রুকুর পর দুই হাত তুলে দু‘আ কুনূত পড়া। উবায় ইবনু কাব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক’আত বিতর ছালাত আদায় করতেন প্রথম রাকা’আতে সূরা আলা দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা কাফেরূন এবং তৃতীয় রাকাআতে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। আর তিনি রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। (নাসাঈ, ১৬৯৯ ১/১৯১ পৃ. সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে এসেছে। উবায় ইবনু কাব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিতর পড়তেন তখন রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। (ইবনু মাজাহ, হা/১১৮২ পৃ. সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল, হা/৪২৬)।

প্রশ্ন (১৯) : মসজিদের বাউন্ডারির ভিতরে অথবা, সামনে-পিছনে কিংবা ডানে-বামে কবর থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : সাইফুল ইসলাম

চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।

উত্তর : মসজিদের বাউন্ডারির ভিতরে, মসজিদের ডানে-বামে অথবা সামনে পিছনে কবর থাকলে, সে মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে না। কেননা এমন মসজিদ কবরস্থানের অন্তর্ভুক্ত। আর কবর স্থানে ছালাত আদায় করা হারাম। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدٌ إِلاَّ الْمَقْبَرَةَ وَالْحَمَّامَ কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া দুনিয়ার আর সব জায়গায় মসজিদ (তিরমিযী, হা/৩১৭; ইবনু মাজাহ, হা/৭৪৫; মিশকাত, হা/৭৩৭)। আবূ মারছাদ আল-গানাভী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের উপর ছালাত আদায় করো না (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৫৫)। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে ‘কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭২; মিশকাত, হা/১৬৯৮)। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের মাঝে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (মুসনাদে বাযযার, হা/৪৪১)। যারা কবরস্থানকে মসজিদ হিসাবে ব্যবহার করে, তাদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুশয্যায় বলেছেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের প্রতি। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৩০; মিশকাত, হা/৭১২)। তবে যদি কবর মসজিদের পার্শ্বে হয় এবং প্রাচীর দিয়ে সম্পূর্ণরূপে মসজিদ থেকে কবরকে পৃথক করা হয়, তাহলে সে মসজিদে ছালাত বৈধ হবে (মাজমুউল ফতওয়া ‘ইবনু তাইমিয়্য’, ৩১/১২ পৃ. মাজমুউল ফতওয়া ‘ইবনু বা’য, ১৩/৩৫৭ পৃ.)।

প্রশ্ন (২০) : ছালাতরত অবস্থায় কেউ কথা বললে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে কি?

প্রশ্নকারী : আক্বীমুল ইসলাম

জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।

উত্তর : ছালাতরত অবস্থায় ইচ্ছাকৃত কথা বললে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। যায়েদ ইবনু আরকাম রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা ছালাতে কথা-বার্তা বলতাম। প্রত্যেকেই তার পাশের ব্যক্তির সাথে কথা বলত। অতঃপর যখনقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ ‘আর তোমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ অনুগত ও একনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াও’ (আল-বাক্বারা, ২৩৮) আয়াতটি নাযিল হলো, তখন ছালাতে চুপ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং পরস্পরে কথা বলতে নিষেধ করা হয় (ছহীহ মুসলিম, হা/১২৩১; ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৩৪)। তবে অনিচ্ছাকৃত কিংবা অজ্ঞতাবশত কথা বলে ফেললে ছালাত হয়ে যাবে। মুয়াবিয়া বিন হাকাম নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছালাত পড়ছিলেন, লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি হাঁচি দেওয়ার পর الحمد الله বললে, তার হাঁচির প্রত্যুত্তরে তিনি يَرْحَمُكَ اللهُ বললেন, ছালাত শেষে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, إِنَّ هَذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَىْءٌ مِنْ كَلاَمِ النَّاسِ إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ অর্থাৎ ছালাতের মধ্যে কথা-বার্তা ধরনের কোনো কিছু বলা উচিত নয়। বরং ছালাতে প্রয়োজনীয় তাসবীহ, তাকবীর বা কুরআন পাঠ করতে হবে (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৩৭; মিশকাত, হা/৯৭৮)। উক্ত ঘটনায় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে অপ্রয়োজনীয় কথা বলার কারণে সর্তক করেছেন। তবে পুনরায় ছালাত পড়তে বলেননি।

প্রশ্ন (২১) : মসজিদের পশ্চিম দিকে অবস্থিত একটি জায়গায় মহিলাদের জুম‘আর ছালাতের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এভাবে তাদের ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি?

প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ

দিনাজপুর।

উত্তর : এভাবে ছালাত জায়েয হবে না। কারণ তারা ইমামের সামনে রয়েছে। আর ইমামের সামনে মুসল্লির দাঁড়ানো জায়েয নয়। তবে ডানে, বামে, পিছনে দাঁড়ালে জায়েয হবে। শরীয়তের নিয়ম হলো যে, মহিলারা পুরুষের পিছনে ছালাত আদায় করবে। আনাস ইবনু মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তার দাদী রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খাবারের দাওয়াত করলেন যা তিনি তার জন্য তৈরি করেছিলেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হতে খেলেন এবং বললেন, ‘তোমরা ছালাতের জন্য দাঁড়াও আমি তোমাদের ছালাত পড়াব। রাবী বলেন, আমি দাঁড়ালাম ও ছোট ভাই ইয়াতীম তার পিছনে দাঁড়াল এবং বৃদ্ধা মহিলা আমাদের পিছনে দাঁড়াল। এরপর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরালেন (ছহীহ বুখারী, হা/৩৮০; ছহীহ‍ মুসলিম, হা/৬৫৮)। উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, মহিলারা পিছনে ছালাত আদায় করবে। তবে যদি তেমন জায়গা না থাকে তাহলে ডানে-বামে ছালাত আদায় করতে পারে (মাজমূআয়ে ফতওয়া ইবনু উছায়মীন, ১৩/৪৪) এবং পুরুষের পাশে মহিলাদের ছালাতের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে অবশ্যই উভয়ের মাঝে দেওয়াল বা প্রতিবন্ধকতামূলক কিছু দিতে হবে। এমন অবস্থায় ঐক্যমতে ছালাত বৈধ হবে (তাবয়ীনুল হাকায়েক্ব, ১/১৩৮)।

প্রশ্ন : (২২) ফরযছালাতেরপরেযেসকলযিকির-আযকারপাঠকরাহয়সেগুলোকিসুন্নাতবানফলছালাতেরপরেওপাঠযাবে?

প্রশ্নকারী : শাহরিয়ার

গুরুদাসপুর, নাটোর।

উত্তর : ফরয, নফল সকল ছালাতের পর হাদীছে বর্ণিত দু’আগুলো পাঠ করা যায়। ছাওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ছালাত হতে সালাম ফেরাতেন তখন তিনবার ‘আসতাগফিরুল্ল-হ’ পাঠ করতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৯১)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, فِى دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ إِذَا سَلَّمَ ‘প্রত্যেক ছালাতের পর যখন সালাম ফেরাতেন তখন পাঠ করতেন (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩৩০)। উল্লেখ্য যে, যিকিরের বিষয়টি কিছু কিছু হাদীছ দ্বারা ফরয ছালাতের খাছ করা হলেও একাধিক হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফরয নফল সকল ছালাতের পর পাঠ করা যায়।

ইবাদত-যাকাত-ছাদাক্বা

প্রশ্ন (২৩) : আমি একজন ব্যবসায়ী। আমারগরু ও ছাগলের খামার আছে।মাঝেমাঝেআমিগরুছাগলকিনিআবারবিক্রিকরিএমতাবস্থায়আমাকেকিএগুলোরযাকাতবেরকরতেহবে?

উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী উক্ত গরু-ছাগল ব্যবসায়িক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। ব্যবসায়িক সম্পদের উপর যাকাত ফরয হয়। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, لَيْسَ في العَرْضِ زَكاةٌ إِلاَّ أَنْ يُرَادَ بِهِ التِّجَارَةُ ‘আসবাবপত্রের উপর কোনো যাকাত নেই। তবে যদি তা ব্যবসার পণ্য হয়ে থাকে (তাহলে সেই আসবাবপত্রের উপর যাকাত ফরয হবে) (মা’রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বায়হাক্বী, হা/ ২৫০৯)। যাকাত ফরয হওয়ার জন্য দুইটি শর্ত। ১. নিসাব পরিমাণ হওয়া ২. পূর্ণ এক বছর অতিক্রম করা। যাকাতের নিসাব হলো- ৭.৫ ভরি স্বর্ণ বা ৫২.৫ তোলা রৌপ্য বা এর সমপরিমাণ অর্থ থাকা। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির ব্যবসায়িক পণ্যের পরিমাণ যদি ৭.৫২ ভরি স্বর্ণ বা ৫২.৫ তোলা রৌপ্য সমপরিমাণ হয়, তাহলে সেই ব্যবসায়িক পণ্যের মোট হিসাবের উপর ২.৫% যাকাত আদায় করতে হবে )আবূ দাঊদ, হা/১৫৭৩; বুলূগুল মারাম, হা/৪৮৭(। । উল্লেখ্য যে, প্রাণী যদি চারণভূমিতে বিচরণশীল না হয় তাহলে ব্যবসায়ী সম্পদের হিসাবে যাকাত গ্রহণ করা হবে, প্রাণীর যাকাতের হিসাবে নয়। সুতরাং উক্ত ব্যবসায়ীকে যাকাত বের করার দিন তার নিকট যত টাকা মূল্যের গরু-ছাগল আছে সেই মূল্যের উপর যাকাত নির্ধারণ করে যাকাত বের করতে হবে

প্রশ্ন (২৪) : ভাই কি তার অস্বচ্ছল বোনকে যাকাত দিতে পারবে?

প্রশ্নকারী : আলামিন

কাটাখালি, রাজশাহী।

উত্তর : হ্যাঁ; বোন যদি অসহায় হয় তাহলে তাকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যায়। বরং অসহায় বোনকে যাকাত দিলে দ্বিগুণ ছওয়াব হবে। সালমান ইবনু আমের রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ الصَّدَقَةَ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ وَعَلَى ذِى الرَّحِمِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ ‘(অনাত্মীয়) মিসকীনকে দান করলে দান করার একটি ছওয়াব হয়। কিন্তু আত্মীয়কে দান করলে দুটি ছওয়াব হয়; দান করার ছওয়াব এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ছওয়াব’ (তিরমিযী, হা/২৫৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯০৯)।

প্রশ্ন (২৫) : আমার স্ত্রী একজন নওমুসলিম। তার বাবা-মার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। সে কি তার পরিবারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ রাখতে পারবে? সাথে সাথে আমি কি যাকাতের অর্থ দিয়ে তাদের সাহায্য করতে পারব?

প্রশ্নকারী : শাহিনুর আলম

লামা, বান্দরবান, চট্টগ্রাম।

উত্তর : মা-বাবা মুসলিম হোক বা অমুসলিম তাদের সাথে সদা সদাচরণ করতে হবে। মা-বাবার সাথে সদাচরণের আদেশ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার করো’ (আল-ইসরা, ২৩)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে অংশী করতে পিড়াপিড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের কথা মান্য করবে না, অবশ্য পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদভাবে বসবাস কর’ (লুক্বমান, ১৫)। অর্থাৎ তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে, তবে আল্লাহর অবাধ্যতায় তাদের কথা মান্য করা যাবে না (মিশকাত, হা/৩৬৯৬)। আসমা বিনতু আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফাতাওয়া চেয়ে বললাম, আমার মা আমার নিকট এসেছেন। সে আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করো (ছহীহ বুখারী, হা/২৬২০)। অভাবগ্রস্ত শ্বশুর-শাশুড়িকে সহযোগিতা করা তাদের সাথে সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া পবিত্র কুরআনে অমুসলিমদের মনজয়ের জন্য যাকাত দেওয়ার আলাদা খাতই বর্ণিত হয়েছে । সুতরাং অভাবগ্রস্ত অমুসলিম শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে যাকাত দেওয়া যাবে।

প্রশ্ন (২৬) : বসবাসের জন্য তৈরিকৃত বাড়ি যদি প্রয়োজনের তাগিদে ভাড়া দেওয়া হয় তাহলে ঐ বাড়ি ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থের যাকাত দিতে হবে কি?

প্রশ্নকারী : ফারহান সাদিক রাফিদ

২৪৩/৬, নিমতলা, রায়ের বাজার, ধানমন্ডি-১৫, ঢাকা-১২০৯।

উত্তর : বসবাসের জন্য তৈরিকৃত বাড়ির উপর কোনো যাকাত নেই। তবে যদি বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় এবং তা হতে উপার্জিত অর্থ নেসাব পরিমাণ হয় এবং উক্ত নেসাবের উপর পূর্ণ এক বছর অতিক্রম করে, তাহলে সেই বাড়ি হতে উপার্জিত ভাড়ার টাকায় শতকরা ২.৫ ভাগ হারে যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা যেকোনো বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ যদি নেসাব পরিমাণ হয় তাহলে সেই অর্থেই যাকাত ফরয (আবূ দাঊদ, হা/১৫৭৩; বুলূগুল মারাম, হা/৪৮৭ ছহীহ সনদে; ফতওয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন নং ৩৭০)। উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে ভাড়া হতে উপার্জিত অর্থ ও নিজের জমাকৃত টাকাসহ যদি যাকাত পরিমাণ হয় তাহলে সব টাকা হিসাব করে যাকাত প্রদান করতে হবে।

প্রশ্ন (২৭) : খামারে পালিত গরুর যাকাত দিতে হবে কি? যদি তাতে বছর পূর্ণ না হয় তাহলে করণীয় কী?

প্রশ্নকারী : আবুল বাসার

গ্রাম কল্পবাস। থানা বি,পাড়, কুমিল্লা।

উত্তর : যাকাতযোগ্য গৃহ পালিত পশুর উপর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে- ১. নেসাব পরিমাণ হওয়া ২. পূর্ণ এক বছর মালিকানাধীন থাকা ৩. সায়েমা (বিচরণশীল) হওয়া। খামারে পালিত গরুর মধ্যে তৃতীয় শর্তটি বিদ্যমান না থাকায় এমন পশুতে যাকাত ফরয হবে না। তবে যদি খামারের পশু ব্যবসার উদ্দেশ্যে লাল-পালন করা হয় তাহলে সেই পশু ব্যবসায় সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে। অর্থাৎ খামারের সকল পশুর মূল্য হিসাব করে যদি ৫২.৫ তোলা রোপ্য বা ৭.৫ ভরি স্বর্ণের মূল্য সমপরিমাণ হয় তাহলে বৎসরান্তে সেই পশুর মোট মূল্যের উপর শতকরা ২.৫ ভাগ হারে যাকাত ফরয হবে। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি তোমার নিকট এক বছরের জন্য দুইশত দিরহাম মজুদ থাকে, তবে বৎসরান্তে এর জন্য পাঁচ দিরহাম যাকাত দিতে হবে। বিশ দীনারের কম পরিমাণ স্বর্ণে যাকাত ওয়াজিব নয়। অতঃপর যদি কোনো ব্যক্তির নিকট বিশ দীনার পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর পর্যন্ত মজুদ থাকে তবে এর জন্য অর্ধ-দীনার যাকাত দিতে হবে। আর যদি এর পরিমাণ আরো বেশি হয়, তবে উক্ত হিসাব অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে। (আবূ দাউদ, হা/১৫৭৩)। সামুরা ইবনু জুনদুব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসায় পণ্যের মধ্য হতে যাকাত বের করার জন্য আমাদের আদেশ করতেন (বুলূগুল মারাম, হা/৬২৩)।

প্রশ্ন (২৮) : আমার বেশ কিছু টাকা ঋণ আছে। তা পরিশোধ করার জন্য অল্প অল্প করে একাউন্টে জমা রাখছি। কেননা পাওনাদার যেকোনো মুহূর্তে তা চাইতে পারেন। এমতাবস্থায় জমাকৃত টাকার উপরে যদি বছর পূর্ণহয়ে যায় তাহলে কি তার যাকাত দিতে হবে?

প্রশ্নকারী : সাইফুল্লাহ

রায়পুর, লক্ষীপুর।

উত্তর : যেকোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর অতিক্রম করলে যাকাতযোগ্য সকল সম্পদের উপর যাকাত ফরয হয়। তাই এমতাবস্থায় যাকাত বের করার সময় হওয়ার পূর্বেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় বছরান্তে যাকাতের হিসেবের মধ্যে উক্ত টাকাও গণ্য হবে। সায়েব ইবনু ইয়াযিদ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, উছমান ইবনু আফফান রাযিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, এই মাস (মাহে রামাযান) যাকাত আদায়ের মাস। ঋণগ্রস্তদের উচিত তাদের ঋণ শোধ করে দেওয়া, যাতে অবশিষ্ট সম্পদের যাকাত আদায় করে নেওয়া যায় (মুয়াত্ত্বা মালেক, হা/৮৭৩)। উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই ঋণ পরিশোধ না করে দেয় তাহলে বছরান্তে যাকাত বের করতে হবে।

প্রশ্ন (২৯) : আমার একটা ডিপিএস-এর মেয়াদ এ বছর শেষ হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই টাকাগুলো আমার ব্যাংক একাউন্টে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু লকডাউনের কারণে তা একাউন্টে জমা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি যখন যাকাতের টাকার পরিমাণ হিসাব করব তখন পর্যন্তও যদি টাকাগুলো একাউন্টে জমা না হয় সে ক্ষেত্রেও কি যে পরিমাণ টাকা ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা সে পরিমাণ টাকা ধরে যাকাত বের করব, না-কিতাএকাউন্টেজমাহওয়াপর্যন্তঅপেক্ষাকরব?

উত্তর : ডিপিএস এর মাধ্যমে সম্পদ জমানো স্পষ্ট সূদ, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম (আল বাক্বারা, ২৭৫)। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত মূলধনের যাকাত দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত সূদের কোনো যাকাত হবে না। কারণ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; মিশকাত, হা/২৭৬০)। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব হারাম থেকে মুক্তিলাভের জন্য নেকীর উদ্দেশ্য ছাড়া সূদের অতিরিক্ত লাভকে জনকল্যাণমূলক কাজে দান করে দিতে হবে। আমরা জানি যাকাত দিতে হয় হালাল সম্পদকে পবিত্র করার জন্য। আর সূদের মাল তো পুরোটাই হারাম। তাকে পবিত্র করার কি আছে?।

প্রশ্ন : (৩০) অবৈধভাবেউপার্জিতঅর্থ-সম্পদেরযাকাতদিতেহবেকি?

প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান

কুরপার, পুলিশ লাইন, নেত্রকোনা।

উত্তর : যাকাতযোগ্য সম্পদ হতে যাকাত বের করার উদ্দেশ্য হচ্ছে- এক. গরীব-দুখী মানুষের অধিকার প্রদান করা বা দারিদ্র্য বিমোচন। দুই. নিজেকে ও নিজ সম্পদকে পবিত্র করা। এমতাবস্থায় সম্পদের যাকাত বের করতে হবে একথাই ঠিক। তবে ব্যক্তিকে এমন মনে রাখতে হবে যে, হারাম সম্পদের যাকাত আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا ‘হে মানুষ সকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু কবুল করেন না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; মিশকাত, হা/২৭৬০)। এমন ব্যক্তিকে তার হারাম সম্পদ নেকীর আশা ছাড়াই জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার মাধ্যমে পবিত্র করার চেষ্টা করতে হবে এবং হারাম হতে বেঁচে থাকতে হবে। আর যাকাত শুধু হালাল সম্পদেরই আদায় করতে হবে।

প্রশ্ন (৩১) : আমরা যৌথ পরিবারে বসবাস করি। তাই আমারমায়ের স্বর্ণ, স্ত্রীর স্বর্ণ, এবং ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর স্বর্ণ মিলিয়ে নিসাব পরিমাণ হলে কি যাকাত দিতে পারবে?

প্রশ্নকারী : ওয়াসিম আকরাম

বেরাইদ, বাড্ডা, ঢাকা।

উত্তর : একই পরিবারে বসবাস করলেও সকলের ইনকাম যদি আলাদা আলাদা হয় তাহলে যাকাত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর আলাদা আলাদাভাবে ফরয হবে। একাধিক মালিকানাভুক্ত সম্পদকে যাকাত প্রদানের উদ্দেশ্যে একত্র করা যাবে না। যেমনভাবে একই মালিকানাভুক্ত সম্পদকে যাকাত প্রদানের ভয়ে ভিন্ন করা যাবে না। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لاَ يُجْمَعُ بَيْنَ مُفْتَرِقٍ وَلاَ يُفَرَّقُ بَيْنَ مُجْتَمِعٍ خَشْيَةَ الصَّدَقَةِ ‘যাকাত আদায়ের ভয়ে পৃথক পৃথক সম্পদকে একীভূত করা যাবে না এবং একীভূত সম্পদকে পৃথক করা যাবে না (আবূ দাউদ, হা/১৫৮০, ১৫৭২)। সুতরাং ব্যক্তি যখন নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হবে এবং এক বছর অতিক্রম করবে, তখনই তার উপর যাকাত ফরয হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ছালাত আদায় করো এবং যাকাত দাও’ (আল-বাক্বারা, ২/৪৩)।

প্রশ্ন (৩২) :  কী পরিমাণ জমির ফসলে উশর দিতে হয়? আমাদের দুই একর জমি আছে? তাতে উৎপাদিত ফসলের কি উশর দিতে হবে?

প্রশ্নকারী : সৌরভ

লালমণিরহাট।

উত্তর : ফসলের যাকাতের নিছাব হলো পাঁচ অসাক্ব (ছহীহ বুখারী, হা/১৪৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭৯)। কিলোগ্রামের মাপে যার পরিমাণ হলো ১৮ মণ ৩০ কেজি। এতে জমির পরিমাপ বিবেচ্য নয়, বরং ফসলের পরিমাণ বিবেচ্য। উৎপাদিত ফসল যদি ১৮ মণ ৩০ কেজি হয়, তাহলে তাতে সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসলের ক্ষেত্রে ২০ ভাগের এক ভাগ এবং বিনা সেচে উৎপাদিত ফসলে ১০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ভূমি বৃষ্টি, নদ-নদী ও ঝর্ণার পানি অথবা তলদেশের পানির কারণে এমনিতেই আর্দ্র, তাতে ‘উশর’ (উৎপাদিত ফসলের এক-দশমাংশ) দিতে হবে। আর যে ভূমি উষ্ট্রী, বালতি কিংবা সেচ যন্ত্র দিয়ে সিঞ্চন করা হয়, তার যাকাত হলো উশরের অর্ধেক’ (অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ)। (আবূ দাঊদ, হা/১৫৯৬)।

ইবাদাত- হজ্জ-উমরা

প্রশ্ন (৩৩) : রামাযান মাসে উমরা পালন করলে নাকি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ পালনের সমান ছওয়াব পাওয়া যায়। এটি কতটুকু সঠিক?

প্রশ্নকারী : আবুল কাশেম

চাঁদপুর কাচারী, জামালপুর সদর, জামালপুর।

উত্তর : হ্যাঁ; উক্ত কথাটি সঠিক। রামাযান মাসে উমরা পালনকারী ব্যক্তি হজ্জের বা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সাথে হজ্জ করার ছওয়াব পেয়ে থাকেন। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, فَإِنَّ عُمْرَةً فِى رَمَضَانَ تَقْضِى حَجَّةً مَعِى ‘রমাযান মাসে একটি উমরা আদায় করা একটি ফরয হজ্জ আদায় করার সমান অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজ্জ আদায় করার সমান’। (ছহীহ বুখারী, হা/১৮৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৫৬; মিশকাত, হা/২৫০৯)।

বৈধ-অবৈধ

প্রশ্ন (৩৪) : মেয়ের নাম কানিজ ফাতিমা রাখা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : রবিউল ইসলাম

ফুলতলাহাট, বোদা, পঞ্চগড়।

উত্তর :  كنيز‘কানিয’ শব্দটিকে যদি ফারসী শব্দ ধরা হয়, তাহলে ‘কানিয ফাতেমা’ অর্থ ‘দাসী ফাতেমা’। নামটিতে শিরক বিদ’আত না থাকলেও একটি পছন্দনীয় নাম হিসাবে গণ্য করা যায় না। অতএব শুধু ফাতেমা নাম রাখাই উত্তম। কেননা কারো নামের অর্থ সুন্দর না হলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম عاصية (অবাধ্য) নাম পরিবর্তন করে বললেন, তোমার নাম ‘জামীলা’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২১৩৯; আবূ দাউদ, হা/৪৯৫২)।

প্রশ্ন (৩৫) : পরপর তিনটি সন্তান সিজারের মাধ্যমে হওয়ায় চতুর্থ সন্তান নিতে গিয়ে মায়ের জীবননাশের ঝুঁকি হতে পারে; এমন আশংকায় মায়ের নাড়ি কেটে নেওয়া কি জায়েয হবে?

প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান

মোল্লাহাট, বাগেরহাট।

উত্তর : না; এই পথ অবলম্বন করা যাবে না। কেননা এমনটি করা সন্তান হত্যার শামিল। মৃত্যুর সময় পূর্ব নির্ধারিত যা আগে-পরে হবে না। বাচ্চা প্রসবের সময় মৃত্যুবরণকারিণী নারীকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহীদ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। জাবের ইবনু ‘আতীক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে নিহত শহীদ ছাড়াও সাত ধরনের শাহীদ রয়েছে। ১. মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, ২. পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তি, ৩. যা-তুল জান্ব রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, ৪. পেটের রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, ৫. অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি, ৬. কোনো প্রাচীর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং ৭. প্রসবকালে মৃত্যুবরণকারিণী মহিলা’ (নাসাঈ, হা/১৮৪৬; মিশকাত, হা/১৫৬১)।

প্রশ্ন (৩৬) : বাবা খুবই কৃপণ। ক্ষেত-খামারের বিভিন্ন কাজে তাকে সহযোগিতা করলেও তিনি আমার প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা দিতে চান না। এমতাবস্থায় তার অজান্তে সামান্য পরিমাণ টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি?

প্রশ্নকারী : সৌরভ

লালমণিরহাট।

উত্তর : বাবা আসলেই অত্যাধিক কৃপণ হলে তার অজান্তে ‘প্রয়োজনীয়’ টাকা নেওয়া যায়। তবে কোনোক্রমেই তা যেন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিংবা অসংগত খরচের জন্য না হয়। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, হিন্দ বিনতে উতবা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আবূ সুফিয়ান খুব কৃপণ মানুষ। আমার ও সন্তানদের প্রয়োজনীয় খরচ আমাকে দেয় না. তার অজান্তে কিছু নেওয়া ছাড়া। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, خُذِى مَا يَكْفِيكِ وَوَلَدَكِ بِالْمَعْرُوفِ ‘তোমার ও তোমার সন্তানদের সংগতভাবে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু তুমি নিতে পার’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৬৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৪)।

প্রশ্ন (৩৭) : ফ্রান্সে আমার একটি রেস্টুরেন্টের লোগো (lরাহিমাহুমুল্লাহরাযিয়াল্লাহু আনহারাহিমাহুমুল্লাহ) তৈরির কাজে কি মুরগির ছবি ব্যবহার করা যাবে?

প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ আশরাফ

ফ্রান্স প্রবাসী।

উত্তর : যাবে না। লোগো তৈরীতে বা যেকোনো ডিজাইনের কাজে প্রাণীর ছবি ব্যবহার করা যাবে না। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি আমার ছোট আলমারি আমার মূর্তির ছবিযুক্ত বড় রঙ্গিন চাদর দ্বারা ঢেকে রেখেছিলাম। তিনি যখন তা দেখতে পান, তখন তিনি তা টেনে নামিয়ে ফেললেন; এমনকি তা ছিঁড়ে ফেললেন কিংবা টুকরা টুকরা করে ফেললেন। এবং তাঁর চেহারা রঙ্গিন হয়ে যায় আর বলেন, আয়েশা! ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি শাস্তিযোগ্য হবে সে সকল লোক যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন করে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২১০৭; নাসাঈ, হা/৫৩৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১২৭)। আবূ ত্বালহা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতারা ঐ গৃহে প্রবেশ করে না যাতে কুকুর এবং মূর্তির ছবি রয়েছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩২২৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২১০৬; মিশকাত, হা/৪৪৮৯)। তবে প্রাণীর ছবি ব্যতীত ফুল বা কোনো প্রাকৃতিক ছবি ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রশ্ন (৩৮) : আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। আমার স্বামী ছাড়া এই বিদ্যালয়ে আর কোনো পুরুষ শিক্ষক নেই। কিন্তু মাঝে মধ্যে ‘উপজেলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’-এ মহিলা ও পুরুষ শিক্ষকদের একত্রে প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং প্রশিক্ষণ শেষে সবার সামনে পাঠ উপস্থাপন করতে হয়। সেক্ষেত্রে পূর্ণ হিজাব পরিধান করে নারী-পুরুষ সকল শিক্ষকের সামনে পাঠ উপস্থাপন করা জায়েয হবে কি?

প্রশ্নকারী : মোছাঃ রানুয়ারা

আক্কেলপুর, জয়পুরহাট।

উত্তর : ইসলাম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যাপারে যতো গুরুত্বারোপ করেছে অন্য কোনো ধর্ম তা করেনি। তবে ইসলামী শিক্ষানীতিতে প্রচলিত সহশিক্ষানীতির কোনো স্থান নেই। বরং শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ পৃথক পৃথক হতে হবে। সুতরাং পর পুরুষের সামনে পাঠ উপস্থাপন থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আর সম্ভব নাহলে এমন চাকুরি করা যাবে না। আবূ সাঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার হাদীছ তো কেবল পুরুষরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিন, যেদিন আমরা আপনার নিকট আসব, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শিক্ষা দিবেন। তিনি বললেন, তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক স্থানে সমবেত হবে। তারপর (নির্দিষ্ট দিনে) তারা সমবেত হলো এবং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৭৩১০; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৮)। এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, পুরুষ নারীর সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেঠ। তবে নারী পুরুষের সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারে না।

পঠিতব্য দু’আ

প্রশ্ন (৩৯) : কুরআন তেলাওয়াত কিংবা ওয়াজ-মাহফিল শেষে ‘মজলিস শেষ করার দু‘আ’ পড়ার পক্ষে কোনো দলীল আছে কি? নাকি মজলিসে কোনো ভুলত্রুটি হলেই কেবল দু‘আটি পড়তে হবে?

প্রশ্নকারী : মাহফুজুর রহমান

হারাগাছ, রংপুর।

উত্তর :‘মজলিস শেষের দু‘আটি সব ধরনের মজলিস শেষ করার পর পড়া উচিত। কুরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ-মাহফিল, জুমু‘আহর খুৎবা, বিচার-সালিশ, দৈনন্দিন ক্লাস, এমনকি ওযূ কিংবা ছালাতের শেষেও এই দু‘আ পড়া ভালো। হাফেয ইবনু হাজার (আন-নুকাত ২/৭৩৩) এবং শায়খ আলবানী (সিলসিলা ছহীহা ৭/৪৯৫) গ্রন্থে হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর বর্ণনায় আছে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে ওযূ শেষে বলল (সুবহানাকা... শেষ পর্যন্ত) তার এই দু‘আর উপর মোহর লাগিয়ে দিয়ে সেটা আরশের নিচে রেখে দেওয়া হয়, যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গে না’ (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লা, ইবনুস সুন্নী, পৃষ্ঠা ৩১, হা/৩০; আদ দাওয়াতুল কাবীর, ১/১১৮, হা/৫৯)। ইমাম হাকেম হাদীছটিকে মুসলিমের শর্তে ছহীহ বলেছেন, হাফেয যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন (মুসতাদরাকে হাকেম, ১৯৭০)। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি কোনো মজলিসে বসে আর তাতে সে অধিক অনর্থক কথা-বার্তা বলে ফেলে। তবে মজলিস থেকে প্রস্থানের পূর্বে (সুবহানাকা... শেষ পর্যন্ত) এই দু’আ পাঠ করলে সেই মজলিসে তার যে ত্রুটি হয়েছে তা মাফ করে দেওয়া হবে’ (তিরমিযী, হা/৩৪৩৩)। ইমাম ইবনু তায়মিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ভালো কাজের শেষে ইসতিগফার করার শরীআতসিদ্ধ হওয়ার পক্ষে দলীল হলো আল্লাহর বাণী وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ ‘আর যারা ভোরে ক্ষমা প্রার্থনা করে’ (আলে ইমরান, ৩/১৭) এর অর্থ হলো- রাত জেগে ছালাত আদায় করো। ছালাত শেষ হলে ভোরে ইসতিগফার করো। তাছাড়া হাদীছে এসেছে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছালাত শেষে তিনবার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৯১; মিশকাত, হা/৯৬১)। ... আল্লাহ আরো বলেন,إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ * وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا * فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا (আন-নাছর, ১১০/১-৩)। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ সাহায্য ও বিজয় আসলে তাসবীহ ও ইসতিগফার করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (মাজমূউল ফতওয়া, ১০/৮৯)। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোকেরা আনুগত্যের কাজ শেষে অধিক পরিমাণে ইসতিগফার করে। কারণ উক্ত কাজে তাদের ত্রুটি সম্পর্কে তারা জানে এবং এটাও জানে যে উক্ত কাজ আল্লাহর শান ও মানে যেমনটা হওয়া উচিত তেমনটা তারা করতে পারেনি।... তাছাড়া আল্লাহ হাজীদের সর্বোত্তম কর্ম ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান’ শেষে ফিরে আসার পর ইসতিগফারের আদেশ দিয়েছেন। (মাদারিজুস সালেকীন, ১/৫২৪)। তাই সব ধরনের মজলিস শেষে উক্ত দু‘আটি পড়া উচিত। -আল্লাহই ভালো জানেন।

প্রশ্ন (৪০) : আমারছেলের রাগ অনেক বেশি। এই রাগ দমনের জন্য তার কপালে হাত রেখে ২১ দিন ফজর ছালাতান্তে ২১ বার ইয়া হাসিবু’ নামক তাসবীহ পাঠ করা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : নাসিরুদ্দীন

মন্ট্রিয়াল, কানাডা।

উত্তর : রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং রাগ হতে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাইতে হবে। তবে রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ফজরের ছালাতান্তে কপালে হাত রেখে ২১দিন ২১বার ‘ইয়া-হাসীবু’ নামক তাসবীহ পড়ার কোনো আমল ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন আমল। আর যে আমল কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয় তা অবশ্যই বর্জণীয়। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (দ্বীনের মধ্যে) এমন কোনো আমল করলে, যার ব্যাপারে আমার কোনো নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮)। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ পড়া সুন্নাত। সুলায়মান ইবনু সুরাদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একবার নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দুইজন ব্যক্তি একে অন্যকে গালি দিচ্ছিল। আমরাও তার কাছেই বসাছিলাম, তাদের একজন অপরজনকে এত রাগান্বিত হয়ে গালি দিচ্ছিল যে তার চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি একটি কালেমা জানি, যদি এ লোকটি তা পড়ত, তা হলে তার ক্রোধ চলে যেত। অর্থাৎ যদি লোকটি أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ পড়ত (ছহীহ বুখারী, হা/৬১১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬১০)। সুতরাং এমতাবস্থায় বেশি বেশি উক্ত দু‘আটি পড়তে পারে। এমন সন্তানের জন্য মাতা-পিতার উচিত আল্লাহর নিকট সন্তানের রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ চাইলে মাতা-পিতার দু’আর বিনিময়ে তার রাগ নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে।

প্রশ্ন (৪১) :হালাল রিযিক্বের জন্য কি কি দু‘আ পড়া যায়?

প্রশ্নকারী : রাহাত

মিরপুর, ঢাকা।

উত্তর : হালাল রিযিকের জন্য নিম্নোক্ত দু‘আগুলো পড়া যেতে পারে- ১. اللَّهُمَّ اكْفِنِى بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِى بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ তথা; হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের হতে মুখাপেক্ষীহীন করুন (তিরমিযী, হা/৩৯১১; সিলসিলা ছহীহা, হা/২৬৬)। ২. اللهم أَغْنِنَا بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنَا مِنْ فَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ তথা ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের আপনার হালালের মাধ্যমে হারাম থেকে মুক্ত রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাদের অন্যদের হতে মুখাপেক্ষীহীন করুন’ (জামেউল আহাদীছ, হা/২৭৪২৩)। ৩. اللهم إِنِّىْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً তথা ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, পবিত্র রিযিক্ব এবং গ্রহণীয় কর্ম কামনা করি (ইবনু মাজাহ, ৯২৫; মিশকাত, হা/২৪৯৮; সিলসিলা ছহীহা, হা/১৫১১)। এছাড়াও নিজ ভাষায় আল্লাহর নিকট রিযিক্বের জন্য দু’আ করা যায়।

ইবাদাত- দু’আ

প্রশ্ন (৪২) :রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরূদ পাঠ না করে দু‘আ করলে সেই দু‘আ নাকি আসমানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে এবং তা আল্লাহ তাআলার কাছে পৌঁছায় না’। কথাটি কি ঠিক? দু‘আকরার সঠিক পদ্ধতি কী?

প্রশ্নকারী : আব্দুল বাতেন

কোতোয়ালি, রংপুর।

উত্তর : হ্যাঁ; দু’আ করার পূর্বে দুরূদ না পড়া হলে বান্দার দু’আ আসমানে ঝুলন্ত থাকে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ (তিরমিযী, হা/৪৮৬)। দু‘আ করার সঠিক পদ্ধতি হলো- ১. পাপ কাজ ছেড়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে দু‘আ করা, ২. একনিষ্ঠতার সাথে দু’আ করা, ৩. আল্লাহর গুণবাচক নামের মাধ্যমে দু’আ করা, ৪. দু‘আর পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা করা, ৫. রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরূদ পড়া, ৬. কিবলামুখী হওয়া, ৭. হাত উত্তোলন করা, ৮. হাতের অভ্যন্তরীণ অংশ আকাশের দিকে হওয়া, ৯. দু‘আ কবুলের বিশ্বাস রাখা, ১০. আল্লাহর কাছে বেশি করে চাওয়া, ১১. দৃঢ়তার সাথে দু’আ করা, ১২. ভয় ও বিনয়ের সাথে দু‘আ করা, ১৩. হালাল খাওয়া ও পরিধান করা ও ১৪. দু‘আ নিম্নস্বরে করা। উক্ত নিয়মগুলো কুরআন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (আল-আ’রাফ, ১৮০)। 

জানাযা-মৃত্যু- দু- অছিয়ত

প্রশ্ন : (৪৩) গায়রেমাহরামআত্মীয়মারাগেলেসেইবাড়িতেমহিলাদেরযাওয়াযাবেকি?

প্রশ্নকারী : শারমিন

মহিষখোলা, নড়াইল সদর, নড়াইল।

উত্তর : যাওয়া যাবে না (ছহীহ বুখারী, হা/৩৭০০)। তবে বিশেষ প্রয়োজনে পর্দার সাথে যেতে পারে (ছহীহ বুখারী, হা/১২৫৪; মিশকাত, হা/১৬৩৪)।

প্রশ্ন : (৪৪) জনৈকব্যক্তিমারাযাওয়ারসময়মসজিদেরজন্যবিঘাজমিদেওয়ারঅসিয়তকরেযায়এবংশর্তকরেযায়যে, এই ৫ বিঘা জমির দায়িত্বে থাকবে তার সন্তানরা। এই শর্ত মসজিদ কমিটি মানতে না চাইলে ঐ জমি অন্য মসজিদে দেওয়া যাবে কী?

প্রশ্নকারী : ইমরান হুসাইন

গোপালগঞ্জ সদর।

উত্তর : জমিদাতা যেভাবে অছিয়ত করেছেন সেভাবেই অছিয়ত পূরণ করতে হবে। অতএব, শর্তানুসারে মসজিদ কমিটি জমি গ্রহণ না করলে জমি অন্য মসজিদে দেওয়া যাবে। কেননা মসজিদের সম্পদ মসজিদেই খরচ করতে হবে। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, উমার খায়বার যুদ্ধে (গনীমাতের) একখণ্ড জমি পেলেন। অতঃপর তিনি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি খায়বারে একখণ্ড জমি পেয়েছি, তার চেয়ে উত্তম সম্পদ আমি আর কখনো লাভ করিনি। হে আল্লাহর রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এখন আমাকে এতে কি করতে বলেন? তখন তিনি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি যদি চাও তবে এর মূলস্বত্ব রক্ষা করে লভ্যাংশ দান করে দিতে পার। তাই উমার মূলস্বত্ব রেখে দান করলেন যে, তার মূল বিক্রি করা যাবে না, হেবা (দান) করা যাবে না এবং তাতে উত্তরাধিকার প্রবর্তিত হবে না (ছহীহ বুখারী, হা/২৭৩৭)।

প্রশ্ন (৪৫) : শুনেছি যে, ‘কোনো মুসলিমের জানাযার ছালাতে যদি একশজন মুসলিম অংশগ্রহণ করে এবং তারা তার জন্য সুপারিশ করে তাহলে তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে’। তাই জানাযায় অধিক মুসলিমের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে মৃত্যু সংবাদ মাইকে প্রচার করা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : মোজাম্মেল হক্ব

রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ।

উত্তর : কারো জানাযায় একশতজন লোক শরীক হয়ে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাদের সুপারিশ কবুল করা হয় (নাসাঈ, হা/১৯৯২; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হা/৬৭৮৪)। ছহীহ মুসলিমের ৯৪৮ নং হাদীছে ৪০ জনের কথা এসেছে। উক্ত ফযীলত থাকা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরামের কাউকে মৃত্যু সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রচার করতে দেখা যায়নি। বরং জানাযার ছালাতের পূর্ব মুহূর্তে ৪০ জনের মতো লোক উপস্থিত হয়েছে কি না, এটা জানার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ৪০ জন লোক উপস্থিত হলেই সেটাকে তারা যথেষ্ট মনে করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর এক ছেলে কুদায়দ বা উসফান নামক স্থানে মারা গেলে তিনি খাদেম কুরায়ব রাহিমাহুল্লাহ-কে বললেন, দেখো তো কতজন লোক একত্রিত হয়েছে। কুরায়ব বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম কিছু লোক এসেছে। আমি তাকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, ৪০ জন হবে? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে জানাযা বের করো। কারণ আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলছে শুনেছি, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি মারা গেলে তার জানাযায় যদি এমন ৪০ জন লোক শরীক হয়, যারা আল্লাহর সাথে কোনো শিরক করেনি, তাহলে ঐ মায়্যেতের ব্যাপারে আল্লাহ তাদের সুপারিশ কবুল করবেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৪৮)। অতএব, অধিক লোকের উপস্থিতির আশায় মৃত্যু সংবাদ মাইকে প্রচার করা যাবে না। বরং মানুষের উপস্থিতির জন্য অপেক্ষা করতে পারে।

কুরআন-তাফসীর

প্রশ্ন (৪৬) :সূরা নিসার ১৫ নং আয়াত ও সূরা নূরের ২ নং আয়াতের মধ্যে বৈপরিত্ব পরিলক্ষিত হয়। বিষয়টির ব্যাখ্যা ও সমাধান কী?

প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান সৈকত

রামনগর, রায়পুরা, নরসিংদী।

উত্তর : আয়াতদ্বয়ের মাঝে কোনো বৈপরিত্ব নেই। সূরা নিসার ১৫ নং আয়াতে যেনাকারিণী নারী ও পুরুষকে আমৃত্যু গৃহবন্দী করে রাখার আদেশ প্রদান করা হয়েছে’ যা অস্থায়ী বিধান ছিল। কেননা মহান আল্লাহ উক্ত আয়াতের শেষে বলে রেখেছেন, أَوْ يَجْعَلَ اللهُ لَهُنَّ سَبِيْلًا ‘অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা (বিধান) করে দেন’। পক্ষান্তরে, সূরা নূরের ২নং আয়াতে অবিবাহিত যেনাকারী নারী-পুরুষকে একশত বেত্রাঘাত করার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তী বিধান। ইসলামের একটি মূলনীতি হলো পরবর্তী বিধান পূর্ববর্তী বিধানকে রহিত করে দেয়। সুতরাং সূরা নিসার ১৫নং আয়াতে ‘আমৃত্যু গৃহবন্দীর বিধান সূরা নূরের ২নং আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। উবাদা ইবনু ছামেত রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছ থেকে সমাধান গ্রহণ করো, তোমরা আমার কাছ থেকে সমাধান গ্রহণ করো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মহিলাদের জন্য একটি পথ বের করেছেন। যদি কোনো অবিবাহিত পুরুষ কোনো কুমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে, তবে একশত বেত্ৰাঘাত করো এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দাও। আর যদি বিবাহিত ব্যক্তি কোনো বিবাহিত মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে তাদেরকে প্রথমত একশত বেত্ৰাঘাত করবে, এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে। (ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৯০)।

জ্ঞান অর্জন

প্রশ্ন : (৪৭) আমিবিশ্ববিদ্যালয়েএকটিজেনারেলসাবজেক্ট-পড়াশোনাকরি।তবেবর্তমানেআমিদ্বীনিইলমঅর্জনকরতেচাই।কিন্তুএতেবাবা-মাঅসন্তুষ্ট।আমিকিতাদেরঅসম্মতিতেদ্বীনিজ্ঞানঅর্জন করতেপারি?

প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ আলী নাঈম

মান্দা, নওগাঁ

‍উত্তর : দ্বীনী ইলম অর্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। এই মর্মে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘দ্বীনী ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক। (ছহীহ ইবনু খুজায়মা, হা/২২৪; ছহীহুল জামে’, হা/৩৯১৩ ‘হাদীছ ছহীহ’)। পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় মহাপাপ। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الْكَبَائِرُ: الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَالْيَمِينُ الْغَمُوسُ ‘কবীরা গুনাহসমূহ হলো- আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৬৭৫; মিশকাত, হা/৫০)। মহান আল্লাহ তাঁর ইবাদতের পরপরই পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের উপদেশ দিয়েছেন (আল-ইসরা, ২৩)। অতএব, জ্ঞান অর্জনের জন্য পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া যাবে না। জ্ঞান অর্জনের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জ্ঞান অর্জন করা ভালো। তবে কেবল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জ্ঞান অর্জন করা যায় এমন ধারণা ঠিক নয়। বরং জ্ঞান অর্জনের অনেক পথ ও পন্থা রয়েছে। যেমন ইসলামী বই-পুস্তক বেশি বেশি অধ্যায়ন করা, নিজে লাইব্রেরি স্থাপন করা, অনলাইন বা অফলাইন সঠিক আক্বীদায় বিশ্বাসী আলেমদের দারস (ক্লাস) গ্রহণ করা, সঠিক আক্বীদায় বিশ্বাসী আলেমদের বক্তব্য শ্রবণ করা, প্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধান বিজ্ঞ মুফতিদের নিকট জেনে নেওয়া ইত্যাদি। সুতরাং পিতা-মাতাকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করার পরেও বোঝাতে ব্যর্থ হলে উল্লিখিত পথগুলো অনুসরন করে জ্ঞান অন্বেষণ করতে হবে। তবুও পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া যাবে না।

বিবিধ

প্রশ্ন : (৪৮) কোনদলীলেরভিত্তিতেহামযা রাযিয়াল্লাহু আনহুকেসাইয়্যিদুশ-শুহাদাবলাহয়েথাকে?

প্রশ্নকারী : নাঈম রহমান

সিদ্ধেশ্বরী, মেীচাক, ঢাকা।

উত্তর : স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযা রাযিয়াল্লাহু আনহু–কে সাইয়্যেদুশ শুহাদা উপাধিতে ভূষিত করেছেন। যাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, حَمْزَةُ سَيِّدُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট হামযা রাযিয়াল্লাহু আনহু সাইয়্যেদুশ শুহাদা (শহীদদের সর্দার) হবেন’ (মুস্তাদরাক হাকেম, হা/২৫৫৭; সিলসিলা ছহীহা, হা/৩৭৪)।

প্রশ্ন (৪৯) : নারী-পুরুষের সুগন্ধির মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর : পুরুষের সুগন্ধি হলো ঘ্রাণ ছড়াবে কিন্তু রঙ গোপন থাকবে। আর নারীর সুগন্ধি হলো রঙ প্রকাশ পাবে কিন্তু ঘ্রাণ ছড়াবে না/গোপন থাকবে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পুরুষের সুগন্ধি হলো যার ঘ্রাণ ছড়ায় কিন্তু রঙ প্রকাশ পায় না। আর মহিলার সুগন্ধি হলো যার রঙ প্রকাশ পায় কিন্তু ঘ্রাণ গোপন থাকে/ছড়ায় না’ (তিরমিযী, হা/২৭৮৭; নাসাঈ, হা/৫১১৭; মিশকাত, হা/৪৪৪৩)। মহিলাদের পরপুরুষের সামনে পর্দা করে চলা যেমন জরুরি তেমনি তাদের সামনে ঘ্রাণ প্রকাশ না করা জরুরি। বেপর্দা হয়ে চললে যেমন যেনা হয় তেমনি আতর, পারফিউম বা যেকোনো সুগন্ধি ব্যবহার করে পরপুরুষের সামনে গেলে যেনা হয়। আবূ মূসা আল-আশআরী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মহিলা যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো লোকদের সামনে দিয়ে যায় যাতে তারা তার সুগন্ধির ঘ্রাণ পায়, তাহলে সে যেনাকারিণী মহিলা’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৬২; নাসাঈ, হা/৫১২৬; আত-তারগীব, হা/২০১৯)। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মহিলা যদি মসজিদে যেতে চায়, তাহলে সে যেন সুগন্ধি থেকে সেভাবে গোসল করে নেয় যেভাবে সে নাপাকির গোসল করে থাকে’ (নাসাঈ, হা/৫১২৭; সিলসিলা ছহীহা, হা/১০১৩)। উল্লিখিত হাদীছদ্বয় থেকে বোঝা যায় যে, মহিলারা নারীসমাজে বা বাড়িতে স্বামীর সামনে যেমন খুশি তেমন সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে। আর স্বামী সঙ্গে থাকলেও সুগন্ধি ব্যবহার করে পরপুরুষের সামনে বাড়ির বাহিরে, রাস্তা-ঘাটে, দোকান-পাটে বা মার্কেটে যেতে পারবে না।

প্রশ্ন (৫০) :যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, প্রত্যেক মুসলিমের পরিবর্তে একটি করে ছওয়াব মহান আল্লাহ তার আমলনামায় লিখে দেন(তাবারানী, ৩/২৩৪ পৃ.)। হাদীছটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানাবেন।

প্রশ্নকারী : রাজীব রেজা

গোবিন্দপুর, নেত্রকোনা।

উত্তর : প্রশ্নে উল্লিখিত হাদীছটিকে ইমাম আলবানী রাহিমাহুল্লাহ ছহীহ বলেছেন (ছহীহুল জামে‘, হা/৬০২৬)।

Magazine