হিজরী সনের দ্বাদশ মাস হলো যিলহজ্জ মাস। এ মাসটি চারটি হারাম মাসের মধ্যে অন্যতম। এ মাসে হজ্জ আদায় করতে হয়। এ মাসের ৮ তারিখ থেকে হজ্জের মূল কার্যক্রম শুরু হয় আর এ মাসেই কুরবানী করতে হয়। এজন্য এই মাসের গুরুত্ব ও ফযীলত অনেক।
এ মাসের প্রথম ১০ রাত ও দিনের ফযীলত: এ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের ফযীলত সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ও ছহীহ হাদীছে অনেক আয়াত ও হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَيَالٍ عَشْرٍ ‘শপথ! ১০ রাতের’ (আল-ফাজর, ৮৯/২)। উক্ত ১০ রাত দ্বারা ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা, ক্বাতাদা, মুজাহিদসহ অন্যান্য মুফাসসিরের মতে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ রাত বোঝানো হয়েছে। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَا مِنْ أَيَّامٍ العَمَلُ الصَّالِحُ فِيهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ الأَيَّامِ العَشْرِ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلَا الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ ‘যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের নেক আমল করা আল্লাহর নিকট যত বেশি প্রিয় আর কোনো দিনের আমল তাঁর কাছে তত প্রিয় নয়’। ছাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদও নয়? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে তার জান ও মাল নিয়ে বের হয়ে গেছে; কিন্তু কোনো কিছু নিয়ে আসেনি’।[1]
অতএব, কুরআন ও হাদীছের দলীল দ্বারা জানা গেল যে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলসমূহ অন্যান্য দিনের আমলের তুলনায় অধিক উত্তম ও ফযীলতপূর্ণ। এই দিনগুলো হলো ছওয়াব অর্জনের মৌসুম। কাজেই এই সময়ে নফল আমল করার ব্যাপারে সকলকে আগ্রহী হতে হবে এবং পরস্পর প্রতিযোগিতা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ ‘তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে ও জান্নাতের দিকে’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৩)। মহান আল্লাহ আরও বলেন, فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ ‘অতএব, সৎকাজে তোমরা প্রতিযোগিতা করো’ (আল-মায়েদা, ৫/৪৮)।
নফল আমল দ্বারা পরকালে আমলের ওযনের পাল্লা ভারী হবে। যার সৎ আমলের পাল্লা ভারী হবে, সেই তো সফলকাম। মহান আল্লাহ বলেন,وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘সেদিন সঠিক ওযন করা হবে। যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৮)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ - فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ ‘অতঃপর যার পাল্লা ভারী হবে, সে (জান্নাতে) সুখী জীবন যাপন করবে’ (আল-ক্বারিআহ, ১০১/৬-৭)।
নফল আমলসমূহের গুরুত্ব ও ফযীলত: আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِنَّ اللَّهَ قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ: كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ المُؤْمِنِ، يَكْرَهُ المَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ ‘মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলীর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরয করেছি, তা দ্বারা আমার বান্দা যতটা আমার নিকটবর্তী হয়, আমার প্রিয় আর কোনো কিছুর দ্বারা ততটা নিকটবর্তী হতে পারে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে ভালোবাসি। যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোনো কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। যদি সে আমার কাছে (কোনো কিছু থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তাকে কষ্ট দিতে অপছন্দ করি’।[2]
এই দিনগুলোতে যেসব নফল আমল বেশি বেশি করা যায়:
বেশি বেশি যিকির-আযকার করা: যিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠা থেকে শুরু করে ১৩ তারিখের আছরের ছালাত আদায় পর্যন্ত যিকির, তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পাঠ করা। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি করে তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) এবং তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) পাঠ করো’।[3] আর এগুলো সর্বস্থানে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে ও উঁচু আওয়াজেও পড়া যায়।[4]
কিছু গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ, যা দৈনন্দিন নিয়মিত পড়া যায়:
(১) لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু‘আটি কোনো এক গ্রাম্য লোককে নিয়মিত পড়ার জন্য শিখিয়ে দেন।[5]
(২) ওযন ভারী করার জন্য سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ গুরুত্বপূর্ণ এই দু‘আটি পড়া।[6]
(৩) ভালো কাজে অগ্রগামী হওয়ার জন্য سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالحَمْدُ لِلَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর সবগুলোই ৩৩ বার করে পড়া।[7]
(৪) سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ (দিনে ১০০ বার পড়া)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার বলবে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়’।[8]
(৫) জান্নাতের ধনভাণ্ডার لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ যিকিরটি পড়া।[9]
(৬) لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (দিনে ১০০ বার পড়া)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের মধ্যে এই যিকিরটি ১০০ বার পড়বে, সে ১০টি গোলাম মুক্ত করার ছওয়াব লাভ করবে এবং তার জন্য ১০০ নেকী লেখা হবে আর তার ১০০ গুনাহ মাফ করা হবে। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং তার চেয়ে অধিক ছওয়াব আর কারো হবে না। তবে সে ব্যক্তি ছাড়া, যে এ আমল তার চেয়েও অধিক করবে’।[10]
(৭) দুটি বাক্য যা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়, উচ্চারণে হালকা, দাঁড়িপাল্লায় ভারী। তা হলো, سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ العَظِيمِ পড়া।[11]
(৮) আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি তথা سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ পড়া।[12]
(৯) আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সবচেয়ে বেশি পঠিতব্য দু‘আ তথা سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ পড়া।[13]
ক্ষৌরকর্ম থেকে বিরত থাকা: এ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি চুল, নখ, লোম ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকবে।[14]
এই দিনগুলোতে ফরয ছালাত সঠিকভাবে আদায়ের সাথে সাথে নফল ছালাতগুলো আদায় করা: আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,أَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلَاةُ اللَّيْلِ ‘ফরয ছালাতের পর সর্বোত্তম ছালাত হলো রাতের তাহাজ্জুদের ছালাত’।[15] রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ، تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ ‘মানুষ যখন ঘুমিয়ে যায়, তখন ছালাত আদায় করো, নিরাপদে জান্নাতে যাবে’।[16] এটা ছাড়াও ছালাতুল ইশরাক ও ছালাতুয যুহা আদায় করা।
ছিয়াম পালন করা: এ মাসের শুরু থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত নফল ছিয়াম রাখা উত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো এক স্ত্রী বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত ছিয়াম রাখতেন।[17] আমর ইবনে আবাসা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بَعُدَتْ مِنْهُ النَّارُ مَسِيرَةَ مِائَةِ عَامٍ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র ছিয়াম রাখবে, সেই ব্যক্তি থেকে জাহান্নাম ১০০ বছরের পথ পরিমাণ দূরে সরে যাবে’।[18] অন্য হাদীছে ৭০ বছরের কথাও বলা হয়েছে।[19]
যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে আরাফার দিনের ছিয়াম রাখার ফযীলত: আবূ ক্বাতাদা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ، وَالَّتِي بَعْدَهُ ‘আমি আল্লাহর নিকট আরাফা দিবসের ছিয়ামের ছওয়াব আশা করি যে, তিনি তার বিনিময়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন’।[20]
ছাদাক্বা করা: এই দিনগুলোতে বেশি বেশি ছাদাক্বা করা, যদিও তা পরিমাণে কম হয়। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ ‘তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন আর তিনি উত্তম রিযিক্বদাতা’ (সাবা, ৩৪/৩৯)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ ‘তোমরা যা কিছু ধনসম্পদ দান করো, তা নিজেদের জন্যই। আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তোমরা দান করো না আর তোমরা যা দান করো, তার পুরস্কার পরিপূর্ণভাবে প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলম করা হবে না’ (আল-বাক্বারা, ২/২৭২)। আবি ইবনে হাতিম রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো, যদিও খেজুরের এক টুকরো ছাদাক্বা করে হয়’।[21] আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, سَبَقَ دِرْهَمٌ مِائَةَ أَلْفِ دِرْهَمٍ قَالُوا: وَكَيْفَ؟ قَالَ: كَانَ لِرَجُلٍ دِرْهَمَانِ تَصَدَّقَ بِأَحَدِهِمَا، وَانْطَلَقَ رَجُلٌ إِلَى عُرْضِ مَالِهِ، فَأَخَذَ مِنْهُ مِائَةَ أَلْفِ دِرْهَمٍ فَتَصَدَّقَ بِهَا ‘এক দিরহাম এক লক্ষ দিরহাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’। এক ব্যক্তি বললেন, তা কী করে হয়, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, ‘এক ব্যক্তির প্রচুর মাল আছে, সে তার এক অংশের দিকে যায় অতঃপর এক লক্ষ দিরহাম দান করে আর অন্য এক ব্যক্তি মাত্র দুই দিরহামের মালিক, সে তা হতেই এক দিরহাম দান করে’।[22]
বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা এবং তা খতম দেওয়া: মহান আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল! বলুন, আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি) وَأَنْ أَتْلُوَ الْقُرْءَانَ ‘কুরআন তেলাওয়াত করতে’ (আন-নামল, ২৭/৯২)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনুল মাজীদ-এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তার একটি ছওয়াব হবে আর একটি ছওয়াব ১০টি ছওয়াবের সমান হয়। আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ; বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ’।[23] আবূ উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ ‘তোমরা কুরআন পাঠ করো। কেননা ক্বিয়ামাতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসেবে আগমন করবে’।[24]
বেশি বেশি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও দু‘আ করা: আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে বলেন, أُدْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব’ (আল-মুমিন, ৪০/৬০)। তিনি আরও বলেন, أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَان ‘আমি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে আহ্বান করে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৬)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ ‘দু‘আ হলো ইবাদত’।[25] তিনি আরও বলেছেন, مَنْ لَمْ يَدْعُ اللَّهَ سُبْحَانَهُ، غَضِبَ عَلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে ডাকে না, তিনি তার ওপর ক্রুদ্ধ হন’।[26] তিনি আরও বলেন, إِنَّ اللَّهَ حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي إِذَا رَفَعَ الرَّجُلُ إِلَيْهِ يَدَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا خَائِبَتَيْنِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক লজ্জাশীল ও সম্মানিত। বান্দা তাঁর দিকে দুই হাত উঠিয়ে কিছু চাইলে বঞ্চিত করে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন’।[27]
উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, যিলহজ্জ একটি মহিমান্বিত ও সম্মানিত মাস। এ মাস আমাদের নিকট ছওয়াবের ফল্গুধারা নিয়ে আগমন করে। আমাদের উচিত এ মাসের যথাযথ মূল্যায়ন করা। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
[1]. আবূ দাঊদ, হা/২৪৩৮; তিরমিযী, হা/৭৫৭, হাদীছ ছহীহ।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫০২।
[3]. আহমাদ, হা/৬১৫৪।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৬৯।
[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৬।
[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২৬।
[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৮৪৩।
[8]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪০৫।
[9]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪০৯।
[10]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪০৩।
[11]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৬৩।
[12]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১৩৭।
[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৮৪।
[14]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৭।
[15]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬৩।
[16]. ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩৪, হাদীছ ছহীহ।
[17]. আবূ দাঊদ, হা/২৪৩৭, হাদীছ ছহীহ।
[18]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৮৮; আল-মু‘জামুল আওসাত, হা/৩২৪৯।
[19]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫৩।
[20]. ইবনু মাজাহ, হা/১৭৩০, হাদীছ ছহীহ।
[21]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪১৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৯৪।
[22]. নাসাঈ, হা/২৫২৭; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮৮৩।
[23]. তিরমিযী, হা/২৯১০, হাদীছ ছহীহ।
[24]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৪।
[25]. তিরমিযী, হা/২৯৬৯, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/২২৩০।
[26]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৮২৭, হাসান।
[27]. তিরমিযী, হা/৩৫৫৬, হাদীছ ছহীহ।