কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আল্লাহর ভালোবাসা লাভের উপায়

আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ, কল্যাণ ও পুণ্য লাভের সংক্ষিপ্ত ও সহজতম পথ হলো আল্লাহর মাখলূক্বের প্রতি—বিশেষ করে মানুষের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে তাঁর বান্দাদেরকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বান্দার সহযোগিতায় রত থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকেন’।[1]

উপরে বর্ণিত হাদীছটি দ্বারা বোঝা যায়, কেউ আল্লাহর কোনো বান্দাকে সাহায্য করলে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করেন। সুতরাং আমাদের সবার উচিত জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে প্রয়োজনে সাহায্য করা। আর আল্লাহ তাআলার বান্দাদেরকে সাহায্য-সেবা করার মাধ্যমে আল্লাহর সেবা করা হয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি!’ সে বলবে, ‘হে আমার প্রভু! আমি কীভাবে আপনাকে দেখতে যাব, অথচ আপনি জগৎসমূহের প্রতিপালক?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি তো জেনেছিলে যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, তবুও তুমি তাকে দেখতে যাওনি! তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তবে আমাকে তার কাছে পেতে?’ ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি!’ সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি কীভাবে আপনাকে খাদ্য দিব, অথচ আপনি জগৎসমূহের প্রতিপালক?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি তো জেনেছিলে যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাদ্য দাওনি! তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে খাদ্য দিতে, তবে আমার নিকট তা পেতে?’ ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি দাওনি!’ সে বলবে, ‘হে আমার প্রভু! আমি কীভাবে আপনাকে পানি পান করতে দিব, অথচ আপনি জগৎসমূহের প্রভু?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি তো জেনেছিলে যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি দাওনি! তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে তবে আমার নিকট তা পেতে?’[2]

আলোচ্য হাদীছটি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বান্দাকে সেবা করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা পাওয়া যায়। এজন্য প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির করণীয় হলো মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করা, সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করা, মানবকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে সর্বদা সম্পৃক্ত রাখা, মানুষের উপকার করতে না পারলে অন্তত ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব ছাদাক্বা করা’। ছাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি কারও দান করার মতো কিছু না থাকে?’ তিনি বললেন, ‘সে নিজ হাতে উপার্জন করবে। অতঃপর সে তার মাধ্যমে নিজে উপকৃত হবে এবং অন্যকে দান করবে’। ছাহাবীগণ বলেন, ‘হে আল্লার রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি সে তাও করতে সক্ষম না হয়? তিনি বলেন, ‘তাহলে সে সাহায্যপ্রার্থী অভাবী মানুষকে সহযোগিতা করবে’। ছাহাবীগণ বলেন, ‘হে আল্লার রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি সে তাও করতে সক্ষম না হয়? তিনি বলেন, ‘তাহলে সে ভালো কাজ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। এটাও তার জন্য দান-ছাদাক্বা বলে গণ্য হবে’।[3]

জনকল্যাণমূলক কাজে দান করার গুরুত্ব অপরিসীম। কারও নিকট দান করার মতো অর্থ-সম্পদ না থাকলে, সে প্রয়োজনে নিজ হাতে উপার্জন করে হলেও দান-ছাদাক্বা করবে। মানুষের কোনো উপকার সাধন করতে না পারলে অন্তত কারও ক্ষতি করা সমীচীন নয়। আর সাহায্য-সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে ইয়াতীম, বিধবা ও সমাজের দুর্বল শ্রেণির মানুষদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কারণ সমাজের এ দুর্বল শ্রেণিগুলোর সেবা ও অধিকার রক্ষার চেষ্টার জন্য রয়েছে বিশেষ ছওয়াব ও মর্যাদা। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইয়াতীমের রক্ষণাবেক্ষণ বা লালনপালন করে, সে আমার সাথে পাশাপাশি জান্নাতে থাকবে’— একথা বলে তিনি মধ্যমা ও তর্জনীকে পাশাপাশি রেখে দেখান’।[4]

আমাদের সমাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইয়াতীমদেরকে শুধু ঠকানোর ফন্দিফিকির করা হয়। তাদের সম্পদ কীভাবে গ্রাস করা যায়—এমন চিন্তা অনেকের মাথায় থাকে। ইয়াতীমের লালনপালন, তাদের স্বার্থ রক্ষার কাজ করা কত ছওয়াব ও মর্যাদার কাজ, তা আমরা বুঝি না বা বুঝতে চেষ্টা করি না। অথচ ইয়াতীমের লালনপালনকারী, সাহায্য-সহযোগিতাকারী স্বয়ং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জান্নাতে পাশাপাশি থাকবেন। আর বিধবা, অসহায়-দরিদ্র সমাজের এরূপ অবহেলিত মানুষের কল্যাণ সাধন ও স্বার্থ রক্ষার কাজ করা অত্যন্ত ছওয়াবের কাজ। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বিধবা ও দরিদ্রদের স্বার্থ সংরক্ষণ বা কল্যাণের জন্য চেষ্টারত মানুষ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত, বিরামহীন তাহাজ্জুদ আদায়কারী এবং অবিরত ছিয়াম পালনকারী ব্যক্তির ন্যায়’।[5]

যিনি বিধবা ও দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করেন, তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের কাজ করেন, তিনি অকল্পনীয় ছওয়াব লাভ করেন। একজন মানুষ আল্লাহর পথে জিহাদ করে, বিরামহীন (নিয়মিত) তাহাজ্জুদ আদায় করে, অবিরত ছওম পালন করে যতটা ছওয়াব লাভ করেন, ঠিক ততটা ছওয়াব ও মর্যাদা লাভ করেন— যিনি বিধবা ও দরিদ্র মানুষের স্বার্থ রক্ষার কাজ করেন। মানবকল্যাণমুখী কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখা একটি মহৎ কাজ। যা মানুষকে বিপদাপদ ও অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানবকল্যাণমুখী কর্ম বিপদাপদ ও অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে, গোপন দান আল্লাহর ক্রোধ নির্বাপিত করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা আয়ু বৃদ্ধি করে’।[6]

আমরা সমাজে বসবাস করি। অনেক সময় সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে পরস্পরে বিবাদ বা অশান্তি সৃষ্টি হয়। তখন আমাদের উচিত শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হতে পারো’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১০)

দুজন ব্যক্তির মাঝে মীমাংসা করে দেওয়াকেও হাদীছে ছাদাক্বা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দুজন মানুষের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে ন্যায়-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা দান বলে গণ্য, কোনো মানুষকে তার বাহনে উঠতে সাহায্য করা ছাদাক্বা, কারও বাহনে তার জিনিসপত্র তুলে দেওয়া দান বলে গণ্য, সুন্দর আনন্দদায়ক কথা দান বলে গণ্য, মসজিদে গমনের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ দান বলে গণ্য এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক দ্রব্য সরিয়ে দেওয়া দান বলে গণ্য’।[7]

টাকা-পয়সা দিয়েই শুধু মানুষের উপকার করা যায়, বিষয়টা এমন নয়। একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষের নিকট একটুখানি সান্ত্বনার বাণী শোনানো, সুন্দর আনন্দদায়ক কথার মাধ্যমে কারও মুখে হাসি ফোটানো বা সুন্দর পরামর্শ দিয়ে কারও কষ্ট বা উৎকণ্ঠা দূর করা একটা বড় উপকার। যা টাকা-পয়সার মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায় না। আমাদের সকলের উচিত সাধ্যানুযায়ী মানুষের উপকার করা, বিপদের সময় পাশে বসে সান্ত্বনা দেওয়া— এগুলো মহত্ত্বেরই পরিচায়ক। আর আল্লাহ তাআলার নিকট সেই সব বান্দাই সবচেয়ে প্রিয়, যারা মানুষের উপকার করে। আমাদের প্রিয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি প্রিয়, যে মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকার করে। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নেক আমল হলো কোনো মুসলিমের হৃদয়ে আনন্দ প্রবেশ করানো অথবা তার বিপদ-কষ্ট বা উৎকণ্ঠা দূর করা অথবা তার ঋণ আদায় করে দেওয়া অথবা তার ক্ষুধা নিবারণ করা। আমার কোনো ভাইয়ের কাজে তার সাথে একটু হেঁটে যাওয়া আমার কাছে এই মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে নববীতে এক মাস ই‘তিকাফ করার চেয়েও বেশি প্রিয়। যে ব্যক্তি তার ক্রোধ সংবরণ করবে, আল্লাহ তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। কেউ নিজের ক্রোধ কার্যকর করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তা সংবরণ করবে, ক্বিয়ামতের দিন মহিমাময় আল্লাহ তার অন্তরকে নিরাপত্তা ও সন্তুষ্টি দিয়ে ভরে দিবেন। যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের সাথে গিয়ে তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবে, ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে, যেদিন পুলছিরাতের উপরে সকলের পা পিছলে যাবে— আল্লাহ তার পা সুদৃঢ় রাখবেন। সিরকা বা ভিনেগার যেমন মধু নষ্ট করে দেয়, তেমনিভাবে অসৌজন্যমূলক আচরণ মানুষের নেক কর্ম বিনষ্ট করে দেয়’।[8]

আল্লাহর বান্দার সেবা করার চেয়ে তার নিকট প্রিয়তর কর্ম আর কিছুই নেই। কেউ যদি রাস্তা হতে কষ্টদায়ক কিছু সরিয়ে দেয়, এই একটি মাত্র কাজ তার সারা জীবনের ছগীরা গুনাহগুলো মাফ হওয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে, হতে পারে তার জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাস্তা চলতে চলতে একটি কাঁটাওয়ালা ডাল দেখতে পায়। সে ডালটি সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তার এ কাজ কবুল করেন এবং তাকে মাফ করে দেন’।[9] অন্য একটি হাদীছে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি কেউ রাস্তা থেকে একটি পাথর সরিয়ে দেয়, তবে তার আমলনামায় একটি নেকী লেখা হয়। আর যদি কারও একটি নেকীও কবুল হয়ে যায়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[10]

যারা মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ বা অমায়িক ব্যবহার করেন, মানুষ যেমন তাদেরকে ভালোবাসে, ঠিক তেমনি আল্লাহ তাআলাও তাদের ভালোবাসেন। এই সুন্দর আচরণের মাধ্যমে মানুষ কল্যাণ লাভ করে থাকে এবং এর দ্বারা আয়ু বৃদ্ধি হয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি কেউ বিনম্রতা ও নম্র আচরণ লাভ করে, তাহলে সে দুনিয়া ও আখেরাতে পাওনা সকল কল্যাণই লাভ করল আর রক্ত সস্পর্কীয় আত্মীয়স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং সুন্দর আচরণ বাড়িঘর ও জনপদে বরকত দেয় এবং আয়ু বৃদ্ধি করে’।[11]

মানুষের সাথে সুন্দর আচরণের মধ্য দিয়ে নফল ছওম ও তাহাজ্জুদ ছালাতের ছওয়াব লাভ করা যায়। শুধু তাই নয়, এটি হবে দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারী আমল। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহ ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল ছওম ও তাহাজ্জুদের ছওয়াব লাভ করে’।[12]

সুন্দর আচরণ দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারী আমল এবং এর দ্বারা নফল ছওম ও তাহাজ্জুদের ছওয়াব লাভ করা যায়। তাই তো সুন্দর আচরণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে। হাদীছে নববীতে এসেছে, ‘যে আমল মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে, তা হলো আল্লাহর ভয় এবং সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে, তা হলো মুখ এবং যৌনাঙ্গ’।[13]

আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা লাভ করতে হলে মানুষের সাথে সদাচরণ করতে হবে। এ সদাচরণই হলো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার সহজ পথ। তাই তো যারা আল্লাহর বান্দাদের সাথে সুন্দর আচরণ করবে, তারা জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু মাক্বামে স্থান লাভ করবে। প্রিয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিজের মতামত সঠিক হওয়া সত্ত্বেও যে বিতর্ক পরিত্যাগ করে, আমি তার জন্য জান্নাতের পাদদেশে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। আর যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা পরিহার করে, হাসি-তামাশাচ্ছলেও মিথ্যা বলে না, তার জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। আর যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি’।[14]

সুধী পাঠক! আমরা অনেকে নফল ছালাত, নফল ছওম, যিকির, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি ইবাদতের ছওয়াব সম্পর্কে যতটুকু সচেতন, মানবসেবার ফযীলত, গুরুত্ব ও ছওয়াব সম্পর্কে আমরা মোটেও সচেতন নই। অথচ আল্লাহর বান্দাদের সেবা ও তাদের সাথে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে পাওয়া যায়। আর এটি আল্লাহ তাআলাকে পাওয়ার সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথও বটে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মানবসেবামূলক কাজে নিয়োজিত থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

মিজানুর রহমান

প্রভাষক (আরবী), মহিমাগঞ্জ আলিয়া কামিল মাদরাসা, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা।


[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০০; তিরমিযী, হা/১৪২৫।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৯; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৬৯।

[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০০৮।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০০৫; মিশকাত, হা/৪৭৩৫।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০০৭; মিশকাত, হা/৪৭৩৪।

[6]. হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৩/১১৫।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৮৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১০০৯।

[8]. ত্ববারানী, আল-মু‘জামুল আওসাত, হা/৬০২৬; ছহীহুল জামে‘, হা/১৭৬।

[9]. ছহীহ বুখারী হা/২৪৭২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯১৪।

[10]. ত্ববারানী, হা/১৯৮; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান, হা/১১১৭৪; ছহীহুল জামে‘, হা/৬২৬৫।

[11]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৫২৫৯; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫২৪।

[12]. তিরমিযী, হা/২০০৩; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৯৯।

[13]. তিরমিযী, হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৪৬।

[14]. আবূ দাঊদ, হা/৪৭০০; ছহীহুল জামে‘, হা/১৪৪৬।

Magazine