কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

যৌবনকাল

যৌবনকালকে মানবজীবনের বিভিন্ন পর্যায়সমূহের মাঝে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়। মানুষ একের পর এক স্তরে পদার্পণ করে। যেসব পর্যায়গুলো সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে মহান আল্লাহর এই বাণীতে:لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍ ‘অবশ্যই তোমরা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে আরোহণ করবে’ (আল-ইনশিক্বাক্ব, ৮৪/১৯)। আর বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে মহান আল্লাহর এই বাণীতে:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِنْ مُضْغَةٍ مُخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِنُبَيِّنَ لَكُمْ وَنُقِرُّ فِي الْأَرْحَامِ مَا نَشَاءُ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ وَمِنْكُمْ مَنْ يُتَوَفَّى وَمِنْكُمْ مَنْ يُرَدُّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِنْ بَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا

‘হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহে থাক; তবে (জেনে রাখো), আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে, তারপর শুক্রাণু হতে, তারপর আলাক্বাহ (রক্তপিণ্ড) হতে, তারপর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূর্ণাকৃতির গোশতপিণ্ড হতে, যাতে আমরা বিষয়টি তোমাদের কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করি। আর আমরা যাকে ইচ্ছা তাকে এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, তারপর যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারও কারও (ত্বরিত) মৃত্যু ঘটানো হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে অতিবার্ধক্যে উপনীত করা হয়, যাতে সে (একসময়) জানার পর কিছুই না জানে’ (আল-হজ্জ, ২২/৫)

আর এ যৌবনকাল আসে দুর্বল শৈশব ও বার্ধক্যের দুর্বল দুটি পর্যায়ের সময়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةً يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ

‘আল্লাহ, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বলতা থেকে, দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দেন, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন’ (আর-রূম, ৩০/৫৪)। 

যৌবনকাল পরিণত বয়সে পৌঁছার সময়কাল, এই সময়কালটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই কারণেই প্রত্যেক যুবকের উচিত এই সময়কালের অবস্থানের প্রতি লক্ষ রাখা, এর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করা এবং এই সময়কালকে শরীআতের লাগামে শৃঙ্খলিত করা। মূল্যায়ন করা ও গুরুত্ব দেওয়া, যৌবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা। কেননা যুবকদের মাঝে সাধারণত নির্বুদ্ধিতা, অস্থিরতা, তাড়াহুড়া ও উদ্দীপনা কাজ করে থাকে। যদি কোনো যুবক শায়খ-মাশায়েখের সাহচর্য গ্রহণ না করে, জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শ গ্রহণ না করে তাহলে সে যুবক তার যৌবনকালে নিজেকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে ফেলবে। অনেক যুবক নিজের অস্থিরতা, তাড়াহুড়া ও নির্বুদ্ধিতার কারণে নিজেকে এবং অন্যদেরকে ধ্বংস করেছে। এজন্য শরীআতে এ সময়কে যথাযথ মূল্যায়ন করা ও গুরুত্ব দেওয়ার প্রতি এবং সঠিক ব্যবহার করা ও অপচয় থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এজন্য এই সময়কালের ভয়াবহতা, গুরুত্ব, এটাকে কাজে লাগানোর আবশ্যকতা, এটাকে নষ্ট বা অবহেলা না করার ব্যাপারে সতর্কীকরণ হিসেবে অনেক দলীলাদি বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম হাকেম রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় গ্রন্থ মুসতাদরাকে হাকেমে উল্লেখ করেছেন, ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, যখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘পাঁচটি জিনিস আসার পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে মূল্যায়ন করো: বার্ধক্য আসার আগে তোমার যৌবনকালকে, অসুস্থতার আগেই তোমার সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের আগেই তোমার সম্পদকে, ব্যস্ততার আগেই তোমার অবসরকে এবং মৃত্যুর আগেই তোমার জীবনকে’।[1] এখানে তিনি প্রথমেই যৌবনকাল উল্লেখ করেছেন এবং এই সময়টি কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন তা নষ্ট করা থেকে সতর্ক করার অভিপ্রায়ে।

এমনকি অন্য এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ক্বিয়ামতের দিন মানুষ যখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন তাকে তার পুরো জীবনকাল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে এবং বিশেষভাবে তার যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ.

‘ক্বিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় তার প্রতিপালকের নিকট হতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কোথায় সে তা অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কী কাজে তা শেষ করেছে? তার ধনসম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা খরচ করেছে এবং সে যা জ্ঞান অর্জন করেছিল সেক্ষেত্রে সে কী আমল করেছে’।[2]

এখানে যৌবনকাল সম্পর্কে আলাদা করে প্রশ্ন করা হবে, যদিও এটি পুরো জীবনকালেরই একটি অংশ। এখান থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে, যৌবনকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। কাজেই যাকে তার পুরো জীবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তাতে তার যৌবনকাল অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে যৌবনকালের গুরুত্ব ও ভয়াবহতার বিবেচনায় ক্বিয়ামতের দিন এই সম্পর্কে খাছ করে প্রশ্ন করা হবে।

আর একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি, যিনি জানেন যে, তাকে তার যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, তার জন্য আবশ্যক হলো উক্ত প্রশ্নের জবাব প্রস্তুত করা আর সেই জবাব যেন সঠিক হয়, যাতে সে মহান দিবসে মুক্তি পেতে পারে।

বর্তমান সময়ে যুবকদের বিশেষভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। তাদের চিন্তাভাবনা, নীতি-নৈতিকতা এমনকি ধর্মীয় ক্ষেত্রে কঠিনভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। সর্বদিক থেকে বিভিন্ন উপায়ে মন্দ যুবকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, যা অতীতে কখনো ছিল না, সেগুলো যুবকদের মনন, নৈতিকতা ও আক্বীদা-বিশ্বাসে বিপদের কারণ হয়ে উঠছে।

কাজেই যুবক যদি নিজেকে শরীআতের লাগামে শৃঙ্খলিত না করে, আল্লাহর সাথে উত্তম সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সংরক্ষিত না করে, আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা না রাখে, দ্বীনের ফরযসমূহ ও শরীআতের ওয়াজিবসমূহের ব্যাপারে যত্নবান না হয়, অকল্যাণকর বিষয় থেকে দূরে না থাকে; তবে নিশ্চয়ই তাকে ছোঁ মেরে তুলে নেওয়া হবে, সে সেটা অনুধাবন করুক বা না করুক।

এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর এবং পরিস্থিতি ভীষণ শঙ্কাজনক। কত ভয়ানক বিপর্যয়ই না আঘাত হেনেছে আমাদের চিন্তা-চেতনায়, মানসিকতায়, নৈতিকতায় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনেক যুবক কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে! এই বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজন সুদৃঢ় সুরক্ষা, নিরলস প্রচেষ্টা এবং খারাপ প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা। আর এসব অনিষ্ট থেকে একমাত্র ত্রাণকর্তা হলেন মহান আল্লাহ।

যেসব খারাবি যুবসমাজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তা মূলত দুটি ভয়াবহ দিককে কেন্দ্র করে কাজ করে— ১. শাহওয়াত বা প্রবৃত্তির মোহ এবং ২. শুবূহাত বা সন্দেহের ফাঁদ।

শাহওয়াত বা প্রবৃত্তির মোহ এর দিক থেকে বলতে গেলে, ভোগবিলাস ও অশান্তির পথপ্রদর্শকরা এ ক্ষেত্রে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা যুবসমাজকে নৈতিক অবক্ষয়ের গভীর গহ্বরে এবং দুর্নীতির অন্ধকার প্রান্তরে প্রলুব্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَيُرِيدُ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الشَّهَوَاتِ أَنْ تَمِيلُوا مَيْلًا عَظِيمًا ‘যারা কামনাসমূহের অনুসরণ করে তারা চায় যাতে তোমরা (সঠিক পথ থেকে) ভীষণভাবে বিচ্যুত হও’ (আন-নিসা ৪/২৭)। 

অন্যদিকে সংশয় ও সন্দেহের মাধ্যমে ভ্রান্ত চিন্তা এবং ধর্মের নামে বাড়াবাড়ির প্রবণতা তৈরি করা হয়, যার সাথে আল্লাহর দ্বীনের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক যুবক এই ভ্রান্ত চিন্তাধারার শিকার হয়ে নিজেকে এবং অন্যদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। অনেক যুবক এই এই ধরনের চিন্তা-দর্শনে নিপতিত হয়ে নানান অপরাধ ও ভয়ানক কাজ করে নিজেকে ও অন্যকে ধ্বংস করেছে। বড় বিপদের বিষয় হলো সে অজ্ঞানতাবশতা দ্বীনের দিকে এমন কিছুকে সম্পর্কিত করে, যা থেকে দ্বীন ইসলাম সম্পূর্ণরূপে মুক্ত।

কিছু যুবকের মাঝে উভয়বিধ বিপদ একত্রিত হয়, ফলে সে প্রথমত মাদকাসক্ত হয়, চূড়ান্ত পরিণতিতে সে নিজেকে এবং নিরপরাধ অনেক মানুষকে নিয়ে সে চূড়ান্ত ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ ঘটায়।

কাজেই আমরা যেন নিজেদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করি, এবং আমরা যেন তাঁকে এমন ব্যক্তির মতো পর্যবেক্ষণ করি, যিনি জানেন যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন ও তার কথা শুনছেন, আমরা যেন আমাদের আত্মার সংশোধনে কাজ করি, যুবক যেন আল্লাহর দ্বীন মেনে চলা, সঠিক পথে দৃঢ় থাকা এবং সকল প্রকার অবক্ষয় ও অকল্যাণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা প্রভৃতির মাধ্যমে তার যৌবন সংরক্ষণে ও এসব অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য কাজ করে। এজন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করে এবং তাঁর সাহায্য ও মদদ কামনা করে। কারণ আল্লাহ ছাড়া কোনো রক্ষাকারী নেই। 

হে তাওফীক্বপ্রাপ্ত যুবক! এই উপদেশগুলো তোমার প্রতি একজন হৃদয়বান ও আন্তরিক বন্ধুর পরামর্শ। যদি তুমি এগুলো মেনে চল, তবে তা তোমার মুক্তি ও সফলতার কারণ হবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তোমার জন্য সুখ বয়ে আনবে।

হে যুবক! তোমার উচিত সর্বদা নিজের যৌবনকে রক্ষা করা এবং সব ধরনের অকল্যাণ ও অবক্ষয় থেকে দূরে থাকা। এজন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, তাঁর ওপর ভরসা করো এবং সব ধরনের খারাপ ও ক্ষতিকর কাজের পথ এড়িয়ে চলো এবং এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সতর্ক থাকা জরুরী।

তোমার জন্য আরও জরুরী হলো ইসলামের ফরযগুলো ও ধর্মীয় দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করা, বিশেষ করে ছালাতের প্রতি মনোযোগী হওয়া। কেননা ছালাত তোমাকে খারাবি থেকে রক্ষা করবে এবং অন্যায় ও মিথ্যা থেকে দূরে রাখবে। ছালাত ভালো কাজের সহায়ক এবং প্রতিটি খারাপ ও মিথ্যা কাজ থেকে বিরত রাখে।

তোমার আবশ্যক হলো, জ্ঞানী ও শায়খদের নিকটবর্তী হওয়া, তাদের কথা শোনা, তাদের নির্দেশনা মেনে চলা, তাদের জ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়া এবং তোমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তাদের পরামর্শ নেওয়া।

এছাড়াও তোমার ওপর আবশ্যক হলো আল্লাহ তোমার ওপর যা বাধ্যতামূলক করেছেন তা পালন করা। যেমন: শাসকের কথা শ্রবণ করা, তার আনুগত্য করা। কেননা এতে রয়েছে সুরক্ষা ও মুক্তি। পক্ষান্তরে নেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং আনুগত্য ত্যাগ করা বিপদ ও ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনে না।

হে যুবক! দিনরাতে আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষা করো। সকাল ও সন্ধ্যায়, ছালাতের পরে, ঘরে ঢোকার ও বের হওয়ার সময়, বাহনে চড়া প্রভৃতি কাজের সময় নির্ধারিত যিকিরগুলো পাঠ করো। কারণ আল্লাহর যিকির শয়তান থেকে রক্ষা করে এবং দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ থেকে সুরক্ষিত রাখে। 

তোমার উচিত প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করা, যাতে তোমার হৃদয় শান্তি পায়। কারণ আল্লাহর কিতাব হৃদয়কে শান্তি দেয় এবং এটি দুনিয়া ও আখেরাতে সুখের কারণ। আল্লাহ বলেন,الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয়; জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়’ (আর-রা‘দ, ১৩/২৮)

হে যুবক! তোমার জন্য আবশ্যক হলো আল্লাহর কাছে দু‘আ করা, যাতে তিনি তোমাকে সত্য ও সঠিক পথে দৃঢ় রাখেন এবং সব ধরনের অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন। কারণ দু‘আ দুনিয়া ও আখেরাতের প্রতিটি কল্যাণের চাবিকাঠি।

হে যুবক! তোমার উচিত ভালো মানুষের সঙ্গ গ্রহণ করা এবং মন্দ ও বিপথগামীদের থেকে দূরে থাকা। কারণ দুষ্টদের সঙ্গ সর্বনাশ ডেকে আনে।

হে যুবক! তোমার জন্য আবশ্যক হলো, বর্তমান যুগে এমন মাধ্যম বিশেষ করে ইন্টারনেট, যা যুবকদের জন্য ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক থাকা, যাতে তোমার দ্বীন সুরক্ষিত থাকে এবং তুমি অকল্যাণ থেকে নিরাপদ থাক। কারণ নিরাপত্তা ও সুস্থতা এক অমূল্য সম্পদ।

হে যুবক! তোমার সর্বদা মনে রাখা জরুরী যে, একদিন তুমি আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে এবং তিনি তোমার যৌবন কীভাবে কাটিয়েছ তা নিয়ে প্রশ্ন করবেন। আল্লাহ বলেন,قَالُوا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِي أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ - فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُومِ ‘তারা বলবে, নিশ্চয় আগে আমরা আমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে শঙ্কিত অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন’ (আত-তূর, ৫২/২৬-২৭)

আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করি যে, তিনি যেন তোমাকে তাঁর সৎ বান্দাদের মতো হেফাযত করেন- আমীন!

কুল্লিয়্যাহ ২য় বর্ষ, মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবীয়া, উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

মূল: শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল মুহসিন আল-বদর

অনুবাদ: মাহফুজুর রহমান বিন আব্দুস সাত্তার


[1]. মুসতাদরাক হাকেম, ৪/৬০৩; ছহীহুল জামে‘, হা/১০৭৭।

[2]. তিরমিযী, হা/২৪১৬।

Magazine