কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সফলতার সূত্র

post title will place here

আপনার হৃদয়জুড়ে রাজ্যের হাপিত্যেশ, চোখে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু আর বুকভরা দীর্ঘশ্বাস। দিনের পর দিন এত কষ্ট করার পরও আপনি সফলতার ছোঁয়া পাচ্ছেন না, এত সংগ্রাম করার পরও ব্যর্থতাই আপনার নিত্যসঙ্গী।

কিন্তু কেন? কেন এমন হয়? এত কিছুর পরও কেন সফলতা আমাকে ধরা দেয় না? এই প্রশ্নটা আমাদের অনেকের।

প্রতিদিন রাত জেগে জেগে পড়ালেখা করার পরও হয়তো আপনার নামটা মেরিট লিস্টে আসেনি অথবা দিনের পর দিন পরিশ্রম করার পরও হয়তো আপনার ব্যবসায় কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এজন্য আপনার ভেতর ভীষণ মন খারাপের ভার, হতাশার বৈদ্যুতিক প্রবাহ আপনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে প্রতিনিয়তই।

ঠিক এই সময়ে এসে আপনাকে একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, বিফলতার ওপর ভর করেই কিন্তু সফলতার ভিত্তি অর্জিত হয়।

আপনি সফল হতে চান, কিন্তু পারেন না। অনেক চেষ্টা করেন, তবুও পারেন না। তাই আপনার জন্য আমি সফলতার কিছু সূত্র তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি সফলতার সন্ধান পাবেন বলে আমার বিশ্বাস। তাহলে চলুন! এবার তবে জেনে নেওয়া যাক সফলতার সূত্রাবলি—

(১) প্রবল ইচ্ছাশক্তি: ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। ইচ্ছার পাখায় ভর করে মানুষ পৌঁছে যেতে পারে সাফল্যের তোরণ শিখরে। কিন্তু এই ইচ্ছা নিছক কোনো ইচ্ছা নয়, এই ইচ্ছা আপনার আবেগতাড়িত কোনো ইচ্ছা নয়; এই ইচ্ছা হলো প্রবল ইচ্ছা, যে ইচ্ছা ঝড়ো হাওয়া কিংবা কালবৈশাখীর মাঝেও অটল, অনড়, দৃঢ় ও সুপ্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। যে ইচ্ছা একটা ভয়াবহ সামাজিক অভিযান শেষ করে একদম অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে পারে তার আপন নীড়ে। হ্যাঁ, এ ইচ্ছার কথাই আমি বলছি।

প্রিয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ ‘প্রতিটি কাজই নিয়্যত অনুসারে হয়ে থাকে’।[1]

ইচ্ছার ওপর ভর করেই আমাদের সমস্ত কাজের ভিত্তি স্থাপিত হয়। তাই ইচ্ছা নড়বড়ে হলে আমাদের সমস্ত কর্ম ও পরিকল্পনা যে কোনো সময় ধসে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং ইচ্ছাশক্তিই হলো আমাদের সকল কাজের পূর্বশর্ত।

অতএব, আজই দাঁতে দাঁত চেপে খুবই শক্তভাবে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ইচ্ছার রঙতুলি দিয়ে আপনার হৃদয়ের খাতায় এঁকে ফেলুন আগামী দিনের পরিকল্পনা। আগামী এক সপ্তাহে এবং এক মাসে আপনার কী কী করার ইচ্ছা আছে, তা ঠিক করে ফেলুন। এক বছর পর আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান, সেটাও গেঁথে নিন ইচ্ছার মালায়।

এই ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা এসে আপনার পথ রোধ করতে চাইবে, কিন্তু আপনার সেই সুপ্ত ইচ্ছাটুকু রক্ষার্থে এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়ে যেতে পারাটাই মূলত জীবনের সার্থকতা।

অতএব, ঝটপট আপনার ইচ্ছার ট্রেনে উঠে পড়ুন আর ছুটতে থাকুন দূর থেকে বহুদূর।

(২) কঠোর পরিশ্রম: পরিশ্রমই সফলতার জনক। পরিশ্রম ছাড়া সফলতা অর্জন করতে চাওয়াটা অন্ধকারে ঢিল মারার নামান্তর। আপনার তো অনেক ইচ্ছা, বুকভরা অভিলাষ আর আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। তাহলে আপনি উদাসীন চিত্তে আর নির্লিপ্ত বদনে আপনার মূল্যবান সময়গুলো অবহেলায়, অবলীলায় আর অলসতায় কাটিয়ে দিচ্ছেন কেন? আপনি তো ধীরে ধীরে সন্ধ্যার আঁধারে মিইয়ে যাচ্ছেন। আপনার মন-মাঝারে পুঞ্জীভূত স্বপ্নগুলো তো নদীর পানিতে ভেসে যাচ্ছে।

সুতরাং আপনি জেগে উঠুন। দ্রুত একটি নৌকা বানিয়ে আপনার ভাসমান স্বপ্নগুলো নিয়ে নীড়ে ফিরে আসুন। ছুঁড়ে ফেলুন অলসতার চাদর। নতুন করে জ্বলে উঠুন। পরিশ্রম করে যান নিরলসভাবে।

তারপরও আপনি হতাশ? প্রবল ইচ্ছা নিয়ে অনেক পরিশ্রম করার পরও সফলতা আপনার আশপাশেও ঘেঁষছে না। কিন্তু এতে করে যেন আপনারা চলার গতি মন্থর হয়ে না যায়, বরং আপনি ধৈর্যের ভ্যাকসিন নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করুন। আপনার পরিশ্রমকে আরো গতিশীল করে তুলুন। আপনি দেখে নিয়েন, একদিন না একদিন সফলতা আপনার পদচুম্বন করবেই, ইনশা-আল্লাহ! স্বয়ং আল্লাহ আপনাকে কথা দিচ্ছেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى ‘মানুষের জন্য কেবল তা-ই রয়েছে, যা সে চেষ্টা করে’ (আন-নাজম, ৫৩/৩৯)

প্রিয় ভাই আমার! সফলতা কিন্তু একদিনেই আসে না। বরং ব্যর্থতার সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে, অতল সিন্ধুর উথালপাতাল ঢেউয়ের মাঝে সাঁতার কাটতে কাটতে একদিন দেখা মিলবে সফলতার।

সুতরাং একদিন ব্যর্থতার এ আঁধার কেটে যাবে, একটি নতুন ভোর আসবে। নিজের অজান্তেই আপনার হৃদয়ের ছাদে পতপত করে উড়তে থাকবে সাফল্যের পতাকা।

(৩) রবের সাথে গভীর সম্পর্ক: আমরা চাইলেই সবকিছু করতে পারি না। আপনি চাইলেই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেরা’ ছাত্রের খেতাব অর্জন করতে পারবেন না‌, চাইলেই পারবেন না গুলশানের মতো এলাকায় রাতারাতি অনিন্দ্য সুন্দর চোখধাঁধানো একটি দালান নির্মাণ করতে; কিন্তু এমন একজন আছেন, যিনি সবকিছুই করতে পারেন। এ জগৎ সংসারে এমন কিছু নেই, যা তাঁর সাধ্যের বাইরে; বরং প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর রয়েছে তার একচ্ছত্র আধিপত্য, যিনি ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’।

যদি সেই মহান সত্তা আপনার মনের কথাগুলো শোনার জন্য প্রথম আসমানে নেমে আসেন, তখন আপনার কেমন লাগবে? যদি স্বয়ং তিনিই আপনার চাওয়াগুলো পূরণ করার জন্য আপনাকে ডাকতে থাকেন, তখন আপনার কেমন লাগবে?

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়েছেন, ‘মহান আল্লাহ প্রতিদিন রাতের শেষ প্রহরে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন’।[2]

সুতরাং এই সময়টিই হতে পারে আপনার আর বিশ্বজগতের অধিপতি মহান আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ।

আমাদের সালাফগণ, যারা যুগ যুগ ধরে আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন, যাদের গবেষণালব্ধ অনবদ্য সব গ্রন্থ পড়ে আমরা উপকৃত হয়ে আসছি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা কিন্তু এই চমৎকার সময় অর্থাৎ ক্বিয়ামুল লায়ল বা তাহাজ্জুদকে পুঁজি করেই সফলতার চূড়ায় পৌঁছতে পেরেছিলেন।

তাই সবার আগে আপনাকে রবের সাথে সম্পর্ক গড়তে হবে, তাঁর মন জয় করতে হবে আর রাতের শেষ প্রহরের এই চমৎকার সময়টিই হলো রবের সাথে সম্পর্ক গড়ার, গভীর মিতালিতে ডুব দেওয়ার এবং তাঁর সাথে নিভৃতে আলাপনের মোক্ষম সুযোগ।

তাই আজ থেকে রাত্রি নিঝুম হলে চুপিচুপি বিছানা থেকে উঠে পড়ুন, সুন্দর করে ওযূ করে জায়নামাযটা বিছিয়ে দাঁড়িয়ে যান মহান রবের সামনে। কাঁপা কাঁপা হৃদয়ে আর ভেজা ভেজা চোখে এক অসীম ব্যাকুলতা নিয়ে হাত দুটো তুলুন। তারপর মনের কথাগুলো, হৃদয়ের ব্যথাগুলো তুলে ধরুন মহান রবের দরবারে।

সুধী পাঠক! যখন আপনার মাঝে এই তিনটি সূত্রের সংমিশ্রণ ঘটবে, তখন আপনার হৃদয়ের রাজপথে শুরু হবে বিজয়ের মিছিল। চারিদিকে বেজে উঠবে সাফল্যের জয়গান, ইনশা-আল্লাহ!

সাব্বির আহমাদ

অধ্যয়নরত, মাদ্রাসাতুল হাদিস, নাজির বাজার, বংশাল, ঢাকা।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/১।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮।

Magazine