উত্তর : জিহাদ (جهاد) শব্দটি باب مفاعلة -এর ক্রিয়ামূল। আভিধানিক অর্থ : সংগ্রাম করা, প্রচেষ্টা করা। হাফিয ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, জিহাদের স্তর চারটি। (১) অন্তরের সাথে জিহাদ। (২) শয়তানের সাথে জিহাদ। (৩) কাফিরদের সাথে জিহাদ এবং (৪) মুনাফিক্বদের সাথে জিহাদ।
অন্তরের সাথে জিহাদের স্তর আবার চারটি :
(১) হেদায়াতের বাণী ও সত্য দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা করা। যে দ্বীন শিক্ষা করা ব্যতীত ইহকালে কিংবা পরকালে কোনো কল্যাণ হাছিল করা যায় না। যদি কারও এই দ্বীনের জ্ঞান না থাকে তাহলে সে উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (২) জ্ঞান অর্জন করার পর তার প্রতি আমল করার প্রচেষ্টা করা। কারণ আমল ছাড়া ইলমের কোনো উপকার নেই। (৩) যা জেনেছে তার দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া এবং যারা জানে না তাদেরকে শিখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা। অন্যথা সে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত হেদায়াত ও দলীল গোপনকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে এবং তার আমল কোনো কাজে আসবে না এবং জাহান্নাম থেকেও সে রক্ষা পাবে না। (৪) দাওয়াত দিতে গিয়ে বিপথগামীদের পক্ষ থেকে আসা যুলুম অত্যাচারে ধৈর্যধারণ করা। যদি কারও মধ্যে এই চারটি গুণের সমাবেশ ঘটে, তাহলে সে আল্লাহ ওয়ালা হিসাবে প্রমাণিত হবে।
শয়তানের সাথে জিহাদের স্তর দুটি :
(১) শয়তান ঈমান বিধ্বংসী যে সকল সন্দেহ এবং সংশয়ের মধ্যে ফেলতে চায়, তা প্রতিহত করার জন্য প্রচেষ্টা করা। (২) শয়তান মানুষের সামনে যে সকল ঘৃণ্য ইচ্ছা ও কুপ্রবৃত্তি উপস্থাপন করে, তা প্রতিহত করার জন্য চেষ্টা করা।
কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে শক্তি দিয়ে। মুনাফিক্বদের সাথে জিহাদ করতে হবে জবান দিয়ে। আর অত্যাচারী, বিদ‘আতী এবং পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তিদের সাথে জিহাদের স্তর তিনটি :
(১) সম্ভব হলে শক্তি দিয়ে। (২) শক্তি প্রয়োগ অসম্ভব হলে জবান দিয়ে। (৩) জবান দিয়েও প্রতিবাদ করতে অসমর্থ হলে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে। কোনো ব্যক্তি যদি এই স্তর সমূহের কোনো স্তরেই জিহাদ না করে তাহলে তার পরিণতি সম্পর্কে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি মারা যায়, আর জিহাদ না করে এবং অন্তরে জিহাদের কল্পনাও না করে, তাহলে সে মুনাফিক্বের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল (যাদুল মা‘আদ, ৩/০৯-১১ পৃঃ)।
সশস্ত্র জিহাদ করার জন্য পূর্বশর্ত হলো, নিজস্ব ভূখ- থাকা এবং ঘোষিত আমীর থাকা। এই দু’টি শর্তের কোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে, কোনো গোষ্ঠী বিশেষের জন্য সশস্ত্র জিহাদ করা জায়েয নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় ছিলেন তখন তার সঙ্গী-সাথী ছাহাবায়ে কেরাম ছিলেন। তিনি তাদের আমীর ছিলেন। কিন্তু ঘোষিত আমীর ছিলেন না। মুষ্টিমেয় তার কিছু অনুসারী ছাড়া কেউ তাকে নেতা হিসাবে মেনে নেয়নি। যার কারণে কা‘বা ঘরে মূর্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি সশস্ত্র আক্রমণ করে মূর্তি ভাঙ্গতে যাননি। বরং মদীনায় হিজরত করার পর যখন রাষ্ট্র ক্ষমতা তার হাতে আসল, তখন তিনি মক্কার সেই কাফিরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলেন। রাসূলের এই সুন্নাহ প্রমাণ করে, নিজস্ব ভূখ- এবং ঘোষিত আমীর ব্যতীত সশস্ত্র জিহাদ বৈধ নয়।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ আল-মামুন
নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
