কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সংশোধনের মূলমন্ত্র ভালোবাসা

post title will place here

[১]

মানুষমাত্রই জীবনে চলার পথে ভুল করে। আমরা মানুষ, কেউ-ই ভুলের ঊর্ধ্বে নই। দোষ-গুণ নিয়েই মানুষের জীবন। মানুষের দোষ আছে বলেই গুণের এত কদর। দুঃখজনকভাবে, আজকের সমাজে আমরা একে অপরের দোষ ধরতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এবং অনেক সময় মানুষের ভুলকে হাসি-তামাশার পর্যায়ে নিয়ে যেতেও কুণ্ঠাবোধ করি না। অথচ আমরা নিজেরাই নিজেদের ভুলত্রুটির ব্যাপারে চরম উদাসীন।

কারও কোনো ভুল চোখে পড়লে আমরা কখনো কখনো চট করে রেগে যাই। মানুষের সামনে লজ্জা দিয়ে সংশোধন করে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে একজন আরেকজনের ভুল ধরাই হয় লজ্জা দেওয়ার জন্য; ভুল শোধরানোর জন্য নয়। অন্যথা, কারও কোনো ভুল হলে আমরা সেটি সবার সামনে উত্তেজিত কণ্ঠে না বলে বরং ভুলকারীকে ব্যক্তিগতভাবে বিনয়ের সাথে অন্তরে ভালোবাসা নিয়ে সংশোধনের নিয়্যতে বোঝানোর চেষ্টা করতাম।

কোনো মানুষ যখন ভুল করে, তখন তার ভুল কেন সংশোধন করতে হবে? মূলত, কারও ভুল সংশোধন করে দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, সে যেন নিজেকে শোধরায় অর্থাৎ সঠিক জিনিস জেনে সঠিকভাবে মেনে চলে। নতুবা সে হয়তো ঐ ভুলটি করতেই থাকবে। মানুষের ভুল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন, কোনো মানুষ ‘আস-সালামু আলাইকুম’-এর পরিবর্তে ভুলভাবে ‘সামালিকুম’ বলে ফেলেছে। সেক্ষেত্রে আপনি তাকে সবার সামনে এভাবে বলতে পারেন না যে, ভাই! আপনি ভুলভাবে সালাম দিয়েছেন কিংবা আপনার সালাম দেওয়াই হয়নি। সরাসরি এভাবে বললে, সে ব্যক্তিটি লজ্জা পেয়ে যাবে। যার দরুন ঐ ব্যক্তির নিকট আপনার সঠিকটা বলার গ্রহণযোগ্যতাও হারিয়ে ফেলবে। আপনার কথা সঠিক হওয়া সত্ত্বেও ঐ ব্যক্তি গ্রহণ করতে চাইবে না। কারণ আপনি তাকে লজ্জা দিয়ে ফেলেছেন। আপনার কাছ থেকে লজ্জা পাওয়াই তার নিকট আপনার বলা কথাগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়বে।

একইভাবে, আরেকটি বিষয় খুবই লক্ষ করা যায় যে, কোনো মানুষের যদি সাধারণ কোনো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে অর্থাৎ যে বিষয় নিয়ে তার হয়তো ইতঃপূর্বে জানা থাকার কথা ছিল কিন্তু জানা নেই, তখন অনেকেই তাকে এভাবে বলতে শুরু করেন, আরে ভাই! আপনি এটাও জানেন না, এমন সহজ বিষয়ও পারেন না। এগুলো তো ছোট বাচ্চারাই পারে আর আপনি কি-না পারেন না। কী আশ্চর্য! —এ জাতীয় টক্সিক কথা বলে আমরা মানুষটিকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ফেলি, যা সত্যিই খুবই দুঃখজনক। আর এমন কুৎসিত আচরণ কেবল হীন মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের দ্বারাই সম্ভব।

এরকমভাবে কাউকে বললে, সে মনে মনে অনেক কষ্ট পাবে এবং আপনার কাছ থেকে সঠিকটা জানার আগ্রহটুকু হারিয়ে ফেলবে। অনেকক্ষেত্রে আপনার প্রতি তার প্রকৃত শ্রদ্ধাবোধটুকুও হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি অন্য কোনো সময় আপনার কাছে হয়তো আর কিছু জানতে চাইবে না। বিশ্বাস না হলে, আপনি নিজেকে ঐ অবস্থায় ঐ ব্যক্তির জায়গায় কল্পনা করে দেখুন না যে, আপনি কোনো ভুল করলে কেউ সবার সামনে আপনার সেই ভুল ধরিয়ে দিলে কিংবা কর্কশ ভাষায় ভুল ধরিয়ে দিলে কেমন লাগবে আপনার? পারবেন কি তখন বিষয়টি সহজে হজম করতে? নিজেকে সেই বিব্রতকর অবস্থায় দাঁড় করিয়ে কল্পনা করলে দেখবেন, আপনি নিজেই বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন।

আপনি ভুলকারীকে আড়ালে ডেকে এনে এভাবে ভালোবাসা মেশানো কণ্ঠে বলতে পারেন যে, ও ভাই আমার! আপনি সালাম দিয়েছেন অর্থাৎ কারো শান্তি কামনা করেছেন—এটা নিঃসন্দেহে অনেক ভালো একটি কাজ। এই ভালো কাজ কয়জনই-বা করে! এমন ভালো কাজের জন্য আপনি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখেন। কিন্তু ভাই আমার! আপনি যেভাবে সালামের উচ্চারণ করেছেন, তা আসলে সঠিক ছিল না। আর সঠিক উচ্চারণ না হলে তার অর্থটাও বিকৃত হয়ে যায়। আপনি নিশ্চয়ই জেনেশুনে সে উচ্চারণে সালাম দিতে চাইবেন না, যে উচ্চারণে সালামের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। তাই ভাই আমার! দয়া করে আপনি এখন থেকে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলে সঠিক উচ্চারণে সালাম দিবেন। আর হ্যাঁ! সালাম দেওয়ার আমল সবসময় চালিয়ে যাবেন। এটা এমন এক আমল, যে আমল চালিয়ে যাওয়া আমলকারীর অহংকারমুক্ত অন্তরের বার্তা দেয়।

বিশ্বাস করুন, এভাবে বললে আপনার প্রতি ঐ ব্যক্তির শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়ে যাবে। সে আপনার কথা ভালোবেসে গ্রহণ করবে। আপনার সংশোধন করে দেওয়া বিষয়টি সে মেনে চলার চেষ্টা করবে। কারণ আপনি সংশোধনের ক্ষেত্রে সংশোধনের মূলমন্ত্র ভালোবাসাকেই কাজে লাগিয়েছেন।

প্রসঙ্গক্রমে, কাউকে সংশোধনের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় আপনি মাথায় রাখতে পারেন। সেটি হচ্ছে বার্গার মেথড। একটি বার্গারের মধ্যে আসলে কী থাকে? সেখানে প্রথমেই বান থাকে। মাঝখানে পেটি থাকে। সবশেষ আবার বান থাকে।

আপনি যখন কাউকে সংশোধন করতে যাবেন, তখন শুরুতেই তার কোনো না কোনো প্রশংসা দিয়ে শুরু করবেন। যেটি ঐ বার্গারের প্রথম অংশ অর্থাৎ বান হিসেবে কাজ করে। তারপর আপনি আপনার মূল বিষয়টি বলবেন তথা ভুল সংশোধন করে দিবেন, যা বার্গারের মাঝের অংশ পেটির কাজ করে। সবশেষ আপনি আবার ঐ বার্গারের শেষ বানের মতো প্রশংসা দিয়ে শেষ করবেন। ব্যাস, এই তো হয়ে গেল। আর ঠিক এই বিষয়টি অনুসরণ করে ইতঃপূর্বে ভুল সংশোধনের একটি চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আবার খেয়াল করে দেখে আসুন। সহজ কথায়, মূল বিষয়টি এবার এভাবে দাঁড়ালো যে, প্রশংসা—সংশোধিত কথা—প্রশংসা। 

[২]

নবীজীবন থেকে হৃদয়স্পর্শী একটি ঘটনা বলব, যে ঘটনা জানলে আপনি প্রকৃত অর্থে বুঝতে পারবেন, কাউকে সংশোধন করে দেওয়ার মূলমন্ত্রই হচ্ছে ভালোবাসা। এই ভালোবাসা দিয়েই আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের ভুল সংশোধন করে দিয়েছেন। এমন পন্থায় মানুষের ভুল ধরেছেন, যে পন্থা অবলম্বন করার ফলে সে মানুষটি তার ভুল উপলব্ধি করে তবেই নিজেকে সংশোধন করে নিয়েছে। কিন্তু আমরা মানুষের ভুল উপলব্ধি করারই সুযোগ দিই না। শুরুতেই চড়াও হয়ে যাই, নেতিবাচক মন্তব্য করতে উঠেপড়ে লাগি। এখানেই আমাদের যত দোষ।

চলুন, এবার ঘটনাটি জেনে আসি। একবার এক যুবক ছাহাবী রাসূলুল্লাহ a-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে যেনা (Sexual intercourse) করার অনুমতি দিন!’

চিন্তা করছেন, কতটা ভয়ংকর কথা সেই যুবক এসে বলেছেন? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো সম্মানিত ব্যক্তির নিকট এত বড় লজ্জাজনক কথা বলতে কতটুকু সাহস লাগে, তা কি আপনি কল্পনা করছেন? এছাড়া, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কতটা ভরসা থাকলে ঐ যুবক এত অনায়াসে এত বড় কথা বলতে পারলেন, তা কি আপনি ভেবে দেখছেন?

ঐ ছাহাবী কিন্তু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐরকম কোনো প্রিয়ভাজন কেউ নন যে, মন চাইল আর যা ইচ্ছে বলে দিবেন। তা-ও রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য ছাহাবীদের সাথে তখন বসা। বাকি ছাহাবীরা তাকে ধমক দিলেন— ‘থামো, থামো’। অর্থাৎ, তোমার এত বড় স্পর্ধা? তুমি কী এসব আবোলতাবোল বকছ? 

যুবক রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কতটা ‘কমফোর্ট জোন’ হিসেবে চিন্তা করেছেন ভাবা যায়? নিজের এমন ইচ্ছের কথাও তিনি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শেয়ার করেছেন; যেসব বিষয়ের কথা সব বন্ধুও তার অন্য বন্ধুকে বলে না।

নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন, ‘আমার কাছে এসো’। 

ছাহাবীরা তাকে ধমক দিলেন, অথচ নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাছে যেতে বললেন।

এখন কি তিনি তার গালে কষে দুটো চড়-থাপ্পড় মারবেন? কিংবা ছাহাবীদেরকে বলবেন, ‘একে ধরো, বেঁধে রাখো। শাস্তি দিয়ে দেখিয়ে দাও যে, এরকমটা কেউ করতে চাইলে কী পরিণতি হয়’।

নাহ। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনোটাই করলেন না। ঠিক এই মুহূর্তে আপনি চিন্তা করুন তো, আপনার সামনে কেউ সাহস করে এমন প্রস্তাব দিলে আপনি কী রি-অ্যাক্ট করতেন? পারতেন কি তখন আপনার মেজাজ ঠাণ্ডা রাখতে?

নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি নিজের মায়ের জন্য এমনটা করতে পছন্দ করো?’ অর্থাৎ তার সাথে অবৈধভাবে কেউ এটা করুক, এটা কি চাও?

নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। ছাহাবী বললেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না। অতঃপর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝালেন যে, তুমি যার সাথে এমনটা করবে, সে তো কারো না কারো মা।

এবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মেয়ের সাথে এমনটা হোক, সেটা তুমি পছন্দ করো?’ যুবক ছাহাবী আবারো ‘না’ বললেন। আবার নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝালেন যে, তুমি যার সাথে এমনটা করবে, সে তো কারো না কারো মেয়ে।

এভাবে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোন, ফুফু, খালার উদাহরণ দিয়ে জিজ্ঞেস করে একই সমাধান দিলেন যে, তুমি যার সাথেই এমনটা করো না কেন, সে কারো না কারো মা, বোন, মেয়ে, খালা, ফুফু। তুমি যেমন নিজের কারো সাথে এমনটা হোক তা চাও না, তেমনি তারাও তো এমনটা চায় না। 

এই ধরনের বুঝানোর ভঙ্গিকে বলে ‘Empathy’। আরেকজনের সুখ বা দুঃখ নিজের মতো উপলব্ধি করা, সেটা বুঝা। সেই ইম্পেথির ফিলিংস যুবক ছাহাবীর মধ্যে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগিয়ে দিলেন। তাকে বকাঝকা করলেন না, মারলেনও না, ধমকও দিলেন না, অপমানও করলেন না, লজ্জাও দিলেন না। আহ! কী সুমধুর ব্যবহার। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন ব্যবহারই তো তার ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দেয়, তার ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেয়।

অতঃপর বুঝানো শেষে তার পবিত্র হাত যুবকের বুকে রাখলেন। এই ফিলিংসটাও একটু চিন্তা করুন তো। যে একটা পাপ কাজের জন্য এসেছিল, তাকে বুঝানো শেষে তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বুকে হাত রাখছেন। চিন্তা করুন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই হাত আমার-আপনার বুকে রাখছেন! কারণ, ঐ যুবকের অনুভূতি আমাদের প্রত্যেকেরই হয়। আমরা হয় বলি, নতুবা গোপন রাখি। 

নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকের বুকে হাত রেখে দু‘আ করলেন,اللَّهُمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ ‘হে আল্লাহ! আপনি তার গুনাহ মাফ করে দিন, তার হৃদয়কে পবিত্র করে দিন এবং তাকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা করুন’।[1]

সেদিনের পর থেকে যুবকটি কোনোদিন যেনার দিকে ঝুঁকেননি। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ বুঝানো তার কতটা কাজে লেগেছিল একবার ভাবুন যে, তিনি যেনা করার কথাই মাথা থেকে বাদ দিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহু আকবার!

চলার পথে কেউ কোনো ভুল করলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো আমরা কি তার মাথায়, পিঠে বা বুকে হাত রেখে মহব্বত নিয়ে তাকে বুঝানোর বা সংশোধনের চেষ্টা করি? যদি না করি, তাহলে কীভাবে তার সংশোধনের আশা করি? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো কাউকে সংশোধন করে দেওয়ার পাশাপাশি আমরা কি কখনো তার জন্য দু‘আ করে আল্লাহকে বলি যে, হে আমার রব! তুমি আমার এই ভাইয়ের গুনাহ মাফ করে দাও, তার অন্তর পবিত্র করে দাও, তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনো, তার মনের সকল অস্থিরতা দূর করে দাও, তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যাণ দান করো। কী, এভাবে কখনো বলি? আমাদের হিংসা যেন আমাদেরকে কখনোই পরাজিত না করে।

আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীদের কাছে এমন এক মানুষ ছিলেন যে, যার কাছে মনের দুঃখ, মনের চাপা কষ্ট এমনভাবে বলা যেত, যা একজন বন্ধুর কাছেও বলা যায় না। তার কাছে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার এত সহজ ছিল যে, মানুষ তার কাছে যেতে সংকোচবোধ করতেন না। তাকে নিজের বাবা-মায়ের চেয়েও আপন মনে করতেন। এটা শুধু কুরআনের আক্ষরিক নির্দেশ মানার জন্যই ছিল, ব্যাপারটা এমন নয়। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে এমন ব্যবহার করতেন যে, তারা নিজেদের সবচেয়ে আপন মানুষ হিসেবে তাকে কল্পনা করতেন, তাকেই হৃদয়ের গহিনে স্থান দিতেন। 

তিনি ধমক দিয়ে, মেরে কিংবা অপমান করে মানুষকে সংশোধন করেননি, বরং ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছেন। এমন কাছে টেনে নিয়েছেন, এমন ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, সেই পাপে ইচ্ছুক মানুষটি পরিণত হয়েছে শ্রেষ্ঠ মানুষে। তাকে হত্যা করতে আসা মানুষগুলো তার আচরণে মুগ্ধ হয়ে মুহূর্তের মধ্যে তাকে তাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

কারো ভুল সংশোধন করার ক্ষেত্রে এই শিক্ষণীয় ঘটনা খুবই অনুকরণীয়। মনে রাখবেন, কাউকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে কিংবা লজ্জা দিয়ে তাকে পেছানো ছাড়া ভালো কিছু শেখানো যায় না। তার জন্য চাই আন্তরিকতা এবং মার্জিত ব্যবহার। লজ্জা দিয়ে কারো ভুল ধরা কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষের কাজ হতে পারে কিন্তু কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। কাউকে লজ্জা দিয়ে কিছু শেখাতে গেলে প্রথমেই তার নিকট আপনার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর আপনি তাকে যতই জ্ঞানীসুলভ কথা বলুন না কেন, তার কাছে আপনার সে কথার আর কোনোই মূল্য থাকবে না। অতএব, কাউকে সংশোধন করার ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হতে হবে, হতে হবে বিনয়ী।

রাকিব আলী

আম্বরখানা, সিলেট।


[1]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২১১।

Magazine