(অক্টোবর’২৪ সংখ্যায় প্রকাশিতের পর)
(৭) তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; ওদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।
আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত লোক কারা এবং তাদের পথ বাস্তবিক পক্ষে কোনটি? এ নিয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ছিরাতে মুস্তাক্বীমের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্যের বিচারে তারা তিন ভাগে বিভক্ত—
১. ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীম’ হলো সেই সরল পথ, যে পথে চলেছেন এমন সব লোক যাদেরকে নেয়ামত, অনুগ্রহ ও পুরস্কার দান করা হয়েছে। জমহূর মুফাসসিরগণের মতে, তারা হলেন নবী, শহীদ, সত্যবাদী এবং নেককার ব্যক্তিবর্গ। তাদের পরিচয়ে তারা নিম্নের আয়াতকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন, ‘আর যদি আমি তাদের নির্দেশ দিতাম যে, নিজেদের প্রাণ ধ্বংস করে দাও কিংবা নিজেদের নগরী ছেড়ে বেরিয়ে যাও, তবে তারা তা করত না, অবশ্য তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন (ব্যতীত)। যদি তারা তাই করে, যা তাদের উপদেশ দেওয়া হয়, তবে তা অবশ্যই তাদের জন্য উত্তম এবং তাদেরকে নিজের ধর্মের উপর সুদৃঢ় রাখার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী। আর তখন অবশ্যই আমি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে মহান ছওয়াব দেব। তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করব। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য করবে, সে তাদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন। তারা হলেন নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম’ (আন-নিসা, ৪/৬৬-৬৯)। এই আয়াত থেকে জীবন চলার সঠিক ও সুদৃঢ় পথ কোনটি আর কোন পথে চলে অনুগ্রহপ্রাপ্তরা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়েছেন, তা সুস্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে জানা যায়। তারা হচ্ছেন নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ।[1] তাদের বৈশিষ্ট্য হলো তারা হেদায়াত, ন্যায়পরায়ণতার পথ অবলম্বন করেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যের পথে চলেন। তারা তাঁর আদেশ পালন করেন এবং তাঁর নিষেধ থেকে বিরত থাকেন। তারা অভিশপ্তদের পথ পরিহার করেন।[2] একজন মুসলিমের হৃদয়কে প্রত্যাখ্যান, অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্তির আবেদন উক্ত আয়াত শামিল করে। আরও প্রমাণ করে যে, তাদের অনুসৃত এবং চলার পথই বিশ্বমানবতার মুক্তি ও শান্তির সর্বশ্রেষ্ঠ পথ। তাদের পথই আমাদের জন্য একমাত্র অনুসরণীয়, কল্যাণকর ও গ্রহণযোগ্য পথ। তাদের পথ ব্যতীত অন্য কোনো পথ কল্যাণকর ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। উক্ত পথের অনুসারীদের মধ্যে নবীগণের পর ছাহাবীগণ হলেন সবচেয়ে অগ্রবর্তী দল। উক্ত আয়াত তাদের সম্মান ও উঁচু মর্যাদার প্রমাণ বহন করে।[3]
২. ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীম’ হলো সেই চিরন্তন কল্যাণকর পথ, যা আল্লাহর দয়া ও ক্ষমতায়ন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। এটি ইলাহী রহমতে ভরা এমন এক পথ, যার যাত্রীরা দুনিয়ায় যেমন আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য লাভ করে, পরকালেও তারা তেমনি তাঁর চিরন্তন ভালোবাসায় সিক্ত হয়। আল্লাহর অবারিত অনুগ্রহে তারা হেদায়াত, আনুগত্য ও ইবাদতে মগ্ন হওয়ার সুযোগ লাভ করে।[4] তাদের এ পথ কোনো অভিশপ্ত পথ নয়। এই পথের অভিযাত্রীদের উপর অভিশাপ বর্ষিত হতে পারে না। কেননা হেদায়াতের অমিয় সুধায় সিক্তের উপর অভিশাপ বর্ষিত হয় না।[5] উক্ত পথের ব্যাখ্যার উদ্দেশ্য হলো মুমিনদেরকে এমন পথ ও পন্থা অবলম্বন থেকে বিরত রাখা, যে পথ আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত।
৩. ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীম’-এর তৃতীয় ও সর্বশেষ পরিচয় অর্থাৎ যারা ছিরাতুল মুস্তাক্বীমের আলোকে চলে আল্লাহর নেয়ামত লাভ করতে পেরেছেন, তারা পথভ্রষ্ট নন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীছ থেকে এ পথভ্ৰষ্ট লোকদের পরিচয় জানতে পারা যায় যে, দুনিয়ার ইতিহাসে নাছারা হচ্ছে কুরআনে উল্লেখিত এ গোমরাহ ও পথভ্ৰষ্ট জাতি।[6]
এখানে অভিশপ্ত বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে? তারা কেন অভিশপ্ত? অভিশপ্ত হলো তারা, যাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল না। যারা সৎ পথের সন্ধান পেয়েছিল, কিন্তু হঠকারিতা ও অবাধ্যতাবশত তা বর্জন করেছিল। বাস্তবিকপক্ষে তাদেরকে যে সৎ পথ অনুসরণ করতে বলা হয়, তা প্রত্যাখ্যান করে এবং গযবপ্রাপ্তদের দলভুক্ত হয়ে যায়। তারা তাদের হৃদয়কে কলুষমুক্ত না করে, সত্যকে জেনেও অবাধ্যতা ও হঠকারিতার পথ অবলম্বন করে। ফলে তাদের শাস্তি হলো তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হবে।[7] তাদেরকে আল-কুরআনে অভিশপ্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইয়াহূদী তো তারাই, যাদের উপর আল্লাহ অভিশাপ দেন এবং যাদের প্রতি তাঁর গযব বর্ষিত হয় (আল-মায়েদা, ৫/৬০)। তাদের অভিশাপের বর্ণনায় আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর তাদের উপর অপমান, লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যের কশাঘাত হানা হয়েছে এবং তারা আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত হয়েছে’ (আল-বাক্বারা, ২/৬১)। এই আয়াতে ইয়াহূদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। ‘মাগযূব’ (অভিশপ্ত) সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, هُمُ الْيَهُوْدُ ‘তারা হলো ইয়াহূদীগণ’। ইবনু আবী হাতেম বলেন, এ বিষয়ে মুফাসসিরগণের মধ্যে কোনো মতভেদ আছে বলে আমি জানি না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীছেও অনুরূপ বর্ণনা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।[8]
আর যল্লীন তথা বিপথগামী বলে খ্রিষ্টানদেরকে বোঝানো হয়েছে, যারা অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতাবশত সত্যকে বর্জন করেছে। যেমন আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা ইতঃপূর্বে পথভ্রষ্ট ছিল’ (আল-মায়েদা, ৫/৭৭)।
‘গায়র’ তথা ‘না’ শব্দ ব্যবহার করে এই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, দুটি কলুষিত পথ রয়েছে, যে পথদ্বয় ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের পথ। ঈমানদারগণ ঐ পথ অবলম্বন করেন, যে পথ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ইয়াহূদীরা অভিশপ্ত হয়ে শঠতার পথ অবলম্বন করেছে এবং খ্রিষ্টানরা জ্ঞান হারিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। আর এ কারণে ইয়াহূদীদের জন্য ক্রোধ এবং খ্রিষ্টানদের জন্য বিভ্রান্তি রয়েছে। কারণ যে কেউ জানে যে, এটার জন্য ক্রোধ প্রাপ্য আর যারা জানেন না তথা খ্রিষ্টানদের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট গন্তব্য তাদের কোনো ধারণা ছিল না।
রাগ হলো সন্তুষ্টির বিপরীত। অভিধানগত উৎপত্তিমূলে এর অর্থ আত্মার প্রতিক্রিয়া, যা প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবণতাকে জাগ্রত করে। এই অর্থ অনুযায়ী আল্লাহর সাথে এর সম্পর্ক শোভনীয় নয়। তবে এর অনুঘটক আল্লাহ হলে জমহূর উলামা একে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা অর্থে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সালাফরা এই গুণের ব্যাখ্যায় বলেন, এটি সর্বশক্তিমান ইলাহ-এর একটি গুণ, যা তাঁর মহিমার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা এর রহস্য জানি না, তবে এর প্রভাব জানি। এর প্রভাব হলো অবাধ্যদেরকে শাস্তির আওতায় আনা।
উক্ত আয়াতে নেয়ামত প্রদানকে সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করে এবং শাস্তি প্রদানকে তাঁর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না করে সৌজন্যমূলক আচরণের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। বুঝানো হয়েছে যে, ভালো কাজ সরাসরি সম্পাদনকারীকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করা এবং প্রতিশোধের কাজকে সরাসরি তাঁর সাথে সম্পৃক্ত না করা ভদ্রোচিত আচরণের লক্ষণ। যদিও কল্যাণ ও অকল্যাণ সকল কাজের অনুঘটক তিনি। নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে বিশ্বাসী জিনদের বক্তব্যে এমন প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আমরা জানি না যে, পৃথিবীতে যারা আছে তাদের প্রতি অকল্যাণ কামনা করা হয়েছে নাকি তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে চেয়েছেন’ (আল-জিন, ৭২/১০)।
সূরা ফাতিহা শিষ্টাচার, বিশ্বাসমালা, ইবাদত ও বিধিবিধান ইত্যাদি শামিল করে। সূরাটি তাওহীদের তিনটি প্রকার তথা তাওহীদে রুবূবিয়্যাত তথা প্রতিপালক হিসেবে আল্লাহকে এক বলে স্বীকৃতি, যা ‘রব্বুল আলামীন’ থেকে প্রমাণিত, তাওহীদে উলূহিয়্যাত তথা উপাস্য হিসেবে আল্লাহকে এক বলে স্বীকৃতি, যা ‘ইয়্যাকা না‘বুদু’ থেকে প্রমাণিত আর তাওহীদুল আসমায়ে ওয়াছ ছিফাত তথা আল্লাহর নাম ও গুণাবলিতে আল্লাহকে এক বলে স্বীকার করা, যা ‘আল-হামদু’ থেকে প্রমাণিত। এটা রহিতকরণ, সাদৃশ্যকরণ ও তুলনা ব্যতীত আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলি, যা কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।[9]
এটি সাত আয়াতবিশিষ্ট একটি মহৎ সূরা। সূরাটি আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর গুণগান ও তাঁর সর্বোচ্চ গুণসমৃদ্ধ সুন্দর নামের বর্ণনা, বিচার দিবসের (যে দিবসে সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে) বর্ণনা, গভীর প্রার্থনা ও নিবিড় ইবাদতে নিমজ্জিত হওয়া, প্রভুত্ব ও রাজত্বে আল্লাহকে একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রদান, মহিমাময় ও বরকতময় একক সত্তা হিসেবে তাঁকে স্বীকৃতি প্রদান, যেকোনো ধরনের প্রতিচ্ছবি বা অংশীদারিত্ব থেকে তাঁকে মুক্তি দান ইত্যাদি শামিল করে। এটি সরল পথ তথা ইসলামী আদর্শের সন্ধান চাওয়া যেটা ইসলামের মূল দাবি এবং এর উপর অটল থাকার সাধনাকে অন্তর্ভুক্ত করে। সৎ আমল সম্পাদনে উৎসাহ প্রদান যা তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত বানাবে আর ভ্রান্তপন্থিদের পথ অবলম্বন থেকে সতর্ক থাকা যাতে তারা ক্বিয়ামতের দিন বাতিলপন্থিদের দলভুক্ত না হয়, যারা আল্লাহর ক্রোধ ও রোষানলে পতিত হয়েছে এবং পথ হারিয়েছে।[10]
কতিপয় আলেম বলেন, সূরা ফাতিহায় চার প্রকার জ্ঞানের সমহার ঘটেছে যেগুলো হলো দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান।
প্রথমত, উৎস সম্পর্কিত জ্ঞান তথা ‘আল-হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আর-রহমানির রাহীম’ বলে সেদিকে ইশারা করা হয়েছে। ‘আনআমতা আলায়হিম’ বলে নবুঅতের জ্ঞান এবং ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’ পুনরুত্থান দিবসের জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, শাখা-প্রশাখাগত জ্ঞান, যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত ‘ইয়্যাকা না‘বুদু’ বলে এদিকেই ইশারা করা হয়েছে।
কোনো মুসলিম যখন সূরা ফাতিহা পাঠ করে, তখন সে প্রকারান্তরে একথাই ঘোষণা করে যে, হে আল্লাহ! আমরা স্বীকার করি, আপনার সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে যে জীবনবিধান প্রেরিত হয়েছে, তা-ই একমাত্র মুক্তি ও কল্যাণের পথ। আপনি আমাদেরকে তাদের পথে পরিচালিত করুন এবং তাদের পথে চলা থেকে বিরত রাখুন, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট এবং যাদের পথে কোনো কল্যাণ নেই। কেননা আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনে বর্ণিত আদর্শ ও জীবনপথই হচ্ছে বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য একমাত্র স্থায়ী ও কল্যাণকর পথ। অন্য যেকোনো পথ ও মতকে পরিহার করে এই আদর্শের আলোকে জীবন গঠন করা প্রত্যেক মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব। মুসলিমরা আজও যদি সে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হয়, তাহলে তাদের জীবন সার্থক হবে এবং তারা তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবে।
তাই সঠিক পথে চলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য অত্যাবশ্যক হলো তারা ইয়াহূদী এবং খ্রিষ্টান উভয় জাতিরই ভ্রষ্টতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে। ইয়াহূদীদের সব থেকে বড় ভ্রষ্টতা এই ছিল যে, তারা জেনেশুনেও সত্য পথের অনুসরণ করত না। তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করত। তারা তাদের নবীদেরকে হত্যা করত। তাদের পণ্ডিত ও ধর্মযাজকরা মনে করত, তাদের হালাল ও হারাম সাব্যস্ত করার অধিকার আছে। তারা উযাইর আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহর পুত্র বলে আহ্বান করত এবং শেষনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করত।
পক্ষান্তরে খ্রিষ্টানদের সব থেকে বড় ত্রুটি এই ছিল যে, তারা তাদের নবী ঈসা আলাইহিস সালাম-এর ব্যাপারে অতিরঞ্জন করেছিল। তারা তাকে আল্লাহর আসনে বসিয়েছিল। তারা তাকে আল্লাহর পুত্র এবং ত্রিত্ববাদ তথা তিন স্রষ্টার এক স্রষ্টায় বিশ্বাস করেছিল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যেও এই ভ্রষ্টতা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে, যার কারণে তারা দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং ঘৃণার শিকার হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভ্রষ্টতার গহ্বর থেকে বের করুন, যাতে তারা অবনতি ও দুর্দশার ক্রমবর্ধমান অগ্নিগ্রাস থেকে সুরক্ষিত থাকে।
মুসলিমরা যেন ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানদের আদর্শ অনুসরণ না করে- সে সম্পর্কে এখানে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের হীন উদ্দেশ্য এবং এর অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সজাগ করা হয়েছে। কেননা তারা ইসলামের চিরশত্রু। যেমন অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ﴾ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না’ (আল-মায়েদা, ৫/৫১)। তবে পার্থিব ক্ষতি থেকে বাঁচার প্রয়োজনে তাদের সাথে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখার অনুমতি রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে,﴿لَا یَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَیْسَ مِنَ اللّٰهِ فِیْ شَیْءٍ اِلَّا اَنْ تَتَّقُوْا مِنْهُمْ تُقاة وَ یُحَذِّرُكُمُ اللّٰهُ نَفْسَه وَ اِلَی اللّٰهِ الْمَصِیْرُ﴾ ‘মুমিনগণ মুমিন ছাড়া কোনো কাফেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না। যদি কেউ এটা করে, তবে তাদের সঙ্গে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। কিন্তু যদি তোমরা তাদের থেকে কোনোরূপ অনিষ্টের আশঙ্কা করো (তবে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখা যাবে)। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজ সত্তা সম্পর্কে ভয় দেখাচ্ছেন। (মনে রেখো) সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে’ (আলে ইমরান, ৩/২৮)।
এ কারণে ইসলাম ও ইসলামী খেলাফতের মৌলিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে এমন বিষয় বাদে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসেবা গ্রহণ ও চাকরিবাকরি ইত্যাদি বিষয়ে অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে কোনো আপত্তি নেই।
উপরে বর্ণিত তিনটি জাতি মুসলিম, ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানের মধ্যে সর্বযুগে মুক্তিপ্রাপ্ত দল হলো তারাই, যারা ছিরাতে মুস্তাক্বীমের অনুসরণ করেছে, যারা আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর ছাহাবীদের পথে জীবন পরিচালনা করেছে। শেষ যামানায় তারা হলো কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী দল।[12] আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মতের উপর এমন সময় আসবে, যখন আমার উম্মত তাই করবে যা বনী ইসরাঈল করেছিল, এমনকি একটি জুতা যেমন অপর জুতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ (তাদের মধ্যে পূর্ণ সামঞ্জস্যতা বিরাজ করবে)। এমনকি তাদের মধ্যে যদি এমন লোক থেকে থাকে, যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করেছিল, তবে আমার উম্মতের মধ্যে তেমন লোকই হবে, যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করবে। বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তাদের মধ্যকার একটি মাত্র দল ব্যতীত প্রতিটি দলই জাহান্নামে যাবে’। ছাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম বললেন তারা কারা? তিনি বললেন, ‘আমি এবং আমার ছাহাবীগণ যে তরীকার উপর দৃঢ় আছি’।[13] ‘তারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত হক্ব-এর উপর বিজয়ী থাকবে। যারা তাদেরকে অপমানিত করার চেষ্টা করবে, তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।[14] বৈশিষ্ট্যগত পরিচয়ে তারা ‘আহলুল হাদীছ’ হবে।[15] আল্লাহ বলেন,﴿وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُ وَلاَ تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾ ‘আর এটাই হলো আমার সরল পথ। অতএব, তোমরা এর অনুসরণ করো। এ পথ ছেড়ে অন্য পথের অনুসরণ করো না। তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আল্লাহ তোমাদেরকে এই নির্দেশ দিচ্ছেন, যাতে তোমরা ঐসব পথ থেকে বেঁচে থাকতে পার’ (আল-আনআম, ৬/১৫৩)।
উল্লেখ্য, উক্ত আয়াতে ক্বাদারিয়া, মু‘তাযিলা, ইমামিয়া প্রভৃতি দলের ভ্রান্ত আক্বীদার প্রতিবাদ রয়েছে। কেননা তারা বিশ্বাস করে, প্রত্যেক মানুষ নিজেই তার ভালোমন্দ সকল কর্মের স্রষ্টা। জীবনের সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণাধীন। অতএব, সরল পথের জন্য আল্লাহর নিকটে হেদায়াত প্রার্থনার প্রয়োজন নেই। অথচ এখানে যেমন সরল পথের নির্দেশনা প্রার্থনা করা হয়েছে, তেমনি অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথের অনুসরণ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট সঠিক পথের সন্ধান কামনা করা হয়েছে।[16] এজন্য আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করতে হবে,﴿رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ﴾ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! হেদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করে দিয়ো না। আমাদেরকে তোমার নিকট থেকে রহমত দান করো। নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা’ (আলে ইমরান,৩/৮)।[17]
অতএব ‘মাগযূব’ হলো ইয়াহূদীরা এবং যুগে যুগে ঐসব লোকেরা, যারা ইয়াহূদীদের মতো হক্ব জেনেও তার উপর আমল করেনি। ‘যল্লীন’ হলো নাছারাগণ এবং যুগে যুগে ঐসব লোক, যারা খ্রিষ্টানদের মতো মূর্খতাবশত হক্ব বিরোধী আমল করেছে। মানুষ হক্ব প্রত্যাখ্যান করে মূলত হঠকারিতা ও অজ্ঞতার কারণে। দুটির মধ্যে কঠিনতর হলো হঠকারিতার দোষ। যে কারণে ইয়াহূদীরা স্থায়ীভাবে অভিশপ্ত হয়েছে। সেজন্য এই আয়াতে ইয়াহূদীদের আলোচনা আগে আনা হয়েছে এবং খ্রিষ্টানদের কথা পরে আনা হয়েছে।
‘আমীন’ যা সূরা ফাতিহার শেষে পড়তে হয় তার কয়েকটি অর্থ বলা হয়েছে। آمين অর্থ اَللَّهُمَّ اسْتَجِبْ ‘হে আল্লাহ! তুমি কবুল করো’। এটি إسم فعل অর্থাৎ বাহ্যিক আকারে এটি বিশেষ্য হলেও বাস্তবে তা ফে‘ল অর্থাৎ ক্রিয়াপদের অর্থ দেয়। যেমন- (كَذَلِكَ فَلْيَكُنْ) এই রকমই হোক। (لاَ تُخَيِّبْ رَجَآءَنَا) আমাদের আশা ব্যর্থ করো না। (اللَّهُمَّ اسْتَجِبْ لَنَا) হে আল্লাহ! আমাদের দু‘আ কবুল করো। آمين আলিফ-এর উপরে ‘মাদ্দ’ ياسين-এর ওযনে অথবা ‘যবর’ يَمِيْن-এর ওযনে দুই ভাবেই পড়া জায়েয আছে।[18]
সূরা ফাতিহার শেষে ‘আমীন’ বলার ব্যাপারে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন এবং তার ফযীলতও উল্লেখ করেছেন। কাজেই ইমাম এবং মুক্তাদী সকলের ‘আমীন’ বলা উচিত। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবীগণ জাহরী (সশব্দে পঠনীয়) ছালাতগুলোতে উচ্চৈঃস্বরে ‘আমীন’ বলতেন। বলাই বাহুল্য যে, উঁচু শব্দে ‘আমীন’ বলা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত এবং ছাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম-এর সম্পাদিত আমল। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষেরা আমীন বলা ছেড়ে দিল! অথচ আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘গায়রিল মাগযূবি আলায়হিম ওয়ালাযযল্লীন’ বলতেন, তখন উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতেন।[19]
মূলত, যারা সূরা আল-ফাতিহার অর্থ বুঝে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ শেষ করার পর তাদের মন থেকে দু‘আ করবে, আল্লাহ তাআলা তাদের দু‘আ কবুল করবেন। হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,إِذَا قَالَ الْإِمَامُ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ فَقُولُوا آمِينَ فَمَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘ইমাম যখন গয়রিল মাগযূবি আলায়হিম ওয়ালাযযল্লীন বলেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বা ‘হে আল্লাহ কবুল করো’ একথাটি বলো। কেননা যার কথাটি ফেরেশতাদের কথা অনুযায়ী হবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’।[20] অন্য বর্ণনায় এসেছে,وَإِذَا قَالَ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ فَقُولُوا آمِينَ يُجِبْكُمُ الله ‘যখন ইমাম ‘গয়রিল মাগযূবি আলায়হিম ওয়ালাযযল্লীন’ বলেন, তখন তোমরা আমীন বা হে আল্লাহ কবুল করো একথাটি বলো; এতে আল্লাহ তোমাদের আহ্বানে সাড়া দিবেন (দু‘আ কবুল করবেন)’।[21] অন্য এক হাদীছে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَا حَسَدَتْكُمْ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلَامِ وَالتَّأْمِينِ ‘ইয়াহূদীরা তোমাদেরকে সালাম ও আমীন বলার চেয়ে বেশি কোনো বিষয়ের উপর হিংসা করে না’।[22] আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِنَّ الْيَهُوْدَ قَوْمٌ حُسَّدٌ وَإِنَّهُمْ لاَ يَحْسُدُوْنَا عَلَى شَيْءٍ كَمَا يَحْسُدُوْنَا عَلَى السَّلاَمِ وَعَلَى آمِيْنَ ‘ইয়াহূদীরা হিংসুক জাতি। তারা আমাদেরকে বেশি হিংসা করে আমাদের পারস্পরিক সালাম বিনিময়ের কারণে এবং (সূরা ফাতিহা শেষে) আমীন বলার কারণে’।[23] কারণ ইয়াহূদী ও নাছারার পথে না গিয়ে ছিরাতে মুস্তাক্বীম-এর হেদায়াত চেয়ে সূরা ফাতিহার শেষে যে দু‘আ করা হয় এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে সমস্বরে ‘আমীন’ বলে আল্লাহর নিকটে যে সমবেত প্রার্থনা করা হয়, এটা তারা বরদাশত করতে পারে না।
অতএব, হাদীছে বর্ণিত উচ্চৈঃস্বরে পঠিত ছালাতে সশব্দে ‘আমীন’ বলার বিশুদ্ধ সুন্নাতের উপরে আমল করা প্রত্যেক মুমিনের নৈতিক কর্তব্য। তাছাড়া ইমামের সশব্দে সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ‘ছিরাতুল মুস্তাক্বীম’-এর হেদায়াত প্রার্থনার পর মুক্তাদীদের নীরবে আমীন বলা যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য নয় কি?
সূরা ফাতিহা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এই সূরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করে সে আলোকে জীবন গঠনের চেষ্টা করা প্রত্যেকের উচিত।
প্রভাষক (আরবী), বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল।
[1]. আবূ জা‘ফর মুহাম্মাদ ইবনে জারীর, তাফসীরে তাবারী, (প্রথম প্রকাশ: ২০০১, দারুল হিজর লি-ত্বাবাআহ ওয়ান নাশর ওয়াত-তাউযীয়ু ওয়াল ইলান, কায়রো, মিশর), ১/১৭৭।
[2]. ইবনে কাছীর, তাফসীরুল কুরআনুল আযীম, (প্রথম প্রকাশ: ১৪৩১ হিজরী, দারু ইবনুল যাওযী, লিন নাশরি ওয়াত তাউযী, সঊদী আরব), ১/৬১০।
[3]. https://surahquran.com/aya-tafsir-7-1.html#moyassar
[4]. তাফসীরে তাবারী।
[5]. আবূ জা‘ফর মুহাম্মাদ ইবনে জারীর, তাফসীরে তাবারী, (প্রথম প্রকাশ: ২০০১, দারুল হিজর লি-ত্বাবাআহ ওয়ান নাশর ওয়াত তাউযীয়ু ওয়াল ইলান, কায়রো, মিশর), ১/১৭৮।
[6]. মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৭৮, ৩৭৯।
[7]. http://www.quran7m.com/searchResults/001007.html
[8]. মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৭৮, ৩৭৯।
[9]. ইবনে কাছীর, তাফসীরুল কুরআনুল আযীম, (প্রথম প্রকাশ: ১৪৩১ হিজরী, দারু ইবনুল যাওযী, লিন-নাশরি ওয়াত-তাউযী, সঊদী আরব), ১/৬৬০।
[10]. প্রাগুক্ত।
[11]. https://surahquran.com/Explanation-aya-7-sora-1.html#waseet
[12]. তিরমিযী, হা/২৬৪১।
[13]. তিরমিযী, হা/২৬৪১।
[14]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯২০।
[15]. তিরমিযী, হা/২১৯২।
[16]. তাফসীর কুরতুবী, ১/১৭১।
[17]. তাফসীর কুরতুবী, ১/১৭১; ইবনু কাছীর, ১/৯৭।
[18]. তাফসীর কুরতুবী, ১/১৭১; ইবনু কাছীর, ১/৯৭।
[19]. তাফসীর কুরতুবী, ১/১৭১; ইবনু কাছীর, ১/৯৭।
[20]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৮২; ছহীহ মুসলিম, হা/৪০৯।
[21]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪০৪।
[22]. ইবনু মাজাহ, হা/৮৫৬।
[23]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৫৮৫; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬।