কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের ফযীলত ও করণীয়

post title will place here

আল্লাহ তাআলা বান্দার উপর বিশেষ অনুগ্রহের মাধ্যমে পাপমোচনের সুবর্ণ সুযোগ করে দেন। যিলহজ্জ মাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সৎকর্মশীল বান্দার জন্য বিশেষ তোহফা ও নেয়ামত। বিশেষ করে প্রথম দশক। কেননা এর ফযীলত, গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফযীলতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার এই বাণীই যথেষ্ট। তিনি বলেন, وَالْفَجْرِ - وَلَيَالٍ عَشْرٍ ‘শপথ ফজরের। শপথ ১০ রাতের’ (আল-ফাজর, ৮৯/১-২)। প্রখ্যাত মুফাসসির ইবনে কাছীর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন। আর এই মতের পক্ষে রয়েছেন ইবনু আব্বাস, ইবনুয যুবায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহুমা ও মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ ছাড়াও অনেকেই।[1]

আল্লাহ তাআলা বলেন, وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ ‘তাঁরা যেন নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর যিকির করে’ (আল-হাজ্জ, ২২/২৮)। এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নির্দিষ্ট দিনসমূহ হলো— যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন।[2] এই মাসের প্রথম ১০ দিন এত গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যময় হ‌ওয়ার কারণ হলো এই দিনগুলোতে ছালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বা, হজ্জ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ইবাদতের সমাবেশ ঘটে— যা এভাবে একত্রিতভাবে অন্য কোনো সময়ে পাওয়া যায় না।[3] ফলশ্রুতিতে এই ১০ দিনে ইবাদতের সমাহার যেভাবে হাতছানি দেয়, তা লুফে নেওয়ার জন্য গুরুত্ব বিবেচনায় বান্দাকে গড়ে তুলতে যিলহজ্জ মাস আমাদেরকে উজ্জীবিত করে। আর সেই সাথে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর চেতনা হজ্জ ও কুরবানীর ইতিহাসকে চির জাগ্রত করে এবং আমাদের চেতনাকে পরিশীলিত ও উজ্জীবিত করে। ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা সূরা আল-ফাজরের আয়াতের ব্যাখ্যায় যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের কথা বলে মত ব্যক্ত করেন। এই মর্মে তার পক্ষ থেকে হাদীছ এসেছে— তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ الأَيَّامِ يَعْنِى أَيَّامَ الْعَشْرِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلاَ الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ وَلاَ الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَىْءٍ ‘এমন কোনো দিন নেই, যে দিনসমূহের সৎকাজ আল্লাহ তাআলার নিকট যিলহজ্জ মাসের এই ১০ দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করাও কি (এত প্রিয়) নয়? রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদও তার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোনো লোক আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদে বের হয় এবং এ দুটির কোনোটিই নিয়ে যদি সে আর ফিরে না আসতে পারে, তাহলে তার কথা (অর্থাৎ সেই শহীদের মর্যাদা) আলাদা’।[4] ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,مَا مِنْ عَمَلٍ أَزْكَى عِنْدَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلَا أَعْظَمَ أَجْرًا مِنْ خَيْرٍ يَعْمَلُهُ فِي عَشْرِ الْأَضْحَى ‘যিলহজ্জ মাসের ১০ দিনের আমলের চেয়ে অন্য কোনো আমল আল্লাহর নিকট অধিক ভালো ও নেকির নয়’।[5] সেজন্যই রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامُ الْعَشْرِ ‘দিনসমূহের মধ্যে দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ দিন হলো যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন’।[6]

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মতের অনুসরণীয় বরেণ্য ব্যক্তি ছাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈন যিলহজ্জ মাসকে ইবাদতের মওসূম হিসেবে গ্ৰহণ করতেন এবং এই ১০ দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) বেশি করে পাঠ করতেন; এমনকি রাস্তাঘাটে, বাজারে-বন্দরে তাকবীর ধ্বনি দিতেন। কেননা এই দশক হলো আসমানের নিচে জমিনের উপরে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত দিন। যেভাবে হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, ফযীলতপূর্ণ রাত হিসেবে লায়লাতুল ক্বদরকে মূল্যায়ন করা হয় এবং এর মধ্যে অশেষ ছওয়াব পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ বিদ্যমান থাকে, ঠিক দিনসমূহের মধ্যে মহান আল্লাহর নিকটে যিলহজ্জ মাসের এই প্রথম ১০ দিন শ্রেষ্ঠত্বের প্রামাণিকতা বহন করে।

যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের বিশেষ ফযীলতপূর্ণ আমলসমূহ:

() তাওহীদের স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন করা: তাওহীদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি না দেওয়া এবং বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন না ঘটানো ব্যতীত কোনো মুসলিমের ইবাদত কবুলযোগ্য হবে না। কেননা তাওহীদবিহীন ইবাদত অসাড়তুল্য এবং সেই ইবাদত যত‌ই চাকচিক্যময় হোক না কেন তা মহান আল্লাহ কবুল করবেন না, বরঞ্চ তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন (দ্র. আল-ফুরক্বা, ২৫/২৩)

এজন্য বিশুদ্ধ তাওহীদের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। যেহেতু তাওহীদ হলো ইবাদত কবুলের বুনিয়াদী ভিত্তি এবং তা ছাড়া ইবাদত কবুল হবেই না, সেহেতু এ বিষয়ে সর্বোচ্চ মনোযোগ ও সতর্কতা অবলম্বন করা সকল মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেবল তাওহীদের শিক্ষাই হলো আসমানের নিচে ও জমিনের উপরে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষা। যেহেতু যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক পৃথীবির দিবসসমূহের মধ্যে বিশেষ মর্যাদামণ্ডিত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মোক্ষম সময়, তাই এই উত্তম সময়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষা তাওহীদের সর্বোচ্চ প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন করতে পারি সেই দিকটিও লক্ষণীয়।

() ছিয়াম রাখা: যিলহজ্জ মাসের অন্যতম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো ছিয়াম রাখা। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি জিনিস কখনো ছাড়তেন না— আশূরার ছিয়াম, যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের ছিয়াম এবং সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম’।[7] কারণ ছিয়ামর সমতুল্য কোনো ইবাদত নেই। এজন্য তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, فَإِنَّهُ لاَ عِدْلَ لَهُ ‘কেননা তাঁর সমতুল্য কিছু নেই’।[8] ছিয়াম এমন একটি ইবাদত যদি কোনো ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একদিনও ছিয়াম রাখে, তাহলে এর বদৌলতে মহান আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে ৭০ বছরে দূরত্ব রাখবেন।[9]

() আরাফার দিন ছিয়াম রাখা: ইয়াওমু আরাফা হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ নেয়ামত, অনুগ্ৰহ আর ক্ষমা অর্জনের দিন। এই দিনে মহান আল্লাহ অসংখ্য মানুষকে তাঁর ক্ষমা দ্বারা পাপমোচন করেন। এই দিনে তাঁর রহমত বর্ষণ হয়। এই দিন এমন মহান ও সম্মানিত দিন যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِى بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ ‘এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাগণের কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কী চায়? (অর্থাৎ যা চায় আমি তাদেরকে তাই দিব)’।[10] অন্য হাদীছে এসেছে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরাফার ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَ ‘অতীতের এবং বর্তমান বছরের পাপ মোচন করে’।[11] আরাফার দিনের সর্বশ্রেষ্ঠ দু‘আ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ ‘সকল দু‘আর শ্রেষ্ঠ দু‘আ হলো আরাফার দিনের দু‘আ আর শ্রেষ্ঠ কালেমা (যিকির) যা আমি পাঠ করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ পাঠ করেছেন তা হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা শারীকালাহূ লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সকল শক্তির আধার।[12]

উল্লেখ্য, যারা আরাফার মাঠে অবস্থান করবে তথা হাজী, তাঁরা এই দিনের ছিয়াম রাখবে না, বরং যারা হাজী নয় (আরাফার মাঠে অবস্থান করবে না) তারা এই ছিয়াম রাখবে। কেননা আরাফার মাঠে অবস্থানকারীদের জন্য সেদিন সবচেয়ে বড় আমল হলো মহান আল্লাহর নিকটে বেশি বেশি দু‘আ করা। কারণ সেদিন আরাফার মাঠে অবস্থানকারীদের নিকটবর্তী হন আল্লাহ তাআলা। তাই তারা সেদিন আল্লাহর কাছে যা চাইবে, তাই আল্লাহ তাআলা দিবেন বলে ছহীহ মুসলিমের হাদীছ প্রমাণ বহন করে।

() ত‌ওবা ও ইস্তিগফার করা: তাওবা ও ইস্তিগফার করার মাধ্যমে যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর প্রীতিভাজন বান্দায় পরিণত হ‌ওয়ার চেষ্টা করা ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেহেতু এই দশক ইবাদতের সমাহার নিয়ে আমাদের দুয়ারে করাঘাত করে, তাই প্রত্যেক বিচক্ষণ মুসলিমের উচিত হলো, এই প্রথম দশককে অতীতের কৃতকর্মের কারণে ত‌ওবা করা এবং ইস্তিগফার দ্বারা নিজের পাপমোচন করে আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হ‌ওয়া। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে ৭০ বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।[13] পাপের পরিমাণ যত‌ই বেশি হোক না কেন, তাওবা ও ইস্তিগফার দ্বারা যদি এই দুনিয়ায় জীবনে সকল পাপরাশি ক্ষমা করার মতো সৌভাগ্য অর্জন করতে কেউ ব্যর্থ হয়, তাহলে সত্যিকার অর্থে সে হতভাগা। কেননা এই রহমত পূর্ণ, আল্লাহকে খুশি করার মোক্ষম সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়া একজন সফল মুমিন জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

() আত্মসমালোচনা করা: ইবাদতের এই সুন্দর ম‌ওসুম বিশেষ করে এই প্রথম ১০ দিনে বিভিন্ন ধরনের ইবাদতের মাধ্যমে সময়কে অতিবাহিত করা এবং পূর্বের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের কারণে লজ্জিত হ‌ওয়া আর অতীত স্মৃতির মানসপটে নিজের বিচারের কাঠগড়ায় সকল কিছু পেশ করে আত্মসমালোচনা করা প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। যদি কোনো মুসলিম এভাবে নিজেকে বিচারের কাঠগড়ায় আত্মসমালোচনা না করে, তাহলে জীবনের উন্নতি সাধন করা অসম্ভব প্রায়। ঠিক তেমনিভাবে পরকালীন জীবনে‌ও নাজাতের সীমান্তে অবস্থান করাও সম্ভব হবে না। কেননা আত্মসমালোচনা হলো নিজের সকল কর্মের বাস্তবিক প্রতিচ্ছবি। এজন্য মানবজীবনের জন্য ‘আত্মসমালোচনা’ খুবই জরুরী।

() কুরবানীর দিন কুরবানী করা: যিলহজ্জের এই মহান ১০ দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কুরবানী করা। যিলহজ্জের দশম দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মহান আল্লাহর নামে কুরবানীর পশু যবেহ করা। কেননা যিলহজ্জের দশম দিনে তথা কুরবানীর দিনে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কুরবানী করা হলো শ্রেষ্ঠ ও পছন্দনীয় ইবাদত ও আমল। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার সামর্থ্য রয়েছে অথচ সে কুরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’।[14]

যিলহজ্জের প্রথম দশক কীভাবে কাটাবেন:

নিঃসন্দেহে যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের মাহাত্ম্য, তাৎপর্য, ফযীলত অফুরন্ত, যা কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফদের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত। এজন্য এই মহত্তম সময়কে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদতের সমাহারের দ্বারা কাজে লাগানোর জন্য খুবই জোরালোভাবে প্রস্তুতি কাম্য। এজন্য বিশেষ কিছু ইবাদতের পরিকল্পনা করে সেই পরিকল্পনা মাফিক এই ১০ দিনকে ইবাদতের ম‌ওসুম হিসেবে কবুল করে দিনাতিপাত করা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ‘যারা আমার ব্যাপারে চেষ্টা ও সাধনা করবে, আমি অবশ্যই তাকে আমার রাস্তাসমূহ দেখাবো’ (আল-আনকাবূ, ২৯/৬৯)। ‌এই সময়গুলোকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গনীমত হিসেবে গ্ৰহণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সময়কে যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত। কেননা মৃত্যু অবধারিত; কখন হায়াত ফুরিয়ে যাবে তার নিশ্চয়তা কারও নেই। সুতরাং পরকালে আফসোস না করে দুনিয়ার জীবনে ইবাদতের এই মোক্ষম সময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কাজ করা সকলের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!‌

 মাযহারুল ইসলাম

দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা;
শিক্ষক, হোসেনপুর দারুল হুদা সালাফিয়্যাহ মাদরাসা, খানসামা, দিনাজপুর।


[1]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ৮/৩৯০।

[2]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ৫/৪১৫।

[3]. দ্রষ্টব্য: ফাতহুল বারী, ২/৪৬০।

[4]. আবূ দাঊদ, হা/২৪৩৮, হাদীছ ছহীহ; ইবনু মাজাহ, হা/১৭২৭।

[5]. বায়হাক্বী, হা/৩৪৭৬, আলবানী রাহিমাহুল্লাহ সনদ ‘জায়্যিদ’ বলেছেন।

[6]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১৫০, ৫/৪৬০।

[7]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪৫৯; আবূ দাঊদ, হা/২৪৩৭।

[8]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২০৩, ছহীহ মুসলিমের শর্তে ছহীহ।

[9]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫৩।

[10]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৮; মিশকাত, হা/২৫৯৪।

[11]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬২।

[12]. তিরমিযী, হা/৩৫৮৫, হাসান।

[13]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৩০৭; তিরমিযী, হা/৩২৫৯।

[14]. ইবনু মাজাহ, হা/৩১২৩, হাসান।

Magazine