কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (৯) : শবেবরাত ইসলামী পরিভাষা না হলেও উপমহাদেশে শা‘বান মাসের মধ্যবর্তী রজনীকে বুঝানো হয়। এ মর্মে হাদীছগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ বলা হলেও ইবনু মাজাহতে বর্ণিত (১৩৯০ নম্বর) হাদীছকে আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাসান বলেছেন। তাহলে আহলেহাদীছগণ একে বিদআত বলেন কেন?

উত্তর: শবে বরাত ইসলামী পরিভাষা নয়, একথায় ঠিক। শবে বরাত বলে ১৫ শা‘বান বুঝালেও তা পরিহার করতে হবে। কেননা তা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বলা শব্দ নয়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিসফ শা‘বান’। সাথে সাথে শবে বরাত বলে, সমাজের লোক যা বুঝে তা ১৫ শা‘বানের ঘটনা নয় বরং তা হয় রামাযান মাসের লায়লাতুল ক্বদরের রাত্রি। আর হাদীছ জাল বা যয়ীফ একথায় ঠিক। কারণ আলবানী রহিমাহুল্লাহ অত্র হাদীছের সূত্রকে যয়ীফ বলেছেন। তবে তিনি অন্যান্য সনদ ও ‘শাহেদ’-এর উপর ভিত্তি করে হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন (সিলসিলা ছহীহাহ, ৩/১৩৮ পৃঃ, হা/১১৪৪)। শায়খ আলবানী রহিমাহুল্লাহ-এর ইলম, মর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতা সত্ত্বেও এই হাদীছটিতে তাঁর ইজতিহাদ বা গবেষণা আমাদের কাছে অগ্রাধিকারযোগ্য মনে হয়নি। কারণ, হাদীছটির অন্যান্য সনদ ও শাহেদ এমন ত্রুটিপূর্ণ, যা পরস্পর মিলেও ‘গ্রহণযোগ্য’ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। বরং শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কিত হাদীছগুলো হয় জাল, না হয় দুর্বল (ইবনু রজব, লাত্বায়েফুল মা‘আরেফ, পৃঃ ১৩৭; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে বায ১/১৮৭ পৃ.)। তর্কের খাতিরে আমরা যদি ধরে নিই যে, শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে ‘গ্রহণযোগ্য’ হাদীছ আছে, কিন্তু ঐ দিনে বা রাতে অতিরিক্ত ও বিশেষ কোন ইবাদত সম্পর্কে ‘ছহীহ’, ‘হাসান’ বা এমনকি ‘অল্প যঈফ’ হাদীছও বর্ণিত হয়নি। বরং এ সম্পর্কিত সব হাদীছ হয় অত্যন্ত দুর্বল, আর না হয় জাল। এজন্য, আহলেহাদীছগণ শুধু নয়; বরং সর্বযুগের জগদ্বিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম শবে বরাত উপলক্ষ্যে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগীকে বিদ‘আত বলেছেন। এমনকি যে আলবানী রহিমাহুল্লাহ ইবনু মাজাহর উপর্যুক্ত হাদীছকে ‘ছহীহ’ বলেছেন, খোদ তিনিই বলেছেন, نعم لا يلزم من ثبوت هذا الحديث اتخاذ هذه الليلة موسمًا يجتمع الناس فيها، ويفعلون فيها من البدع ‘তবে হ্যাঁ, এই হাদীছ প্রমাণিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, এই রাত্রিকে এমন মৌসুম হিসাবে গ্রহণ করতে হবে, যাতে মানুষ মসজিদে একত্রিত হবে এবং বিদ‘আতসমূহ করবে’ (আল-ক্বাসেমী, ইছলাহুল মাসাজিদ মিনাল বিদা‘ ওয়াল আওয়ায়েদ, পৃঃ ৯৯, টীকা নং ২)।

প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ

শরিয়তপুর।

Magazine