কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (৪৫): জনৈক আলেম বলেন, যেখানে যে আমল প্রচলন আছে সেখানে সেই আমলই করতে হবে এবং সংখ্যায় যেখানে বেশি সেখানে সেইভাবে নাকি আমল করতে হবে। যেমন-আমাদের মসজিদের অধিকাংশ হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে ছালাত আদায় করে, রাফউল ইয়াদাইন করে না, সশব্দে আমীন বলে না, তারপর ছালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করে ইত্যাদি। আমাদের নাকি সেই অনুযায়ী ছালাত আদায় করতে হবে।এটার কোনো ভিত্তি আছে কি?

উত্তর: এটি একটি বানোয়াট ভিত্তিহীন কথা। বরং সর্বাবস্থায় কুরআন এবং ছহীহ হাদীছের প্রতি নিঃশর্ত আমল করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাত’ (মুওয়াত্ত্বা, হা/৩; তিরমিযী, হা/৪১২০)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মূসা আলাইহিস সালাম-এর উম্মত ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে’। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সে জান্নাতী দল কোনটি? রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি ও আমার ছাহাবীগণ যে মত ও পথের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, সেই মত ও পথের উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তারাই জান্নাতী দল’ (তিরমিযী, হা/২৬৪১)। এমনকি সকল ইমামগণ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করতে বলেছেন। ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদীছ যেটি ছহীহ সেটাই আমার মাযহাব (রাদ্দুল মুখতার, ১/১৫৪; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীখ, ১/৬৩)। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যদি তোমরা আমার কোনো কথা হাদীছের সাথে গড়মিল দেখতে পাও, তাহলে তোমরা হাদীছ অনুযায়ী আমল করো, আমার নিজের উক্তিকে দেয়ালে ছুড়ে ফেলো’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ১/৩৫৭)। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি নিছক একজন মানুষ। ভুল করি, শুদ্ধও করি। তাই আমার মতামতকে যাচাই করে নিও। কুরআন ও সুন্নাহর সাথে যতটুকু মিলে সেটুকু গ্রহণ করো আর গড়মিল পেলে সেটুকু বাদ দিয়ে দিও (ঈকাযুল হিমাম, পৃ. ১০২)। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, তুমি আমার অন্ধ অনুসরণ করো না। মালেক, শাফেঈ, আওযাঈ, ছাওরী তাদেরও না; বরং তারা যেখান থেকে (সমাধান) নিয়েছেন তুমিও সেখান থেকেই নাও (ঈ‘লামুল মুওয়াক্কিঈন, ২/৩০২)।

প্রশ্নকারী : কবিরুল ফয়াজী

গোপালগঞ্জ।


Magazine