কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (৪৫): জনৈক ব্যক্তি বয়সন্ধিকালে পাপ করে আল্লাহর কসম খেয়ে পাপ থেকে বেঁচে থাকার শপথ করে। অতঃপর আবার সে পাপে জড়িয়ে যায়। আবার সে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় ও তাহাজ্জুল ছালাত আদায় করে, তাহলে কি তার পাপ ক্ষমা হবে? পাপ থেকে বাঁচার কোনো দু‘আ বা মাধ্যম আছে কি?

উত্তর: এ অবস্থায় নিরাশ না হয়ে ক্ষমা চেয়ে যেতে হবে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি, ‘এক বান্দা গুনাহ করল। তারপর সে বলল, হে আমার রব! আমি তো গুনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তার প্রতিপালক বললেন, আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার রয়েছে একজন রব, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি মাফ করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করল এবং সে আবার গুনাহতে জড়িয়ে গেল। বান্দা আবার বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গুনাহ করে বসেছি। আমার এ গুনাহ তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার আছে একজন রব, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। এরপর সে বান্দা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল সে অবস্থায় থাকল। আবারও সে গুনাহতে জড়িয়ে গেল। সে বলল, হে আমার রব! আমি তো আরো একটি গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরকম তিনবার বললেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭৫০৭)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শয়তান বলেছিল,

হে আমার প্রভু! আপনার মহিমার কসম! যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার বান্দাদের প্রাণ তাদের দেহে থাকবে, আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে ছাড়ব না। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার মহিমা ও গৌরবের কসম! যতক্ষণ তারা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাদের ক্ষমা করতে থাকব’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৩৭)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ মাত্রই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীরাই উত্তম’ (তিরমিযী, হা/২৪৯৯)। প্রশ্নকারী যেহেতু কসম করে আবার পাপ করে কসম ভঙ্গ করেছে, সেহেতু তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেসব কসম দৃঢ়ভাবে করো, সেগুলোর জন্য কাফফারা হলো দশজন গরিবকে খাবার খাওয়ানো অথবা তাদের পোশাক দান করা অথবা একজন দাস মুক্ত করা’ (আল-মায়েদা, ৫/৮৯)।

পাপ থেকে মুক্তির শারঈ পদ্ধতি: ১. আন্তরিক তওবা (আত-তাহরীম, ৬৬/৮)। ২. তাহাজ্জুদ ও ইস্তেগফার (আয-যারিয়াত, ৫১/১৭–১৮), ৩. পাপের কারণ থেকে দূরে থাকা, পাপের পরিবেশ, বন্ধু, ওয়েবসাইট, চিন্তা বা ছবি থেকে দূরে থাকা (মুসনাদ আহমাদ, হা/২২১৭৪, ছহীহ)। ৪. দু‘আ করা, اللهم اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ ‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো, আমার তওবা কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু’ (তিরমিযী, হা/৩৫৫১)। ৫. নেক আমলে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। ছালাত, নফল ছিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দান-ছাদাকা ইত্যাদি ভালো কাজগুলো করা (তিরমিযী, হা/১৯৮৭)। ৬. হতাশ না হওয়া (আয-যুমার, ৩৯/৫৩)।

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।


সাওয়াল জওয়াব

প্রশ্ন (১): আল্লাহ তাআলার সত্তা ও গুণ নিয়ে আমাদের বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিত? OCD (Obsessive Compulsive Disorder)-এর কারণে এসব বিষয়ে সন্দেহ আসে। এমতাবস্থায় করণীয় কী?

প্রশ্ন (৪) অনেকে বলেন, তাবীয পরলে দুষ্টু জিন আক্রমণ করতে পারে না আর খোলার পর তীব্র আক্রমণ করা হয়, কখনো মৃত্যুঝুঁকিও দেখা দেয়। এ অবস্থায় রোগী ও তার পরিবারের করণীয় কী?

প্রশ্ন (৫): আমার এলাকায় মানুষ হানাফী মাযহাবের কট্টর অনুসারী। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমলের কথা বললে তারা বিরক্ত হয় ও বিরোধিতা করে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে তাদেরকে কুরআন-সুন্নাহর পথে আহ্বান জানানো উচিত? আর তারা তা অস্বীকার করলে এর বিধান কী? আহলেহাদীছ নাম শুনলেই তারা বাঁকা চোখে দেখে।

প্রশ্ন (৬): আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, মৃত ব্যক্তিকে তিন দিন পর্যন্ত বিলম্ব করে দাফন করা যায়। এ বক্তব্য কি সঠিক?

প্রশ্ন (৭): আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ ক্ষমা করেন, কিন্তু বান্দার হক্ব নষ্ট করলে ক্ষমা করেন না- এমন কথা শোনা যায়। অনেকের মৃত্যু হয়ে গেলে, তাদের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও থাকে না। এমতাবস্থায় কী করা উচিত?

প্রশ্ন (৮): আমরা জানি যে, বদনজর সত্য। গাড়ি, বাড়ি বা অন্য কোনো জিনিসে বদনজর লাগলে এ থেকে বাঁচার উপায় কী?

প্রশ্ন (৪৩): বর্তমানে অনেকে আকীকার গোশত বণ্টন না করে দাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান করে। এ পদ্ধতি কি শরীআতসম্মত, নাকি গোশত বণ্টন করাই উত্তম?

প্রশ্ন (১৪): পণ্য বিক্রির জন্য ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় কিছু মিথ্যা কথা বলা যাবে কি? যেমন- এটা আপনাকে খুব মানাবে। এই পোশাকে আপনাকে অসাধারণ লাগবে।

প্রশ্ন (১৫): জুমআর খুৎবার সময় ইমাম যা বলছেন তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে মোবাইল বা বই-খাতা দেখা কি জায়েয?

প্রশ্ন (১৬): হালাল পশুর কাঁচা মাংস বা কাঁচা মাছ খাওয়া কি জায়েয?

প্রশ্ন (১৭): অফিসে কাউকে ডেকে পাঠানোর সময় বলা হয়, ‘বস আপনাকে সালাম দিয়েছেন’। শুধু ডাকার উদ্দেশ্যে এভাবে বলা কি জায়েয?

প্রশ্ন (১৮): মসজিদ, মাদরাসা বা বিভিন্ন জালসার টাকা তোলার জন্য রাস্তায় মাইক দিয়ে গাড়ি আটকিয়ে তা সংগ্রহ করা কি জায়েয?

প্রশ্ন (১৯): আমি টেইলারের কাজ করি। অনেক সময় ব্লাউজ বা থ্রি-পিস এমনভাবে বানাতে হয় যা শরীআতের দৃষ্টিতে পর্দার সাথে মানানসই নয়। আমি মানুষকে বুঝালেও তারা শোনে না। এভাবে পোশাক বানালে কি আমার গুনাহ হবে?

প্রশ্ন (২০): ফেসবুক, ইউটিউব চালাতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু মেয়েদের বিজ্ঞাপন আসে যা দেখতেই হয়। এক্ষেত্রে করণীয় কি?

প্রশ্ন (২১): কোনো পুরুষ শিক্ষকের কাছে কি মহিলারা ক্লাস করতে বা শিক্ষা অর্জন করতে পারবে?

প্রশ্ন (২২): বাবা-মা চান আমি চাকরি করি, কিন্তু আমার ইচ্ছা ব্যবসা বা কৃষি কাজে। বাবা-মার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এগুলো করা কি জায়েয হবে?

প্রশ্ন (২৩): বিধর্মীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দোকান দেওয়া বা ভাড়া দেওয়া কি বৈধ?

প্রশ্ন (২৪): এককালীন পেমেন্টে এক বছরের জন্য স্বাস্থ্যবীমা নেওয়া হয়, যার টাকা ফেরত দেওয়া হয় না— এটা কি শরীআতসম্মত?

প্রশ্ন (২৬):খেলা দেখা কি হারাম? যেমন- ক্রিকেট বা ফুটবল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় খেলাধুলা সম্পর্কিত প্রশ্ন আসে। তাই খেলা না দেখে শুধু খবর জানা বা পড়া কি ইসলামে জায়েয হবে? এতে কি কোনো পাপ আছে?

প্রশ্ন (২৫): রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের পাপাচার, পাত্রপক্ষের কাছে মেয়ের পরিবারের দোষ, বন্ধুকে কারো অযোগ্যতার কথা জানানো বা অফিসের সহকর্মীর গাফিলতি বসকে জানানো— এসব ক্ষেত্রে সত্য বললে তা কি গীবত হবে, নাকি শরীআত এতে অনুমতি দেয়?

প্রশ্ন (৩৫): আমার স্ত্রীর বান্ধবী মারা যাওয়ায় তার পরিবার আমার স্ত্রীকে মেয়ের মতো ভালোবাসে। তারা চান আমরা তাদের ‘আব্বু-আম্মু’ বলে ডাকব এবং তারাও আমাদের ‘মেয়ে-জামাই’ হিসেবে সম্বোধন করবেন। শরীআতের দৃষ্টিতে এভাবে সম্বোধন করা কি জায়েয?

প্রশ্ন (৩৬): চাকরির কারণে আমি ঢাকায় থাকি, স্ত্রী থাকে গ্রামে। প্রায় এক বছর আলাদা থাকায় স্ত্রী বলে আমি তার হক্ব নষ্ট করছি। কিন্তু তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার বা আমার গ্রামে থাকার সামর্থ্য নেই। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?

প্রশ্ন (৩৭): আমার স্বামী ৫ বছর ধরে প্রবাসে আছেন। তিনি তার উপার্জনের প্রায় সবটাই আমার শ্বশুরবাড়ির চাহিদা পূরণে ব্যয় করেন। আমাদের জন্য ব্যয় খুব সামান্য, কোনো সঞ্চয়ও নেই। সন্তানরা বাবার অনুপস্থিতিতে কষ্ট পাচ্ছে, আমিও হতাশাগ্রস্ত। স্বামীকে বললেও তিনি শুধু ধৈর্য ধরতে বলেন। স্ত্রী হিসেবে এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?

প্রশ্ন (৩৮): এক দ্বীনদার মহিলা (বয়স ২৮) তার গুরুতর অসুস্থ শ্বশুরকে (বয়স ৭০-৮০) অন্য কোনো সহযোগী না থাকায় উঠা-বসা করানো ও ইস্তিঞ্জা (প্রস্রাব-পায়খানা) পরিষ্কার করাতে বাধ্য হন। এতে শরীআতের সমাধান কী? এতে তার গুনাহ হবে কি?

প্রশ্ন (৩৯): সন্তান গর্ভে আসার খবর উৎসাহের সঙ্গে অন্যকে জানানো কি শরীআতসম্মত? এতে কোনো ক্ষতি বা উপকারের বিষয় শরীআতে উল্লেখ আছে কি?

প্রশ্ন (২৭): আমি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট বুকিংয়ের কাজ করি। আগে ন্যূনতম টাকা রিচার্জ করতে হয়, পরে বুকিং অনুযায়ী কমিশন ও বোনাস মেলে। এ আয় কি হালাল?

প্রশ্ন (২৮): ধান লাগানোর আগেই কৃষকের কাছ থেকে অগ্রিম কম দামে ধান কেনা হয় এবং ধান ওঠার পর ধান অথবা সে সময়ের বাজারমূল্য অনুযায়ী ধানের দাম নেওয়া হয় (যা অগ্রিম মূল্যের চেয়ে বেশি)। এ ধরনের লেনদেন কি হালাল, নাকি সূদী কারবার?

প্রশ্ন (২৯): কেউ যদি আমাকে হাদিয়া দেয় বা খাবারের দাওয়াত দেয় এবং আমি জানি, তার উপার্জন হারাম; তাহলে আমার করণীয় কী? আর যদি না জানি তার উপার্জন হালাল নাকি হারাম, তখন কী করব? কোন কারণে উপার্জন হারাম হয়? আর যদি পরিবারের উপার্জন হারাম হয়, যাদের উপর আমি নির্ভরশীল; তাহলে আমার করণীয় কী?

প্রশ্ন (৩০): কাল্পনিক নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্কড-ইন ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভেরিফায়েড একাউন্ট তৈরি করে বিক্রি করলে এবং সেগুলো অশ্লীল বা হারাম কাজে ব্যবহার না হলে এই আয় কি হালাল হবে?

প্রশ্ন (৩১): মোবাইল বা কম্পিউটারে ফ্রি-ফায়ার, পাবজি ইত্যাদি গেম খেলা কি হালাল? এসব গেমে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে প্রাইজ মানি দেওয়া হয়। এভাবে খেলে উপার্জন করা কি বৈধ? আর এমন টুর্নামেন্ট আয়োজক কোম্পানিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে যেখানে টুর্নামেন্টের লোগো, ব্যানার ও পোস্টার তৈরি করতে হয়। এই উপার্জন কি হালাল হবে?

Magazine