কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

জেরুযালেম ও বায়তুল ‍মুকাদ্দাস: ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা

post title will place here

ভূমিকা: গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তীনের মজলুম মুসলিমদের উপর ইসরাঈলের জায়োনিস্ট ইয়াহূদীবাদী কর্তৃক নির্যাতন, জুলুম, অত্যাচারের যে স্টিমরোলার চলে আসছে তা কমা তো দূরের কথা; দিন দিন বেড়েই আছে। কিছুদিন পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাস-কেন্দ্রিক কিছু ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপের প্রতিবাদে গাজার সাহসী মুসলিমগণ ইসরাঈলে যে পালটা হামলা করেন তারই প্রেক্ষিতে গাজার উপর ইসরাঈলী সন্ত্রাসীদের ভয়ংকর, স্মরণকালের ভয়াবহ হামলার যে দৃশ্য পৃথিবীবাসী দেখে এসেছে তা হাজার মাইল দূরে থেকেও আমাদের হৃদয়কে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। জেরুযালেম ও বায়তুল মুকাদ্দাস ইতোপূর্বেও মুসলিমদের হাতছাড়া হয়েছিল। সুদীর্ঘ শত বছর পর মুসলিমগণ পুনরায় সেটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে মুসলিমদের জেরুযালেম বিজয়ের ইতিহাস শুধু ক্রুসেড-কেন্দ্রিক সালাহউদ্দীন আইয়ূবীর ইতিহাস নয়; বরং হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন নবীর জীবনে জেরুযালেম ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। আমরা এই প্রবন্ধে ইতিহাসের পাতা থেকে জেরুযালেম ও বায়তুল মুকাদ্দাসের শিক্ষণীয় চুম্বাকাংশগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশা-আল্লাহ।

পৃথিবীর প্রথম ও দ্বিতীয় মসজিদ: প্রথমত, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ ‘নিশ্চয়ই মানুষের জন্য নির্মিত প্রথম ঘর হলো সেটা, যা রয়েছে মক্কা নগরীতে। তা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত’ (আলে ইমরান, ৩/৯৬)। আবূ যার গিফারী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বললেন, আল-মাসজিদুল হারাম তথা কা‘বাঘর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল-মাসজিদুল আক্বছা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস। আমি জিজ্ঞেস করলাম, দুয়ের মধ্যে পার্থক্য কত দিনের? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ৪০ বছরের।[1]

মুহাদ্দিছ ও মুফাসসিরগণ এই হাদীছের ব্যাখায় বলেছেন, হতে পারে আদম আলাইহিস সালাম-ই সর্বপ্রথম কা‘বা তৈরি করেছেন এবং তিনিই বায়তুল মুকাদ্দাস তৈরি করেছেন ৪০ বছর পর। আবার কারো মতে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম কা‘বা তৈরি করেছেন এবং তার ৪০ বছর পর তাঁর ছেলে ইসহাক বা ইসহাকের ছেলে ইয়াকূব আলাইহিস সালাম বায়তুল মুকাদ্দাস তৈরি করেছেন। প্রথম মন্তব্যটি বেশি গ্রহণযোগ্য। কেননা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল বায়তুল্লাহর ভিত্তি নির্মাণ করছিল, তখন তারা বলছিল- হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এই কাজকে কবুল করুন! নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী’ (আল-বাক্বারা, ২/১২৭)

উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, ঘরটি আগে থেকেই ছিল, ঘরের সীমানা ও ঘরের মাপ পূর্ব থেকেই ছিল, পূর্ব থেকে থাকা সেই ঘরের উপর নতুন করে দেওয়াল তুলছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর সন্তান ইসমাইল আলাইহিস সালাম। এই আয়াত প্রমাণ বহন করে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর পূর্ব থেকেই কা‘বা ছিল। সুতরাং আদম আলাইহিস সালাম বা তাঁর কোনো সন্তান বা তাদের হাত দিয়েই সর্বপ্রথম কা‘বা বায়তুল্লাহ এবং তার ৪০ বছর পর বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মিত হয়েছে এই মতটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।

জেরুযালেমইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এরদারুল হিজরা ও লূত আলাইহিস সালাম-এরআশ্রয়স্থল: আমরা জানি, ইরাকের ব্যাবিলন নগরীতে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর জন্ম হয়। তিনি তাঁর পিতা কর্তৃক অত্যাচারিত, নির্যাতিত, বিতাড়িত হয়ে হিজরত করে যে শহরে আসেন সেটাই জেরুযালেম। একইভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর ভাতিজা লূত আলাইহিস সালাম-এর ক্বওমকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা শহর উল্টিয়ে দিয়ে ধ্বংস করে দেন। সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরই মূলত আজেকর জর্ডানের ডেড সী বা মৃত সাগর। লূত আলাইহিস সালাম-এর অভিশপ্ত ক্বওমের শহরটি উল্টিয়ে দেওয়ার পর সেখান থেকে লূত আলাইহিস সালাম-কে উদ্ধার করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেখানে নিয়ে এসেছিলেন সেটাই জেরুযালেম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ ‘আমি ইবরাহীম এবং লূতকে উদ্ধার করে সেই জায়গায় নিয়ে এসেছি যেখানে আমি বরকত রেখেছি পৃথিবীবাসীর জন্য’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৭১)। এই আয়াতে মহান আল্লাহ জেরুযালেমকে পৃথিবীবাসীর জন্য বরকতময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

উক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমরা দেখলাম জেরুযালেমের সাথে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর সম্পর্ক রয়েছে এবং জেরুযালেমের সাথে লূত আলাইহিস সালাম-এর সম্পর্ক রয়েছে।

জেরুযালেম ও মক্কার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী ইবরাহীম: ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন বায়তুল মুকাদ্দাসে বসবাস করেন তখন কোনো একসময় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি তাঁর স্ত্রী সারাকে নিয়ে খাদ্য সংগ্রহের জন্য মিশর যান। মিশরের তৎকালীন জালেম বাদশাহ কর্তৃক তাঁর স্ত্রীকে হয়রানির অপচেষ্টার ঘটনা আমাদের মাঝে প্রসিদ্ধ আছে, যা আমরা অনেকেই জানি। সেই ঘটনার পর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হাজেরা (আ.)-কে উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে জেরুযালেমে ফেরত আসেন। অতঃপর হাজেরা (আ.)-এর গর্ভে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-এর জন্ম হয়। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নির্দেশে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর সন্তান ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-কে মক্কার কা‘বাঘর বা বায়তুল্লাহর পাশে রেখে আসেন। উল্লেখ্য যে, এখান থেকেই বায়তুল মুকাদ্দাসের সাথে কা‘বা তথা জেরুযালেমের সাথে মক্কার সম্পর্ক শুরু হয়। নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজে এক স্ত্রীকে নিয়ে জেরুযালেমে থাকতেন, আরেক স্ত্রীকে তিনি কা‘বাঘরের পাশে রেখে এসেছেন। এই সম্পর্ক শুধু একদিনের নয়; বরং ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ফিলিস্তীন থেকে বায়তুল্লাহয় কয়েকবার যাতায়াত করেছেন। কখনো সন্তানকে রাখতে গিয়েছেন, কখনো আল্লাহর নির্দেশে সন্তানকে কুরবানী করতে গিয়েছেন, কখনো তিনি কা‘বা নির্মাণ করতে গিয়েছেন। এইভাবে জেরুযালেমের সাথে মক্কার এবং বায়তুল ‍মুকাদ্দাসের সাথে কা‘বাঘরের স্থায়ী যোগসূত্র ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে স্থাপিত হয়।

ইসহাকইয়াকূব u-এর কবর জেরুযালেমের হেবরন শহরে: ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর প্রথম স্ত্রী সারাহ (আ.)-এর গর্ভে ইসহাক আলাইহিস সালাম-এর জন্ম হয়। ইসহাক আলাইহিস সালাম-এর স্ত্রীর গর্ভে ইয়াকূব আলাইহিস সালাম-এর জন্ম হয়। ইয়াকূব আলাইহিস সালাম-এর অপর নাম হচ্ছে ইসরাঈল, যার অর্থ আল্লাহর বান্দা। ইয়াকূব আলাইহিস সালাম-এর ১২ সন্তান। এই ১২ সন্তানের পরবর্তী বংশধরকেই বানূ ইসরাঈল বা ইসরাঈলের বংশধর বলা হয়ে থাকে। এই ১২ সন্তানের পরবর্তী বংশধরদের নিয়ে অনেক ঘটনাবলি ও ইতিহাস রয়েছে। এই প্রবন্ধে শুধু তাদের সাথে এই মাটির সম্পর্ক দেখব।

কথিত আছে, ইসহাক আলাইহিস সালাম তাঁর শ্বশুরবাড়িতে মারা যান। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন যে, তার অছিয়ত অনুযায়ী জেরুযালেমে তাঁকে দাফন করা হয় এমনকি ইয়াকূব আলাইহিস সালাম-কেও তাঁর অছিয়ত অনুযায়ী জেরুযালেমে করা দাফন হয়। সেটার কিছু আলামত আমরা দেখি যে, বর্তমান ফিলিস্তীনের পশ্চিম তীরের ‘আল-খালীল’ নামক জায়গায় যেটাকে হিব্রুতে ‘হেব্রোনো’ বলা হয়, সেখানে ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকূব আলাইহিমুস সালাম সকলের কবর রয়েছে। সুতরাং এখান থেকে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, পরবর্তী তিন জনের জীবনেই জেরুযালেমের সম্পর্ক ছিল অনেক সুগভীর ও নিবিড়। তাঁরা সকলেই এই জেরুযালেমে বসবাস করেছেন এবং এখানেই থেকেছেন এবং এখানেই তাদের কবর।

মূসা আলাইহিস সালাম-এর জীবনে জেরুযালেম: ভাইদের ষড়যন্ত্রে নির্যাতিত ইউসুফ আলাইহিস সালাম কৃতদাস হয়ে বন্দী অবস্থায় আযীযে মিশরের নিকট বিক্রি হন এবং তার প্রাসাদের কাজের লোক হিসাবে নিযুক্ত হন। তখন পর্যন্ত মিশরের ক্ষমতায় ফেরাউনরা আসেনি। ঐতিহাসিকগণ তৎকালীন শাসকদেরকে ‘হাকসুস’ নামে অভিহিত করেছেন। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ‘আযীয’ বা ‘আযীযু মিসর’ বলছেন।

ঘটনার এক পর্যায়ে ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাঁর ভাইদেরকে তাঁর পিতাসহ মিশরে ডেকে পাঠান। তখন ইয়াকূব আলাইহিস সালাম তাঁর ১২ সন্তান ও তাদের সন্তানাদি, পৌত্র-প্রোপৌত্রসহ প্রায় ৭০ জনের বিরাট পরিবার নিয়ে তিনি জেরুযালেম থেকে এই প্রথম মিশরে চলে আসেন। ইউসুফ আলাইহিস সালাম মৃত্যুর পরে ঐতিহাসিকদের দাবি অনুযায়ী প্রায় ১৫০ বছর যাবৎ বানূ ইসরাঈলগণ তাওহীদের উপর শান্তিতে ও সুখের সাথেই মিশরে জীবনযাপন করতে থাকে। তার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল তৎকালীন মিশরের বাদশাহর সাথে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর ভালো সম্পর্কের কারণে; তাঁর মৃত্যুর পরও সেই ভালো সম্পর্ক বাদশাহর পরবর্তী উত্তরসূরিদের সাথে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর পরবর্তী উত্তরসূরি বা বানূ ইসরাঈলের সাথে সেই সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকে। ১৫০ বছর পর হাকসুস বংশের পতন হলে ফেরাউনরা যখন মিশরের ক্ষমতা দখল করে, তখন তারা পূর্বের সরকারের সাথে যাদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল, তাদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তার অন্যতম একটি অত্যাচার ছিল, ফেরাউন বানূ ইসরাঈলের পুরুষ সন্তানদেরকে ধরে ধরে যবেহ করত। শুধু মেয়ে সন্তানদেরকে বাঁচিয়ে রাখত। এটা ছিল তার অত্যাচারের মধ্যে সবচেয়ে বড় অত্যাচার। এ অত্যাচারের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর সাহায্য দিয়ে মূসা আলাইহিস সালাম-কে ফেরাউনের বাড়িতে লালনপালন করেন। অতঃপর কালের পরিক্রমায় শত অত্যাচার ও পরীক্ষা সহ্য করে মহান আল্লাহর নির্দেশে মূসা আলাইহিস সালাম বানূ ইসরাঈলকে নিয়ে মিশর ছেড়ে চলে যাওয়ার পথে ফেরাউন লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়।

কিন্তু এই ঘটনায় আমরা অনেকেই জানি না যে, মূসা আলাইহিস সালাম আসলে মিশর ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিলেন। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে, মূসা আলাইহিস সালাম মিশর ছেড়ে পালালেন, ফেরাউন ডুবে গেল, তাহলে তিনি কেন পুনরায় মিশরে ফিরে গিয়ে মিশরের এই বিশাল সাম্রাজ্য দখল করলেন না। যদি আমরা জানতাম যে, আসলে মূসা আলাইহিস সালাম কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, তাহলে আমাদের মনে এই প্রশ্ন আসত না। মূলত মূসা আলাইহিস সালাম তৎকালীন যুগ থেকে সাড়ে ৪০০ বছর আগে তাঁর বাপ-দাদা আদি পুরুষ ইউসুফ, ইসহাক, ইয়াকূব, ইবরাহীম আলাইহিমুস সালাম যেই পবিত্র ভূমিতে থাকতেন, লূত আলাইহিস সালাম যেই পবিত্র ভূমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই জেরুযালেমে ফিরে যাচ্ছিলেন। যেই জেরুযালেম তার পিতা-মাতার আদি ভিটা, যেই জেরুযালেম থেকে সাড়ে ৪০০ বছর পূর্বে তাঁর আদি পিতা ইয়াকূব আলাইহিস সালাম ৭০ জন সদস্য নিয়ে মিশরে এসেছিলেন, আদি ভিটায় ফিরে যাওয়ার জন্য মূলত তারা রওনা দেন। এই কারণেই মিশরে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং মূসা আলাইহিস সালাম-এর জেরুযালেমে যাওয়ার আগ্রহ কতটা উদগ্র, কতটা দৃঢ় এবং কতটা তিনি আশায় বুক বেঁধে ছিলেন জেরুযালেমে প্রবেশ করার জন্য তাও আমরা দেখব ইনশা-আল্লাহ।

সুধী পাঠক! আপনারা গুগল ম্যাপ চেক করলেও দেখবেন যে, মূসা আলাইহিস সালাম লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে যে মরুভূমিতে উঠেছিলেন সেটাই মূলত সিনাই মরুভূমি। যে তূর পাহাড়ে তিনি তাওরাত পেয়েছিলেন সেটাও এই সিনাই মরুভূমিতে। এই মরুভূমিতে কোনো পানি ও খাবারের ব্যবস্থা না থাকার কারণেই মহান আল্লাহ আসমান থেকে তাদের জন্য মান্ন ও সাল্ওয়া পাঠালেন এবং পাথর বিদীর্ণ করে ঝরনা প্রবাহিত করলেন। বানূ ইসরাঈলের সাথে মূসা আলাইহিস সালাম-এর যত ঘটনার কথা মহান আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেছেন তার সবগুলোই এই মরুভূমিতে সংঘটিত হয়েছে। যেমন— গো-বৎস পূজা, বানূ ইসরাঈলের আল্লাহকে দেখতে যাওয়ার পরিণতিতে মারা যাওয়া অতঃপর তার দয়ায় পুনরায় জীবিত হওয়া, তূর পাহাড়কে তুলে ধরা ইত্যাদি। যাই হোক মূসা আলাইহিস সালাম যেহেতু মিশর ছেড়ে এই মরুভূমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন মূলত জেরুযালেমে প্রবেশ করার জন্য। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাই তিনি মহান আল্লাহর কাছে যুদ্ধের আদেশ পান জেরুযালেম বিজয়ের জন্য।

আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক

ফাযেল, দারুল উলূম দেওবান্দ, ভারত; বি. এ (অনার্স), মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব;
এমএসসি, ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডি, যুক্তরাজ্য।

[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪২৫।

Magazine