মহানবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর কুরআন নাযিল হয় ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে। নবুঅতের দায়িত্ব আসার সাথে সাথে তাঁর কর্মপরিধি ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয়জীবন তথা আন্তর্জাতিক জীবনে বিস্তৃত হয়। মহান আল্লাহর বাণী,﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ﴾ ‘আমি তো আপনাকে বিশ্ব জগতের প্রতি শুধু রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি’ (আল-আম্বিয়া, ২১/১০৭)। তাই তিনি কোনো নির্ধারিত ভূখণ্ডের জন্য নয়।
আরব দেশ এবং আরব দেশের বাহিরে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে নির্দেশ প্রদান করে কুরআন ঘোষণা দেয়,﴿وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ﴾ ‘এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায়, যাতে আপনি সতর্ক করতে পারেন মক্কা ও তার চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পারেন ক্বিয়ামতের দিন সম্পর্কে, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (আশ-শূরা, ৪২/৭)।
মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচার করেন, মানবতার কল্যাণে কাজ করেন ৬১০-৬২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মক্কায় এবং ৬২২-৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মদীনায়। মক্কায় ১৩ বছর এবং মদীনায় ১০ বছর, মোট ২৩ বছর। প্রথম খলীফা আবূ বকর রযিয়াল্লাহু আনহু ৬৩২-৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত খেলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের সাথে সাথে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ভণ্ড নবীদের বিদ্রোহ দেখা দিলে তা শক্ত হাতে দমন করতে এবং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ করতেই তার শাসনকালের পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। উমার ফারূক রযিয়াল্লাহু আনহু-এর শাসনকাল ছিল ৬৩৪-৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, মোট ১০ বছর। সে সময় ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে তিনটি মহাদেশ জুড়ে তথা এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায়। তাঁর সময় মুসলিমগণ মিশর, স্পেন, পারস্য, ইরাক, রোম, সিরিয়া, ফিলিস্তীন, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, আল-বাছরা, কিরমান, খোরাসান, মাকরান, সিজিস্তান, আজারবাইজান, বুখারা, আফগানিস্তান, বলখ, গজনী পর্যন্ত এসে যায়। উছমান রযিয়াল্লাহু আনহু-এর খেলাফতকাল ৬৪৪-৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, ১২ বছর। আলী রযিয়াল্লাহু আনহু-এর খেলাফতকাল ৬৫৬-৬৬১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, ৬ বছর। খেলাফতের মোট সময়কাল ৩০ বছর। ইসলামের আবির্ভাবের ১০০ বছর পর ভারত উপমহাদেশে ইসলামের সূর্যোদয় হয়। আরব মুসলিমগণ ভারতের দিকে দৃষ্টি দেন মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের ১০০ বছর পর। ঐতিহাসিকগণের মতে, তখন উমার ফারূক রযিয়াল্লাহু আনহু-এর খেলাফতকালে ওমান হতে ভারতবর্ষের উপকূলে প্রথম (৬৩৬-৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি একটি অভিযান প্রেরণ করেন। উত্তাল সমুদ্রে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে নৌ-অভিযান উমার ফারূক রযিয়াল্লাহু আনহু পছন্দ করতেন না এবং এ কারণেই পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষের উপকূলের দিকে কোনো অভিযান প্রেরণ হতে বিরত থাকেন। ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে উছমান রযিয়াল্লাহু আনহু-এর শাসনকালে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু রাবী রযিয়াল্লাহু আনহু কিরমান অধিকার করে সিজিস্তান অভিমুখে যাত্রা করেন। এরপর আব্দুল্লাহ রযিয়াল্লাহু আনহু বিজয় অভিযান পরিচালনা করার ইচ্ছা পোষণ করলেও উছমান রযিয়াল্লাহু আনহু অনুমতি দেননি। উছমান রযিয়াল্লাহু আনহু সর্বপ্রথম নৌবাহিনী গঠন করেন। উমাইয়া বংশের শাসনকাল হলো ৬৬১-৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, মোট শাসনকাল ৯০ বছর। উমাইয়া বংশের প্রথম শাসক মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু, তাঁর শাসনকাল ৬৬১-৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, মোট ১৯ বছর। মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু দেশের অভ্যন্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। দেশ বিজেতা হিসাবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর সৈন্যবাহিনী প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু-এর উত্তর আফ্রিকা বিজয় তাঁর উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এরপর তিনি মিশর, আধুনিক লিবিয়া, তিউনিসিয়া, আফ্রিকা এবং বর্তমান আলজেরিয়া ও মরক্কোর মধ্যবর্তী অঞ্চল তাঁর শাসনে নিয়ে আসেন। এরপর ইয়াযীদ ও দ্বিতীয় মুআবিয়া q-এর শাসন (৬৮০-৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দ) ৩ বছর। প্রথম মারওয়ান রহিমাহুল্লাহ-এর শাসন (৬৮৪-৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দ) ১ বছর। এরপর আব্দুল মালিক রহিমাহুল্লাহ-এর শাসন (৬৮৫-৭০৫ খ্রিষ্টাব্দ) ২০ বছর। এরপর প্রথম ওয়ালিদ রহিমাহুল্লাহ-এর শাসন (৭০৫-৭১৫ খ্রিষ্টাব্দ) ১০ বছর কাল। ওয়ালিদ রহিমাহুল্লাহ-এর শাসনামলে ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিমগণ সসৈন্যে উপমহাদেশের সিন্ধু অববাহিকায় ভারতের মুলতানে আসেন।
মুলতানের শাসক রাজা দাহির তার দেশে মুসলিম ব্যবসায়ীর জাহাজ জলদস্যু কর্তৃক সিন্ধুতে লুণ্ঠিত হলে উত্তর ইরাকের মুসলিম শাসক রাজা দাহিরকে কৈফিয়ত তলব করলে তিনি উত্তর দেন, জলদস্যুরা তার এখতিয়ারের বাহিরে। অন্যদিকে মুসলিম বিদ্রোহীদের আশ্রয় দিয়ে আসছিল বহুদিন থেকেই, সে অভিযোগ পূর্বে থেকেই ছিল। তাছাড়া হিন্দু সম্প্রদায় বহুভাগে বিভক্ত ছিল, এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায় দ্বারা নির্যাতিত ছিল। প্রথমত হিন্দুরা চার শ্রেণিতে তথা বৈষ্ণব, ক্ষত্রিয়, শূদ্র, ব্রাহ্মণে বিভক্ত ছিল। এই চার শ্রেণি আবার বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত, যেমন- দাস, বসাক, সাহা, পাল, ঠাকুর, শীল, সূত্রধর, দত্ত, বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, গুপ্ত, হালদার, রায়, কায়স্থ, বড়াল, কর্মকার, বণিক, চৌহান, বাঘেলা, চান্দেল, সেন, পল্লব, চালুক্য, রাষ্ট্রকূট, পাণ্ড্য, চৌল ও চেরা নামে বংশ ছিল। অনেক বংশের নিজস্ব রাজ্য ছিল। কেউ কাউকে পছন্দ করতেন না। একজন আরেকজনকে সামাজিকভাবে বয়কট করে চলত। নির্যাতিত জনগোষ্ঠী চাইতেন শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্য শাসকের আগমন হোক।
সিন্ধু নদীর অববাহিকায় যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তারই নাম সিন্ধু সভ্যতা। এখানে যারা বসবাস করত, তাদেরকে বলা হতো সিন্ধী। কালের আবর্তনে শব্দ পরিমার্জিত হয়ে হিন্দী বা হিন্দু হয়েছে। তবে হিন্দু কোনো ধর্মের নাম নয়, আসলে তাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম। যে ধর্মেরই হোক ভারতে যারাই বসবাস করে, তাদেরকে সিন্ধী অথবা হিন্দী বলা যায়। যেমনভাবে রোমলাসের নাম অনুসারে রোম নগরীর নামকরণ করা হয়েছে, ঠিক তেমনি ভরত নামক একজন শাসকের নাম অনুসারে ভারত নামকরণ করা হয়েছে। তবে কোনো কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ছিল না। ভারত রাজ্য ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত ছিল যেমন— দিল্লী, আজমীর, কাশ্মীর, বুন্দেলখণ্ড, কনৌজ, মালব, সিন্ধু, বাংলা ও আসাম। আরবের মুসলিমগণ ভারতে এসে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেন দিল্লীকে রাজধানী করে। আরব মুসলিমদের প্রথম শাসক তরুণ সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম-এর শাসনকাল ৭১২-৭১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। ৭১৫-৭৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী মুসলিম সরকার ছিল না। নিয়োগ হয়েছে, হয়েছে অপসারিত। মাঝখানে ২৫০ বছর পর যেসব মুসলিম ভারতে আসেন তারা আরব নয়, তারা নবদীক্ষিত তুর্কী মুসলিম। গজনী বংশের আলপ্তগীন-এর শাসন ৯৬২-৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। সবুক্তগীন-এর শাসন ৯৭৭-৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। সুলতান মাহমূদ ৯৯৭-১০৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, তবে এর মধ্যেই অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। গজনী বংশের শাসনকাল ছিল ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। মোট শাসক সংখ্যা ছিল ১৬ জন। গজনী বংশের সর্বশেষ শাসক মালিক খসরু। মুহাম্মাদ ঘুরী ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দে সর্বশেষ শাসক মালিক খসরু ঘুরী-এর নিকট আত্মসমর্পণ করেন। পরে গজনীর সিংহাসনে বসেন। ১১৭৩ খ্রিষ্টাব্দে গজনী ঘোরের শাসনাধীনে আসে। ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াস উদ্দীন-এর মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন মুঈজ উদ্দীন মুহাম্মাদ ঘুরী। ভারতবর্ষে তিনিই মুহাম্মাদ ঘুরী নামে পরিচিত।
তিনি ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে তরাইনে দ্বিতীয় যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসনব্যবস্থা ক্বায়েম করেন। এই বংশে ৫ জন শাসক ছিলেন ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। দাস বংশ শাসন করেন ১২০৬-১২৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, ৮৪ বছর। কুতুব উদ্দীন আইবেক ১২০৬-১২১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। আরাম শাহ ১২১০-১২১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। ইলতুৎমিশ ১২১১-১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। রুকন উদ্দীন ফিরোজ শাহ ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। সুলতানা রাজিয়া ১২৩৭-১২৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, ৩ বছর। বাহরাম শাহ ১২৪০-১২৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, ২ বছর। মাসুদ শাহ ১২৪২-১২৪৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। নাসির উদ্দীন বলবন ১২৪৬-১২৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। গিয়াস উদ্দীন বলবন ১২৬৬-১২৮৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। কায়কোবাদ ১২৮৭-১২৮৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এই বংশে মোট ১২ জন শাসক ছিলেন। খিলজী বংশ ১২৯০-১৩২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, ৩০ বছর। তুঘলক বংশ ১৩২০-১৪১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, ১০৭ বছর। মোট শাসক ৮ জন। সৈয়দ বংশের শাসন ১৪১৪-১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। সৈয়দ বংশের শাসক সংখ্যা ৪ জন। লোদী বংশের শাসন ১৪৫১-১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, শাসক সংখ্যা ৩ জন। মুঘল শাসন ১৫২৬-১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে মুঘল শাসনের পরিসমাপ্তি হলেও নামমাত্র শাসক ছিলেন মুঘল বংশের। সর্বশেষ মুঘল শাসক দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর।
মুঘলদের মধ্য থেকে পর্যায়ক্রমে শাসক ছিলেন জহিরউদ্দীন মুহাম্মাদ বাবর (১৫২৬-১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দ), নাসির উদ্দীন মুহাম্মাদ হুমায়ূন (১৫৩০-১৫৪০), শেরশাহ (১৫৪০-১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত, হুমায়ূন ১৫৪০ সালে শেরশাহ কর্তৃক সিংহাসনচ্যুত হন। ১৫৫৫ সালের ২২ জুন সেরহিন্দের যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে তিনি আবার সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন), হুমায়ূন (১৫৫৬-১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ, ২য় মেয়াদ), জালালুদ্দীন মুহাম্মাদ আকবর (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ), নূরুদ্দীন মুহাম্মাদ সেলিম জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭), শাহাবুদ্দীন মুহাম্মাদ খুররাম শাহজাহান (১৬২৭-১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ), মহিউদ্দীন মুহাম্মাদ আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ), কুতুব উদ্দীন মুহাম্মাদ মোয়াজ্জেম শাহ আলম বা প্রথম বাহাদুর শাহ (১৭০৭-১৭১২ খ্রিষ্টাব্দ), মাজউদ্দীন জাহান্দার শাহ বাহাদুর (১৭১২-১৭১৩ খ্রিষ্টাব্দ), ফররুখ শিয়ার (১৭১৩-১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দ), রফী-উদ-দারাজাত (১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দ), রফী-উদ-দৌলা দ্বিতীয় শাহজাহান (১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দ), রওশান আকতার বাহাদুর মুহাম্মাদ শাহ (১৭১৯-১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দ), আহমদ শাহ বাহাদুর (১৭৪৮-১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দ), আযীযুদ্দীন (১৭৫৪-১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দ), মহী-উল-মিল্লাত (১৭৫৯-১৭৬০), দ্বিতীয় শাহ আলম আলী গওহর (১৭৬০-১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দ), দ্বিতীয় আকবর শাহ (১৮০৬-১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দ) এবং দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭-১৮৫৭/১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দ)।
মুসলিমদের একটানা ভারত শাসনসংক্রান্ত ঐতিহাসিক প্রমাণ। আলমগীর-এর পরে যারা ছিলেন তারা অনেকটাই দুর্বল শাসক বা নামমাত্র শাসক ছিলেন। ভারতে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার প্রচলন মুসলিমরাই করেছিলেন। যে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা হয় ১৫২৬ সালের পানিপথের যুদ্ধের মাধ্যমে তা শেষ হয় ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে। সর্বশেষ শাসক দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ-এর জীবনের শেষ পরিণতি ছিল খুবই করুণ। ইংরেজরা তাকে এ দেশে থাকতে দেয়নি। তার নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটে আজকের মিয়ানমারের রেঙ্গুনে, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়, তার সমাধি সেখানেই রয়েছে এখনো। তারাই ছিল বিশ্বের এক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লং এর বংশধর। উত্থান-পতন এই পৃথিবীর ইতিহাস।
মো. আব্দুস সাত্তার ইবনে ইমাম
সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, মাদরাসা দারুল ইসলাম মুহাম্মদীয়া, বল্লা, টাঙ্গাইল।