উত্তর: তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি হলো অন্তরের জিনিস। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তাক্বওয়া এখানে আছে’- এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার তাঁর বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৬৪৩৫)। তাক্বওয়া বৃদ্ধি করার মাধ্যম হলো- ১. আল্লাহর আদেশকৃত কাজগুলো করা, নিষেধকৃত কাজগুলো ছেড়ে দেওয়া এবং তাঁর দেখানো পথের উপর চলা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা সৎপথ অবলম্বন করে, তাদেরকে আল্লাহ সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে ধর্মভীরু হওয়ার শক্তি দান করেন’ (মুহাম্মাদ, ৪৭/১৭)। ২. বেশি বেশি ছিয়াম পালন করা তাক্বওয়া বৃদ্ধির একটি অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য ছিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাক্বওয়ার অধিকারী হতে পার’ (আল-বাকারা, ২/১৮৩)। ৩. উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া তাক্বওয়া অর্জনের একটি মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও যমিনের সমান, যা মুত্তাক্বীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৩-১৩৪)। ৪. আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হেদায়াতকে আঁকড়ে ধরা ও বিদআত থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ৫. নিয়মিত ছালাত আদায় করা। ছালাত তাক্বওয়ার অন্যতম বড় চর্চা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় ছালাত অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’ (আল-আনকাবূত, ২৯/৪৫)। ৬. সৎ ও পরহেজগার বন্ধু বানানো। কারণ ভালো বন্ধু ও পরিবেশ একজন ব্যক্তিকে সৎ পথে পরিচালিত করে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধুদের দ্বীনের উপর থাকে। সুতরাং তোমরা দেখো কার সঙ্গে মেলামেশা করছো’ (মিশকাত, হা/৫০১৯)। ৭. কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রতিদিন কুরআন পাঠ করা, তার অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝা এবং জীবনে তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, ‘এই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, এটা মুত্তাক্বীদের জন্য পথনির্দেশ’ (আল-বাকারা, ২/২)। ৮. দুনিয়াকে নয়, আখেরাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া। দুনিয়ার ফিতনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং আখেরাতের জবাবদিহির ভয় রাখা। ৯. নিয়মিত আত্মসমালোচনা ও তওবা করা। প্রতিদিন নিজের কাজের হিসাব রাখা, ভুল হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন ৭০-১০০ বার তওবা করতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০২)। ১০. এ দু‘আ পড়া, اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى، وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২১)। আল্লাহ বলেন, ‘এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার’ (আল-আনআম, ৬/১৫৩)।
প্রশ্নকারী : শাহাবুদ্দীন
সদর, যশোর।